উপন্যাস পর্ব তিন মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয় আফছানা খানম অথৈ

0

উপন্যাস পর্ব “তিন”
মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়
আফছানা খানম অথৈ

পরদিন শান্তা ক্লাশে যাচ্ছে ঠিক তখনি ছাত্রনেতা ভুট্টো এসে নোংরাভাবে বলে ,
শান্তা সুন্দরী দাঁড়াও?
শান্তা না দাঁড়িয়ে সামনে এগিয়ে চলল।
অমনি সে তাড়াহুড়া করে এগিয়ে গিয়ে গায়ে পড়ে ধাক্কা দেয়।শান্তা পড়ে যেতে চাইলে অন্য মেয়েরা তাকে ধরে পেলে।শান্তা লজ্জিত হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।অন্যরা সবাই হা হা হো হো করে হেসে উঠল।টিচার শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করার মুহূর্তে দৃশ্যটা চোখে পড়তেই তিনি ঘটনা স্থলে উপস্থিত হলেন।তারপর সবাইকে থামিয়ে ক্লাশে প্রবেশ করার নির্দেশ দিলেন।সবাই নিরব নিথর হয়ে বসে পড়লো।তারপর টিচার জিজ্ঞেস করলেন,
শান্তা বল, সবাই তোমাকে নিয়ে হেসেছিল কেনো?
শান্তা লজ্জিত তবুও বলতে শুরু,..।
স্যার আমি ক্লাশে যাচ্ছিলাম।ঠিক তখনি ভুট্টো ভাই বলল,
শান্তা সুন্দরী দাঁড়াও।আমি না দাঁড়াতে এগিয়ে এসে আমাকে ধাক্কা মারে।শুধু তাই নয়, নোংরা অনেক আজেবাজে কথাও বলে।
শান্তার বক্তব্য শেষ এবার ভুট্টোর পালা।টিচার জিজ্ঞেস করলেন,
ভুট্টো এবার তুমি বল, এখানে কি হয়েছিল?
ভুট্টো ছাত্রনেতা ক্ষমতাধর ব্যক্তি,মিথ্যে বললেও কোন সাজা হবে না।এজন্য সে বানিয়ে বলল,
স্যার শান্তা যা বলেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে।প্রথমত আমি তাকে দাঁড়াতে বলিনি।দ্বিতীয়ত আমার গায়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সে পড়ে গিয়েছিল।আমি ইচ্ছে করে তা করেনি।আর আমি তাকে আজেবাজে কথাও বলিনি।সব মিথ্যে স্যার, সব মিথ্যে।
বাদী বিবাদী দুজনের বক্তব্য শেষ,এবার সাক্ষীর পালা।টিচার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
উপস্থিত ছাত্রছাত্রী সবাইকে বলছি,তোমাদের মধ্যে কে কে ঘটনা স্থলে উপস্থিত ছিলে?
অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী একবাক্যে বলল,
স্যার আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম।
ঠিক বলতে পারবেতো ওখানে সত্যি সত্যি কি ঘটেছিল?
সত্য বলার কথা শুনে সবাই থবনে হারিয়ে গেল।কারণ ভুট্টো ছাত্রনেতা ক্ষমাধর ব্যক্তি তার উপরে নোংরা জগতের…।
কার জানি আবার সর্বনাশ করে, এই ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।সবাইকে নীরব ভুমিকা পালন করতে দেখে টিচার বলল,
কি ব্যাপার সবাই চুপচাপ যে, কি হয়েছে বলবেতো?
মেয়েদের দিকে ঈশারা করে টিচার বলল,
কি মেয়েরা তোমরা চুপচাপ যে?
টিচার’র কথার সুত্রধরে ভুট্টোর এক সহকর্মী বন্ধু বলল,
স্যার সব মিথ্যেও বানোয়াট গল্প।তাই কেউ কিছু বলতে পারছে না।সব মিথ্যেবাদীর দল,স্যার সব মিথ্যেবাদী।
এবার টিচার বলল,
শান্তা মামুন যা বলেছে তা কি সত্যি?
