নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ফিরে আসা • জীবনের পাঠ থেকে নেওয়া গল্প
১৩-১৪ মাসের একটি ছেলে শিশু। কিছুদিন হলো, হামাগুড়ি দেওয়া শিখেছে। হাঁটবে হাঁটবে করছে। একটি সদ্যফোটা ফুল বললে চলে। জানি না, পৃথিবীতে ফুলের চেয়ে সুন্দর কিছু আছে কিনা! শিশুটিকে ফুলের চেয়েও সুন্দর মনে হতো।
একদিন দুর্ভাগ্যক্রমে শিশুটি সম্পূর্ণ আবরণবিহীন একটি বিদ্যুৎবাহিত তারে হাত দিয়ে বসে —যে তারটি বিদ্যুতের কাজ করার সময় তার বাবা খুলে রেখেছিলো বাকি কাজ শেষে কিছুক্ষণ পরে লাগিয়ে দিবে এই আশায়। বিদ্যুতে হাত দিয়েই শিশুটি চিৎকার করে কান্না শুরু করে এবং সঙ্গে সঙ্গে তার থেকে হাত সরিয়ে নেয়।
বিষয়টি নিয়ে বেশিক্ষণ কল্পনা করা যায় না, বুকটা প্রচণ্ড কেঁপে ওঠে। দুই তিন সেকেন্ড পর জানি কী হতো। হয়তো বাচ্চাকে বাঁচাতে গিয়ে বাবাও… আর স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে স্ত্রীও…। আল্লাহ না করুন।
জানি না, একটি ১৩-১৪ মাসের শিশুর জন্য এটি কিভাবে সম্ভবপর হয়েছিলো —যে কিনা বিদ্যুৎ সম্পর্কে কিছুই জানে না! তার তো আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরে রাখার কথা ছিলো।
এর পিছনের গল্প
বাচ্চাটির বাবা এ বিষয়ে বলেন, “আমার জীবনে অনেক ভুল-ত্রুটি রয়েছে। আমি তা অকপটে স্বীকার করি। মনকে বুঝ দিই, মানুষ মাত্রই ভুল করে। কিন্তু, হয়তো এমন কিছু পূণ্যও করেছি যা খালিস আল্লাহর জন্য ছিলো। একদম নিটোল, নিখাদ, নির্ভেজাল। এমন একটা আমল হচ্ছে, আমি কখনো পশু পাখিকে কষ্ট দিইনি। কখনো পাখির ছানা ধরে খাইনি। পাখির ডিম চুরি করিনি। কেউ পাখির ছানা ধরেছে দেখেছি তো যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাসায় রেখে দেওয়ার জন্য। এভাবে বুঝিয়েছি যে, কেউ যদি আপনার দু’মাস/এক বছরের বাচ্চাকে নিয়ে যায় বা খেয়ে ফেলে আপনার কাছে কেমন লাগবে? ছোটদেরকে বুঝিয়েছি, বড় হলে বুঝবে বাচ্চা হারানোর বেদনা কী?
তিনি আরো বলেন, গ্রাম-সমাজে অনেক অবহেলিত বিড়াল থাকে। এদেরকে কেউ খাবার দিতে চায় না। কিন্তু আমি সবসময় এসব বিড়ালদের আদর করে খাওয়াতাম। এরা যখন বাচ্চা ফুটাতো মানুষ এদেরকে ঘরেই জায়গা দিতো না, খাবার তো পরের বিষয়। এরা ৬-৭ টা বাচ্চা নিয়ে অকূল পাথারে পড়ে যেত। নিজের খাবার জোগাড় করতেই এদের অনেক কষ্ট হয়, এখন ৬-৭ টা বাচ্চার খাবার কীভাবে যোগাড় করবে? আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এদেরকে আদর-যত্নে পেলে-পুষে বড় করতাম।
অনেক সময় দেখা যতো, পথের ধারে একটি ছাগল কিংবা গরু রশি পেঁচিয়ে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে, পাশে অনেক ঘাস থাকা সত্ত্বেও খেতে পারছে না, তো কখনো এমন হয়নি যে আমি অসহায় প্রাণীটির রশির পেঁচ খুলে দিইনি। অনেক সময় এমনও হতো যে, খুব তাড়াহুড়ো করে কোথাও যাচ্ছি। সময় সংকীর্ণ। এমতাবস্থায় যদি দেখতাম, কোনো প্রাণী রশি পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখন মনে মনে ভাবতাম, সব সময় তো এ কাজটি করি, আজ না হয় করলাম না। এভাবে সামনে এগিয়ে চলি, কিন্তু মন আমার মানে না। লোভে পড়ে যাই। কিসের লোভ —অবলা প্রাণীর দোয়ার লোভ। কিছুদূর যাওয়ার পর আবার ফিরে এসে রশিটি খুলে দিই। আবার কখনো ভালো জামা-কাপড়-জুতো পরা থাকে। এমন বেশভূষার সাথে গরু-ছাগলের রশি খুলে দেওয়াটা মানায় না, তবুও আমি কাজটি করতাম।
এই কাজটি আমি কেবল দয়া বশত করতাম, তা নয়। বরং এর বিনিময়ে আমি আল্লাহর কাছে অনেক কিছু চাইতাম। এবং এই আশা রাখতাম যে, এটি অবলা প্রাণী, এর দোয়া বৃথা যাবে না। আর সত্যিই আমি এই অবলা প্রাণীদের দোয়ার ফল পেয়েছিও।”
আসলে তার কথাগুলো আমার বাস্তব মনে হয়েছে। পাঠক লক্ষ্য করুন, অহরহ মানুষ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। ছোটরা নয় বরং বড়রাই বেশি মারা যায়। প্রায়ই খবরের কাগজে আসে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজন/চারজন নিহত। এই তো দু-তিনদিন আগেও আমাদের এক বড় ভাই বিবাহের মাত্র এক বছরের মাথায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। বিদ্যুৎ জিনিসটা অনেক ভয়াবহ। অথচ আল্লাহ তা’আলা বাচ্চা শিশুটিকে কীভাবে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এটি অবশ্যই অবলা প্রাণীদের দোয়ার ফসল। অতএব, আসুন অবলা প্রাণীদের প্রতি সুহৃদ হই।
.
.
[হঠাৎ মনে পড়লো, তাই কথাগুলো বললাম। নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্যে নয়। পরে হয়তো ভুলে যাবো কিংবা বলারই সুযোগ পাবো না, ডাক এসে যাবে ওপারের।]
আরো পড়ুন-
- হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী গ্রন্থ
- তাকদীর বলতে কি বুঝায়
- পুনরুত্থান কাকে বলে?
- আখিরাতের গুরুত্ব
- আসমানী কিতাব