রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব এবং আমল

0

রমজান মাসের ফজিলত ও গুরুত্ব এবং আমল

মহান আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসকে অন্যান্য মাসের উপর ফজিলত ও বিশেষত্ব দিয়েছেন। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের গ্রন্থ সমূহে অসংখ্য নির্দেশনা এসেছে। ইনশাআল্লাহ আমরা এই প্রবন্ধে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে কিছু বিষয় আলোচনা করবো।

১. আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা রমজানকে ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ বানিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, 

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدىً لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْه

রমজান মাস, যার মধ্যে আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি মানুষের হেদায়েতের জন্য, আর যারা হেদায়েত প্রাপ্ত তাদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ এবং ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্যকারী। অতএব যে এই মাসটিকে পাবে সে যেন রোজা রাখে। (সূরা বাকারা: ১৮৫)

আর বুখারী- মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, হযরত ইবনে রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত,

بني الإسلام على خمس شهادة أن لا إله إلا الله، وأن محمدا عبد الله ورسوله، وإقام الصلاة، وإيتاء الزكاة، وصوم رمضان، وحج البيت. 

ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি— শাহাদাতু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, সালাত কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, রোজা পালন করা, এবং হজ করা। [বুখারী: ৮, মুসলিম: ১৬]

২. আর আল্লাহ তায়ালা এই মাসে কুরআন অবতীর্ণ করেন যেমন উপরোক্ত আয়াতে অতিবাহিত হয়েছে, অন্য আয়াতে তিনি আরো বলেন, 

أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ وَأَن تَصُومُواْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

 

বাংলা অনুবাদঃ গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১৮৪)

৩. এই মাসেই তিনি কদরের রাত্রি রেখেছেন, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম! যেমন, মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন-

إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ. وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ. لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ. تَنَزَّلُ الْمَلائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ. سَلامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ  القدر

নিশ্চয়ই আমরা এই মহিমান্বিত রাত্রিতে কুরআন অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি জানো মহিমান্বিত রাত্রটি কী? সেটা হচ্ছে লাইলাতুল কদর যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরাঃ কদর, আয়াতঃ ৫)

মহান আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,

3- وقال أيضا:  إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ  الدخان

নিশ্চয়ই এই বরকতপূর্ণ রাতে আমরা কুরআন অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। (সূরা দুখান, আয়াত: ৩)

৪. মহান আল্লাহ তায়ালা এ মাসে সিয়াম পালনকারী এবং ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় সালাত আদায়কারীর জন্য গুনাহ মাফের ঘোষণা দিয়েছেন।

যেমন বুখারী মুসলিম এসেছে, 

 أبي هريرة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال:  من صام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه.   وفيهما البخاري ( 2008 )، ومسلم ( 174 ) أيضا أن النبي صلى الله عليه وسلم:  من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه

 

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখল তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী ২০১৪, মুসলিম ৭৬০)

বুখারী মুসলিমে আরো এসেছে, যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় (কিয়াম) সালাত আদায় করবে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী ২০৮, মুসলিম ১৭৪)

৫. রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেন এবং জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেন। এবং শয়তানকে জিঞ্জিরাবদ্ধ করেন। যেমন বুখারী মুসলিমে এসেছে, 

أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال:  إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة، وغلقت أبواب النار، وصُفِّدت الشياطين.

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন রমজান মাস আসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী: ১৮৯৮, মুসলিম: ১০৭৯)

৬. আল্লাহ তায়ালা রমজানের প্রত্যেক রাতে জাহান্নাম থেকে বান্দাদেরকে মুক্তি দেন যেমন আহমদ বিন হাম্বল রহ. থেকে বর্ণনা করেন, 

أبي أُمامة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إنَّ للهِ تعالى عند كلِّ فطرٍ عُتَقاءَ من النارِ ، وذلك في كلِّ ليلةٍ . قال المنذري: إسناده لا بأس به.

আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু ইসলাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা প্রত্যেকদিন ইফতারের সময় বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। (মুসনাদে আহমদ: ৫/২৫৬) ইমাম মুনযীরী রহ. বলেন এই হাদিসের সনদে কোনো সমস্যা নেই।

একইভাবে মুসনাদে বাজ্জারেও এসেছে, 

أبي سعيد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:  إن لله تبارك وتعالى عتقاء في كل يوم وليلة _ يعني في رمضان _، وإن لكل مسلم في كل يوم وليلة دعوة مستجابة

আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাবারকা ওয়া তাআলা রমজানের প্রত্যেকদিন এবং প্রত্যেক রাত তার বান্দাদেরকে মুক্তি দান করেন এবং প্রত্যেকদিন এবং প্রত্যেক রাত বান্দাদের দোয়া কবুল করেন। (কাশফ: ৯৬২)

৭. রমজানের রোজা পূর্ববর্তী গুনাহসমূহের কাফফারাস্বরূপ -কবিরা গুনাহ ব্যতীত। সহীহ মুসলিম এসেছে, 

أن النبي صلى الله عليه وسلم قال:  الصلوات الخمس، والجمعة إلى الجمعة، ورمضان إلى رمضان، مكفرات ما بينهن إذا اجتنبت الكبائر.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু’আহ থেকে অন্য জুমু’আহ, এবং এক রমজান থেকে অন্য রমজান উভয়ের মধ্যখানে কৃত পাপসমূহের কাফফারা, যখন সে কবিরা গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকে। (সহীহ মুসলিম: ২৩৩)

📗রমজান মাসের করণীয়

১. ইমামের সাথে ইমামের তারাবীহ শেষ হওয়া পর্যন্ত তারাবির সালাত আদায় করা। যেমনটা ইমাম আবু দাউদ সহ অন্যান্য ইমামগণ বলেছেন। কারণ হাদিসে এসেছে,

أبي ذر رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم  قال:  إنه من قام مع الإمام حتى ينصرف كتب له قيام ليلة

আবু যর রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে ইমামের সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করবে তার জন্য পুরো রাত্র সালাত আদায় করার সাওয়াব লিখিত হবে। (সুনানে আবু দাউদ: ১৩৭০)

বর্তমানে অনেককেই দেখা যায়, তারা ইমামের সাথে ৮ রাকাত তারাবীহ আদায় করে বাকি রাকাতগুলো আদায় না করে বেরিয়ে যান। তারা মনে করেন, আট রাকাত সুন্নাহ বাকি রাকাতগুলো বিদআত। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

কারণ, সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহের সর্বসম্মতিক্রমে আমল হচ্ছে ২০ রাকাত তারাবি। সাহাবায়ে কেরামগণও বিশ রাকাত তারাবিই আদায় করতেন। তো তারা কি সুন্নাহর বিরোধিতা করতেন?