শান্তা লজ্জাও ঘৃণায় মুখ গোমড়া করে বসে রইল।তার পক্ষ হয়ে বিদ্রোহী স্বরে মালা বলল,
নো স্যার সব সত্যি।ভুট্টো ভাই ছাত্রনেতা, না জানি আবার কার সর্বনাশ করে। এই ভয়ে কেউ কিছু বলছে না।
মালা তুমি এসব কি বলছ।ভুট্টো ছাত্রনেতা বলে তার সকল অন্যায় মেনে নেয়া হবে।তাকে শাস্তি দেয়া হবে না।এটা হতে পারে না।কারণ আইন সবার জন্য সমান।
স্যার আইন আছে ঠিকই, কিন্তু তা কাজে পরিণত হচ্ছে না।যেমন গৃহের আঙ্গিনা থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, কলেজ ইউনিভার্সিটি,অফিস আদালত সব জায়গায় নারীরা ইভটিজিং ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।সরকারীভাবে প্রচার অভিযান চালানো হয়। কিন্তু বাস্তবে কোন কাজ হয় না।
মালা কি করে বুঝলে?
স্যার এইতো সেদিনের কথা ছাত্রনেতা অনার্স পড়া চুমকিকে ধর্ষণ করেছিল,তার কি কোন বিচার হয়েছিল,?হয়নি।কারণ ছাত্রনেতা বলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল।স্যার এভাবে যদি ছাত্রনেতাদের ছেড়ে দেয়া হয়,তাহলে নারীর সম্মান রক্ষা করবে কে?কবে আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজ নারীর আত্নমর্যাদা ও সম্মান দিতে শিখবে?
মালা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
শুন ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পার্লামেন্টে নারী নির্যাতন ও ইভটিজিং আইন পাশ করা হয়েছে?
সত্যি বলছেন স্যার?
হ্যাঁ সত্যি।
স্যার এতে কি কি বিষয় উল্লেখ আছে?
বলছি সবাই শুন,নারীদেরকে দেখলে নোংরাও আশালীন কোন বাক্য পেশ করা যাবে না।যেমন সুন্দরী বলে চিৎকার করা,আজেবাজে কথা বলা,অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করা ইত্যাদি করা যাবে না।
মোবাইলে কল ও মিসড কল দেয়া,অশোভন ভাষায় এস,এম এস করা,ও ফোনে খারাপ আচরণ করা যাবে না।এছাড়াও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন,এসবই নারী নির্যাতন ও ইভটিজিং’র আওতায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।যারা এসব আইন অমান্য করবে তাদেরকে আইনগতভাবে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি প্রদান করা হবে।
টিচারের মুল্যবান আইন সঙ্গত বক্তব্য শুনার পর মালা বলল,
স্যার এই যদি হয় আইনের কথা তাহলে পুরুষের সাজা হচ্ছে না কেনো?শত অপরাধের পরও পুরুষ পার পেয়ে যাচ্ছে কেনো?
হচ্ছে না মানে সবেমাত্র আইন পাশ করা হয়েছে।
এরপর থেকে যারা অন্যায় করবে সবাইকে আইন অনুযায়ী সাজা ভোগ করতে হবে।সে ছাত্রনেতা হোক কিংবা উর্ধবতন কর্মকর্তা যে হোক না কেন,সাজা সমান সমান।
স্যার এ ধরনের আইন যদি পার্লামেন্টে পাশ হয়ে থাকে তাহলে ভুট্টো ভাই’র অবশ্যই সাজা হতে হবে?
মালা তুমি ঠিক বলেছে।অবশ্যই তার সাজা হবে।কারণ সে অপরাধী।
ভুট্টো ছাত্রনেতা ক্ষমতাধর ব্যক্তি তবুও আইনের কথা শুনে মনের ভিতর ভয়ও শংকা জেগে উঠল।বুকের ভিতর ধুকধুক, গায়ের লোমকুপ গুলো খাড়া হয়ে উঠল।মুহূর্তে মনের পরিবর্তন ঘটিয়ে বলল,
