পঞ্চকবি, পঞ্চপান্ডব, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বস্য, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, জীবনানন্দ দাস

বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপান্ডব এবং পঞ্চকবি

0

বাংলা সাহিত্যের পঞ্চকবি এবং পঞ্চপান্ডব রয়েছে।  পঞ্চপান্ডব বলে পরিচিত কবিরা রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় রবীন্দ্র বলয়ের বাইরে গিয়ে কবিতা রচনা করেছিলেন। এই পাঁচজন কবি হচ্ছেন- অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাস, বিষ্ণু দে এবং সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। তারা সবাই কল্লোল পত্রিকায় লিখতেন। এই পঞ্চপান্ডবেরাই আধুনিক বাংলা কবিতার সূচনা করেছিলেন। শুধু রবীন্দ্রবলয়ের কথা বললে তাদেরকে খাটো করে দেখা হবে, মৌলিকত্ব এবং মাণে তাদের রচনা সত্যিই অসাধারণ ছিলো।

বিসিএস, ব্যাংক ও অন্যান্য সরকারী চাকরির পরীক্ষার্থীদের এই অংশ কাজে লাগবে(১/২ টি প্রশ্ন আসে)। চলুন তাদের সম্পর্কে জেনে নেই-

অমিয় চক্রবর্তী

কবিদের কবি অমিয় চক্রবর্তী জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯০১ সালে। তিনি ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে কাজ করেছেন, রবীন্দ্রনাথের, মহাত্মা গান্ধীর এবং একজন আমেরিকান লেখক থমাস মেট্রনের। তিনি হাওয়ার্ড, বোস্টন এবং আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য এবং প্রাচ্য ধর্ম বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি সান্নিধ্যে এসেছিলেন আইনস্টাইন, বার্নার্ড শ, রবার্ট ফ্রস্ট প্রমুখের। পিঁপড়ে কবিতায় তিনি লিখেছিলেন-

আহা পিঁপড়ে ছোটো পিঁপড়ে ঘুরুক দেখুক থাকুক
কেমন যেন চেনা লাগে ব্যস্ত মধুর চলা —
স্তব্ধ শুধু চলায় কথা বলা —
আলোয় গন্ধে ছুঁয়ে তার ঐ ভুবন ভ’রে রাখুক,

আহা পিঁপড়ে ছোটো পিঁপড়ে ধুলোর রেণু মাখুক

বুদ্ধদেব বসু

বাংলা সাহিত্যে সত্যিকারের প্রতিভার অধিকারী বলে যদি কেউ থেকে থাকেন তিনি বুদ্ধদেব বসু, তার স্ত্রীর নাম ছিল প্রতিভা। প্রগতি এবং কল্লোল পত্রিকাকেন্দ্রীক কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ইংরেজী ভাষায় লিখে ইংল্যান্ড এবং আমেরিকা থেকেও প্রশংসা পেয়েছিলেন। গোপালগঞ্জের বুদ্ধদেব বসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে নম্বর পেয়েছিলেন তা এখনো ঐ বিষয়ে সর্বোচ্চ(সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)। তিনি অনেকগুলো প্রেমের কবিতা লিখেছিলেন-

ওগো চপল-নয়না সুন্দরী
তোলো মোর পানে তব দুই আঁখি,
মম শিয়রের কাছে গুঞ্জরি’
গাও সকল অগীত সঙ্গীতে

কল্লোযুগের সূচনাকারী কল্লোল পত্রিকায় পনেরো বছর বয়সে বুদ্ধদেবের কবিতা ছাপা হয়েছিলো। বাংলা কবিতায় আধুনিক কাঠামো প্রবেশ করাতে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

জীবনানন্দ দাস

জীবনানন্দ দাসকে অনেক নামেই ডাকা হয়- রুপসী বাংলার কবি, প্রকৃতির কবি, নির্জনতম কবি, শুদ্ধতম কবি নানা অভিধায় নানা সময়ে তাকে ভূষিত করা হয়েছে। চরম দারিদ্র্যের মাঝে সময় কাটানো এই বরিশাইল্যা মৃত্যুর পরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন।

এখন পর্যন্ত তার জনপ্রিয়তার কমতি নেই। বাংলা কবিতার জগত জীবনানন্দ দাসকে ছাড়া অপূর্ণতায় ভোগে। কবিতার কথা জীবনানন্দ দাসের লেখা একটি প্রবন্ধ। এছাড়া গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাস তিনি লিখেছিলেন।

তার মা কুসুমকুমারী দাসের লেখা আদর্শ ছেলে কবিতাটি এখনও শিশুদের অবশ্যপাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। জীবনানন্দ লিখেছিলেন,

আমার এ-গান
কোনোদিন শুনিবে না তুমি এসে—
আজ রাত্রে আমার আহ্বান
ভেসে যাবে পথের বাতাসে,
তবুও হৃদয়ে গান আসে।

