মন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রী এই তিনটি শব্দ বাংলাদেশ সরকার নিয়ে যেকোন আলোচনায় বারবার উচ্চারিত হয়। এদের সবার পদমর্জাদা সমান নয়, কিন্তু এরা প্রত্যেকেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
এই লেখার মাধ্য এই তিনটি পদ সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া দপ্তরবিহীন মন্ত্রী এবং বর্তমান মন্ত্রীসভার সদস্যদের সম্পর্কেও ধারণা পাবেন। প্রথমে মন্ত্রীসভার সদস্যদের দেখে নিন-
সম্প্রতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। নতুন মন্ত্রীসভা নিয়ে আছে নানারকম জল্পনা, কল্পনা। এই লেখাটির শেষে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীসভা (সম্ভাব্য) দেখতে পাবেন।
মন্ত্রীসভা(Cabinet of Bangladesh)
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে টানা তৃতীবারের মত জয়ী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠিত মন্ত্রীসভায় যারা রয়েছেন-
পূর্ণ মন্ত্রী:
ওবায়দুল কাদের (সড়ক পরিবহন ও সেতু), আ হ ম মোস্তফা কামাল (অর্থ), ড. আব্দুর রাজ্জাক (কৃষি), ডা. দীপু মনি (শিক্ষা), আনিসুল হক (আইন ও সংসদ), আ ক ম মোজাম্মেল হক (মুক্তিযোদ্ধা), আসাদুজ্জামান খান (স্বরাষ্ট্র), ড. হাছান মাহমুদ (তথ্য), এম এ মান্নান (পরিকল্পনা), নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন (শিল্প), টিপু মুনশি (বাণিজ্য), বীর বাহাদুর উশৈ সিং (পার্বত্য), ডক্টর আবুল মোমেন (পররাষ্ট্র), সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (ভূমি), তাজুল ইসলাম (স্থানীয় সরকার), সাহাবউদ্দিন (পরিবেশ ও বন), গোলাম দস্তগীর গাজী (বস্ত্র ও পাট), জাহিদ মালেক (স্বাস্থ্য), সাধন চন্দ্র মজুমদার (খাদ্য), নুরুজ্জামান আহমেদ (সমাজকল্যাণ), শ ম রেজাউল করিম (গৃহায়ন ও গণপূর্ত), নুরুল ইসলাম সুজন (রেল), ইয়াফেস ওসমান (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি), মোস্তফা জব্বার (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি)
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাট ২ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রী(আলাদা করে নাম উল্লেখ করলাম লালমনিরহাট বাসীর আগ্রহের কারণে)
পড়ুন– গণতন্ত্র কি?
প্রতিমন্ত্রী:
শাহরিয়ার আলম (পররাষ্ট্র), ইমরান আহমদ (প্রবাসী কল্যাণ), নসরুল হামিদ (বিদ্যুৎ ও জ্বালানী), জুনাইদ আহমেদ পলক (আইসিটি), কামাল আহমেদ মজুমদার (শিল্প), খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (নৌ-পরিবহন), জাহিদ আহসান রাসেল (যুব ও ক্রীড়া), ডা. এনামুর রহমান (দুর্যোগ ও ত্রাণ), শ ম রেজাউল করিম, আশরাফ আলী খসরু (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ), মন্নুজান সুফিয়ান (শ্রম ও কর্মসংস্থান), জাকির হোসেন (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা), স্বপন ভট্টাচার্য (এলজিআরডি), মাহবুব আলী (বিমান), ফরহাদ হোসেন (জনপ্রশাসন), শরীফ আহমেদ (সমাজকল্যাণ), কে এম খালিদ (সংস্কৃতি), মুরাদ হাসান (স্বাস্থ্য ও পরিবার), জাহিদ ফারুক (পানিসম্পদ), শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (ধর্ম)।
উপমন্ত্রী:
বেগম হাবিবুন নাহার (পরিবেশ ও বন), এনামুল হক শামীম (পানিসম্পদ), মহিবুল হাসান চৌধুরী (শিক্ষা)।
পড়ুন- আমেরিকা সম্পর্কে জানা-অজানা তথ্য
মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী কোনটি কাকে বলে?