ইমাম ইবনে কুদামার রহ. বলেন-

ما كانَ عَلَيْهِ أصْحابُ رَسُولِ اللَّهِ – ﷺ – أوْلى وأحَقُّ أنْ يُتَّبَعَ،  

অনুসরণের ক্ষেত্রে ওটাই অধিক উত্তম ও উপযুক্ত যার উপর সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন (অর্থাৎ ২০ রাকাত)। [আল-মুগনী: ২/১২৩]

ইমাম বদরুদ্দীন আল-বা’লী রহ. উদ্ধৃত করেন—

فَمن ظن أنه يَأْخُذ من الكتاب والسّنة بِدُونِ أن يقْتَدى بالصحابة ويتبع غير سبيلهم فَهُوَ من أهل البدع والضلال ومن خالف ما أجمع عَلَيْهِ المُؤْمِنُونَ فَهُوَ ضال

যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, সে সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ করা ব্যতীত সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ থেকে মাসআলা গ্রহণ করবে এবং সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পথ ব্যতীত অন্য পথের অনুসরণ করবে তবে নিশ্চয় সে বিদ’আতি এবং পথভ্রষ্ট! আর যে ব্যক্তি ঐ বিষয়ের বিরোধিতা করে যে বিষয়ে মুমিনগণ একমত হয়েছেন, সে ব্যক্তিও গোমরাহ! [মুখতাসার ফাতাওয়া আল-মিসরিয়্যাহ: ৫৫৬]

সাহাবায়ে কেরাম ২০ রাকাত তারাবীই আদায় করতেন। দলীলসমূহ

📗 ইমাম বায়হাকী রহ. এর বর্ণনা

তিনি তাঁর ‘আস-সুনানুল কুবরা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন,

أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحُسَيْنُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْحُسَيْنِ بْنِ فَنْجَوَيْهِ الدِّيْنَوَرِيُّ بِالدَّامَغَانِ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ السُّنِّيُّ، أنبأنا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ الْبَغَوِيُّ، ثنا عَلِيُّ بْنُ الْجَعْدِ، أنبأ ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ خُصَيْفَةَ، عَنِ السَّائِبِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ: > كَانُوا يَقُومُونَ عَلَى عَهْدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ بِعِشْرِينَ رَكْعَةً

সাহাবী সায়েব ইবনে ইয়াযীদ রা. থেকে ইয়াযীদ ইবনে খুসাইফা বর্ণনা করেন, তাঁরা (সাহাবা ও তাবেয়ীন) উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর যুগে রমযান মাসে বিশ রাকাত পড়তেন। [আস-সুনানুল কুবরা, বায়হাকী: হাদীস নং ৪৮০১]

এ হাদিসটি অধিকাংশ ইমামের মতেই সহীহ। এবং মুসলিম উম্মাহের সকল ইমামই এই হাদীসটিকে গ্রহণ করে নিয়েছেন। লা-মাযহাবী/আহলে হাদিসদের আস্থাভাজন সালাফী শায়খরাও বিনা বাক্যে হাদীসটিকে গ্রহণ করে নিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করছি।

১. সৌদি আরবের (সাবেক) গ্র্যান্ড মুফতী ও সকল আহলে হাদিসের শ্রদ্ধাভাজন শায়খ বিন বায রহ.। তিনি লিখেছেন,

والثلاث والعشرون فعلها عمر – رضي الله عنه – والصحابة فليس فيها نقص وليس فيها إخلال، بل هي من السنن – سنن الخلفاء الراشدين

উমার রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু’র জামানায় সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বিশ রাক’আত তারাবীহ ও তিন রাক’আত বিতর আদায় করতেন। এর মধ্যে কোনো ধরনের কমতিও ছিলো না এবং কোনো ধরনের ত্রুটিও ছিলো না। বরং এটাই সুন্নাহ এবং সুন্নাতে খোলাফায়ে রাশেদীন। [মাজমূ’উল ফাতাওয়া —বিন বায: ১১/৩২৫]

২. আরেকজন সুপ্রসিদ্ধ সালাফী শায়খ সালেহ আল মুনাজ্জিদ বিশ রাকাতের বিভিন্ন বর্ণনা উল্লেখ করার পর লিখেন-

وبمجموع هذه الروايات يتبين أن العشرين ركعة كانت هي السنة الغالبة على التراويح في زمن عمر بن الخطاب رضي الله عنه ، ومثل صلاة التراويح أمر مشهور يتناقله الجيل وعامة الناس ، ورواية يزيد بن رومان ويحيى القطان يعتبر بهما وإن كانا لم يدركا عمر ، فإنهما ولا شك تلقياه عن مجموع الناس الذين أدركوهم ، وذلك أمر لا يحتاج إلى رجل يسنده ، فإن المدينة كلها تسنده

এই সমস্ত বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় যে, নিশ্চয়ই তারাবীহ ২০ রাকাত; ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর জামানা থেকে এটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত সুন্নাহ। আর তারাবী হচ্ছে এমন একটি সুপ্রসিদ্ধ বিষয় যা প্রজন্ম পরম্পরায় সর্বসাধারণের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। আর ইয়াজিদ ইবনে রোমান এবং ইয়াহিয়া আল-কাত্তানের (২০ রাকাতের) বর্ণনাকে গ্রহণ করা হবে। যদিও তারা ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে পাননি, তবুও এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে তারা ২০ রাকাতের বিষয়টি তাদের সাথে সাক্ষাৎ হওয়া অসংখ্য মানুষদের থেকে শুনেছেন। আর এটি এমন একটি বিষয় যা প্রমাণিত হওয়ার জন্য কোনো রাবীর মুখাপেক্ষী হতে হয় না; কারণ, পুরো শহরই এ বিষয়টি সমর্থন করে। (বা এটি এমন একটি বিষয় যা সনদের মুখাপেক্ষী নয়; বরং, পুরো শহরটাই এর সনদ) [মাওকা’উল ইসলাম: ৪/২৭৪]

৩. মদীনায় জন্মগ্রহণকারী বিশিষ্ট মুহাক্কিক শায়খ ড. খালিদ আবদুল কারীম আল-আতরাশ

তিনি সাহাবায়ে কেরামের তারাবির রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে তাঁর আর্টিকেলে উদ্ধৃত করেন—

ذهب جمهور الفقهاء : الحنفية والشافعية والحنابلة وبعض المالكية – إلى أن التراويح عشرون ركعة، لما رواه مالك عن يزيد بن رومان والبيهقي عن السائب بن يزيد من قيام الناس في زمان عمر – رضي الله تعالى عنه – بعشرين ركعة، وجمع عمر الناس على هذا العدد من الركعات جمعاً مستمراً، قال الكاساني : جمع عمر أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم في شهر رمضان على أبي بن كعب – رضي الله تعالى عنه – فصلى بهم عشرين ركعة، ولم ينكر عليه أحد فيكون إجماعاً منهم على ذلك.

.

অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম তথা হানাফী, শাফে’ঈ, হাম্বলী এবং কিছু কিছু মালেকী ফকীহ এই মত দিয়েছেন যে তারাবী ২০ রাকাত। কারণ ইমাম মালেক ইয়াজিদ ইবনে রোমান থেকে এবং বায়হাকী সায়েব ইবনে ইয়াজিদ থেকে বর্ণনা করেছেন, রামাদ্বানের রাতে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর জামানায় ২০ রাকাত তারাবি পড়া হতো। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এ সংখ্যার উপরেই মানুষদেরকে একত্রিত করেছেন, আর এটাই নিরবচ্ছিন্নভাবে চলে আসছে। ইমাম কাসানী বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু রামাদ্বান মাসে উবাই ইবনে কা’বের পেছনে মানুষদেরকে জামাতবদ্ধ করেছেন তখন তিনি (উবাই ইবনে কা’ব) তাদেরকে নিয়ে ২০ রাকাত সালাত আদায় করেন এবং এর উপর কেউই আপত্তি তুলেনি। বরং এটার উপরেই ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, 

وروى مالك عن يزيد بن رومان أنه قال : كان الناس يقومون في زمان عمر بن الخطاب في رمضان بثلاث وعشرين ركعة، قال البيقهي والباجي وغيرهما : أي بعشرين ركعة غير الوتر ثلاث ركعات. ويؤيده ما رواه البيقهي وغيره عن السائب بن يزيد – رضي الله تعالى عنه قال : كانوا يقومون على عهد عمر بن الخطاب – رضي الله عنه – في شهر رمضان بعشرين ركعة.

আর ইমাম মালেক রহ. ইয়াজিদ ইবনে রোমান থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর যুগে লোকেরা ২৩ রাকাত সালাত আদায় করতো। ইমাম বাইহাকী এবং ইমাম বাজী প্রমুখ বলেন, অর্থাৎ তিন রাকাত বিতর সালাত ব্যতীত ২০ রাকাত। আর এই হাদিসটিকে সায়েব ইবনে ইয়াজিদের হাদিসটি শক্তিশালী করে, যা বর্ণনা করেছেন ইমাম বাইহাকি এবং অন্যান্যরা। অর্থাৎ, সায়েব ইবনে ইয়াজিদ বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর যুগে মানুষজন রামাদ্বান মাসে বিশ রাকাত পড়তেন।

وقال الدسوقي وغيره : كان عليه عمل الصحابة والتابعين. وقال ابن عابدين : عليه عمل الناس شرقاً وغرباً. وقال علي السنهوري : هو الذي عليه عمل الناس واستمر إلى زماننا في سائر الأمصار.

ইমাম দুসূকী রহ. ও প্রমুখগণ বলেন, ২০ রাকাতের উপরেই সাহাবী এবং তাবে’ঈগণের আমল ছিলো। আর ইমাম ইবনে আবেদীন রহ. বলেন এর ওপরেই পূর্ব-পশ্চিমের আমল অব্যাহত। আলী আস-সানহুরী রহ. বলেন, ২০ রাকাতের ওপরেই সর্বস্তরের মানুষের আমল এবং আমাদের যুগ পর্যন্ত এখনও সমস্ত দেশে বিশ রাকাতই চলে আসছে।

সূত্র:

https://www.alkeltawia.com/site2/pkg09/index.php?page=show&ex=2&dir=dpages&lang=1&cat=139

৪. শায়খ আতিয়্যাহ আস-সালিম

ففي زمن علي كانت التراويح عشرين والوتر ثلاث، وهذا أغلب الظن كما كانت في عهد عثمان ، وعهد عمر، وأن الزيادة إنما أحدثت بعد عهد علي أي الست والثلاثين المتقدمة…

مما تقدم يظهر للمتأمل أن عدد ركعات التراويح كان مستقرا إلى ثلاث وعشرين، منها ثلاث ركعات وترا كما في رواية يزيد بن الرومان عند مالك كما تقدم، قال:»كان الناس يقومون زمن عمر بن الخطاب في رمضان بثلاث وعشرين ركعة…

أما العدد والاقتصار منه على عشرين ركعة فإنه العدد المعمول به عند الأئمة الثلاثة أبي حنيفة والشافعي وأحمد

আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর জামানায় তারাবি ছিল ২০ রাকাত, সাথে তিন রাকাত বিতর। আর এটা হচ্ছে প্রবল ধারণা, যেমনটা ছিলো ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর জামানায় এবং ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর জামানায়। আর যদি বৃদ্ধি —অর্থাৎ উপরোল্লেখিত ৩৬ রাকাত হয়েও থাকে; তা আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর জামানার পর…।

অতএব, পূর্বোক্ত দলীলাদির ভিত্তিতে একজন গবেষকের কাছে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তারাবীর রাকাত-সংখ্যা তেইশেই স্থিতিশীল ছিলো, যার মধ্যে তিন রাকাত বিতর। যেমনটা মুয়াত্তা মালেকে ইয়াজিদ ইবনে রোমানের বর্ণনা অতিবাহিত হয়েছে। তিনি বলেন: “উমর ইবনুল খাত্তাবের যুগে মানুষজন তেইশ রাকাত তারাবীহ পড়তো…।

আর, তারাবির রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, এটি বিশ রাকাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কারণ, তিন ইমাম —আবু হানিফা, শাফে’ঈ এবং আহমদ রহ. এর নিকট এটাই সেই অনুসৃত সংখ্যা যার ওপর সমস্ত মানুষ আমল করেছে। [আত তারাওয়ীহ আকছারু মিন আলফি ‘আম: ৬/৩৫, ৯/৭০

আর যে সমস্ত ইমামগণ হাদীসটিকে সরাসরি সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ইমাম হলেন-

১. ইমাম নববী রহ. (৬৭৬হি.)

তিনি বলেন-  ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟْﺒَﻴْﻬَﻘِﻲّ ﺑِﺈِﺳْﻨَﺎﺩ ﺻَﺤِﻴﺢ অর্থাৎ, হাদীসটি ইমাম বায়হাকী রহ. সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। দেখুন- [খুলাসাতুল আহকাম: ১/৫৭৬]

২. ইমাম ওয়ালিউদ্দিন ইরাকী রহ. (৮০৬হি.)। দেখুন- [ত্বারহুত তাছরীব: ৩/৮৮]

৩. হাফেজ বদরুদ্দীন আইনী রহ. (৮৫৭ হি.)। দেখুন- [উমদাতুল কারী: ৮/৪৮৫]

৪. হাফেয ইবনুল মুলাক্কিন রহ.। দেখুন- [আল বাদরুল মুনীর: ৪/৩৫০]

৫. ইমাম শিহাবুদ্দীন কসতলানী রহ.। দেখুন- [ইরশাদুস সারী: তারাবীহ অধ্যায়]

৬. আরবের বিশিষ্ট শায়খ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আদ দুআইশ রহ. বলেন, وهذا إسناد رجاله ثقات “এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য। [তাম্বীহুল কারী লি তাকবিয়াতি মা জ’আফাহুল আলবানী: ৩২ নম্বর হাদীসের আলোচনায়]