সরি স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে।প্রথম বারের মতো আমাকে ক্ষমা করুন।
এবার টিচার বলল,
ভুট্টো ক্ষমা আমার কাছে নয়,তোমার সহকর্মী বোনদের কাছে চাও।ওরা যদি ক্ষমা করে আমার কোন আপত্তি নেই।
এবার ভুট্টো বলল,
আমার সহকর্মী বোনেরা আমি হাত জোড় করে বলছি প্রথম বারের মতো আমাকে ক্ষমা কর।আমি আর কখনো তোমাদের কিংবা কোন নারীকে ইভটিজিং করবো না।
ছাত্রনেতা ভুট্টোর মুখের সদাচরণ শুনে সবাই স্তব্ধ।
এবার টিচার বলল,
কি মেয়েরা চুপচাপ যে কিছু বল?
সবার পক্ষ থেকে মালা বলল,
স্যার ক্ষমা করতে পারি এক শর্তে।
বল কি শর্ত?
ভুট্টু ভাই ভবিষ্যতে যদি সে এ ধরনের কাজ আর না করেন।
জবাবে ভুট্টো বলল,
বললাম তো করবো না।
কথাতে হবে না প্রমিস করুন?
ওকে প্রমিস করলাম। আর কখনো এমন বাজে কাজ করবো না।
বিচার শেষ টিচার বিদায় নিলেন।ছুটির ঘন্টা বাজতেই ছাত্রছাত্রীরা বেরিয়ে পড়লো।সামনে পা রাখতেই মালার ফোনে রিং বেজে উঠল,
ফুল দেখতে ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দিতে,
সেই ফুলেরী মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ নিতে।….।
মালা ফোন রিসিভ করে কথা বলতে শুরু করলো।মুহূর্তে শান্তার সুপ্ত জাগ্রত হৃদয়টা জেগে উঠল।নয়ন নামের সেই ছেলেটির কথা মনে পড়তেই শান্তা থমকে দাঁড়ালো।মালা কথা শেষ করে বলল,
শান্তা দাঁড়িয়ে গেলি যে?বাড়ি যাবি না?
মালা তুই ষ্টেশনের দিকে যা, আমি একটু পরে আসছি।
পরে কেনরে? কেউ আসবে নাকি?
সে কথা পরে বলব এখন যাতো।
অল্পতে এত রেগে গেলি?যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি।
মালা চলে গেল।শান্তা দাঁড়িয়ে রইল।প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেল নয়ন আসল না।এবার শান্তা বিরক্ত হয়ে আপন মনে বলে,
লোকটি শুরুতেই ওয়াদা ভঙ্গ করলো।তবে কি সে চিট্ বাটপার…?
কথাবার্তা শুনেতো তাই মনে হলো না।যাক বাবা বাঁচা গেল,সে না এসে ভালোই করলো।যদি প্রেমের প্রস্তাব দিতো কি করতাম।
মালা এগিয়ে এসে বলে,
কিরে সে আসেনি?
মালা বাদদেতো এসব প্রসঙ্গ। চলো ফেরা যাক।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

পড়ছে মনে মাকে

  পড়ছে মনে ভীষণ ভাবে প্রবাসে আজ মাকে, এই প্রসাবে কে আমায় বলো খোকা বলে ডাকে। মাকে ছেড়ে বাবার ছেড়ে

অমর হয়ে রবে

আকাশ পথে নির্ভীক সৈনিক ছিল অসীম জাওয়াদ, দেশের শত্রুর কাছে ছিলেন এক যম বজ্রনাদ। দেশ সীমান্তে রাখেন নজর বিমান নিয়ে

স্বাধীন দেশে জন্ম

  স্বাধীন দেশে জন্ম নিয়ে গর্ব করে বাঁচি, এই দেশেতে হিন্দু মুসলিম মিলে মিশে আছি। লাল সবুজে উদার জমিন শান্তি

রকমারি ডট কম ও সাহানা প্রকাশনী ( নীল ক্ষেত) এ পাচ্ছেন আমার কবিতার বই ‘ কনকচাঁপা দোদুল দোল ‘

আমার গদ্য কবিতার বই কনকচাঁপা দোদুল দোল প্রকাশ পেয়েছে। আপনারা কেউ যদি আমার বই পেতে চান তাহলে রকমারি ডট কম

Leave a Reply