দারুচিনিকে আমরা একটি মশলা হিসেবেই চিনি। গাছের ছালের মতো এই মশলা খেতে যেমন মিষ্টি, তেমন ঝাল। প্রাচীন কাল থেকে দারুচিনি ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এবার আলোচনা করবো।
দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা
প্রাচীনকাল থেকেই দারুচিনি খাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। তখন থেকে দারুচিনিকে প্রধানত একটি ভেষজ উপাদান হিসেবেই খাওয়া হচ্ছে। মহা উপকারী দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা ভারতীয় উপমহাদেশের চিকিৎসকরা প্রথমে প্রচলন করেন করেন। তাদের দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা আগে থেকেই জানা ছিল।
দারুচিনিতে রয়েছে মহা উপকারী আন্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এমন একটি উপাদান যা আমাদের শরীরের বহিরাগত রোগ জীবাণুকে প্রতিহত করতে পারে। তাই দারুচিনি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
হার্টের জন্য দারুচিনি অত্যন্ত উপযোগী। আমরা জানি আমাদের শরীরে দুই প্রকার কোলেস্টেরল রয়েছে। যার মধ্যে একটি ভালো কোলেস্টেরল এবং অন্যটি খারাপ কোলেস্টেরল। এই খারাপ কোলেস্টেরল মানুষের হৃদরোগের প্রধান কারণ।
আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু দারুচিনি আমাদের শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সহায়তা করে। যারা হৃদপিণ্ডজনিত নানাবিধ সমস্যায় ভুগছেন তাদেরকে ডাক্তার এক বা দুই টুকরো দারুচিনি খেতে পরামর্শ দেন।
দারুচিনির আরেকটি উপকারী বৈশিষ্ট্য হলো এটি রক্তের শর্করার পরিমাণ কমায়। আপনারা জেনে থাকবেন আমাদের শরীরের রক্তে যখন শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় তখন তাকে ডায়াবেটিস বলে।
কিন্তু দারুচিনিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের শর্করার পরিমাণ কমায় এবং ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। তাই দারুচিনিকে এন্টি ডায়াবেটিক ভেষজ ঔষধ বলা হয়।
ওজন বাড়াতে চাইলে দারুচিনি খাওয়া যেতে পারে। দারুচিনি আমাদের শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং হজমের শক্তি বাড়ায়। এছাড়া যাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল, তারাও দারুচিনি খেতে পারেন। কারণ দারুচিনি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা এতেই শেষ হয়নি। এগুলো ছাড়া দারুচিনিতে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ, যা আমাদের হাড়কে শক্ত করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি পেটের সমস্যা হলে দারুচিনি খাওয়া উচিত। দারুচিনি খেলে এসিডিটি হয় না এবং পেটের ব্যথাও কমে যায়
আমরা প্রায়শই খাবারে মসলার মসলা হিসেবে দারুচিনি ব্যবহার করি। কিন্তু দারুচিনি খাবারে ব্যবহার করার চেয়ে চিবিয়ে খাওয়া বেশি উপকারী। দারুচিনি চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা যথেষ্ট রয়েছে।
যদি দারুচিনি মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে রান্নার সময় দারুচিনির সকল এন্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য খনিজ উপাদান ভেঙ্গে যায় এবং সেগুলো আমরা গ্রহণ করতে পারি না।
তাই বিশেষজ্ঞরা দারুচিনিকে চিবিয়ে খেতে পরামর্শ দিয়েছেন। দারুচিনি চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা জানার পর এখন থেকে দৈনিক এক টুকরো করে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
দারুচিনির ক্ষতিকর দিক
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে এমন একটি মহা উপকারী উপাদানেরও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনই কিছু অপকারিতাও আছে। দারুচিনি আমাদের বেশি পরিমাণে খাওয়ার প্রয়োজন নেই। দৈনিক এক থেকে দুই টুকরো খেলেই যথেষ্ট।
কিন্তু কেউ যদি বেশি পরিমাণে দারুচিনি খাবার শুরু করেন সেক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বেশি পরিমাণ দারুচিনি খেলে আমাদের রক্তে নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি হয়ে। যা মনে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া বেশি দারুচিনি খেলে লিভারেও এর প্রভাব পড়তে পারে। দারুচিনি আমাদের রক্তের শর্করার পরিমাণ কমায় ঠিকই কিন্তু পাশাপাশি শরীর থেকে রক্তের পরিমাণও কমিয়ে দেয়। তাই বেশি দারুচিনি খেলে রক্তশূন্যতার আশঙ্কা দেখা দেয়।
বেশি দারুচিনি খেলে কি হয় তা নিম্নে তালিকাবদ্ধ করা হলো–
দারুচিনি গুড়ার উপকারিতা
আমরা এতদিন দারুচিনিকে মসলা হিসেবে কিংবা চিবিয়ে খেয়ে আসছি। কিন্তু দারুচিনিকে যে গুঁড়ো করেও খাওয়া যায় সে সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখি না। পাউরুটির সাথে দারুচিনি গুড়ো খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন খাবারেও দারুচিনি গুড়ো ব্যবহার করা যেতে পারে।
