গল্প এক পুরুষ বারো বিয়ে আফছানা খানম অথৈ

0

 

গল্প
এক পুরুষ বারো বিয়ে
আফছানা খানম অথৈ

গরীব কৃষকের মেয়ে তাছলিমা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছে।আভাব অনটনের সংসার তাই আর সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।অভাব যার নিত্য দিনের সঙ্গী তার লেখা পড়া এগুবে কি করে?তাছাড়া গরীবদের সহযোগীতা করবে বা কে? একমাত্র বড়লোকদের উপহাস হলো তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।তবু ও যতদিন হায়াত আছে ততদিন মানুষের পেটের ভাত যোগাড় করার জন্য কিছু একটা করতে তো হবে।বাবার একার উপার্জনে সংসার চালানো সম্ভব না।তাছলিমা কিন্তু বেকার বসে নেই।নকশিকাঁথা,শিতল পাটি,দর্জি এসব ভালোভাবে শিখে ফেলেছে।তাদের অভাব অনটনের সংসারে ইনকামের একটা পথ তৈরী করল সে।লোকজন প্রোডাক্ট তৈরীর অর্ডার দিয়ে যায়, সেই সময়মত মাল ডেলিভারী দেয়। তার নিপুন হাতের কারুকাজ অতি অল্প সময়ের মধ্যে এলাকাতে ছড়িয়ে পড়ল।লোকজনের উপছে পড়া ভিড়।তাদের অসচ্চল পরিবারে সচ্চলতা ফিরে আসতে শুরু করল।তাছলিমার ছোখে মুখে আনন্দের রেখা ফুটে উঠল।সুখের স্বপ্ন দেখতে শুরু…।
বর্তমানে আমাদের সমাজের এক শ্রেণির কিছু কিছু লোভী পুরুষ আছেন যারা চাকরীজিবী ও কর্মট মেয়ে ছাড়া বিয়ে করেন না।গরীব বেকার অপদার্থ ছেলেরা যৌতুক,কর্মট, আর বড়লোক লোভী চাকরীজিবী ছেলেরা চাকরীজিবী মেয়ে খুঁজে তবে বিয়ে করেন।এ হলো আমাদের বর্তমান সমাজের কৃষ্টিকালচার্ড।
তাছলিমার বাবা করিম আলী ক্ষেত নিড়ানি দিয়ে সবেমাত্র বাড়ি ফিরল।এমন সময় তাদের জমিদার জাবেদ মিয়া উচু গলায় ডাক দিলো।
করিম আলী এগিয়ে গিয়ে সালাম দিয়ে নম্রস্বরে জিজ্ঞেস করলেন,
জমিদার সাহেব এ অবেলায় কি মনে কইরা?
তোমার মেয়ের জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
জমিদারকে সম্মানের সহিত বসতে দিলো করিম আলী। তারপর পাত্রের ভালো মন্দ যাছাই বাছাই করার প্রসঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন,
পাত্র ভালো।মেয়েকে কর্ম করে খাওয়াতে পারলে তো হলো। তাছাড়া মিন্টু ঘটক ছেলের ব্যাপারে ভালো সাপোর্ট দিয়েছে।
বলতে না বলতে মিন্টু ঘটক পাত্রকে নিয়ে হাজির।জমিদার সহ বিয়ের কথা পাকা করলেন।ছেলের তেমন কোন দাবি দাওয়া নেই,তবে মেয়ের জন্য এক ভরি অলঙ্কার, আর ছেলের হাতের জন্য একটা আংটি পরনের কাপড় ছোপড় ইত্যাদি।জমিদার একজন মাণ্যগন্য ব্যক্তি তার উপরে করিম আলীর মালীক উনার কথা শিরেধার্য।বিয়ে আজকে হবেই।কারণ পাত্রের বাজার খুব শর্ট।
দেরী করলে পাত্র হাত ছাড়া হয়ে যাবে।এই ভয়ে দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
ছোট খাটো আয়োজন। তবুও চারদিকে বিয়ের ধুম পড়ে গেল।ইতিমধ্যে তাছলিমার সাথে অনেক মেয়ের সখ্যতা গড়ে উঠেছে।বিশেষ করে পাশের বাড়ির মাস্টারের ডিগ্রীতে পড়ুয়া মেয়ে মুনার সাথে তার ভালো রিলেশন।তারা দুজন ভালো বন্ধু।তার কানে খবরটা যেতে সে ছুটে এসে রাগের স্বরে তাছলিমার মাকে বলে,
চাচি আমাকে না জানিয়ে তাছলিমাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন?
কি করব মুনা ,হঠাৎ করে জমিদার সাহেব কথা পাকা করলেন।তাই কাউকে বলতে পারলাম না।মুনা তুমি আর রাগ করে থেকো না।তাছলিমার বিয়ে শেষ হলে তোমার ছুটি।এর ব্যতিরেকে তুমি যেতে পারবেনা।
