এই লেখাটিতে অনলাইনে কেনাকাটার সুবিধা এবং অসুবিধা নিয়ে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করবো। আমি ধরে নিচ্ছি যে, আপনারা যারা এই লেখাটি পড়ছেন তারা অনলাইনে খুব বেশী কেনাকাটা করেন নি, করলেও সাত পাঁচ না ভেবেই কিনেছেন। বাংলাদেশে সম্প্রতি ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ই অরেঞ্জ ইত্যাদি কিছু ই কমার্স সাইটের কারণে অনেকেই অনলাইনে কেনাকাটার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
ডিসকাউন্ট এবং অনেক কম দাম
আপনি গুগলে সার্চ করলে যেসব লেখা পাবেন, সেগুলোতে আমি এটাই দেখেছি যে তারা ডিসকাউন্টকে অনলাইনে কেনার সুবিধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কথাটা আংশিক সত্যি, কোন কোন সাইট প্রাথমিকভাবে ডিসকাউন্ট দিয়ে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। তার মানে এই না যে আপনাকে পণ্য ফ্রিতে বা, চিরস্থায়ী লসে দিয়ে দেবে। তাই, আপনাদের উচিত হবে জেনে, বুঝে, দেখে, শুনে এরপর পণ্য কেনা।
ডিজিটাল প্রডাক্ট হলে কিনতে পারেন, তবে, Physical Product এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ই কমার্স সাইটের কাছ থেকে ডিসকাউন্ট পেলেই লুফে নেয়াটা সব সময় বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
অনলাইন শপিং এর সুবিধা এবং অসুবিধা
এই যুগে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে কেনাটা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য সুবিধাজনক। এবং বাংলাদেশের ই কমার্স ইন্ডাস্ট্রী খুব দ্রুত বড় হচ্ছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ই কমার্স ইন্ডাস্ট্রীর আকার ছিল সারা বিশ্বে ৪৬ তম। আমরা অনেক দিক দিয়ে সবার পেছনে থাকি। সেটার প্রেক্ষিতে চিন্তা করলে এই দিক দিয়ে আমাদের অবস্থা বেশ ভালো। চলুন আসল কথায় ফিরে যাই-
অনলাইনে কেনাকাটার সুবিধা
- ঝামেলামুক্তঃ ভিড় ঠেলে অনেক বাজার থেকে কিনে আনা যে কতটা ঝামেলার কাজ, তা আমরা করতে গেলেই বুঝি। অনলাইনে এই ঝামেলা নাই
- আসল পণ্যঃ অনেক নকম পণ্য বাজারে পাওয়া যায়, আমার মতো বোকারা সেটা চিনতে পারে না। তাদের জন্য ভেরিফাইড অনলাইন শপিং মল থেকে কেনাটা সুবিধাজনক
- সময় বাচায়ঃ আমাদের প্রত্যেকের সময়ের দাম আছে। অনেক সময় বাচানো যায় অনলাইনে কিনলে
- কম দামঃ একইরকম বিভিন্ন পণ্য তুলনা করে কেনা যায়। একটা সাইটের চেয়ে অন্য সাইটে কম দামেও পাওয়া যায়
- পুরনো পণ্য কেনাঃ অনেকের বাজেট কম থাকে। তাই তারা চাইলে পুরনো পণ্যের অনলাইন দোকান থেকে কম দামে কাঙ্খিত জিনিস পেতে পারেন
- বিদেশ থেকে কেনাঃ আপনি চাইলে বিদেশী পণ্যও দেশে বসে কিনতে পারেন
- গোপনীয়তাঃ আপনার যদি এমন পণ্যের দরকার হয় যা জনসম্মুখে কিনতে লজ্জা লাগে। তাহলে, অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন
এছাড়া বিকাশ, রকেট, নগদ এগুলো দিয়ে পেমেন্ট করার সুবিধা পাওয়া যায়। দেশের যেকোন প্রান্তের ভালো জিনিস বা, খাবার ঘরে বসে পাওয়া যায়। সহজে ফেরতও দেয়া যায়, পণ্য ভালো না হলে(কাদের কাছ থেকে কিনছেন সেটার উপর নির্ভর করে)।
অনলাইনে কেনাকাটার অসুবিধা
- আজেবাজে সাইট থেকে কিনে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবন আছে
- অনেকে ১০০ টাকার পণ্যের দাম ৩০০ টাকা রেখে ৫০% ডিসকাউন্ট দেয়, তাতে দাম আসে ১৫০ টাকা, আপনার লস ৫০ টাকা
- বইমেলায় গিয়ে বই কেনাটা অনলাইনে কেনার চেয়ে বেশী উপভোগ্য
- দামাদামি ছাড়া কিনলে আমাদের বাঙালি সত্ত্বা আহত হয়
- ডেলিভারি পেতে একটু সময় লাগে
আপনাদের প্রশ্নের উত্তরঃ
আপনি কেন অনলাইনে কেনাকাটা করেন?
