AddText 11 19 05.39.37

পাবলিক প্লেসে মোবাইল ব্যবহারের শালীনতা

1

আধুনিক ডিজিটাল বিশ্বে দৈনন্দিন জীবনযাপনে মোবাইল একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবন আজ মোবাইল ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ। বিশেষকরে স্মার্টফোন ডিভাইস।

আজ আমাদের জীবনযাপন এমন হয়ে গেছে যে, অর্থ ছাড়া একদিন চলতে পারলেও স্মার্টফোন ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। যারফলে মোবাইলের প্রতি আমাদের এই আসক্তি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আমাদেরকে বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে ধীরে ধীরে।

মোবাইল ডিভাইস শুধু একটি শ্রেণী নয়, বরং সমাজের প্রতিটি শ্রেণী ও বয়সের মানুষকে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে নিয়েছে। আজ আমরা স্মার্টফোনে এমনই আসক্ত হয়ে পড়েছি যে, হিতাহিত জ্ঞানও কাজ করছে না। বিশেষকরে প্রকাশ্য অবসরে মোবাইল ব্যবহার।

আমাদের দেশে অধিকাংশের বেশী মানুষ কাজেকর্মে অফিস আদালতে কিংবা স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে যাতায়াতের জন্য পাবলিক বাস ব্যবহার করে। বিভিন্ন গন্তব্যে এই যাত্রার সময় আমরা একপ্রকার অবসরেই থাকি।

এই অবসর সময়টিকে আমরা কাজে লাগায় স্মার্টফোন ব্যবহার করে। বিশেষকরে অধিকাংশের বেশী মানুষ এই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় ব্যয় করে। যা দোষের কিছু নয়।

কিন্তু আমাদের শিক্ষা এবং জ্ঞান এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, আমরা কী করছি কী দেখছি তা আর নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে- প্রকাশ্যে সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছি। পাবলিক প্লেস কিংবা পাবলিক বাসের অধিকাংশ যাত্রী মোবাইল ব্যবহারে শালীনতা বজায় রাখে না।

যা অবশ্যই ভদ্রতার দৃষ্টিতে দৃষ্টিকটু। একইসাথে দ্বীনের ক্ষেত্রে পাপের ভাগিদার। আমরা মোবাইলে বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও দেখছি যা একান্ত ব্যক্তিগত। যা অন্যের নিকট প্রকাশ হওয়া সভ্যতা ও শালীনতার লক্ষণ নয়। যা দ্বীনের দৃষ্টিতে পাপ।

শুধু তাইনয় অধিকাংশ মানুষই বাসে মোবাইল ব্যবহার করে হেডফোন বা ইয়ারফোন ছাড়া। যারফলে অতিরিক্ত শব্দদূষণ সৃষ্টি হয় যা মানুষ হিসাবে বিরক্তির কারণ। উচ্চ শব্দে মোবাইল ব্যবহার অন্যের নিকট নিজের ব্যক্তিত্বহীনতার প্রমাণ।

একইসাথে ভার্চুয়াল জগৎ আজ আমাদের এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, সেখানে ধর্মের কোনো অস্তিত্বই নেই। আজ ধর্মের চিন্তা তো অনেক দূরের কথা। পাশে যে একজন মুরুব্বী কিংবা আলেম কিংবা একজন বড় ভাই বসে আছে তার- ই কোনো তোয়াক্কা নেই!

পাবলিক বাসে উঠেই আমরা মনে করি, এখানে তো আমার পরিচিত কেউ নেই! সুতরাং প্রেমিকার সাথে চ্যাটিং অথবা কথা বলা থেকে শুরু করে ভিডিও কল কিংবা যাতা ভিডিও বা ছবি দেখতে কোনো বাঁধা নেই।

শুধু পাবলিক বাসে নয়, আজ আমরা যেখানেই যাচ্ছি বসছি অর্থাৎ যেকোনো পাবলিক প্লেসে সময় পেলেই স্মার্টফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। যারফলে পাবলিক বাস বা পাবলিক প্লেস গুলোতে ছোট বড় সবাই, যে যার মতো করে সুস্থ অসুস্থ বিনোদনে জড়িত হচ্ছি।