মন্ত্রীঃ একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যনির্বাহক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় সংসদের নিকট দায়বদ্ধ থাকেন।
প্রতিমন্ত্রীঃ প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি একজন মন্ত্রীর কাজের একটা অংশের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর, পদমর্জাদা একজন পূর্ণ মন্ত্রীর চেয়ে কম তবে, উপমন্ত্রীর চেয়ে বেশী। তিনি সাধারণত একটি দপ্তরের দায়িত্ব পালন করেন, তবে মন্ত্রীর অধীনে এবং তাঁর কাজের জন্য মন্ত্রীর নিকট দায়বদ্ধ থাকেন।
উপমন্ত্রীঃ উপমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের একজন মন্ত্রী যিনি পূর্ণ মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীর নিকট তাঁর কাজের জন্য দায়বদ্ধ থাকেন।
দপ্তরবিহীন মন্ত্রীঃ একজন মন্ত্রী যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন দপ্তরবিহীন মন্ত্রীও আর্থিক এবং অন্যন্য সকল সুবিধা ভোগ করেন। সব মন্ত্রীকেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়, শুধু দপ্তরবিহীন মন্ত্রী কোন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন না। কাজ করে সব সুবিধা পাওয়া যাকে বলে। তবে, আমাদের মতো অকর্মারা চাইলেই এই পদ অধিকার করে নিতে পারে না, এর জন্য যোগ্যতার প্রয়োজন। তবে, বিশেষ ক্ষেত্রে এই সুবিধা মেলে যা, ঐ ব্যক্তির জন্য সম্মানজনক নাও হতে পারে। বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন শক্তিমান এবং সৎ বলে পরিচিত রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত একসময় দপ্তরবিহীন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ ভাগের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে লেখা আছে,
“প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি মন্ত্রিসভা থাকিবে এবং প্রধানমন্ত্রী ও সময়ে সময়ে তিনি যেরূপ স্থির করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী লইয়া এই মন্ত্রিসভা গঠিত হইবে। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বা তাঁহার কর্তত্বে এই সংবিধান-অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হইবে। মন্ত্রিসভা যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকিবেন। সরকারের সকল নির্বাহী ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতির নামে গৃহীত হইয়াছে বলিয়া প্রকাশ করা হইবে। রাষ্ট্রপতির নামে প্রণীত আদেশসমূহ ও অন্যান্য চুক্তিপত্র কিরূপে সত্যায়িত বা প্রমাণীকৃত হইবে, রাষ্ট্রপতি তাহা বিধিসমূহ-দ্বারা নির্ধারণ করিবেন এবং অনুরূপভাবে সত্যায়িত বা প্রমাণীকৃত কোন আদেশ বা চুক্তিপত্র যথাযথভাবে প্রণীত বা সম্পাদিত হয় নাই বলিয়া তাহার বৈধতা সম্পর্কে কোন আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না। রাষ্ট্রপতি সরকারী কার্যাবলী বন্টন ও পরিচালনার জন্য বিধিসমূহ প্রণয়ন করিবেন।”
পড়তে পারেন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি কিভাবে নির্বাচিত হয়?
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রীসভা
এই তালিকায় এই সময়ে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তৈরি করা। তাদের দাবি অনুযায়ী একঝাক নতুন মুখ বিধানসভায় মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন-
মূখ্য মন্ত্রীর দপ্তরের ওয়েবসাইট দেখতে পারেন- তথ্য আপডেট হলে পাবেন
পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীঃ
সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অমিত মিত্র, সাধন পান্ডে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা, মানস ভুঁইঞা, সৌমেন মহাপাত্র, মলয় ঘটক, অরূপ বিশ্বাস, উজ্জ্বল বিশ্বাস, অরূপ রায়, রথীন ঘোষ, ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রনাথ সিনহা, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, পুলক রায়, ডা. শশী পাঁজা, মহম্মদ গোলাম রব্বানি, বিপ্লব মিত্র, জাভেদ খান, স্বপন দেবনাথ, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী
স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রীঃ
বেচারাম মান্না, সুব্রত সাহা, হুমায়ুন কবীর, অখিল গিরি, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রত্না দে নাগ, সন্ধ্যারানি টুডু, বুলুচিক বারাইক, সুজিত বসু, ইন্দ্রনীল সেন।
প্রতিমন্ত্রীঃ
দিলীপ মণ্ডল, আখরুজ্জামান, শিউলি সাহা, শ্রীকান্ত মাহাত, সাবিনা ইয়াসমিন, বীরবাহা হাঁসদা, জ্যোৎসনা মান্ডি, পরেশচন্দ্র অধিকারী, মনোজ তিওয়ারি।
মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় সম্ভবত স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বেও থাকবেন। আবারো বলে রাখছি, এই মন্ত্রীসভার তালিকা এই সময় থেকে সংগ্রহ করা। সম্ভবত তারা কোন সূত্রে ঠিক খবরটিই পেয়েছে।
আরো পড়ুন-
তথ্যসূত্রঃ
- মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীর তালিকা- News24
- মন্ত্রী হবেন, মন্ত্রী- সোহরাব হোসেন
- বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা- উইকিপিডিয়া