ধর্ম কাকে বলে?
ধর্ম কাকে বলে বা, ধর্ম কি এই প্রশ্নে উত্তর দিতে হলে এই শব্দটির উৎস জানতে হবে। ধর্ম শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দ ‘Religion’. এখন বাংলাতেও ধর্ম বলতে সাধারণত ‘Religion’ বুঝায়। তবে বাংলায় এর অর্থটা কিছুটা আলাদা।
ধর্ম শব্দটি সংস্কৃত √ধৃ থেকে উৎপন্ন। সেক্ষেত্রে কোন কিছু ধারণ করা বুঝাতেই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আগুনের ধর্ম পোড়ানো, গাছের ধর্ম কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ত্যাগ করা। এরকম বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের বিভিন্ন রকম ধর্ম রয়েছে।
ইংরেজীতে শব্দটি দিয়ে আধ্যাত্মিক কোন শক্তি, পরম সত্ত্বা বা, স্বর্গীয় কোন কিছুর সাথে মানুষের সম্পর্ক বুঝায়। মানুষের জীবনের চুড়ান্ত লক্ষ্য বা, মৃত্যু পরবর্তী ভাবনাগুলো Religion এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়। প্রার্থনা, আচার-অনুষ্ঠান, ধর্মগ্রন্থ, ধর্মীয় আইন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হয়।
ধর্মাবলম্বী অর্থ কি?
যদি Religion অর্থে ধর্ম শব্দটিকে ব্যবহার করি তাহলে ধর্মাবলম্বী অর্থ হচ্ছে নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী। যেমনঃ মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদি। আর যদি ধারণ করা অর্থে ব্যবহার করি তাহলে যিনি কোন একটি বৈশিষ্ট্য(বা, ধর্ম) ধারণ করেন তিনি সেই ধর্মাবলম্বী।
উপাসনা কাকে বলে?
আভিধানিক অর্থ যদি আমরা দেখি তাহলে দেখতে পাব উপ অর্থ ‘নিকটে’ এবং আসন অর্থ ‘বসার স্থান’। ধর্মীয় অর্থে একাগ্রচিত্তে সৃষ্টিকর্তার নিকটে বসার অর্থই উপাসনা। নানারকম ধর্মে নানারকম উপাসনার প্রচলন আছে। কেউ সিজদা করেন, কেউ গান গান, কেউ স্রষ্টার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন।
সাকার উপাসনা, নিরাকার উপাসনা, সগুণ উপাসনা, নির্গুণ উপাসনা- এরকম বিভিন্ন ধরণের উপাসনা হতে পারে।
পৃথিবীর প্রধান ধর্মবিশ্বাসগুলো
ধর্মতাত্ত্বিকেরা বিভিন্ন ধর্মগুলোকে কয়েকটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন-
- আব্রাহামিক ধর্ম(ইসলাম, খ্রিস্টীয়, ইহুদি, বাহাই ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত)
- ভারতীয় ধর্ম(ভারতীয় এর মাঝে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ইত্যাদি পড়ে)
- চীনের এবং জাপানের ধর্ম(তাও, শিন্টো, কনফুসীয় ইত্যাদি)
- আফ্রিকান ধর্ম ও অন্যান্য(আফ্রিকান বিভিন্ন গোষ্ঠী)
এই চারটি ভাগের বাইরেও অসংখ্য বিশ্বাস রয়েছে। ইরানে জরুথ্রুষ্টীয় ধর্ম, তাছাড়া প্রতিটি মহাদেশেই বিভিন্ন ক্ষুদ্র গোষ্ঠী রয়েছে- সেগুলোকে ৪ নম্বরে বিবেচনা করা যায়
আব্রাহামিক ধর্ম
- ইসহাক(যিশু ছিলেন তার বংশধর, ইহুদি রাজা এবং নবীরাও তার বংশধর)- Isaac
- ইসমাইল(মুহাম্মদ ছিলেন তার বংশধর)- Ismael
ইসহাকের পুত্র ইয়াকুবের(Jacob) আরেক নাম ছিল ইসরাইল। ইয়াকুবের চতুর্থ পুত্রের নাম ছিল ইয়েহুদাহ। আব্রাহামের সন্তানেরা ছিল একজন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। ইসলাম শব্দের অর্থ একজন সৃষ্টিকর্তার কাছে আত্মসমর্পণকারী, ইহুদি ধর্মও একজন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসকে বুঝায়। আর, যিশুর শিক্ষাও ছিল একজন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস। বেশীরভাগ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের ধারণা অনুসারে, যিশু নিজেই পৃথিবীতে মানুষ, স্বর্গে ঈশ্বর।
আব্রাহামিক ধর্মগুলোর মৌলিক বৈশিষ্ট্য
কিছু বিষয় এই ধর্মগুলোর মাঝে সাধারণ বৈধিষ্ট্য হিসেবে দেখা দেয়। চলুন এরকম কিছু বিষয় জেনে নেই-
- সৃষ্টিকর্তা একজন, শুধুমাত্র তারই উপাসনা করা উচিত। খ্রিস্টানদের ট্রিনিটিকে অনেকে বহুত্ববাদ বললেও সেক্ষেত্রে একাধিক সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বা, উপাসনা করা হয় না।
- অনেক নবীই এই ধর্মগুলোতে কমন
- সবাই নবী আব্রাহামের সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে(ইয়াহওয়েহ, যিহোভা বা, আল্লাহ)
নিচের চিত্রে কিছু ছোট(অনুসারী বিবেচনায়) আব্রাহামিক ধর্ম, অনুসারী সংখ্যা, প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতীক দেখে নিন-
ছবির কৃতিত্বঃ Islam90,ছবিটি Creative Commons Attribution-Share Alike 3.0 Unported লাইসেন্সের আওতাভুক্ত।
মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস এই ধর্মের অংশ। এটা মনে করা হয় যে এই জীবনের পরে নশ্বর শরীর না থাকলে আত্মা বেঁচে থাকবে, পুনরুত্থিত জীবনে কি ঘটবে সেটা নিয়ে বিভিন্ন ধর্মে মতবিরোধ আছে
ভারতীয় ধর্ম
ধম্ম কি?
