দূর প্রবাসে পাঁচটি বছর
যুগের মত লাগে,
অর্থবিত্তে ভালই আছি
তরল ভাবাবেগে।
অট্রালিকা, উঁচু দালান
আকাশ অনেক দূরে–
বাদ্য বাজনা, আলোর ঝলক
চলছে সপ্তসুরে।
নির্ঘুম এই শহর বুঝি
অনেক কথাই বলে,
সবই আছে, কি যেন নেই
মন কি চায় তা হলে?
নিশীথ রাতে চোখ বুঁজলে
কাঁদার গন্ধ পাই–
মাটির চুলায় মায়ের রান্না
বাতাস উড়ায় ছাই।
মাঠের বুকে ধুলায় খেলা
ধান কাটা শেষ হলে–
নতুন ধানের গন্ধে ব্যাকুল
পিঠে খাওয়া বেশ চলে।
মধ্য রাতের ঘুম ভাঙ্গা চোখ,
ভরে কেন এত জলে?
পাশের গ্রামের সেই মেয়েটা
কি কথা গেছিল বলে?
ষোড়শী মুগ্ধ করেছিল কবে
কি ছিল চোখে তার,
বলেনি ত কিছু, যাইনি ও কাছে
কি ছিল ভুল কার?
এতদিন পর মনে এল কেন?
কে দেবে ব্যাথার দাম?
জানতে চাইনি একটি বার ও
সেই মেয়েটির নাম।
বুড়ো পিসি মা’র ছোট গাব গাছে
কাঠবেড়ালী দিত হানা,
গাব ফল কত খেয়েছি না বলে
পিসি মা করেনি মানা।
ফোকলা দাঁতের বুড়ো পিসি মা
আজ ও কি বেঁচে আছে?
গাব ফল গুলো অযত্নে নীরবে
পেকে পঁচে পড়ে নীচে?
টেমস নদীর এই তীরে দাড়িয়ে
ভাঙ্গা ভাঙ্গা সব স্মৃতি,
মনের উঠানে হামাগুড়ি দেয়
ভুলে যাওয়া কত তিথি।
বাবার মুখটা দেখিনি কখন ও
শুনেছি মায়ের মুখে–
আমার জন্মের দু’মাস আগে
মরেছেন ধুকে ধুকে।
দু’বছর আগে মায়ের অসুখে
হয়ে উঠেনি দেশে ফেরা
সেরে উঠা আর হয়নি মায়ের
আমি- হতভাগা মাতৃহারা।
কবর দু’খানি আছে পাশাপাশি
জঙ্গলে ভরা ঝোপঝাড়,
দিনের বেলাতে ও গা ছমছম
জটলা বেধেছে এক আঁধার।
ঘন কালো মেঘে ছেয়েছে আকাশ
টেমস নদী চঞ্চল,
গ্রামঘেষা নদীর ঢেউ আজ ও আছে?
মেঘনাতে কত জল?
কুল কুল করে বয়ে চলে টেমস
সূর্য ডুবেছে কত আগে–
নিজের অজান্তে মনের সীমান্তে
কত না প্রশ্ন জাগে।
আজ ও কি ভোরে শিশিরের জলে
ধান গাছ ভিজে হাসে,
শালিকের ডানা বাতাসের ভারে
হিম শীতে ভালোবাসে।
আজ ও কি সোনালী রোদের তাপেতে
হিজল গাছের ছায়ায়,
রাখালের দল চুপ বসে থাকে
অনাগত স্বপ্ন মায়ায়।
আজ ও কি ঝিলমিল তারার জোছনায়
বিছানাতে নকশা ভাসে,
ছোট্র শিশু, ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকে
ঘুমদেশে যায় অবশেষে।
থম্থমে রাত ফ্ল্যাট বারান্দায়
নিশ্চুপ আমি একা,
নিয়ন বাতিগুলো জ্বলে নিভু নিভু
দেখি টেমসের সীমা রেখা।
ঘুম ঘুম চোখ ঝাপসা সব কিছু
ধক ধক করে বুক,
ভুলে গেছি আজ সব পিছু ডাক
শুধু- ভুলিনি মায়ের মুখ।
আরো পড়ুন-
- আবেগী ভালোবাসার গল্প
- শুভ পুরুষ দিবস
- গণতন্ত্রের ইতিহাস ও প্রকৃতি
- হুমায়ুন আহমেদের আত্মজীবনীমূলক বই কোনগুলো?
- ভারতীয় ধর্ম
ভালো লিখেছেন কবি