হাদীসটি দুর্বল হওয়ারও কোনো কারণ নেই। যে রাবির কারণে আহলে হাদিস ভাইয়েরা হাদীসটিকে দুর্বল বলার চেষ্টা করে, তিনি হচ্ছেন বুখারীর রাবী ইয়াজিদ ইবনে খুসাইফা। যদি তাঁর কারণে এই হাদিসটি দুর্বল হয়, তাহলে কি বুখারীর হাদিসও দুর্বল। ইমাম বুখারী তাঁর সূত্রে প্রায় ডজন খানেক হাদিস এনেছেন। দেখতে পারেন- হাদীস নং ৬২৪৫, ৩৩২৫, ১০৭২, ৬৭৭৯, ৪৭০, ২৩২৩। 

তাছাড়াও ‘তালাক্কী বিল কবুল’সহ একাধিক উসূলের ভিত্তিতে ২০ রাকাত তারাবীহ’র সবগুলো হাদীস সহীহ।

যেমন সহীহ বুখারী-মুসলিমের অনেকগুলো হাদীস সনদের দিক থেকে দুর্বল হওয়া সত্বেও ‘তালাক্কী বিল কবুল’ এর উসূলে সবগুলোই সহীহ হিসেবে ধর্তব্য।

তাই তো সালাফী শায়খ সালেহ আল মুনাজ্জিদ বলেন, ২০ রাকাত তারাবীহ এমন একটি সুপ্রসিদ্ধ বিষয় যে, তা (সুনির্দিষ্ট) কোনো সনদের মুখাপেক্ষীই নয়; কারণ, পুরো শহরটাই এর সনদ। [মাওকা’উল ইসলাম: ৪/২৭৪]

আর সনদে যদি কোনো ত্রুটি থেকেও থাকে তাহলেও কোনো সমস্যা নাই। কারণ, যে সমস্ত হাদীস সোনালী যুগের সকল ওলামায়ে কেরাম সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে নিয়েছেন, এ সমস্ত হাদিসের ক্ষেত্রে সনদের ধর্তব্য নয়, বরং এগুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ের। এমন হাদিস গ্রহণ করে নেওয়া ওয়াজিব।

হাফেয সাখাবী রহ. বলেন-

إذا تلقت الأمة الضعيف بالقبول يعمل به على الصحيح حتى أنه ينزل منزلة المتواتر في أنه ينسخ المقطوع به ولهذا قال الشافعي رحمه الله في حديث لا وصية لوارث إنه لا يثبته أهل الحديث ولكن العامة تلقته بالقبول وعملوا به حتى جعلوه ناسخا لآية الوصية له

উম্মত যখন কোনো য’ঈফ হাদীসকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করে নেয়, তখন বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী ঐ হাদীসের ওপর আমল করা হবে। এমনকি তা ‘মুতাওয়াতির’ (সর্বাধিক বিশুদ্ধ হাদীস) এর পর্যায়ে পৌছে যায়। ফলে তা অটাক্যভাবে প্রমাণিত কোনো বিষয়কেও রহিত করে দেয়। এজন্যই ইমাম শাফে’ঈ  “ওয়ারিসের জন্য কোনো ওসিয়ত নেই” এই হাদীসের ব্যপারে বলেছেন মুহাদ্দিসীনে কেরাম উক্ত হাদীসটি সহীহ সনদে মেনে নেননি। তবে উম্মত তা গ্রহণ করেছে এবং তার উপর আমল করেছে। এমনকি কুরআনের ওসিয়তের আয়াতকে পর্যন্ত তা রহিত করে দিয়েছ। [ফাতহুল মুগীছ: ১২০]

আল্লামা সুয়ূতী রহ. বলেন-

قال ابن عبد البر في الاستذكار : لما حكى عن الترمذي أن البخاري صحح حديث البحر : « هو الطهور ماؤه » ، وأهل الحديث لا يصححون مثل إسناده . لكن الحديث عندي صحيح ؛ لأن العلماء تلقوه بالقبول

ইবনু আব্দিল বার্র তাঁর ইস্তেযকার নামক কিতাবে যখন তিরমিযী এর এই বক্তব্য বর্ণনা করেন, ইমাম বুখারী সুমুদ্রের হাদীসকে সহীহ বলেছেন “তার পানি পবিত্র” অথচ মুহাদ্দিসীনগণ এ ধরনের সনদকে সহীহ বলেন না ’ তখন বলেন, তবে হাদীসটি আমার নিকট সহীহ কেননা উলামায়ে কেরাম তা কবূলের দৃষ্টিতে গ্রহণ করেছেন। [তাদরীবুর রাবী: ২৫]

আল্লামা সুয়ূতী রহ. আরো বলেন, “হাদীসটি তিরমিযী এনেছেন এবং বলেছেন ইমাম আহমাদ সহ অন্যরা হুসাইনকে য’ঈফ বলেছেন। আহলে ইলমদের নিকট উক্ত হাদীসের উপর আমল জারী রয়েছে। একথা দ্বারা তিরমিযী এদিকে ইশারা করেছেন যে, হাদীসটি উলামাদের সমর্থনে শক্তিশালী হয়েছে। আর অনেকেই স্পষ্টভাবে একথা উল্লেখ করেছেন, আহলে ইলমদের কোনো হাদীসের সপক্ষে বক্তব্যই হাদীস সহীহ হওয়ার দলীল। যদিও তার নির্ভরযোগ্য কোন সনদ না থাকে। [আত-তাআক্কুবাত: ১২]

অন্যত্র আল্লামা সুয়ুতী রহ. আরো বলেন-

يحكم للحديث بالصحة إذا تلقاه الناس بالقبول وإن لم يكن له إسناد صحيح

যখন মুসলিম উম্মাহ কোনো হাদীসকে কবূলের দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করে নেয়, তখন উক্ত হাদীসকে সহীহ হওয়ার ফয়সালা দেওয়া হয়। যদিও তার কোনো সহীহ সনদ না থাকে। [তাদরীবুর রাবী: ২৪]

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী বলেন-

কোনো হাদীস কবূল হওয়ার গুনাবলীর মধ্য হতে একটি হলো হাদীসের বিষয়বস্তুর উপর উলামায়ে কেরাম আমলের ব্যপারে একমত হবেন। এমন হাদীসকে কবূল করা হবে এমনকি তার উপর আমল করা ওয়াজিব। আয়িম্মায়ে উছুলের একটি জামা’আত এমনটি বলেছেন। তার উদাহরণ সমূহের মধ্য থেকে হল, ইমাম শাফে’ঈ  এর বক্তব্য ‘নাপাকী পানিতে প্রবেশের দ্বারা নাপাক হওয়ার ব্যপারে যখন পানির স্বাদ বা গন্ধ বা রং পরিবর্তন হয়ে যায়’ তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে এমন সূত্রে বর্ণিত যা মুহাদ্দিসীনগণ (আমলযোগ্য) সাব্যস্ত করেন না। অথচ এটাই সকলের মত। উলামাদের এ বিষয়ে কোনো মতবিরোধ আমার জানা নেই। [আল ইফসাহ আলা নুকাতি ইবনুস সালাহ]