শুনতে একরকম মনে হলেও ধর্ম আর, ধম্ম এক নয়। ধম্মপদ নামে একটি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ আছে যেখানে বুদ্ধের বাণী লিপিপদ্ধ করা আছে কাব্যিক ভাষায়। এই বইয়ে মোট ২৬ টি অধ্যায় এবং ৪২৩ টি শ্লোক আছে।
ধম্ম শব্দের কাছাকাছি অর্থ হচ্ছে তুলে ধরা বা, রক্ষা করা। ধম্মপদের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা পৃথিবীর শৃঙ্খলা রক্ষা করার কথা বলেন। গৌতম বুদ্ধের বাণীর এই গ্রন্থ তাই, সবার কাছেই সমাদৃত।
- হিন্দু ধর্ম
- বৌদ্ধ ধর্ম
- জৈন ধর্ম
- শিখ ধর্ম
- আজীবিক ইত্যাদি
চীনের এবং জাপানের ধর্ম
চীন, জাপান, কোরিয়া এইসব দেশে এই ধরণের ধর্মগুলো জনপ্রিয়। এগুলোকে অনেকে ধর্ম না বলে দর্শন বলেন
আফ্রিকান ধর্ম ও অন্যান্য
পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে যাদের রয়েছে আলাদা ধর্মবিশ্বাস। মূলধারার ধর্মগুলোর ভেতরে এগুলোকে অনেক সময় ফেলা যায় না। অন্যন্য অঞ্চলের মত আফ্রিকার বিভিন্ন জাতির মধ্যে এরকম আলাদা আলাদা বিশ্বাস প্রচলিত আছে এবং আগেও ছিল।
আফ্রিকান নৃ-গোষ্ঠীর ধর্মের বৈশিষ্ট্য
কিছু বৈশিষ্ট্য না বললে পুরো ব্যাপারটা আপনাদের কাছে স্পষ্ট হবে না। এমন কিছু বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-
- পূর্বপুরুষের আত্মার মাধ্যমে স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করার রীতি
- পশু, পাখি, শাকসবজি এগুলো পূর্বপুরুষকে উৎসর্গ করা
- অনেকে মনে করেন বাস্তব জগত চক্রাকারে আবর্তিত হয়। নতুন শিশুর জন্ম এবং বৃদ্ধদের মৃত্যুর মাঝে যোগসূত্র আছে
- চাঁদ, তারা, গ্রহ, নক্ষত্র এগুলোকে পবিত্র কোন শক্তি মনে করা
এরকম আরো বিভিন্ন রকম বিশ্বাস বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে আলাদা আলাদাভাবে রয়েছে, আবার এগুলোর মাঝে অনেক মিলও আছে।মধ্য আফ্রিকা, পূর্ব আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকা সব জায়গার বিশ্বাসের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
আফ্রিকার কথা যখন হচ্ছে, তখন মিসরকে অগ্রাহ্য করি কিভাবে। মিসরীয় ফারাওরা এক বিশেষ ধরণের বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিলেন। রাজারা অনেকেই নিজেদের স্রষ্টার অংশ মনে করতেন
এখানে সবগুলো ধর্ম এবং আলাদাভাবে এইসব ধর্ম বলতে কি বুঝায় সেটি ব্যাখ্যা করি নাই, তবে আপনাদের অজানা অনেক তথ্য এই লেখাটি থেকে হয়তো পেতে পারেন।
আরো পড়ুন-
- https://blog.bdnews24.com/zakirhossain281075/180899 (bdnews24 ব্লগের একটি লেখা)
- https://www.newworldencyclopedia.org/entry/Religion (একটি এনসাইক্লোপিডিয়ার তথ্য)
- http://www.adherents.com/Religions_By_Adherents.html (বিশ্বাসীদের সংখ্যার ভিত্তিতে খুব সুন্দরভাবে লিস্ট করা আছে)
- https://curlie.org/Society/Religion_and_Spirituality (বিভিন্ন নাম আর তথ্য এখানে পাওয়া যাবে)
