বাহাই ধর্মকে অনেকে ইসলাম ধর্মের শাখা বলে মনে করেন। ওরা কুরআনকে আল্লাহর বাণী বলে মেনে নেয়, মুহাম্মদকে রাসূল বলে মেনে নেয়। বিভিন্ন ধর্মের মহাপুরুষদের এই ধর্মের অনুসারীরা মেনে নেয়।
ইব্রাহিম, মূসা, ঈসা, বুদ্ধ, জরুথ্রুষ্ট এদের সবাইকে নবী বলে স্বীকার করে। এবং সবাই স্রষ্টার নির্দেশ অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে কাজ করেছেন। ওরা নিজেদেরকে এমন মানুষ বলে মনে করে যারা পৃথিবীর একতা এবং ছন্দ রক্ষা করতে এসেছে। উপাসনা করে, রোজা/উপবাস করে, ধ্যান করে।
বাহাই ধর্মমত
এই ধর্মের প্রচারক আব্দুল বাহাহ বিভিন্ন সময়ে ইউরোপে ভাষণ দেয়ার সময় এই ধরণের কিছু বিশ্বাসের কথা বলেছেন–
- ঈশ্বরের একত্ববাদ
- ধর্মের একতা
- মানুষদের একতা
- পুরুষ এবং নারীদের মধ্যে সমতা
- সব ধরণের অন্ধবিশ্বাস থেকে দূরে থাকা
- বিশ্বশান্তি এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থা
- ধর্ম এবং বিজ্ঞানের মিলন
- স্বাধীনভাবে সত্য সন্ধান
- সবার জন্য শিক্ষা
- সবার জন্য একটি কমন দ্বিতীয় ভাষা
- সরকারের প্রতি আনুগত্য
- চরম দারিদ্র্য এবং প্রচুর সম্পদশালী অবস্থা দূর করা
- দাসত্বের অবসান ঘটানো
১৮৫২ সালে বাহাউল্লাহ জেলে বসে এই ধর্মের নির্দেশ পান। তিনি নিজেকে ঈশ্বরের অলঙ্কার(বাহাউল্লাহ) নামে ডাকতেন। বর্তমানে অনুসারী সংখ্যা প্রায় ৭ মিলিয়ন
বাহাই ধর্মের ইতিহাস
ইরানি “বাব” মতবাদ থেকে এটির উদ্ভব ঘটে। একজন মুসাফির ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে শিঘ্রই আল্লাহ একজন বার্তাবাহক পাঠাবেন এবং তার নাম হবে বাহাউল্লাহ। বাহাউল্লাহ, আব্দুল বাহা এবং বাব তিনজনকে তারা তাদের ধর্মের কেন্দ্রীয় ব্যক্তি মনে করে।
১৮৪৪ সালে ইরানের শিয়া মতবাদের বিপরীতে অন্যরকম এই ধারণা প্রসার লাভ করেছিল। বাহাউল্লাহর নেতৃত্বে এটি প্রথম প্রসার লাভ করতে থাকে। ইসলাম ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক এবং ভ্রান্ত মতবাদ প্রচারের দায়ে তাকে ১৮৫০ সালে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। ইরানি এবং অটোমান সাম্রাজ্যে এই মতবাদ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
তার সন্তান আব্দুল বাহার নেতৃত্বে ইউরোপ এবং আমেরিকাতেও এর প্রসার ঘটে। ১৯২১ সাল হচ্ছে আব্দুল বাহার মৃত্যুর বছর যা তাদের কাছে একটি বৈপ্লবিক বছর বলে বিবেচিত হয়। সাঈদ আলী মুহাম্মদ নামের যে ব্যক্তি ‘বাব’ বলে পরিচিত ছিলেন, তিনি নিজেকে ইমাম মাহদি বলেও দাবি করেছিলেন।
বাংলাদেশ এ প্রসার
এরা নিজেদের স্বাধীন (নতুন) ধর্মমতের অনুসারী বলে দাবি করেন। যদিও এদের ধর্মের সাথে ইসলামের বিশ্বাসের অনেক মিল রয়েছে
এই ধর্মে ডাক্তারের নির্দেষ না থাকলে, মদ খাওয়া নিষিদ্ধ। পাশাপাশি নেশাজাতীয় দ্রব্যগুলো সবই নিষিদ্ধ।
১৮৪৪ সালের দিকে বাংলাদেশেও এই ধর্মমতের অনুপ্রবেশ ঘটে। ধারণা করা হয় জালাল ই এফেন্দি নামের এক ব্যক্তি ঢাকায় এসেছিলেন এই ধর্ম প্রচার করার উদ্দেশ্যে। ঢাকা এবং চট্টগ্রামে তাদের লোকাল এসেম্বলি আছে। বার্মায় গিয়ে চট্টগ্রামের কিছু লোক এই ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। World Christian Encyclopedia তে দেয়া তথ্যমতে বাংলাদেশে ১০০০০ বাহাই ধর্মের অনুসারী বাস করেন।
উইকিপিডিয়াতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশে তাদের ধর্মচর্চা, মিটিং করা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করার অধিকার আছে। নারীশিক্ষার ব্যাপারে তারা বেশ সচেতন এবং বিভিন্ন প্রচারণাও চালায়। বাংলাদেশের মুন্ডা এবং আরাকানী জনগোষ্ঠীর মাঝে এই ধর্মকে তারা ছড়িয়ে দিতে পেরেছে বলে ধারণা করা হয়।
পড়তে পারেন– ধর্ম মানে কি?
বাহাই ধর্মের নামাজ
আমরা জানি মুসলিমরা দিনে পাঁচবার নামাজ আদায় করে। ইহুদিরাও নামাজের মতো প্রায় একই পদ্ধতিতে উপাসনা করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ খ্রিস্টানদের উপাসনার ধরণ আলাদা হলেও অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের উপাসনার ধরণ নামাজের মতোই। তবে, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা কুরআন থেকে তেলাওয়াত করে না যা, মুসলিমরা করে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাহাইরাও কি নামাজ পড়ে? উত্তর খোজার চেষ্টা করি। ইউটিউবে সার্চ করলেই তাদের নামাজের ভিডিও খুজে পাওয়া যাবে। ভিডিওটি আপনাদের সাথে এখানে শেয়ার করছি-
আরো পড়ুন- গৌতম বুদ্ধ কি নবী ছিলেন?
বাহাই ধর্মের বই
এটি সবচেয়ে নতুন ধর্মমতগুলোর একটি যা বেশ জনপ্রিয়। বাহাই ধর্ম অনুসারীদের গ্রন্থের নাম কিতাব-ই-আকদাস। এই বইয়ের pdf ফাইল আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। যাদের আগ্রহ আছে তারা চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।
বাহাই লাইব্রেরিতে কিতাব ই আকদাস এর লিংক দেয়া আছে, আপনারা প্রবেশ করে যেকোন অধ্যায় বা, পুরোটা pdf বা, Doc ফাইল আকারে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এই বইটিকে বলা হয় ভবিষ্যতের বিশ্বসভ্যতার মানপত্র। ১৮৯০-১৮৯১ সালের দিকে ভারতের মুম্বাই থেকে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
ইসরাইলে অবস্থিত বাহাউল্লাহর সমাধিকে কেবলা করে তারা নামাজ পড়ে, এছাড়া রোজা রাখে এবং মুসলিমদের মতো মৃতদেহকে কবরও দেয়।
আরো পড়ুন-
