সাদা ভাত খাওয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

0

সাদা চাল আর লাল চালের মধ্যে পার্থক্য অনেক কোনটা আমাদের স্বাস্থ্যের কি উপকার আর অপকার করে তা আজকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলব। প্রথমে বলি সাদা চাল আর সাদা আটা কিভাবে তৈরি হয়। ধান গম বা যেকোন শস্যদানার তিনটি অংশ থাকে। শস্যদানার বাইরের আস্তরণ কে বলা হয় Bran বাংলায় আমরা এই অংশটাকে সাধারণত কুড়া বলে চিনি। এই ব্র্যান্ড বা কুড়াতে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে। আইরন, কপার, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি, আর প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এগুলোর একেকটা একেক রকম কাজ করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে।

আরো পড়ুন: খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয়?

শস্য দানা থেকে যখন মেশিনের সাদা চাল বানানো হয়। তখন এই পুষ্টিকর বাইরের আস্তরণ অর্থাৎ ব্র্যান্ড বা কুড়া ফেলে দেয়া হয়। তার মানে চাল থেকে শক্ত ফাইবার চলে যায়। তখন আমাদের জন্য এই চালের ভাত চাবাতে সহজ হয় নরম হয়। কিন্তু সাথে সাথে চালের পুষ্টিগুনো অনেক কমে যায়। শস্য দানার ভেতরে যে অংশটা দেখছেন সেটাকে বলে জার্ম। এখান থেকেই নতুন উদ্ভিদ জন্মাবে। এই জার্মের ভেতরে একদম পুষ্টি ভরপুর ভিটামিন বি ভিটামনি ই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ফ্যাট। ফাইটো কেমিক্যালস থাকে এর মধ্যে।

Screenshot 13

চালের মধ্যে এই অংশটা থাকলে সেই চাল বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। এটা ফেলে দিলে অনেক দিন গুদামে বা দোকানে চাল রেখে দেয়া যায়। তাই সাদা চাল বানানোর সময় এই পুষ্টিকর অংশটুকু সরিয়ে ফেলা হয়। সাদা চালে থাকে শুধুমাত্র মাঝের অংশটা অর্থাৎ এনডোস্পার্ম। এখানে মূলত কার্বোহাইড্রেট থাকে। আর খুব অল্প পুষ্টি থাকে। সামান্য পরিমাণে কিছু ভিটামিন বি মিনারেল আর প্রোটিন থাকে। অর্থাৎ পুষ্টিগুণ একেবারেই কম যেখানে সেটাই থাকে সাদা চালে। সাদা আঁটাতেও তাই। গম থেকে যখন মেশিনে সাদা আটা বানানো হয় ৯০ শতাংশ ভিটামিন ই ৫০% এরও বেশি ভিটামিন বি এবং প্রায় ১০০% ফাইবার উধাও হয়ে যায়।

লাভ যেটা হয় সেটা হল এই আটা দিয়ে সুন্দর পাউরুটি পরোটা নরম নরম পেস্ট্রি বানানো যায় সহজে। এবং সেগুলো অনেক দিন দোকানে সংরক্ষণ করা যায়। যখন শস্যদানার তিনটা অংশই অটুট থাকে সেটাকে বলে হোলগ্রীন। আমরা লাল চাল বলতে এই পুরো শস্য দানাকে বুঝায়। চালের রং লাল হতে হবে সেটা বাধ্যতামূলক নয়। তিনটে অংশই থাকলেই এই চাল রান্না করতে সময় বেশি লাগে খেতে আর একটু শক্ত লাগে। কিন্তু এতে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে। আবার যখন শস্য  দানার তিনটা অংশই মেশিনে ঢুকিয়ে আটা বানানো হয়। সেটা হচ্ছে লাল আটা বাজারের বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়।

এতক্ষণ বললাম দুই প্রকারের চালের পুষ্টিগুণের পার্থক্য। কিন্তু আপনি মনে করতেই পারেন এই পুষ্টি তরকারি থেকে নিয়ে নিব ভাতের থেকে নেওয়ার দরকার নাই। তবে এই দুই প্রকারের চালের পার্থক্য পুষ্টিতেই শেষ নয়। তাই এখন খুব সহজ করে বুঝাবো এই দুই প্রকারের চাল খাওয়ার পরে শরীরে কি ঘটে। এটা বুঝতে দুই ভাইয়ের কথা চিন্তা করতে পারেন। এক ভাই টাকা পেলে সাথে সাথে সব খরচ করে ফেলে একটু পরে আর হাতে টাকা থাকে না। আরেক ভাই টাকা আস্তে আস্তে খরচ করে ফলে তার হাতে বেশি সময় ধরে টাকা থাকে। কোন ভাই কোন চাল একটু বললেই বুঝবেন।

কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পরে আমাদের শরীর সেটা ভেঙে চিনি তৈরি করে। সেখান থেকে চিনি রক্তে প্রবেশ করে। রক্ত যখন চিনির পরিমাণ বাড়তে থাকে তখন আমাদের শরীরে একটা হরমোন বানানো শুরু করে। এই হরমোনের নাম হল ইনসুলিন। ইনসুলিন গিয়ে রক্তের চিনির পরিমাণ কমায়। চিনি গুলোকে রক্ত থেকে সরিয়ে আমাদের কোষের ভেতরে ঢোকায় সেখান থেকে আমরা শক্তি পাই অথবা জমা থাকে। কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার পরে কত দ্রুত আমাদের রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়। তার পরিমাপ হচ্ছে গ্লাইসেনিক ইনডেক্স। সাধারণ নিয়ম হলো গ্লাইসেনিক ইনডেক্স খাবার গুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

অর্থাত যে খাবারগুলো খেলে রক্তে আস্তে আস্তে চিনির পরিমাণ বাড়ে হুট করে অনেক পরিমাণে বেড়ে যায় না সেই খাবারগুলো ভালো। যে সব খাবারের গ্লাইসেনিক ইনডেক্স বেশি সেগুলো রক্তে চিনির পরিমাণ খুব দ্রুত বাড়ায় এমন একটা খাবার হল সাদা চালের ভাত। খুব তাড়াতাড়ি শরীর এই খাবার ভেঙে চিনি তৈরি করতে পারে। এবং অল্প সময়ে রক্তে অনেক পরিমাণ চিনি চলে আসে। ছবিতে লাল দাগটা যেমন দেখতে পাচ্ছেন তেমন।

Screenshot 15

রক্তে এত বেশি চিনি কমানোর জন্য অনেক পরিমাণ ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে লাল চালের ভাতের গ্লাইসেনিক ইনডেক্স কম এটা ভাঙতে শরীরের বেশ সময় লাগে রক্ত চিনির পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ে ছবির নীল দাগটার মত।

ফলে ইনসুলিন কম প্রয়োজন হয় আর অনেকক্ষণ পেট টা ভরা ভরা লাগে আপনারা অনেকেই হয়তো ডায়াবেটিস রোগীদের ওষুধ হিসেবে ইনসুলিনের নাম শুনেছেন। যারা ডায়াবেটিসে ভোগে তাদের শরীর হয় ইনসুলিন তৈরি করতে পারেনা। অথবা শরীরে ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে থাকে ঔষধ খেয়ে বা বাইরে থেকে ইনসুলিন নিয়ে রক্তে সুগার কমাতে হয়। তবে এখানে আরেকটা কথা এখানে আরেকটা কথা একটু মনোযোগ দিয়ে শুনবেন খাবারের গুনাগুন নির্ধারণ করার জন্য শুধুমাত্র গ্লাইসেনিক ইনডেক্স ব্যবহার করাই যথেষ্ট নয়। এটা একটা উপায় মাত্র যেমন চকলেট কেক গ্লাইসেনিক ইনডেক্স কম তাই বলে সেটা যে স্বাস্থ্যকর নয় এটা আমরা মোটামুটি সবাই আন্দাজ করতে পারি।

আচ্ছা পুষ্টিগুণ জানলাম জানলাম এটা শরীরে কিভাবে কাজ করে। তবে কোন চাল কোন রোগ ঘটায় বা প্রতিরোধ করে। খুব সংক্ষেপে তিনটা গবেষণার কথা বলছি।

১ য়াড়াই লক্ষের ও বেশি মানুষের উপরে করা সাতটা গবেষণা একত্র করে দেখা হয়েছে যে যারা প্রতিদিন হোলগ্রীন খায় আর যারা খায় না তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক রোগের ঝুঁকির মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কিনা। ফলাফল কি পাওয়া গেল যারা বেশি হল গ্রিন বা গোটা সুস্থ দানা খেয়েছে তাদের হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদির ঝুঁকি ২১ শতাংশ কম ছিল।

আরেকটা গবেষণায় দেখা গেছে জাপানিজ মানুষদের মধ্যে যারা সাদা ভাত সবচেয়ে বেশি খায় তাদের মধ্যে ডায়াবেটিস কি ৫৫% বেশি। আবার প্রায় চার লক্ষ মানুষের উপরে করা দশটা গবেষণা একত্র করে দেখা গেছে। যে যারা দিনের ডেকাপ লাল ভাত খায় তাদের ডায়াবেটিস রোগী কমেছে ৩২ শতাংশ।