পূর্বে দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচলা করেছি। এখন দারুচিনি গুড়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। আমরা আগেই পূর্বেই জেনেছি দারুচিনি খেলে কোলেস্টেরল কমে যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে, লিভার সুস্থ থাকে, ওজন কমায় ইত্যাদি।
তবে দারুচিনি গুড়া করে খেলে এসবের পাশাপাশি বাত রোগ থেকেও নিরাময় পাওয়া সম্ভব। এছাড়া যাদের ওজন কম, ওজন বাড়ানোর কথা চিন্তা করছেন তাদের জন্য সকালে নাস্তা হিসেবে দারুচিনি গুড়ার সাথে পাউরুটি একটি উপযুক্ত খাদ্য হতে পারে।
দারুচিনি গুড়ায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এছাড়া দারুচিনি গুড়া খাওয়ার আরেকটি বড় উপকারিতা হলো এটি আমাদের মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।
দারুচিনি চা এর উপকারিতা
চা বাঙালির প্রতি প্রিয় একটি পানীয়। অনেকে দুধ চা কিংবা লাল চা খেয়ে থাকেন। চায়ের আবার হরেক রকম প্রকারভেদ রয়েছে। অনেকেই চায়ের সাথে দুধ, আদা, মেথি, লবঙ্গ, কমলা, মালটা, তেতুল, লবণ, চিনি ইত্যাদি মিশিয়ে খেয়ে থাকেন।
আবার অনেকেই চায়ে দারুচিনি ব্যবহার করেন। দারুচিনি চা এর উপকারিতা জানলে আপনিও এখন থেকে প্রতিদিন দারুচিনি চা খাওয়ার কথাই ভাববেন।
যারা যাদের ডায়াবেটিস রোগ রয়েছে তারা প্রধানত দারুচিনি চা খেয়ে থাকেন। এই চায়ে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যার রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে আনে। আমরা জানি রক্তের শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস রোগ হয়ে থাকে।
এছাড়া দারুচিনিতে যেমন রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, তেমনি চায়ের পাতাতেও রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যার কারণে দারুচিনির চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই উৎকৃষ্ট মানের একটি পানীয়। যারা সর্দি-কাশি জ্বর ইত্যাদি রোগে ভুগছেন তাদের জন্য দারুচিনি চা একটি জাদুকরি ঔষধ।
দারুচিনি খাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: শীতে দারুচিনি কিভাবে ব্যবহার করবেন?
উত্তর: শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ায় গরম গরম চা আমাদের সকলের প্রিয়। শীতকালে চায়ের সাথে দারুচিনি খাওয়া যেতে পারে। কারণ এই দারুচিনি চায়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পরিমাণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শীতকালের বিভিন্ন রোগ, যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি থেকে আমাদের রক্ষা করে। প্রকৃতপক্ষে শীতকালে দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করাই যাবে না।
প্রশ্ন: দারুচিনি কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?
উত্তর: হ্যা, দারুচিনি ওজন কমাতে সহায়তা করে। যাদের শরীরের ওজন বেশি কিংবা ওজন কমাতে ইচ্ছা পোষণ করছেন তারা নিয়মিত দারুচিনি খেতে পারেন। দারুচিনি আমাদের শরীরের হজম শক্তি বাড়ায়।
প্রশ্ন: দারুচিনি গুড়া খাওয়ার নিয়ম কি?
উত্তর: দারুচিনি গুড়া পাউরুটি সহযোগে খেতে পারেন। আবার দারুচিনি গুড়া ও মধু দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন দারুণ এক পানীয়। এক চামচ মধু আর এক চিমটি দারুচিনি গুড়া নিয়ে হাল্কা গরম পানিয়ে মিশিয়ে নিন। এই পানীয় প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস করে খেলে পেঠ সুস্থ থাকবে এবং হার্টের জন্যেও উপকারে আসবে। দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় যখন এটিকে গুড়া করে খাওয়া হয়।
প্রশ্ন: দারুচিনি দ্বীপ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষিণের দ্বীপ সেন্টমার্টিন দ্বীপ। সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশ একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এই দ্বীপের সৌন্দর্য অপরুপ। সেন্টমার্টিন দ্বীপের অপর নাম দারুচিনি দ্বীপ।
দারুচিনি দ্বীপ নামটি বিখ্যাত হওয়ার পেছনে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের অবদান রয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপকে কেন্দ্র করে হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত চরিত্র শুভ্রকে নিয়ে একটি সিনেমা নির্মাণ করা হয়। সিনেমার নাম দারুচিনি দ্বীপ।
সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন রিয়াজের মত তারকাও। আপনারা নিশ্চয়ই দারুচিনি দ্বীপ সিনেমাটি দেখেছেন! দারুচিনি দ্বীপ বা সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজারের অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন।
ছোটবেলায় আমরা অনেকেই রান্নাঘর থেকে চুরি করে এনে দারুচিনি খেতাম। ঝাল মিষ্টি এই মশলাটির আমাদের অতি প্রিয়। দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা এখন জানার পর নতুন করে আমাদের দারুচিনি খাওয়ায় উৎসাহী হওয়া উচিত।
দারুচিনি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আজ আলোচনা হলো। এর পূর্বেও আমরা স্বাস্থ্য ও খাবার দাবার নিয়ে বেশ কয়েকটি লেখা প্রকাশ করেছি। এখুনি পড়ুন–