বিষ্ণু দে

পটলডাঙার বিষ্ণু দে ছিলেন একজন কবি ও চলচ্চিত্র সমালোচক। তিনি ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্যপুরষ্কার ‘জ্ঞানপীঠ’ লাভ করেছিলেন। বেটোফেনের নাইন্থ সিম্ফনির মূর্ছনায় প্রণতি রায়চৌধুরীর সাথে তার প্রণয় ঘটেছিল। তিনিও ছিলেন কল্লোল পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ একজন লেখক।

বামপন্থী দর্শন এবং টি এস এলিয়টের ভক্ত বিষ্ণু দে মাও সে তুঙের কবিতাও অনুবাদ করেছিলেন।  সোভিয়েত ল্যান্ড এওয়ার্ড পাওয়া এই ব্যক্তি ছবিও আঁকতেন। তিনি লিখেছিলেন-

সে কবে গেয়েছি আমি তোমার কীর্তনে
কৃতার্থ দোহার |
পদাবলী ধুয়ে গেছে অনেক শ্রাবণে ;
স্মৃতি আছে তার |

সুধীন্দ্রনাথ দত্ত

বাংলা কবিতায় ধ্রুপদী রীতির প্রবর্তক সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। কল্লোল যুগের অন্যতম কবি ছিলেন সুধীন্দ্রনাথ। জীবনানন্দ দাস তাকে আধুনিক বাংলা কাব্যের নিরাশাকরোজ্জল চেতনা বলেছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়াশোনা করার সময়ে কোন পরীক্ষাই তিনি দেন নি

এর আগে অবশ্য স্নাতক সম্পন্ন করেছিলেন। প্রমথ চৌধুরীর পত্রিকা সবুজপত্র সম্পাদনার কাজও তিনি করেছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি পরিচয় পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। যাদবপুর এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছিলেন-

তবু রবে অন্তশীল স্বপ্রতিষ্ঠ চৈতন্যের তলে

হিতবুদ্ধি হন্তারক ক্ষণিকের এ আত্মবিস্মৃতি;

তোমারই বিমূর্ত প্রশ্ন জীবনের নিশীথ বিরলে

প্রমাণিবে মূল্যহীন আজন্মের সঞ্চিত সুকৃতি

 

বাংলা সাহিত্যের পঞ্চকবি

একই সাথে গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক ছিলেন আধুনিক যুগের এমন পাঁচজন কবিকে একসাথে বাংলা সাহিত্যের পঞ্চকবি বলা হয়। তারা হচ্ছেন-

  1. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  2. কাজী নজরুল ইসলাম
  3. রজনীকান্ত সেন
  4. অতুলপ্রসাদ সেন
  5. এবং দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

অনেকে আবার পঞ্চকবি এবং পঞ্চপান্ডবকে গুলিয়ে ফেলেন। মনে রাখার একটি পদ্ধতি হচ্ছে কবিদের মাঝে ঠাকুরমশাই নিজেই আছেন, আর, পান্ডবেরা তার বলয় থেকে মুক্ত। আপনারা চাইলে অন্য যেকোন পদ্ধতিতে মনে রাখতে পারেন। চাকরির পরীক্ষার জন্য যারা পড়তে চান তারা প্রত্যেকের সম্পর্কে বই থেকে আলাদাভাবে পড়ুন, ব্লগের একটি আর্টিকেল হয়তো আপনাদের জন্য যথেষ্ট নয়।

 


আরো পড়ুন- 


 


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

admin

Author: admin

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

তুমি

হেমন্তের বিকেল শেষে শীতে সকাল আসে, এভাবেই যাচ্ছে সময় তোমার প্রহর গুনে। কথার পিঠে কথা সাজিয়ে বাহানা করেছো হাজার, কি

স্মৃতিচারণ

স্মৃতিচারণ ✒ অনিন্দ্য সূত্রধর মনে পড়ে কি সেই ছোট্ট বেলার কথা? পাখির মতো ছিল তখন উড়ার স্বাধীনতা।। প্রাথমিকের জীবনের দিনগুলো

দু’ ফোঁটা বর্ষণ

""দু' ফোঁটা বর্ষণ"" "শহরতলীর বুকে ঝড়ে পড়া দু ' ফোঁটা বৃষ্টির এসিডময় ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বায়নাগুলো। প্রেমশূন্য ভিটে - দমকা

কবিতা জাতীয় ইলিশ আফছানা খানম অথৈ

কবিতা জাতীয় ইলিশ আফছানা খানম অথৈ সোনার বাংলার জাতীয় ইলিশ যাচ্ছে ভারতে, বাংলার মানুষ পাচ্ছে না খেতে দাম বেড়ে যাওয়াতে।

One Reply to “বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপান্ডব এবং পঞ্চকবি”

Leave a Reply