মুনা এগিয়ে গেল বরকে দেখতে,কিন্তু এ কি! বর সেজে বসে আছে এক মধ্য বয়সী লোক। মুনার সন্দেহ হলো,বরকে তার অবিবাহিত মনে হলো না।তিনি তাছলিমার বাবাকে ডেকে বলেন,
চাচা পাত্রের ব্যপারে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়েছেন তো?
করিম আলী আমতা আমতা করে বলে,
ইয়ে মানে জমিদার সাহেব ভালো বলেছেন এ আরকি।
তবু চাচা সংসার বলে একটা কথা। এটা তো দু’দিনের জন্য নয়।চিরদিনের জন্য।তাই বলছি বিয়ে পড়ানোর পূর্বে নিজস্ব লোক দ্বারা ভালো করে জানা শুনা দরকার।আমার লোকটাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না।
মুনার কথা মতো করিম আলী দু’জন সমাজ সেবক ও তার ছোট ভাই তালেব আলীকে পাঠিয়ে দিলেন।তারা ঘটানাস্থলে উপস্থিত হয়ে বর আবুল কাসেমের ব্যপারে জানতে চাইলে, লোকজন মজার হাসি হেসে বলে,
কি! আবুল কাসেম আবার ও বিয়ে করবার চাইছে, হা…হা..হা…..হা।
আরে ভাই আপনারা পাগল নাকি? ভালো কইরা না জাইনা না শুইনা মেয়ে বিয়া দিতাছেন?আরে ওকে দেইখ্যা কি আবিয়াতি মনে অয়?
লোকজন কি আর থেমে থাকে তার কু’কুীর্তির সব ঘটনা বলে দিলো।আবুল কাসেম বারো বিয়ে করেছে।তার স্বভাব চরিত্র ভালো না। অকর্মা অপদার্থ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে অবিবাহিত সেজে যৌতুক নিয়ে বিয়ে করে। তারপর টাকা শেষ হলে আর ও টাকা নিয়ে আসার জন্য বউদের মারধর করে। শুধু তাই নয়, খাওন দাওন পরনের কাপড় ছোপড় কিছুই দেয়না।এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বউরা তাকে ছেড়ে চলে যাই।একেবারে যে বউহীন তা নয়। বর্তমানে তার দুটো বউ আছে।তাদের ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে।দু’মেয়ে বিয়ে ও দিয়েছে।ছিঃছিঃ এর পর ও সে অবিবাহিতা সাজে? কি সব নোংরামী।
সব তথ্য নিয়ে তারা গন্তব্য স্থলে ফিরে গেল।
এদিকে দু’বউয়ের কানে খবরটা যেতে তারা কি করলো দেখেন।ছুটে গেল উপজেলা সদরের থানায়। তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও বহু বিয়ের অভিযোগ তুললেন।দারোগা সাহেব ডায়েরী করে নিলেন। কিন্তু আসতে দেরী করছেন। মানে কিছু খরচ চাইলেন।তাদের কাছে টাকা নেই বলতেই তারা আমতা আমতা ভাব দেখিয়ে জরুরী কাজের অযুহাত দেখাল।এবং পরে যাওয়ার কথা বলে দু’বউকে চলে যেতে বলেন।তখনি গর্জে উঠে তারা বলল,
আপনারা যাবেন না ক্যান বুঝবার পারছি।ঘুষ দিতে পারি নাই বইলা।আমরা গরীব মুরখ্য বইলা ভাবতাছেন আইন কানুনের কোন খবর রাখিনা।বর্তমান প্রধান মন্ত্রী মাননীয়া শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশ আইনের লোকের প্রতি, নারী নির্যাতন,বহু বিবাহ, বাল্য বিয়ে এসব জি.ডি করতে ঘুষ কিংবা কোন রকম টাকা দাবী করতে পারবে না।করলে সঙ্গে সঙ্গে কিছু নাম্বারে ফোন করতে বলছেন।চল আমরা পাশের বাড়ির সীমার কাছ থেইক্যা ফোন নাম্বার লইয়া সব বইলা দিমু।
দারোগা সাহেব তাদের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন,তারপর বলেন কি আশ্চার্য ওরা এতসব জানল কি করে? এক্ষণি না গেলে তো চাকরীর বারোটা বাজবে। তাই আর দেরী না করে
দু’বউকে সঙ্গে করে তার দলবল নিয়ে রওয়ানা দিলো।