শুধু হার্ট এটাক স্টক আর ডাইবেটিক্স  এর মত প্রাণঘাতী অসুখই না কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাইলসের মতো পীড়াদার অসুখ কেউ দূরে রাখে লাল চাল আর লাল আটা। আস্ত শস্য অর্থাৎ  লাল চাল আর লাল আটায় যে ফাইবার থাকে তা খাবার হজমের সাহায্য করে। মল নরম করে ভারী হয় ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না।

এই আর্টিকেলের উদ্দেশ্য এটা নয় যে আপনাকে একেবারে আজকে থেকে সাদা চাল বন্ধ করে লাল চাল খেতে শুরু করার জন্য কনভিন্স করে ফেলা। বরং আমি চাই আপনি যাতে বোঝেন আপনি কি খাচ্ছেন। এবং সব জেনে শুনে নিজের স্বাস্থ্যের জন্য একটা সিদ্ধান্ত নেন। আর আপনার যদি মনে হয় যে আপনি খাদ্যাভাসে একটা পরিবর্তন আনবেন বা গোটা শস্য দানা বেশি খাবেন তাহলে আপনার জন্য দুইটি পরামর্শ।

আরো পড়ুন: সকালে খালি পেটে কলা খেলে কি হয়?

এক আস্তে আস্তে শুরু করবেন। প্রথমে নতুন কিছু খেলে সেটা স্বাদ ভালো, নাই লাগতে পারে। একেবারে পুরোটা না বললে অল্প অল্প করে বদলাতে পারেন। সাদা ভাতের সাথে কিছু লালভাত মিশিয়ে খেলেন। রুটি খেলে একটা সাদা আটার রুটি তার সাথে একটা লাল আটার রুটি খেলেন। তারপর ধী ধীরে আপনি হয়তো সেই স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন।

দুই লাল আটা আর লাল চাল খেলেই যে পরিমাণে বেশি খাওয়া যাবে তা কিন্তু না। সুষম খাবারের অংশ হিসেবে আপনি লাল চাল আর লালা আটা খাবেন আমরা দেখা যায় পুরো প্লেট ভাত নিয়ে অল্প একটু তরকারি দিয়ে খাচ্ছি। এটা না করে চেষ্টা করবেন প্রতিবেলায় অর্ধেক শাকসবজি ফলমূল দিয়ে ভরতে। প্লেটের চার ভাগের এক ভাগ থাকবে গোটা সুস্থ দানা। যেমন লাল ভাত বা লাল আটার রুটি আর বাকিটুকুতে আপনি ডাল মাছ বা মাংস নিলেন। তাহলে এখন পর্যন্ত লাল চাল আর লালা আটা নিয়ে কি কি জানতে পারলাম।

এক লাল চাল লাল আটায় অনেক ধরনের পুষ্টিকর উপাদান যেমন ভিটামিন মিনারেল ফাইবার আছে। যা সাদা চাল বা সাদা আটায় পাওয়া যায় না।দুই এই খাবারগুলো স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট এর উৎস। তিন এই খাবারগুলো ডায়াবেটিস হার্ট এটাক স্ট্রোক ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি কমায়। এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

পড়ুনঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

MyItbd

Author: MyItbd

Dhaka, Faridpur, saltha,

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

খালি পেটে রসুন ও মধু খেলে কি হয়?

আপনার যদি নিয়মিত কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তবে নিশ্চিত থাকুন যে আপনি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যবান। কারণ খাবারের

ওজন বাড়ানোর উপায়

ওজন কিভাবে বাড়ানো যায়? আজকে একদম ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলবো ওজন বাড়াতে সকাল দুপুর রাতে কি খাবেন? কোন ধরনের ব্যায়াম করবেন?
Untitled design

কোন বয়সে কতটুকু ভাত খাবেন

আসসালামু আলাইকুম এশিয়া মহাদেশের ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। আর এজন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় ভাত খাওয়ার অভ্যেসকেই। প্রিয়

রান্না:শাপলা ফ্রিটার তৈরি

উপকরণ: শাপলা ডাঁটা ২০০ গ্রাম, ময়দা আধা কাপ, কর্নফ্লাওয়ার ২ টেবিল চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, সাদা তিল ১ চা-চামচ,

One Reply to “সাদা ভাত খাওয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য”

Leave a Reply