আজ আমাদের পরিবারে সমাজে রাষ্ট্রে ধর্মীয় চর্চার বড় অভাব। যারফলে মানুষের মনে দ্বীনের কোনো ভয় আর কাজ করছে না। আগে মানুষ আল্লাহ্কে ভয় করার কারণে মানুষের সামনে পাপ করা থেকে বিরত থাকতো। করলেও তা গোপনে করতো। আর এখন আমাদের মধ্যে আল্লাহ্‌র ভয় তো নেই -ই, এমনকি মানুষ আমার কাজে কী মনে করছে তার ই কোনো তোয়াক্কা নেই।

অথচ আমাদের মাঝে দ্বীনের ভয় থাকা দরকার বেশী। আগে পাপ গোপনে করলেও আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাইলে তা আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিতে পারতেন। আর এখন পাপ করছি তো করছি তাও আবার স্বাক্ষী রেখে! এই স্বাক্ষী রাখার কারণে কীভাবে আমরা ক্ষমা পেতে পারি?

একইসাথে নিজেও পাপ করছি অন্যেকেও পাপের ভাগিদার করছি। যারফলে তার পাপের ভাগও আমাদের নিতে হবে। আজ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীলতা এমন পর্যায়ে গেছে, তা কখনোই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনের অংশ হতে পারে না। বিশেষকরে টিকটক, লাইকী, ইমোসহ আরও অন্যান্য বিনোদন এ্যাপস গুলো- কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আর এভাবেই এইসব এ্যাপস দ্বারা আমরা নিজেরই অজান্তে পাপের একটি জালে জড়িয়ে পড়ছি। যা সমাজ ও রাষ্ট্রে পাপের বিস্তারকে উৎসাহিত করছে।

আসুন আমরা এই পাপ থেকে বিরত থাকি। আমাদের উচিত সকল গোপন পাপ থেকে বিরত থাকা। অশ্লীলতা আছে এমন এ্যাপস সমূহ বর্জন করা। প্রবৃত্তির কারণে যদি পাপ থেকে বিরত থাকা না যায়, তবুও যেন এই পাপের ভাগিদার ও স্বাক্ষী না রাখি। চেষ্টা করি যেন পাবলিক প্লেসে ও যানবাহনে যতটুকু সম্ভব শালীনতার ভিতরে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে। ভুলেও যেন প্রকাশ্যে উচ্চ শব্দে গান-বাজনার ভিডিওসহ কোনপ্রকার অশ্লীল ভিডিও কিংবা ছবি পাবলিক প্লেসে না দেখি। আল্লাহ্ আমাদের সঠিক দ্বীন বুঝার, জানার এবং মানার তৌফিক দেন আমিন।

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

 


আরো পড়ুন-


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

1

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

Author: সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী জন্ম চট্টগ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলেন। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখেছেন। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস। বর্তমানে বেসরকারি চাকুরিজীবী। তাঁর ভালোলাগে বই পড়তে এবং পরিবারকে সময় দিতে।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা দান আফছানা খানম অথৈ

  কবিতা দান আফছানা খানম অথৈ রোজা এলে দানের দুয়ার খুলে হাজার গুন, কিছু একটু দিলে পরে সেলফি তোলেন খুব।

ঈদ আনন্দ

ঈদ আনন্দ মোঃ রুহুল আমিন ঈদ এসেছে রোজার শেষে খুশি সবার মাঝে, সবাই রইবে নতুন জামায় পরে খুশির সাজে। ঈদের

নাজাত পাবে সবে

নাজাত পাবে সবে মোঃ রুহুল আমিন আরব দেশে মুরুর বুকে এলো নূরের নবী, সেই খুশিতে ঝলমলে রয় সারা জাহান সবি।

কবি পরিচিতি কবি মোঃ রুহুল আমিন

কবি পরিচিতি কবি মোঃ রুহুল আমিন দক্ষিণ বঙ্গের সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত আশাশুনি থানার দক্ষিণ গদাইপুর গ্ৰামে ২২ অক্টোবর ১৯৮৭ ইংরেজি

6 Replies to “পাবলিক প্লেসে মোবাইল ব্যবহারের শালীনতা”

Leave a Reply