এদিকে তাছলিমার বাবা-মা খবরটা শুনে স্তব্ধ, বিয়ের কাজকর্ম বন্ধ। জমিদার কিন্তু থেমে থাকলেন না।বর ও ঘটক দু’জনকে বেঁধে কষে মাইর।তারপর অবিবাহিত সেজে একজন অবলা মেয়ের সম্মান হানী ও বিয়ের খরচ বাবাৎ বিশ হাজার টাকা জরিমানা করলেন। এবং পুলিশের হাতে সোপর্দ করার জন্য মুঠোফোন হাতে নিলেন।তখনি দু’বউ পুলিশ নিয়ে উপস্থিত। আবুল কাসেম তাদেরকে দেখে বলে,
বউ তোমরা এই হানে?
হুম আমরা এই হানে। তুমি বার বার বিয়া করবা,আর আমরা চুপ কইরা থাকুম? দারোগা সাহেব ওরে কড়া মাইর দিয়া বিয়া করবার সাধ মিঠাইয়া দেন।

অর্ডার দেয়া মাত্রই দারোগা সাহেব তাকে মারতে শুরু করলো।
মেরে একেবারে রক্তাক্ত, আর সহ্য করতে পারছে না।দু’বউ কিন্তু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।আবুল কাসেম তাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
বউ আমারে বাঁচাও। আমি আর বিয়া করুম না। আমারে ক্ষমা কইরা দাও।আমি অনেক শিক্ষা পাইছি।আমি ভালো অইয়া যামু। আর কোন মাইয়ার জীবন নষ্ট করুম না।দাঁড়িয়ে রইলা ক্যান, আমারে বাঁচাইয়া লও।
এতক্ষণ পরে দু’বউয়ের টনক নড়ল।খারাপ হলেও স্বামীতো,তাই দারোগা সাহেবকে মারতে নিষেধ করলেন।জমিদার দারোগা আরও দু’চারজন সহ বৈঠকে বসলেন।আবুল কাসেমকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দু’বউ অনুরোধ করলো।কিন্তু জমিদারের রায়, জরিমানা না দেয়া পর্যন্ত তাকে ছাড়া হবে না।কি আর করা জরিমানা দিয়ে আবুল কাসেমকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল তার বউরা। তারপর মুনা জমিদার সাহেবকে ডেকে অন্ধর মহলে বৈঠকে বসলেন।জমিদার মুনাকে দেখে স্নেহের স্বরে বলে উঠল,
মুনা মা মনি তোমাকে স্যালুট। তোমার উছিলায় আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানীতে তাছলিমার মতো একজন ভালো মেয়ের জীবন আজ রক্ষা পেল।আল্লাহপাক তোমার ভালো করুক দোয়া করি।
জমিদার চাচা বেয়াদবি মাফ করবেন।আমার কিছু কথা আপনাকে শুনতে হবে।
মুনা মা মনি বল কি তোমার কথা। আমি সব শুনব।
চাচা আপনারা সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি। গরীব দুঃখী নিরীহ মানুষ বিপদে পড়লে আপনাদের কাছে আসে সঠিক সিদ্ধান্ত ও ন্যায় বিচারের জন্য।কিন্তু আপনারা যদি তাতে ব্যর্থ হন তাহলে এই সমস্ত মানুষ নির্যাতিত হয়ে ধুকে ধুকে মরবে।
আপনাদেরকে কেয়ারফুল হতে হবে।আল্লাহপাক পবিত্র কালামে এরশাদ করেছেন।হে মনুষ্য জাতি তোমরা যদি বিচার কর,তাহলে ন্যায় বিচার করবে, অন্যথায় না।কারণ অন্যায় বিচারকের স্থান হবে পরকালে জাহান্নামে।
