তিতুমিরের সংগ্রাম জীবনকাহীনি

0

তিতুমির চব্বিশ পরগণা জেলার বারাসাত মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম মীর নিসার আলী ওরফে তিতুমি।

উত্তর ভারত ও উত্তর – পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে যখন ওয়াহাবি আন্দোলনের জোয়ার চলছে, তখন পশ্চিমবঙ্গে বারাসাত অঞ্চলে এই আন্দোলন তিতুমিরের নেতৃত্বে প্রচন্ড রুপ ধারণ করে।

উনিশ শতকে ভারতবর্ষে মুসলমান সমাজে এক ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। বাংলায় তার দুইটি ধারা প্রবাহমান ছিল।

যার একটি ওয়াহাবি বা মুহাম্মাদিয়া আন্দোলন, অপরটি ফরায়েজি আন্দোলন নামে খ্যাত। উভয় আন্দোলনের মূল  উদ্দেশ ছিল ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করে মুসলিম সম্প্রদায়কে সঠিক পথ নির্দেশ করা।

বাংলার ওয়াহাবিরা তিতুমিরের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিল। তিতুমিরের নেতৃত্বে পরিচালিত তারিখ – ই – মুহাম্মাদিয়া বা ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল উত্তর ভারতের সৈয়দ আহমদ শহীদের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত।

তিতুমির হজ্ব করার জন্য মক্কা শরিফ যান।১৮২৭সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং ধর্ম সংস্কার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।তার এই ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনে বহু মুসলমান বিশেষ করে চব্বিশ পরগণা এবং  নদীয়া জেলার বহু কৃষক, তাঁতি সাড়া দেয়।

এর ফলে জমিদাররা মুসলমান প্রজাদের ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং তাদের প্রতি নির্যাতনমূলক আচরণ শুরু করে। তিতুমির এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে সুবিচার চেয়ে ব্যর্থ হন।

শেষ পর্যন্ত তিনি ও তার অনুসারীরা সশস্ত্র প্রতিরোধের পথ অবলম্বন করেন।

১৮৩১ সালে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে তিতুমির তার প্রধান ঘাঁটি স্থাপন করেন।নির্মাণ করেন শক্তিশালী এক বাঁশের কেল্লা। গোলাম মাসুমের নেতৃত্বে গড়ে তোলেন সুদক্ষ শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী।

ইংরেজ,জমিদার, নীলকরদের দ্ধারা নির্যাতিত কৃষকরা দলে দলে তিতুমিরের বহিনীতে যোগ দিলে ধর্ম সংস্কারের আন্দোলন একটি ব্যাপক কৃষক আন্দোলনে রুপ নেয়। ফলে শাসক – শোষক জমিদার শ্রেণি কৃষকদের সংঘবদ্ধতা এবং তিতুমিরের শক্তি বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে ওঠে।

শেষ পর্যন্ত ১৮৩১ সালে তিতুমিরের বিরুদ্ধে ইংরেজ সরকার এক বিশাল সুশিক্ষিত সেনাবাহিনী প্রেরণ করে।

মেজর স্কটের নেতৃত্বে এই বাহিনী তিতুমিরের নারিকেলবাড়িয়া বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করে। ইংরেজদের কামান-বন্দুকের সামনে বীরের মতো লড়াই করে পরাজিত হয় তিতুমিরের বাহিনী।

তিনি যুদ্ধে নিহত হন।গোলার আঘাতে বাঁশের কেল্লা উড়ে যায়। আর এভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটে একটি সুসংগঠিত কৃষক আন্দোলনের।

তিতুমির ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ব্যাপক কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।ইংরেজদের গোলাবারুদ, নীলকর,জমিদারদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে তার বাঁশের কেল্লা ছিল দুঃসাহস আর দেশপ্রেমের প্রতীক।যা যুগে যুগে বাঙালিকে অন্যায় – অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাহস জুগিয়েছে।

উদ্ধুদ্ধ করেছে দেশপ্রেমিক হতে, প্রেরণা জুগিয়েছে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিতে।

 


আরো পড়ুন-


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

আগষ্টের ওই পাঁচ

  বিজয় পেতে ঝরে গেলো অযুত তাজা প্রাণ, বিনিময়ে —পেলো জাতি স্বাধীনতার মান। ৭১’এর বিজয় এনে দিলো একটা স্বাধীন দেশ,

গোলামির দিন শেষ

আমরা সবাই দেশের জন্য ঐক্যবদ্ধ রবো, দেশের ভূমি রক্ষা করতে শহীদ মোরা হবো। বাঁচার মতো বাঁচতে মোরা স্বাধীন করি দেশ,

অস্থির বায়ু

ভারত যদি উল্টো পাল্টা করে একটা শব্দ, নোবেল জয়ী দেশ শাসকের হাতেই হবে জব্দ। বহু বছর দেয় নি জবাব ধরেছি

দেশ ভাগের পর

ভারত কর্তা ফন্দি আঁটে দেশ ভাগের আগ, বঙ্গ দেশটা দুই ভাগেতে করে দিলো ভাগ। সুযোগ পেয়ে সবি নিলো দেশ ভাগের

Leave a Reply