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম হাম্বলী কিতাবুর রূহ এ মৃত ব্যক্তিকে কবরে তালকীনের ব্যপারে মু’জামে তাবারানীর একটি হাদীস উল্লেখ করে বলেন, হাদীসটি যদিও সহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয় তবে সকল যুগে ও সকল শহরে হাদীসটির উপরে কোনো আপত্তি ছাড়াই আমল চালু থাকা হাদীসটির উপর আমলের জন্য যথেষ্ট।

এর পূর্বে তিনি বলেন, ইমাম আহমাদকে এ আমলের ব্যপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি এটাকে উত্তম বলেছেন এবং উক্ত হাদীসের উপর উম্মতের আমলকে দলীল হিসেবে পেশ করেছেন। [কিতাবর রূহ: ১৪]

এ ব্যাপারে ইমাম ইবনে হুমাম ও মালেক রহ. বলেন-

وَمِمَّا يُصَحِّحُ الْحَدِيثَ أَيْضًا عَمَلُ الْعُلَمَاءِ عَلَى وَفْقِهِ وَقَالَ مَالِكٌ شُهْرَةُ الْحَدِيثِ بِالْمَدِينَةِ تُغْنِي عَنْ صِحَّةِ سَنَدِهِ

কোনো হাদীসের স্বপক্ষে উলামায়ে কেরামের আমল হাদীসটিকে সহীহ সাব্যস্ত করার একটি কারণ। আর ইমাম মালেক বলেন, কোনো হাদীস মদীনাতে প্রসিদ্ধ হওয়া তার সনদ সহীহ হওয়াকে অমুখাপেক্ষী করে দেয়। [ফাতহুল ক্বাদীর: ৩/১৪৩]

উপরোক্ত দলিলাদের ভিত্তিতে প্রমাণিত হলো যে, কোনো হাদিস মুসলিম উম্মাহ সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করে নিলে হাদীসটি সহীহ হওয়া এবং হাদীসটির উপর আমল ওয়াজিব হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। 

এখন আমরা দেখবো, সাহাবায়ে কেরাম ২০ রাকাত আদায় করতেন কিনা। এবং মুসলিম উম্মাহ বিশ রাকাত তারাবীহ গ্রহণ করেছেন কিনা।

সাহাবায়ে কেরামের ২০ রাকাত তারাবীহ আদায় করতেন এ ব্যাপারে ইতোপূর্বে আমরা একাধিক সালাফী শায়েখের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছি। এখন সোনালী যুগের আরো কিছু ইমামের বক্তব্য উদ্ধৃত করবো। এবং দেখবো, আসলে সাহাবায়ে কেরামের তারাবীর রাকাত সংখ্যা কত ছিলো!

📗 ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র মালেকী রহ. (৪৬৩) বলেন—

وَهُوَ – عِشْرُونَ رَكْعَة – الصَّحِيحُ عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ مِنْ غَيْرِ خِلَافٍ مِنَ الصَّحَابَةِ

এটাই সহীহ যে, হযরত উবাই ইবনে কা‘ব ২০ রাকাত তারাবীহ পড়িয়েছেন। আর তাতে কোন সাহাবী দ্বিমত করেননি। [আল ইসতিযকার: ৫/১৫৭]

📗 ইমাম কাজী ইয়াদ্ব রাহিমাহুল্লাহ বলেন—

فاختار الإمام أحمد وجمهور العلماء عشرين ركعة: لما روى مالك في (الموطأ) عن يزيد بن رومان قال:(كان الناس في زمن عمر يقومون في رمضان بثلاث وعشرين ركعة).وقال السائب بن يزيد: (لما جمع عمر الناس على أُبي بن كعب، وكان يُصلي بهم عشرين ركعة)

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ও জমহূর উলামায়ে কেরাম ২০ রাকাতকেই পছন্দ করেছেন। কেননা, ইমাম মালেক তাঁর মুয়াত্তায় বর্ণনা করেন, ওমর এর জামানায় মানুষজন বিতরসহ ২০ রাকাত তারাবি আদায় করতেন। আর সায়েব ইবনে ইয়াজিদ বলেন, ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যখন উবাই ইবনে কা’বের পেছনে মানুষদেরকে জামা’আতবদ্ধ করেন, তখন তিনি তাদেরকে নিয়ে ২০ রাকাত আদায় করেন। [মাওয়ারিদুয যামআন: ১/৪০৯]

📗 ইমাম ইবনে কুদামা রহ. এর বক্তব্য

তিনি তাঁর আল-মুগনী গ্রন্থে সাহাবায়ে কেরামের আমল বিশ রাকাতকে দলীল দ্বারা প্রমাণিত করে বলেছেন,

ما فعله عمر وأجمع عليه الصحابة في عصره أولى بالاتباع

উমর রা. যা করেছেন এবং তাঁর আমলে যে বিষয়ের ওপর সাহাবায়ে কেরামের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটাই অনুসরণের অধিক উপযুক্ত। [আল-মুগনী: ২/১২৩]

তিনি আরো বলেন-

ورَواهُ السّائِبُ بْنُ يَزِيدَ، ورُوِيَ عَنْهُ مِن طُرُقٍ. ورَوى مالِكٌ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ رُومانَ، قالَ: كانَ النّاسُ يَقُومُونَ فِي زَمَنِ عُمَرَ فِي رَمَضانَ بِثَلاثٍ وعِشْرِينَ رَكْعَةً. وعَنْ عَلِيٍّ، أنَّهُ أمَرَ رَجُلًا يُصَلِّي بِهِمْ فِي رَمَضانَ عِشْرِينَ رَكْعَةً. وهَذا كالإجْماعِ

(বিশ রাকাতের হাদীসটি) সায়েব ইবনে ইয়াজিদ বর্ণনা করেন এবং তার থেকে অসংখ্য সনদে বর্ণিত। আর ইমাম মালেক ইয়াজিদ ইবনে রোমান থেকে বর্ণনা করেন, মানুষজন ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর জামানায় রমজানে ২০ রাকাত তারাবি পড়তেন আর আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি মানুষদেরকে রামাদ্বানে ২০ রাকাত তারাবি পড়ার আদেশ দিতেন। এটা (মূলত) ইজমার মতই। [প্রাগুক্ত]

সামনে গিয়ে তিনি এ ব্যাপারে সমাধান দেন-

ما كانَ عَلَيْهِ أصْحابُ رَسُولِ اللَّهِ – ﷺ – أوْلى وأحَقُّ أنْ يُتَّبَعَ،  

অনুসরণের ক্ষেত্রে ওটাই অধিক উত্তম ও উপযুক্ত যার উপর সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন (অর্থাৎ ২০ রাকাত)। [আল-মুগনী: ২/১২৩]

