বিশ্ব পুরুষ দিবস

বিশ্ব পুরুষ দিবস সফল হোক

0

পুরুষ দিবসের ইতিহাস

১৯২২ সাল থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নিহত যোদ্ধাদের সম্মান জানিয়ে রেড আর্মি ডে এবং রেড নেভি ডে পালন করা হতো। প্রথমে ২৩ ফেব্রুয়ারিকে বিশ্ব পুরুষ দিবস উদযাপনের জন্য নির্ধারণ করা হলেও সেটি ছিল মূলত রেড আর্মি ডে এবং রেড নেভি ডে।

তাই পরে ১৯ নভেম্বরকে এই দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ভারতে এই দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা শুরু হয় ২০০৭ সাল থেকে। বাংলাদেশে বিশ্ব পুরুষ দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে কবে থেকে পালন হচ্ছে সে সম্পর্কে আমি কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারিনি। আপনাদের জানা থাকলে কমেন্ট করে জানান। তবে, সম্প্রতি পত্র পত্রিকায় দিবসটি নিয়ে অনেক লেখালেখি দেখা যাচ্ছে।

বিশ্ব পুরুষ দিবস নিয়ে কিছু কথা

বিশ্ব পুরুষ দিবস নিয়ে অনেকে ঠাট্টা-মশকরা করছেন। প্রকৃতপক্ষে এটি নারীবিদ্বেষ প্রকাশ করার জন্য নয়, বরং আমাদের এই সমাজে পুরুষের অবদান, বীরত্ব, শারিরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদি সম্পর্কে সবার কাছে বার্তা ছড়িয়ে দিতেই দিবসটি পালন করা হয়।

আমাদের সমাজে প্রচলিত অনেক ট্যাবু আছে যা নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত-

পুরুষেরা কাঁদে না

আমরা সবাই জানি, কষ্ঠ পেলে কান্নাকাটি করা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। একজন নারীর কান্নাকে সমাজ সহজভাবে নেয়, কিন্তু একজন পুরুষের কান্নাকে নয়। বরং, দেখা যায় একজন পুরুষের কান্না নিয়ে লোকে ঠাট্টাতামাশা করে। বিশ্ব পুরুষ দিবস আসলেই এটি নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় কথা হয়।

নারীর দায়িত্ব পুরুষকেই নিতে হবে

সমাজে প্রচলিত আরেকটি ট্যাবু হচ্ছে নারীর দায়িত্ব সবসময় পুরুষকেই নিতে হবে। এটিকে একরকম অধিকার বলে মনে করা হয়। আমরা দেখতে পাই, আমাদের সমাজে নারীরা সমান অধিকারের দাবিতে ঘরের কাজ ভাগাভাগি করতে চান, কিন্তু ঘরের বাইরের কাজ নয়। ব্যতিক্রম অবশ্যই প্রশংসনীয়। সমতা নিশ্চিত হোক।

ধর্মীয়ভাবে নারী এবং পুরুষের দায়িত্ব আলাদাভাবে ভাগাভাগি করে দেয়া হয়েছে। এবং একইসাথে, তাদের অধিকারও। কিছু ক্ষেত্রে পুরুষেরা বেশী অধিকার ভোগ করেন, কিছু ক্ষেত্রে নারীরা। সব ক্ষেত্রে সমতা প্রত্যাশি বলে দাবি করা তথাকথিত সাম্যবাদীরা অনেকে পুরুষের বেশী অধিকারকে কমিয়ে দিতে চান, নারীরটা নয়। অর্থনৈতিকভাবে সফল নারী উদ্যোক্তাও আমরা দেখতে পাই।

বিশ্ব পুরুষ দিবস উপলক্ষ্যে অনলাইনে শোভা পায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ ক্যানেডির একটি কথা,

A man does what he must – in spite of personal consequences, in spite of obstacles and dangers and pressures – and that is the basis of all human morality

 