তাই বলছি গরীবদের ক্ষেত্রে ন্যায়কে অন্যায়, আর বড়লোকদের ক্ষেত্রে অন্যায়কে ন্যায়, বলে সাপোর্ট করবেন না। কারণ রোজ কেয়ামতের মাঠে একদিন সবাইকে সত্যের মুখোমুখি হতে হবে।
মুনা মা মনি আমি তোমার যুক্তি সঙ্গত ও সত্য বানী শুনে মুগ্ধ হলাম।শুধু তাই নয় ভবিষ্যতে আল্লাহপাকের পবিত্র কালামের বিধান অনুযায়ী ন্যায় বিচার প্রতিষ্টা করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো।কারণ তোমার বক্তব্য আজ আমাকে সঠিক আলোর পথ দেখার সন্ধান দিয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ চাচা শুনে খুশি হলাম।তবে আর একটা কথা, গরীব দুঃখী অসহায় মেয়েদের বিয়ের কথা পাকা করার পূর্বে পাত্র সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে তবে চুডান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।তা না হলে সমাজে বহু বিবাহের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে যাবে।আর নারীরা প্রতি পদে পদে লাঞ্চিত, নির্যাতিত হবে।তাই আপনাদেরকে কেয়ারফুলি বিয়ে শাদীর কাজ করতে হবে।তা না হলে “এক পুরুষ বারো বিয়ে” করার পরও আরো বিয়ে করতে চাইবে।
জমিদার সাহেব হেসে উঠে বলেন,
মুনা মা মনি আমাদেরকে আর লজ্জা দিওনা। এমন মজার ঘটনা আর ঘটেনি তো তাই তেমন একটা কেয়ার করিনি।আজ থেকে আর কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেবোনা, দেবো না।বিশেষ করে পাত্র সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে তবে বিয়ের কথা পাকা করবো। আর সত্য সঠিক ও ন্যায়ের পথে চলতে সর্বদা চেষ্টা করব।


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

উপন্যাস পর্ব এগারো মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয় আফছানা খানম অথৈ

উপন্যাস পর্ব "এগারো" মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয় আফছানা খানম অথৈ ঝুমার বিয়ে হলো প্রায় সপ্তাহ খানেক হলো।স্বামী রিফাত আলম

লিখো নিয়ম মেনে

  ছড়া লিখতে আগে শিখুন অক্ষর কাকে বলে, মাত্রা নিয়ম জানতে হবে ছন্দে লিখতে হলে।   মাত্রা বৃত্ত স্বরবৃত্ত আর

ফুল (১১)

শুধু তোমার জন্য জীবন, তোমার জন্য মরণ সেই তুমি আমাকে ভালবাসনা তাহলে?  মরণ এন্ড মরণ একবার যদি বলতে আমায় ভালবাসি

সম্যক প্রয়াস

পৃথিবী আজ বদলে যাচ্ছে ভীষণ দুর্দম... রূপে, উদ্ভিদ প্রাণী হুমকির মুখে উষ্ণতার গ্ৰাস কুপে। আজ জলবায়ু পাল্টে যাচ্ছে বরফ যাচ্ছে

Leave a Reply