📗 প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মোল্লা আলী কারী রহ. এর বক্তব্য

তিনি বলেন,

ﺃﺟﻤﻊ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ

তারাবীহর সালাত ২০ রাকাতের ওপর সাহাবায়ে কেরামের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [মিরকাত শরহে মিশকাত: ৩/৩৪৬]

তিনি আরো বলেন,

ﻓﺼﺎﺭﺍﺟﻤﺎﻋﺎ ﻟﻤﺎﺭﻭﯼ ﺍﻟﺒﯿﮭﻘﯽ ﺑﺎﺳﻨﺎﺩ ﺻﺤﯿﺢ : ﺍﻧﮭﻢ ﮐﺎﻧﻮﺍﯾﻘﯿﻤﻮﻥ ﻋﻠﯽ ﻋﮭﺪ ﻋﻤﺮ ﺑﻌﺸﺮﯾﻦ ﺭﮐﻌۃ ﻭﻋﻠﯽ ﻋﮩﺪ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﻭﻋﻠﯽ ﺭﺿﯽ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻨﮩﻤﺎ

সুতরাং ‍২০ রাকাতের উপর ইজমা সংঘটিত হয়ে গেছে। কেননা, ইমাম বায়হাকী রহ. সহীহ সনদে র্বণনা করেন যে, সাহাবীগণ ওমর রা. এর যামানায় ২০ রাকাত তারাবী পড়তেন। তেমনিভাবে ওসমান এবং হযরত আলী রা. এর যামানায়ও ২০ রাকাত হতো। [শরহুন নেকায়াহ: ১/৩৪২]

📗 সাহাবায়ে কেরামের ২০ রাকাতের ব্যাপারে আহলে হাদীসদের প্রাণপুরুষ ইমাম ইবনে তায়মিয়্যার বক্তব্য

১. লা-মাযহাব ভাইদের পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ইমাম ইবনে তায়মিয়্যাহ  রহ. বলেন-

قَامَ بِهِمْ أبي بْنُ كَعْبٍ فِي زَمَنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عِشْرِينَ رَكْعَةً

উমর রা. এর যুগে উবাই বিন কা’ব রা. সাহাবাদের নিয়ে ২০ বিশ রাকাত আদায় করেছিলেন। [মাজমূ’উল ফাতায়া: ২৩/১২০]

২. অন্যত্র তিনি আরো দৃঢ়ভাবে বলেন—

إِنَّهُ قَدْ ثَبَتَ أَنَّ أبي بْنَ كَعْبٍ كَانَ يَقُومُ بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً فِي قِيَامِ رَمَضَانَ وَيُوتِرُ بِثَلَاثِ. فَرَأَى كَثِيرٌ مِنْ الْعُلَمَاءِ أَنَّ ذَلِكَ هُوَ السُّنَّةُ؛ لِأَنَّهُ أَقَامَهُ بَيْن الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَلَمْ يُنْكِرْهُ مُنْكِرٌ

وَاسْتَحَبّ آخَرُونَ: تِسْعَةً وَثَلَاثِينَ رَكْعَةً؛ بِنَاءً عَلَى أَنّهُ عَمَلُ أَهْلِ الْمَدِينَةِ الْقَدِيمُ. وَقَالَ طَائِفَةٌ: قَدْ ثَبَتَ فِي الصّحِيحِ عَنْ عَائِشَةَ أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَمْ يَكُنْ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا غَيْرِهِ عَلَى ثَلَاثَ عَشْرَةَ رَكْعَةً.

নিশ্চয় এ কথা সুপ্রমাণিত যে, উবাই ইবনু কা‘ব রা. মানুষদের (সাহাবী ও তাবে’ঈ) নিয়ে ২০ রাকাত তারাবীহ ও ৩ রাকাত বিতর পড়তেন। এ জন্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কেরামের মত হচ্ছে বিশ রাকাত তারাবীই হচ্ছে সুন্নাহ। কেনোনা, তিনি মুহাজির ও আনসার সাহাবীগণের উপস্থিতিতেই বিশ রাকাত পড়িয়েছিলেন; তাঁদের কেউই এর উপর কোনো আপত্তি উত্থাপন করেননি। 

অন্য কিছু আলেমর মতে তারাবী উনচল্লিশ রাকাত। কেননা, মদীনা শরীফে প্রথম দিকে উনচল্লিশ রাকাতই পড়া হতো। তবে একটি গোষ্ঠী বলে, সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। [মাজমূ’উল ফাতাওয়া: ২৩/১১২-১১৩]

৩. এ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন-

وَاضْطَرَبَ قَوْمٌ فِي هَذَا الْأَصْلِ، لِمَا ظَنّوهُ مِنْ مُعَارَضَةِ الْحَدِيثِ الصّحِيحِ لِمَا ثَبَتَ مِنْ سُنّةِ الْخُلَفَاءِ الرّاشِدِينَ، وَعَمَلِ الْمُسْلِمِينَ.

আলেমদের একশ্রেণি তারাবীর রাকাত সংখ্যার বিষয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের শিকার। কারণ, তাঁরা দেখছেন যে, সহীহ হাদীসে এসেছে এক সংখ্যা আর খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ এবং যুগ পরম্পরায় চলে আসা মুসলমানদের আমল দ্বারা প্রমাণিত অন্য সংখ্যা। [মাজমূ’উল ফাতাওয়া: ২৩/১১৩]

একই ধরনের বক্তব্য তাঁর অন্যান্য গ্রন্থেও পাওয়া যায়, তিনি বলেন—

উমর রা.-এর যমানায় উবাই ইবনে কা’ব রা. যখন সবাইকে নিয়ে এক জামা’আতে দাঁড়ান তখন তিনি বিশ রাকাত পড়িয়েছিলেন। কেননা, দীর্ঘ কেরাত মুসল্লীদের জন্য কষ্টকর ছিলো। তাই তিনি কেরাত দীর্ঘ না করে রাকাতের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছেন।

[আল-ফাতাওয়াল কুবরা: ২/২৫০]

 ৪. তিনি অন্যত্র লিখেছেন-

وَعَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ السُّلَمِيِّ أَنَّ عَلِيًّا دَعَا الْقُرَّاءَ فِي رَمَضَانَ، فَأَمَرَ رَجُلًا مِنْهُمْ يُصَلِّي بِالنَّاسِ عِشْرِينَ رَكْعَةً، قَالَ وَكَانَ عَلِيٌّ يُوتِرُ بِهِمْ.