একজন নারী আরেকজন নারীকে নির্যাতন করলে, দায় পুরুষের

গ্রামীণ সমাজে বউ-শাশুড়ির ঝগড়া আবহমান কাল থেকে চলে আসছে, কিন্ত জামাই-শশুরের ঝগড়া দেখা যায় না। এর একটি কারণ হতে পারে, একটি নতুন সংসারে নতুন বউ এসে কতৃত্ব করবে সেটি শাশুড়িরা মেনে নিতে পারেন না।

আবার নতুন বউয়েরা নতুন সংসারে নতুন নিয়ম মেনে নিতে পারেন না, নিজের ইচ্ছামতো সবকিছু দেখতে চান। তখন সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ে। আর, সমাজের কর্তাব্যক্তিরা বলেন, পুরুষশাসিত সমাজের ফল। অর্থাৎ, বউয়ের উপর শাশুড়ির বা, শাশুড়ির উপর বউয়ের অত্যাচারের অপরাধ পুরুষের

পুরুষেরা লাল, হলুদ, গোলাপি পোশাক পরতে পারবে না

আরেকটি ট্যাবু হচ্ছে- একজন নারী রঙিন পোশাক পরবে, রঙিন সবকিছু পছন্দ করবে। কিন্তু একজন পুরুষ চাইলে হলুদ রঙের একটি প্যান্ট আর, শার্ট পরে রাস্তায় বের হতে পারবে না। তাকে নানারকম টিজিং এর স্বীকার হতে হবে। পক্ষান্তরে, একজন নারী যদি রঙিন পোশাক না পরেন, তাকে ততটা টিজিং এর স্বীকার হতে হয় না।

পুরুষের চুল বড় হবে না

সৃষ্টিকর্তা সবার চুলকেই বড় করেন। আমরা নিজেদের প্রয়োজনে সেলুনে গিয়ে চুল ছোট করে আসি। একজন নারী আমাদের সমাজে চাইলেই চুল বড় করতে পারেন, একজন পুরুষ চাইলেই তা পারেন না। নানারকম কটুকথা, টিজিং এর স্বীকার একটা ছেলেকেই হতে হয়। Adam Teasing নিয়ে আমাদের সমাজে উচ্চবাচ্য নেই, যেন এটা স্বাভাবিক। বিশ্ব পুরুষ দিবস উপলক্ষ্যে এটি নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক আলোচনা হয়।

স্বামী অপরাধী, চুক্তি ভঙ্গকারী নয়

অনেক সময় দেখা যায় দাম্পত্য জীবনে কলহের একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় পুরুষ বা, নারীর শারিরিক অক্ষমতা। একজন পুরুষ শারিরিকভাবে অক্ষম হলে, নারী যদি পরকীয়া করেন(অবশ্যই যার সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়াচ্ছেন তিনিও সমান অপরাধী), সেটিকে বৈধ করার জন্য সমাজের তথাকথিত নারীবাদীদের দৌরাত্ম লক্ষ্য করা যায়।

কিন্তু আমরা জানি, বিয়ে একটি সামাজিক চুক্তি যা রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয়ভাবে বৈধ। একজন নারী যদি মনে করেন তার স্বামীর সাথে থাকবেন না, তিনি ডিভোর্স নিতে পারেন এবং যাকে পছন্দ তাকে বিয়ে করতে পারেন। আমরা চুক্তি ভঙ্গকারীকে কেন দোষ দিচ্ছি না। বরং ঐ নারীর স্বামীকে দোষারোপ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ঐ সব স্বামীরা শারিরিকভাবে অক্ষম নন, স্ত্রীর অন্য কোন লোভও থাকতে পারে, সর্বোপরি, চুক্তিভঙ্গ এবং প্রতারণা অবশ্যই অপরাধ।

কাজ ভাগাভাগি লিঙ্গসমতার নির্ণায়ক, তবে চাকরি পুরুষকে করতে হবে

আধুনিক শিক্ষিত নারীরা অনেকে ঘরের কাজেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন(কিছু ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই বাধ্য হন), বাইরে চাকরি করতে চান না। এবং দেখা যায় তার স্বামীর সাথে ঘরের কাজ ভাগাভাগি করতে চাচ্ছেন। এটা কি প্রবঞ্চনা নয়। সমান অধিকার, সমান দায়িত্ব সব ক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হলে- দুজনেরই ঘরে এবং বাইরে কাজ করা উচিত

মিথ্যা ধর্ষণমামলা অপরাধ নয়?