এর কারণ হচ্ছে, আমার সময়ের দাম আছে(বাজারের দামের চেয়ে কিছু টাকা বেশী লাগলেও অনেক ক্ষেত্রে লাভজনক হয়)। দ্বিতীয়ত, আমি বাজারে গিয়ে কিনতে গেলে নকল পণ্য, বেশী দাম ইত্যাদি নানা সমস্যায় পড়ি। তৃতীয়ত, অনেক জিনিস আছে যা বাজারে গিয়ে খুজে পাওয়াটা কষ্টসাধ্য। অনলাইনে লিখে সার্চ করলেই সবকিছু চোখের সামনে চলে আসে।
অনলাইন বাজারজাতকরণ কি?
ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে কোন পণ্যকে বাজারজাতকরণ করাকে অনলাইন বাজারজাতকরণ বলে। সাধারণত আমরা যেসব বাজার থেকে কিনি সেগুলোর বদলে, অনেকে অনলাইনে তাদের পণ্য প্রথমে নিয়ে আসে। আবার অনেক সময় দুই জায়গাতে একসাথেও হতে পারে।
বর্তমানে ই কমার্সের বাজারের আকার কেমন?
Statista এর তথ্যমতে, ২০১৭ সালে ছিল ১.১ বিলিয়ন ডলার, আর, ২০২২ সালে বাংলাদেশের ই কমার্সের বাজারের আকার বেড়ে দাড়িয়েছে ৩.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অনেকগুলো স্ক্যামের পরেও যে ই কমার্সের দিকে বাংলাদেশের মানুষেরা ঝুকছে এটা ব্যবসায়ীদের জন্য আশাব্যাঞ্জক।
অনলাইনে কেনাকাটা কি মহিলারা বেশী করে?
আমাদের অনেকেরই এরকম ধারনা আছে। Statista এর পরিসংখ্যান ভিন্ন কথা বলছে, ৫৭.১ শতাংশ পুরুষ এবং ৩০.৮ শতাংশ মহিলা আমাদের দেশে অনলাইনে কেনাকাটা করেন।
বাংলাদেশের মানুষেরা কি ইলেকট্রনিক গ্যাজেট বেশী কেনে?
নারে ভাই, এই ধারণাটাও ভুল। বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশী কিনেছে ফ্যাশন প্রডাক্ট। Statista এর তথ্যমতে, ২০১৯ সালে ৫৯৮ মিলিয়ন ডলারের ফ্যাশন প্রডাক্ট বিক্রি হয়েছে। আর, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট বিক্রি হয়েছে ৪৫৭ মিলিয়ন ডলার।
আরো পড়ুন-
- সেরা অনলাইন শপিং সাইট কোনগুলো?
- মোবাইল ঘড়ির দাম কত(2022)?
- কম দামে ভালো ফোন
- ১৫০০০ টাকার মধ্যে সেরা মোবাইল
অনলাইনে কেনাকাটাতেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।এতো সুন্দর করে বুঝিয়ে বলার জন্য ধন্যবাদ