আবু আব্দির রহমান সুলামী বলেন, হযরত আলী রা. এক রামাদ্বানে কুরআনের হাফেযদের ডেকে তাদের থেকে একজনকে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়াতে বললেন আর আলী রা. নিজে বিতর পড়াতেন। [মিনহাজুস সুন্নাহ: ৮/৩০৮]

 

ইবনে তাইমিয়া রহ. এর সময় শিয়া রাফেযীরা যখন এই ফতোয়া প্রদান করলো যে, ২০ রাকাত তারাবীহ হযরত উমর রা. এর চালু করা বিদ’আত ও গর্হিত কাজ। তখন তিনি তা খণ্ডন করে লিখেন-

أنَّ هَذَا لَوْ كَانَ – عملُ عمرَ في التراويح – قَبِيحًا مَنْهِيًّا عَنْهُ لَكَانَ عَلِيٌّ أَبْطَلَهُ لَمَّا صَارَ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ وَهُوَ بِالْكُوفَةِ، فَلَمَّا كَانَ جَارِيًا فِي ذَلِكَ مَجْرَى عُمَرَ دَلَّ عَلَى اسْتِحْبَابِ ذَلِكَ، بَلْ رُوِيَ عَنْ عَلِيٍّ أَنَّهُ قَالَ: نَوَّرَ اللَّهُ عَلَى عُمَرَ قَبْرَهُ كَمَا نَوَّرَ عَلَيْنَا مَسَاجِدَنَا.

আলী রা. যদি তারাবীর ক্ষেত্রে উমর রা. এর আমলকে পছন্দই না করতেন তাহলে তিনি যখন খলিফাতুল মুসলিমীন হলেন তখন তিনি তা অবশ্যই বাতিল করতেন। কিন্তু তিনি যেহেতু এ ক্ষেত্রে উমর রা. পদ্ধতিই অনুসরণ করেছেন। এর দ্বারা বুঝা গেল আলী রা.ও ২০ রাকাত তারাবীহকে পছন্দ করতেন। এ মর্মেই আলী রা. থেকে এ কথা বর্ণিত আছে যে তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা হযরত উমর রা. এর কবরকে আলোকিত করুন যেমন তিনি আমাদের মসজিদসমূহকে আলোকিত করেছেন। [মিনহাজুস সুন্নাহ: ৮/৩০৮]

 

৫. সাহাবীগণ কত রাকাত পড়তেন সেই সম্পর্কে তিনি আরো বলেন—

  فَلَمَّا جَمَعَهُمْ عُمَرُ عَلَى أبي بْنِ كَعْبٍ كَانَ يُصَلِّي بِهِمْ عِشْرِينَ رَكْعَةً ثُمَّ يُوتِرُ بِثَلَاثِ وَكَانَ يُخِفُّ الْقِرَاءَةَ بِقَدْرِ مَا زَادَ مِنْ الرَّكَعَاتِ لِأَنَّ ذَلِكَ أَخَفُّ عَلَى الْمَأْمُومِينَ مِنْ تَطْوِيلِ الرَّكْعَةِ الْوَاحِدَةِ ثُمَّ كَانَ طَائِفَةٌ مِنْ السَّلَفِ يَقُومُونَ بِأَرْبَعِينَ رَكْعَةً وَيُوتِرُونَ بِثَلَاثِ وَآخَرُونَ قَامُوا بِسِتِّ وَثَلَاثِينَ وَأَوْتَرُوا بِثَلَاثِ وَهَذَا كُلُّهُ سَائِغٌ

 

যখন হযরত উমর রা. সকলকে হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. এর পেছনে একত্রিত করলেন তখন তিনি তাদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবীহ ও ৩ রাকাত বিতর পড়তেন। তিনি যত রাকাত বৃদ্ধি করেছেন তার হিসাব করে কিরাত কম পড়তেন। কেননা কেনোনা, এক রাকাতকে দীর্ঘায়িত করার চেয়ে এ পদ্ধতি মুসল্লিদের জন্য বেশি প্রশান্তিদায়ক ছিলো। [অর্থাৎ এক রাকাতের মধ্যে কেরাত দীর্ঘ করার চেয়ে দীর্ঘ কেরাতকে ভাগ করে কয়েক রাকাতে পড়াটা মুসল্লীদের জন্য বেশি সহজ ছিলো।] তবে সালাফের এক দল ৪০ রাকাত তরাবীহ ও ৩ রাকাত বিতরও পড়তেন। তাদের কেউ কেউ ৩৬ রাকাত তারাবীহ ও ৩ রাকাত বিতর পড়তেন। [মাজমূ’উল ফাতাওয়া: ২২/২৭২]

৬. আরো একাধিক কিতাবে তাঁর সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন—

 وعمر رضي الله عنه لما جمع الناس على أبَيّ صلى بهم عشرين ركعة، والصحابة رضي الله عنهم منهم من يقل ومنهم من يكثر، والحد المحدود لا نص عليه من الشارع صحيح

আর ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যখন মানুষদেরকে উবাই ইবনে কা’বের পেছনে জামা’আতবদ্ধ করেছেন, তখন উবাই ইবনে কা’ব রা. তাদেরকে নিয়ে বিশ রাকাতই পড়েছেন। [মুখাল্লাসুল ফিকহী: ১/১৬৯, ইতহাফু আহলিল ঈমান: ১/৩৩]

📗 সমাধান

অনেকে বলতে পারেন, আমরা অনুসরণ করবো রাসূলের, সাহাবায়ে কেরামের নয়। অতএব, দেখতে হবে, রাসূল কত রাকাত পড়েছেন। আবার অনেকে বলে থাকেন, ৮ রাকাত পড়া সুন্নাহ ২০ রাকাত পড়া জায়েয। অতএব আমাদেরকে জায়েয ছেড়ে সুন্নাহ এর অনুসরণ করতে হবে।

তাদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথা: 

১. সালাফী/লা-মাযহাব/আহলে হাদিসের শ্রদ্ধাভাজন শায়খ সালেহ আল মুনাজ্জিদ ৮ রাকাতের ব্যাপারে বলেন-

  ،  أن الأغلب عندي في إحدى عشرة ركعة الوهم ، والله أعلم

আমার প্রবল ধারণা হলো, এগারো রাকাতের বিষয়টি মূলত একটি ভ্রান্তি বা সন্দেহ। আল্লাহই ভাল জানেন। [মাওকা’উল ইসলাম: ৪/২৭৪]

২. অধিকাংশ ইমামের মতে রাসূল সা. সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে ঠিক কত রাকাত তারাবীহ পড়েছেন তা কোনো হাদিসে নির্দিষ্টভাবে আসেনি। ২০ রাকাতের হাদিসও পাওয়া যায় ৮ রাকাতের হাদিসও পাওয়া যায়, ওলামায়ে কেরামের মতে উভয় হাদীসটি দুর্বল। তবে আমরা প্রথমেই বলেছি দুর্বলের ক্ষেত্রে ওটাই গ্রহণযোগ্য যা মুসলিম উম্মাহ ব্যাপকভাবে গ্রহণ করে নিয়েছেন। অতএব বিশ রাকাতের হাদীসটি দুর্বল হলেও হাদিস শাস্ত্রের উসুলে গ্রহণযোগ্য; বরং সর্বাধিক বিশুদ্ধ।

৩. স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা আমার এবং আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহের অনুসরণ কর। আর এখানে, খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহের অনুসরণ করার অর্থ হচ্ছে- তারা রাসুলের সুন্নাহকে যেভাবে বুঝেছেন ওভাবেই পালন করা। কারণ, খোলাফায়ে রাশেদের নতুন কোন সুন্নাহ তৈরি করবেন না।

তাছাড়া, রাসুলের সুন্নাহ খোলাফায়ে রাশেদীনই ভালো বুঝেছেন এবং তারাই রাসুলের সুন্নাহ পালনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক অগ্রগণ্য। আপনার কি মনে হয় আপনি ৮ রাকাত পড়ে সুন্নাহ পালন করেছেন, আর সাহাবায়ে কেরাম ২০ রাকাত পড়ে সুন্নাহের বিরোধিতা করেছিলেন? তারা রাসুলের সুন্নাহ বুঝেননি? 