ধর্ষণ জঘন্য একটি অপরাধ, এবং আমরা সবাই একজন ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। কিন্তু ইদানিং পত্র পত্রিকায় দেখা যায় বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের খবর। একজন পুরুষ যদি কোন নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখায় এবং তারা সাথে শারিরিক সম্পর্ক করে, সেটি কখনোই ধর্ষণ নয়, প্রতারণা

পুরুষের অপরাধকে এখানে বড় করে দেখানো হচ্ছে, অথচ ঐ নারীও অপরাধী কারণ তিনি বৈবাহিক চুক্তি না করেই স্বেচ্ছায় শারিরিক সম্পর্ক করেছেন। অনেক সময় গ্রামীন সমাজে সম্পত্তি নিয়ে সমস্যায় ধর্ষণমামলা দেয়া হয়। এরকম মিথ্যা মামলায় মামলাকারী কি সত্যিই তাদের প্রাপ্য শাস্তি পান? তার জন্য আমরা কেমন শাস্তি দাবি করি।

বেকার নারীরা চাকরিজীবি পুরুষকে বিয়ে করবে এটা স্বাভাবিক

আমাদের সমাজে আবহমান কাল ধরে চলে আসছে, একজন চাকরিজীবি, ব্যবসায়ী বা, অন্য কোন কাজ করে উপার্জন করেন এমন একজন পুরুষ একজন বেকার নারীকে বিয়ে করেন। নারীর যোগ্যতা হিসেবে দেখা হয়, রান্না করা, ঘর সামলানো। এবং সেটি পরীক্ষা(মেয়ে দেখার নাম করে নারীকে পণ্য মনে করার পদ্ধতি ব্যবহার) করেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এটি না করা হলে আক্ষরিক অর্থেই একজন যোগ্যতা সম্পন্ন ছেলের সাথে প্রকৃত বেকার একটি মেয়ের বিয়ে হচ্ছে, এটি কি অবিচার নয়। কোন নারীবাদি কি কখনো একজন সুন্দরী, শিক্ষিত মেয়ে হয়ে বেকার একটি ছেলেকে বিয়ে করেছে?

বিশ্ব পুরুষ দিবস ২০২১

২০২০ সালেও বিশ্ব পুরুষ দিবস পালিত হয়েছিল। সারা পৃথিবীর পুরুষদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। শুধুমাত্র শারিরিক স্বাস্থ্য নয়, মানসিক এবং আত্মিক সাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্যে প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছিলো-

Better Health For Men And Boys

সামাজিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কতজন পুরুষ আমাদের দেশে প্রতিবছর আত্মহত্যা করছে তার খবর কি আমরা কখনো রেখেছি। এমনকি পুরুষ নির্যাতনের স্বীকার পুরুষকে নিয়ে আমাদের অসুস্থ সমাজে ঠাট্টা মশকরা করা হয়। কখনো কি মনে হয় না, এটি নারীবাদি সমাজের অশুভ চর্চার ফল।

কখনো কি আমাদের সমাজের পুরুষবিদ্বেষীরা ভেবেছেন, আমাদের সমাজে এবং পরিবারে একজন বাবা, একজন ভাই, একজন স্বামী কি অবদান রাখেন। পাহাড়সম কষ্ঠ, লাঞ্চনা, মানসিক যন্ত্রনা সহ্য করে কতজন পুরুষ তার পরিবারের নারীদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছেন।

আরো কিছু দিবসের কথা

পুরুষ দিবস নিয়ে অনেক কথা হলো, আরো কিছু দিবস আছে যা পুরুষ দিবসের সাথে সম্পর্কিত। চলুন তিনটি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেই-

বিশ্ব শিশু দিবস

পৃথিবীর বিভিন দেশে বিভিন্ন সময়ে শিশু দিবস পালিত হয়, আর বিশ্ব শিশু দিবস সম্ভবত ৫ অক্টোবর(কোন কোন সূত্রে ৩ অক্টোবর)। আমাদের দেশে জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয় ১৭ মার্চ। এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিবিসির জরিপ অনুযায়ী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই লোকটি এই ভারতীয় উপমহাদেশের ভূ রাজনীতিকে বদলে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।

