প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ডে। ৮ টি দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত খেলায় জয়ী দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এখন আমরা ওয়ানডে বলতে বুঝি প্রতি ইনিংসে ৫০ ওভারের ক্রিকেট, তখন হতো ৬০ ওভারের।
তখন খেলার জন্য ব্যবহৃত হতো ক্রিকেটের ঐহিহ্যবাহী সাদা পোশাক আর লাল বল। ১৮৭৭ সালে প্রথম টেস্ট ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হলেও তাঁর এক শতাব্দি পরে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট- প্রুডেন্সিয়াল বিশ্বকাপ
আমরা জানি, ফুটবলের বিশ্বকাপের নাম প্রথমে ছিল জুলেরিমে কাপ। ক্রিকেটেরও প্রথম বিশ্বকাপের এরকম একটি নাম ছিলো, সেটি হচ্ছে প্রুডেন্সিয়াল কাপ। এই বিশ্বকাপের স্পন্সর ছিল প্রুডেন্সিয়াল এসিওরেন্স কোম্পানি নামের একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। খেলার যাবতীয় ব্যয়ভার তারাই বহন করে, সম্প্রচারসত্ত্বজনিত কারণে বিশ্বকাপের নামটির সাথেও এই কোম্পানির নাম জুড়ে দেয়া হয়।
প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯১২ সালে ইংল্যান্ডে- সেখানে অংশ নিয়েছিল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এর বহু বছর পরে প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। আটটি দল চারটি ভাগে ভাগ হয়ে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে খেলে, এরপর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। মোট ম্যাচসংখ্যা ছিল ১৫ টি(ফাইনাল সহ)
যেসব মাঠে খেলা হয়েছিল
লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড, লন্ডনের দি ওভাল, বার্মিংহামের এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ড, নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজ, এবং লিডস এর হেডিংলি স্টেডিয়াম এ প্রথম বিশ্বকাপের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
মাঠগুলোতে দর্শক ধারণক্ষমতা ছিলো ১৪০০০-৩০০০০(মাঠভেদে ভিন্ন)। এর মাঝে হেডিংলি স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ও রাগবি খেলার জন্য আলাদা দুটি অংশ রয়েছে। একটি ব্যাপার সবগুলো মাঠের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যে, এগুলোর সবই আন্তর্জাতিক মাণের স্টেডিয়াম।
অংশগ্রহণকারী দল
ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এই খেলায় অংশ নিয়েছিল ৮ টি দেশ- অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ এরা ছিল টেস্ট খেলুড়ে দেশ। এর বাইরে শ্রীলংকা এবং পূর্ব আফ্রিকা অংশ নিয়েছিল। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা না থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকাও অংশ নিতে পারতো।
পূর্ব আফ্রিকার পরিচয় দেয়ার আবশ্যকতা অনুভব করছি। কেনিয়া, উগান্ডা, তানজানিয়া এবং জাম্বিয়া এই চারটি দেশ সম্মিলিতভাবে পূর্ব আফ্রিকা বলে পরিচিত ছিল। আমাদের দেশের অনেকেই উগান্ডা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতে পছন্দ করেন, তাদের জেনে রাখা উচিত উগান্ডা বাংলাদেশের জন্মের আগে বিশ্বকাপে খেলেছিলো। এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলের সেরা দলের নাম কেনিয়া, এই দলটির বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতাও রয়েছে।
দেখুন- বাংলাদেশের টেস্ট দলের অধিনায়ক কে?
ক্লাইভ লয়েডের সেঞ্চুরি
ম্যান অফ দ্যা মাচ- ক্লাইভ লয়েড
ওয়েস্ট ইন্ডিজ |
অস্ট্রেলিয়া |
২৯১/৮ (৬০ ওভার) ক্লাইভ লয়েড ১০২ (৮৫) গ্যারি গিলমোর ৫/৪৮ (১২ ওভার) |
২৭৪ (৫৮.৪ ওভার) ইয়ান চ্যাপেল ৬২ (৯৩) কিথ বয়েস ৪/৫০ (১২ ওভার) |
১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলায় অংশগ্রহণ করে অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৯১ রান করে। এর জবাবে অস্ট্রেলিয়া ৫৮.৪ ওভারে ২৭৪ রানে গুটিয়ে যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭ রানে জয়ী হয়, ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন ক্লাইভ লয়েড। এই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। অস্ট্রেলিয়ার গ্রেগ চ্যাপেল এবং ইয়ান চ্যাপেলের জুটি ভালো শুরু করলেও ওদের শেষ রক্ষা হয় নি।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ কে কতবার নিয়েছে
দেখুন- ক্রিকেটে আউট কত প্রকার
সাল |
স্বাগতিক দেশ |
চ্যাম্পিয়ন |
১৯৭৫ |
ইংল্যান্ড |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ |
১৯৭৯ |
ইংল্যান্ড |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ |
১৯৮৩ |
ইংল্যান্ড |
ভারত |
১৯৮৭ |
ভারত ও পাকিস্তান |
অস্ট্রেলিয়া |
১৯৯২ |
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড |
পাকিস্তান |
১৯৯৬ |
ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা |
শ্রীলংকা |
১৯৯৯ |
ইংল্যান্ড, আয়রল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড |
অস্ট্রেলিয়া |
২০০৩ |
দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে |
অস্ট্রেলিয়া |
২০০৭ |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ |
অস্ট্রেলিয়া |
২০১১ |
ভারত, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ |
ভারত |
২০১৫ |
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড |
অস্ট্রেলিয়া |
২০১৯ |
ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস |
ইংল্যান্ড |
২০২৩ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ভারতে
প্রথম বিশ্বকাপে ১৭ রানে জয়ী হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এখন সবার চোখ ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের দিকে। ৫ বার বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া জিতবে, নাকি ২ বার বিশ্বকাপজয়ী ভারত, নাকি অন্য কেউ, বাংলাদেশ কি করবে– সবটাই এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার উপজীব্য।