জানি না আপনি কোন বিবেকে বলছেন, জায়েযের নয়, অনুসরণ করতে হবে সুন্নাহর! আর সুন্নাহ হচ্ছে ৮ রাকাত! একথা বলে তো আপনি পরোক্ষভাবে এটাই বুঝাচ্ছেন যে, সাহাবায়ে কেরাম ও মুসলিম উম্মাহের সকল গ্রহণযোগ্য ইমাম ২০ রাকাত পড়ে সুন্নাহের বিরোধিতা করেছেন! নাউজুবিল্লাহ! 

যারা রাসুলের জন্য জান দিতে প্রস্তুত! রাসূলকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে থাকেন। তারা নাকি করবেন রাসূলের সুন্নাহের বিরোধিতা! এটাও কি আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে? আর মুসলিম উম্মাহের ইমামগণ দ্বীনের তরে কত জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন! সারা জীবন ব্যয় করে দিয়েছেন রাসূলের দীন রক্ষার জন্য; আর তারাই করেছেন রাসুলের সুন্নাহের বিরোধিতা! 

যাইহোক, এ ব্যাপারে আমরা দুজন ইমামের বক্তব্য শুনি।

ইমাম ইবনে কুদামার বক্তব্য ওপরেও অতিবাহিত হয়েছে- তিনি বলেন-

ما كانَ عَلَيْهِ أصْحابُ رَسُولِ اللَّهِ – ﷺ – أوْلى وأحَقُّ أنْ يُتَّبَعَ،  

অনুসরণের ক্ষেত্রে ওটাই অধিক উত্তম ও উপযুক্ত যার উপর সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন (অর্থাৎ ২০ রাকাত)। [আল-মুগনী: ২/১২৩]

ইমাম বদরুদ্দীন আল-বা’লী রহ. উদ্ধৃত করেন—

فَمن ظن أنه يَأْخُذ من الكتاب والسّنة بِدُونِ أن يقْتَدى بالصحابة ويتبع غير سبيلهم فَهُوَ من أهل البدع والضلال ومن خالف ما أجمع عَلَيْهِ المُؤْمِنُونَ فَهُوَ ضال

যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, সে সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ করা ব্যতীত সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ থেকে মাসআলা গ্রহণ করবে এবং সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পথ ব্যতীত অন্য পথের অনুসরণ করবে তবে নিশ্চয় সে বিদ’আতি এবং পথভ্রষ্ট! আর যে ব্যক্তি ঐ বিষয়ের বিরোধিতা করে যে বিষয়ে মুমিনগণ একমত হয়েছেন, সে ব্যক্তিও গোমরাহ! [মুখতাসার ফাতাওয়া আল-মিসরিয়্যাহ: ৫৫৬]

পরিশেষে আমরা মহান আল্লাহ তাআলার একটি বাণী উদ্ধৃত করে আজকের প্রবন্ধটি শেষ করছি। মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন-

وَ مَنْ یُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُ الْهُدٰی وَ یَتَّبِعْ غَیْرَ سَبِیْلِ الْمُؤْمِنِیْنَ نُوَلِّهٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصْلِهٖ جَهَنَّمَ  وَ سَآءَتْ مَصِیْرًا.

যে ব্যক্তি তার সামনে হেদায়েত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে ও মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য কোনও পথ অবলম্বল করবে, আমি তাকে সেই পথেই ছেড়ে দেব, যা সে অবলম্বন করেছে। আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব, যা অতি মন্দ ঠিকানা। [সূরা নিসা: ১১৫]

📗 উপসংহার

চাইলে দীর্ঘ ১৪০০ শত বছর যাবৎ সকল ইমাম ও মুসলিম উম্মাহ এর আমল যে ২০ রাকাতের উপরই ছিলো —এ বিষয়টি আমরা অসংখ্য দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণিত করে দিতে পারতাম। কিন্তু প্রবন্ধটি যেহেতু তারাবীহর রাকাত সংখ্যা নিয়ে নয়, তাই আমরা বিষয়টিকে সংক্ষিপ্ত করলাম। তারাবির রাকাত সংখ্যা নিয়ে লিখিত আমার অন্যান্য প্রবন্ধ গুলো পড়ে নিতে পারেন।

অবশেষে একটাই কথা বলবো, সম্মানিত মুসলিম ভাই ও বন্ধুগণ! রমজান মাস ইবাদতের মাস। ফজিলতের মাস। বলা হয়, এ মাসে একটি আমলের সাওয়াব ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অতএব, রমজান মাসে বেশি বেশি সালাত আদায় করা দরকার। দয়া করে ৮ রাকাত নিয়ে মুসলিম উম্মাহের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না। কারণ, এতে করে এ মহিমান্বিত মাসটি হিংসা-বিদ্বেষে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। 

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

 


আরো পড়ুন-

 


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প এক পুরুষ বারো বিয়ে আফছানা খানম অথৈ

  গল্প এক পুরুষ বারো বিয়ে আফছানা খানম অথৈ গরীব কৃষকের মেয়ে তাছলিমা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছে।আভাব অনটনের সংসার তাই

কবিতা শ্রেষ্ঠ নবী আফছানা খানম অথৈ

কবিতা শ্রেষ্ঠ নবী আফছানা খানম অথৈ নুরের নবী দয়ার ছবি এলেন দুনিয়ায়, আলোকিত করলেন সমস্ত দুনিয়া। নুরের নবী দয়ার খনি

ছলনা

ভালবাসি বললে ভুল হয়। বলতে হয় ঘৃণা করি।কারন, ভালবাসার নামে তুমি যা দিয়েছ সব ছলনা। তুমি এমন ভালবাসা কেন দিলে

বড়ো সাধ

বড়ো সাধ মোঃ রুহুল আমিন এই ধরাতে শতো বছর বেঁচে থাকতে চাই, মানুষ হলে মানুষ কূলে পাবো তখন ঠাঁই। দেহের

Leave a Reply