বিশ্ব বাবা দিবস

পরিবারে মায়েরা যেমন সন্তানদের প্রতি অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করেন, বাবারাও তেমনি সন্তানদের জন্য অনেক দায়িত্ব পালন করেন। ইউরোপের ক্যাথলিক দেশগুলোতে ১৯ মার্চকে বাবা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আর, সারা বিশ্বে পালিত হয় ২১ জুন। কেউ কেউ গুলিয়ে ফেলতে পারেন তাদের জন্য বলে রাখি- বাবা দিবস আর, বিশ্ব পুরুষ দিবস এক দিনে নয়।

বিশ্ব নারী দিবস

৮ মার্চ ১৯১৪, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নারী শ্রমিকেরা তাদের অধিকার রক্ষায় রাস্তায় নেমে এসেছিল। তাই, সারা বিশ্বের নারী এবং পুরুষেরা ৮ মার্চকে নারী দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। কমিউনিস্টরাও এই দিনটিকে গুরুত্ব দিয়ে পালন করে থাকে। বিশ্ব পুরুষ দিবস এবং নারী দিবসের মাঝে কোন সংঘাত নেই, একই ব্যক্তি দুটি দিবসই পালন করতে পারে।

শুভ পুরুষ দিবস

আমি মনে করি, সমাজে নানারকম অসঙ্গতি(নেগেটিভ অর্থে) আছে যা আমাদের কারো একার পক্ষে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। বড় কোন বিপ্লব ঘটলে একটি বা, কয়েকটি অসঙ্গতি দূর হবে। তাই, আমাদের সবার উচিত নারী- পুরুষ নির্বিশেষে আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট অসঙ্গতি দূর করার চেষ্টা করা

শুধু বিশ্ব পুরুষ দিবস উপক্ষেই নয়, সারাবছরই আমাদের উচিত নারী ও পুরুষের অবদান স্বীকার করা। একইসাথে, সবার প্রাপ্য সম্মান, অধিকার ও মর্জাদা নিশ্চিত করতে নিজের অবস্থান থেকে কাজ করা। বিশ্ব পুরুষ দিবস শুভ হোক মাননজাতির জন্য।

 

আরো পড়ুন-


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

প্রবন্ধ লেখক

Author: প্রবন্ধ লেখক

বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করছি

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

যে রহস্যময় জলাশয়ে নামলেই যে কোনো প্রাণী পাথর হয়ে যায়।

পৃথিবীতে এমন একটি রহস্যময় জলাশয় রয়েছে যেখানে নামলেই যে কোনো প্রাণী পাথর হয়ে যায়। এটি কোন সাইন্স ফিকশন মুভির গল্প
ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা

২০২৩ সালের ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা

আমরা আইলা, নার্গিস, রোয়ানু ইত্যাদি ঝড়ের নামের সাথে পরিচিত। নতুন আরেকটি ঘূর্ণিঝড় এসেছিল যার নাম ফণি- এটির নামকরণ বাংলাদেশের করা।

বই বিপণন ব্যবস্থা বিষয়ক ভাবনা

একটি সুস্থ,সুন্দর জাতি গঠনের জন্য পড়া আবশ্যক।বর্তমানে পাঠক বইয়ের প্রতি ঝুঁকছে।ফলে বইয়ের ব্যবসাও জনপ্রিয় হয়ে এসেছে।কয়েক বছর আগেও বই প্রকাশনাকে

প্রবন্ধ লেখার ১০ টি অপরিহার্য নিয়ম

কোনো একটি বিশেষ ভাব বা তত্ত্বকে ভাষার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলাই হচ্ছে প্রবন্ধ। প্রবন্ধের মাধ্যমে কোনো বিষয়ের উপর বুদ্ধিভিত্তিক আলোচনা করা

One Reply to “বিশ্ব পুরুষ দিবস সফল হোক”

Leave a Reply