সেরা ঐতিহাসিক স্থান খুজতে আমরা কিছু অনলাইন ব্লগ এবং গুগল সার্চের আশ্রয় নিয়েছি। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পৃথিবিতে প্রচুর আকর্ষণীয় এবং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রয়েছে। আমাদের এই তালিকায় হয়তো আপনার অজানা কোন স্থান থাকতে পারে, আবার আপনার পছন্দের কোন জায়গা বাদও পড়তে পারে। ফিচার্ড ইমেজ হিসবে প্রথমে যে ছবিটি দেখছেন সেটি ভিয়েতনামের একটি মন্দিরের ছবি।
ঐতিহাসিক স্থানগুলোর তালিকা
কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক-
১. জর্ডানের পেট্রা
পেট্রা শব্দের অর্থ পাথর। জর্ডানের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এটি। পাথর কেটে তৈরি করা নকশা কত সুন্দর হতে পারে তা নিজের চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দিতে নাবাতাইনের রাজধানীতে এটি নির্মিত হয়েছিলো। ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে।
২. পেরুর মাচু পিচু
১৯১১ সালে এই সুন্দর জায়গাটি বিংহাম পুনরায় আবিষ্কার করেন। ইনকা সভ্যতার নিদর্শন হিসেবে ছোট কিন্ত অসাধারণ এই শহরটি গড়ে ওঠে। পাহাড়ের উপরে গড়ে ওঠা এই শহরটিকে নিচে থেকে দেখা যায় না। এখানে জীবনধারণের সব উপকরণ রয়েছে, রয়েছে পানির ঝর্ণা। মনে করা হয়, একটি গোপন আস্তানা বা, উৎসবের স্থান হিসেবে এটি গড়ে উঠেছিলো।
৩. মিসরের গিজার পিরামিড
এটি বিশ্বের প্রাচীন বিশ্ময়গুলোর মধ্যে টিকে থাকা নিদর্শন হিসেবে দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। সবাই জানে এটি তৈরি করা হয়েছিলো ফারাওদের সমাধি হিসেবে, কিন্তু এখনো এর স্থাপত্যকলা এবং প্রতীকি প্রকাশ মানুষ পুরোপুরি আবিষ্কার করতে পারেনি। এর গঠনগত গাণিতিক সৌন্দর্য্য চরম যুক্তিবাদি মানুষদেরকেও বিশ্মিত করে। আর, স্বভাবতই এটি সুফি, ফকির, আত্মার শৃঙ্খলা সন্ধানীদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে।
৪. ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের স্টোনহেঞ্জ
এটি প্রাগৈতিহাসিক যুগের একটি নিদর্শন। স্টোনহেঞ্জ হচ্ছে বড় বড় পাথরের চক্রাকার গঠনের একটি সৌধ। খ্রিস্টের জন্মের ২০০০-৩০০০ বছর আগে এটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ১৯৮৬ সালে এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ইউনেস্কো ঘোষণা করে।
৫. ইরানের পার্সিপোলিস
পার্সিপোলিসকে বলা হয় পারস্যের রত্ন। একটি বিশাল পাথরের উপর অনেকগুলো দালান গড়ে উঠেছিলো। প্রাচীন যুগের এমন একটি নিদর্শন যার সাথে অন্য কিছুর মিল খুজে পাওয়া যায় না। আর্খেমেনিয় রাজ্যের রাজধানীর এই কীর্তি সত্যিই অনন্য।
৬. তিব্বতের পোতালা প্রাসাদ
তিব্বতের এই প্রাসাদ নির্মিত হয়েছে ঝানপু রাজার সময়ে। লাল পাহাড়ের উপর নির্মিত এই প্রাসাদে ছিলো ১০০০ টি কক্ষ। যুদ্ধের সময় প্রাসাদটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং পরে পুনুনির্মীত হয়। সৌন্দর্য্য আর, সম্পদের জন্য এটি বিখ্যাত।
৭. স্পেনের গ্রানাডার আলহামব্রা
ঐতিহাসিক এবং সৌন্দর্য্যপিপাসু- এই দুই ধরণের মানুষদেরকেই আলহামব্রা আকর্ষণ করে। ছোট একটি পাহাড়ের উপর যেন স্বর্গের ছোয়া। এখানে গেলে পর্যটকদের এমন অনুভূতি হয় যেন গ্রানাডার আকাশ ছুয়ে ফেলেছি।
৮. গ্রীসের এক্রোপোলিস
এক্রোপোলিস শব্দের অর্থ উচু শহর। পাথরে উচু কোন জায়গায় নির্মিত হয় এক্রোপোলিস। প্রাচীন যুগে এটিকে কেক্রোপোলিয়া নামেও ডাকা হতো। গ্রীসের প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে এগুলো। এটি রাজার বাড়ি, সিটাডেল, আধ্যাত্মিক স্থান, ধর্মীয় উপাসনার জায়গা সব কিছুকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
৯. ব্রাজিলের ভাস্কর্য- ত্রানকর্তা যিশু
এটি পৃথিবীর পঞ্চন বৃহত্তম যিশু ভাস্কর্য। রিও ডি জেনেরিওর ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে দু হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে ব্রাজিলিয়ান যিশু। ব্রাজিলের খ্রিস্ট ধর্মের প্রতীক এটি।
১০. মেক্সিকোর সিচেন ইতজা
বিশাল সিড়িযুক্ত পিরামিড যা মেক্সিকোর মায়া সভ্যতার নিদর্শন বহন করছে। ৭৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত এই স্থাপনাটি ছিলো তাদের শহরের কেন্দ্র। এটিকে সপ্তাশ্চর্য্যের একটি বলে ভাবা হয়।
ভাষাজ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে দু একটি নাম মূল উচ্চারণ থেকে কিছুটা আলাদাও লিখতে পারি, সেজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
বাংলাদেশের কিছু ঐতিহাসিক স্থান
বাংলাদেশে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কিছু স্থান হচ্ছে-
- সুন্দরবন
- পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
- এবং বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ
হলুদ বিহার, জগদ্দল বিহার, লালবাগ দুর্গ, মহাস্থানগড়, লালমাই-ময়নামতি এগুলোও বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হতে পারে। এছাড়া প্রতিটি অঞ্চলেই রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান।
পশ্চিমবঙ্গের কিছু ঐতিহাসিক স্থান
মালদহ একসময় গৌড় রাজ্যের রাজধানী ছিল। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেই সময়ের নানা নিদর্শন। মুর্শিদাবাদে রয়েছে সুবে বাংলার রাজধানী আর ব্রিটিশদের বহরমপুরের অনেক চিহ্ন। বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজবংশের স্মৃতিচিহ্ন, মেদিনিপুরে রয়েছে চন্দ্রকোনা-গড়বেতা।
বাংলাদেশের আর পশ্চিমবঙ্গের এইসব ঐতিহাসিক স্থানগুলো নিয়ে না হয় অন্য কোনদিন লেখা যাবে।
