নতুন যারা ব্লগিং বা, ইউটিউবিং করে গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয় করার কথা ভাবছেন তাদের জন্য এই লেখাটি লিখছি। অনেক রকম ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, সেগুলো দূর করা দরকার। এটা সত্যি যে এডসেন্স এর মাধ্যমে এড দেখিয়ে আয় করা যায়। আবার, বিকল্প অনেক Advertising Network ও আছে।
এডসেন্স পেলেই যে হাজার হাজার ডলার একাউন্টে আসতে থাকবে এই ধারণাটা ভুল। অনেকেই আছেন, যারা ভেবে বসে আছেন যে আমার ইউটিউব চ্যানেলে বা, ব্লগে এডসেন্স পেলে প্রচুর টাকা পেতে থাকবো, ব্যাপারটা এমন নয়। তবে, ভালো সংখ্যায় ভিজিটর বা, ভিউয়ার পেলে নিশ্চয়ই পাবেন।
এডসেন্স মিথ
অনেক রকম ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। সেগুলো নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করছি। যেমনঃ
- এডসেন্স এপ্রুভাল পেলেই ডলার আর, ডলার
- প্রতি ১০০০ ভিউতে ১ ডলার করে পাওয়া যায়
- বাংলা কনটেন্টে টাকাই পাওয়া যায় না
- এডসেন্স এর চিঠি না পেলে একাউন্ট শেষ
- প্রতিটি চ্যানেলের জন্য আলাদা গুগল একাউন্ট লাগবে
- ইংরেজীতে কন্টেন্ট বানালে প্রচুর টাকা পাওয়া যায়
এগুলোর কোনটাই সত্যি না, এগুলো প্রচলিত মিথ্যা। পুরো লেখাটি পড়লে ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন বলে আশা করছি।
ব্লগিং বা, ইউটিউবিং করে কত টাকা আয় করা যায়?
John Lee Dumas মাসে প্রায় দুই লাখ ডলার আয় করেন। Pat Flynn এর আয় দেড় লাখের উপরে। আসল ব্যাপার হচ্ছে আপনি নিজে কত আয় করতে পারবেন। এটা নির্ভর করে আপনার ব্লগের ভিজিটর কারা, এবং তারা কোন ধরণের পণ্য কেনাকাটা করেন তার উপর।
বাংলা ব্লগে অনেক কম টাকা পাওয়া যায়। এবং বাংলাদেশীদের জন্য ব্রিটিশ বা, আমেরিকান ভিউয়ারদের উপযোগী আর্টিকেল লেখাটা বেশ কঠিন। তবে, চেষ্টা করলে অসম্ভব নয়। বাংলাদেশী অনেক ব্লগার আছেন যারা ইংরেজীতে কন্টেন্ট তৈরি করে অনেক টাকা(আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে) আয় করেন।
প্রতি ১০০০ ভিউতে কত টাকা পাওয়া যায় এটি একটি কমন প্রশ্ন যা ইউটিউব বা, ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট ক্রিয়েটরেরা করে থাকেন। ০ টাকা হতে পারে, ১০০০ টাকাও হতে পারে। বাংলাদেশের এভারেজ আমার জানামতে ১ ডলারের কাছাকাছি হবে ব্লগের জন্য।
আর, ইউটিউবে টেকনোলজি নিশে এরকম পাওয়া যাবে। তবে, Entertainment এর ক্ষেত্রে এটা আরো কম, হয়তো ৫০০০-১০০০০ ভিউতে এক ডলার। এই টাকাটা আসলে ভিউ বা, ক্লিকে পাওয়া যায় না। এটা মূলত বিজ্ঞাপনদাতাদের বিড অনুযায়ী পাওয়া যায়।
কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করে-
- আপনার ব্লগের বা, ইউটিবের ভিজিটর কারা
- ভিজিটরদের আগ্রহ কি কেনার দিকে- মনে করুন চা নিয়ে একটা ব্লগ আছে আপনার, ভিজিটরেরা চা এর প্রতি আগ্রহী, বিজ্ঞাপনও পাবেন চায়ের
- একই নিশে বেশী সংখ্যায় আগ্রহী ভিজিটর থাকলে বিজ্ঞাপন বেশী পাওয়া যায়, CPC স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে
টাকার জন্য যারা ব্লগিং, ইউটিউবিং বা, যাই করুক তারা সফল হয় না। সুতরাং, আপনার পছন্দের বিষয় নিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করতে থাকুন। আর, মানুষের উপকার হবে, আনন্দ পাবে বা, কাজে লাগবে এমন কিছু তৈরি করুন। যখন অনেক ভিজিটর বা, ভিউয়ার থাকবে তখন আপনি এডসেন্স ছাড়াও আপনার চ্যানেল বা, ওয়েবসাইটকে বিভিন্নভাবে মনিটাইজ করতে পারবেন।
এডসেন্স এর চিঠি পেলে কি হবে?
কারো যদি এডসেন্স একাউন্ট থাকে এবং সেটার মাধ্যমে নিজের ব্লগ বা, চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে ১০ ডলার আয় করতে পারেন, তাহলে আপনার কাছে একটি চিঠি পাঠাবে গুগোল। এই চিঠির কোড এডসেন্সের কাছে দেয়ার মাধ্যমে আপনার ঠিকানা ভেরিফাইড হবে।
অনেক সময় বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে চিঠি পৌছায় না, সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার চিঠি চাইতে পারেন। আর, শেষ অপশন হিসেবে ন্যাশনাল আইডি কার্ড দিয়েও এটা ভেরিফাই করা যায়। এই চিঠি পেলে আপনার আয় বাড়বেও না, কমবেও না। এটা পাওয়ার অর্থ হচ্ছে আপনি একটি ধাপ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছেন।
বাংলাদেশে গড়ে ১ মাসের মধ্যে চিঠি চলে আসে, এরপরও না পেলে পোস্ট অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। মনে রাখবেন, ভেরিফিকেশন ছাড়া কিন্তু আপনি টাকা তুলতে পারবেন না। এই কারণে, এড্রেস ভেরিফাই এর কাজটা মনোযোগ দিয়ে করতে হবে।
কোন ভাষায় কন্টেন্ট তৈরি করলে বেশী আয় করা যাবে?
অনেকেই ইংরেজীতে কন্টেন্ট তৈরির পরামর্শ দেন, কারণ ইংরেজীতে CPC বেশী পাওয়া যায় এবং সারা পৃথিবীর ভিজিটর পাওয়া যায়। সেই তুলনায় বাংলায় CPC অনেক কম। RPM ইংরেজী ব্লগে যেখানে ১০-১৫ ডলার কমপক্ষে পাওয়া যায়, সেখানে বাংলায় সর্বোর্চ ১/২ ডলার।
আপনার জন্য কোনটা ভালো তা নির্ভর করছে আপনার উপরঃ হতে পারে আপনি আমেরিকান মুভি দেখেছেন , বই পড়েছেন, স্কুল, কলেজে পড়াশোনাতেও ভালো এবং ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা আছে। ভান করা দক্ষতার কথা বলছি না, সত্যি সত্যি দক্ষতা আছে, তাহলে ইংরেজীতে লেখাটাই আপনার জন্য ভালো।
যদি ব্যাপারটা এমন হয়, যে ইংরেজীতে লেখা দূরে থাক, পড়তে গেলে অনেক বার ডিকশনারি দেখা লাগে। কিন্তু বাংলায় পাতার পর পাতা অনায়াসে লিখে যেতে পারেন, আপনার জন্য ব্যাপারটা ভিন্ন। ঘটনা বলি- একজন বিখ্যাত আমেরিকান ব্লগার তার ব্রিটিশ বন্ধুর উদাহরণ দিয়েছিলেন–
দুজনে একসাথে ফটোগ্রাফি নিয়ে একটি ব্লগ শুরু করেছেন, দুজনেরই এই ব্যাপারে আগ্রহ আছে, এবং একইরকম স্ট্র্যাটেজিতে এগিয়েছেন। বছর শেষে দেখা গেলো আমেরিকান ব্লগার সফল, আর ব্রিটিশ ব্লগার ব্যর্থ। কারণ, দুজনেরই টার্গেট অডিয়েন্স ছিল আমেরিকান। কিন্তু ব্রিটিশ ব্যক্তির ইংরেজী ব্লগের রিডারদের ইংরেজীর সাথে পুরোপুরি মেলে না। যেমনঃ learned(American), learnt(British).
বাংলাদেশীদের শুরু করা উচিত বাংলা ব্লগ দিয়ে। এরপর, ইংরেজীর দক্ষতা থাকলে টার্গেট কান্ট্রির জন্য ব্লগিং করা যেতে পারে, ইউটিউবিং এর ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। নিজের মতো করে লিখে বা, ভিডিও লেআউট তৈরি করে। শুধু কথা বলার জন্য native কাউকে Fiverr থেকে ভাড়া করতে পারেন। বা, লেখার টোন native কাউকে দিয়ে বদলে নিতে পারেন।
আলাদা চ্যানেলে বা, ওয়েবসাইটে কি আলাদা এডসেন্স একাউন্ট লাগবে?
না, ভাই, লাগবে না। আলাদা একাউন্ট থাকলে ব্যান খাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। মোটামুটি ধরে নিতে পারেন ব্যান খাবেন। একই গুগল একাউন্ট দিয়েই আপনি অনেকগুলো ইউটিউব চ্যানেল এবং অনেকগুলো ওয়েবসাইট মনিটাইজ করতে পারবেন। এর জন্য নতুন করে কোন একাউন্ট তৈরির প্রয়োজন নেই।
বাংলা কনটেন্টে অনেক কম টাকা পাওয়া যায় এটা সত্যি। তবে, বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা এখন পৃথিবীতে ২৪ কোটির বেশী। এত বড় অডিয়েন্সের কাছে সহজেই আপনি পৌছে যেতে পারবেন। অনেক বেশী কম্পিটিশনের মুখোমুখি আপনাকে হতে হবে না। আর, আমাদের ভাষাগত সুবিধার ব্যাপারটা তো আছেই।
সময় থাকলে আরো পড়তে পারেনঃ
- বাংলাদেশে এডসেন্স থেকে টাকা তোলার পদ্ধতি কি?
- গুগল এডসেন্স টিপস ২০২১
- গুগল এডসেন্স একাউন্ট ব্যান হওয়ার প্রধান কারণ
- ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়
Hooligan Media দিয়ে মনিটাইজেশন অনেক সহজ। পেমেন্ট ও ভালো। এটা দিয়া website, blog, youtube channel সবই মনিটাইজ করা যায়। রেগুলার পেমেন্ট।
এটা কেন ভালো, সেটা যদি বলতেন- তাহলে সবার উপকার হতো। সত্যি বলছি, এর আগে এই নাম শুনি নাই।
Nice