উপন্যাস মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয় আফছানা খানম অথৈ

0

উপন্যাস পর্ব “দুই”
মেয়েদের জীবনে বিয়ে একবার হয়
আফছানা খানম অথৈ

শান্তার বাবার নাম মইন আহমেদ।বিরাট বড় লোক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।তিন বোনের মধ্যে শান্তা সবার ছোট।ছোট বেলা থেকে তার আদর যত্ন যেন উপছে পড়ছে।বাবা-মায়ের খুব আদরের মেয়ে শান্তা।বাবা শাসন কিংবা রাগ কখনো করেছেন বলে মনে হয় না।বরং শান্তা পান থেকে চুন খসলে বাবা-মায়ের সঙ্গে খুব রাগ করেন।বাবা-মায়ের এতে কোন আপত্তি নেই।ছোট্ট খুকি বলে সব মান অভিমান নিরবে হজম করেন।বাবা যেদিক থেকে আসেন মেয়ের জন্য কিছু একটা নিয়ে তবে ফিরেন।অপরাহ্ন পেরিয়ে গেল।বাবা বাড়ি এসে গলা ছাড়িয়ে ডাক দেয়,
শান্তা মা মনি কোথায় তুই?
শান্তা এগিয়ে এসে বলল,
বাবা আমাকে ডেকেছ?
হ্যাঁ মা মনি।
কিছু বলবে?
বাবা ততক্ষণে থ্রি ফ্রিস’র প্যাকেটটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
মা মনি দেখত এই কাপড়টা তোর পছন্দ হয় কিনা?
নতুন ডিজাইনের নতুন কালেকশন পছন্দ না হয়ে কি পারে।শান্তা উৎফুল্ল হৃদয়ে বলল,
ওয়াও খুব সুন্দরতো।
তোমার পছন্দ হয়েছে?
শুধু পছন্দ বললে ভুল হবে।আমার বাবার পছন্দ আছে বলতে হবে।আমার খুব পছন্দ হয়েছে।থ্যাংকস বাবা।
বাবাকে থ্যাংকস দিতে তা ঝুমার কানে এসে ঠেকল।অমনি সে এগিয়ে এসে বলল,
শান্তা হঠাৎ বাবাকে থ্যাংকস,মানে কি?
শান্তা প্যাকেটটা শরীরের আঁড়াল করে বলল,
আপু কিছু না।
তবে যে বাবাকে খুব করে থ্যাংকস বললি।
আপু এমনি বললাম, বাবাতো তাই।
হয়েছে তোকে আর মিথ্যে বলতে হবে না।দেখি তোর হাতে এটা কি?
বলতে না বলতে ঝুমা তার হাত থেকে থলেটা কেড়ে নিয়ে খুলতে দেখতে পেল নতুন ডিজাইনের একটা দামী থ্রি ফিচ।নতুন জামা কে না চায়।মুহূর্তে তার মন খারাপ হয়ে গেল।সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
বাবা সব সময় তোকে আদর করে বেশি।মনে হয় আমরা তার মেয়ে না।
ঝুমার চোখে জল জল ভাব দৃশ্যটা বাবার চোখে পড়তেই তিনি এগিয়ে এসে বললেন,
সরি ঝুমা ভুল হয়ে গেছে।শান্তার জন্য আর কিছুই কিনব না।
বাবার মিষ্টি আচরণে মেয়ের রাগ পরলো।সে ম্লান হেসে বলল,
বাবা আমি কি তাই বলেছি।
তবে যে তুই রেগে আছিস।ঠিক আছে তোর জন্য কালই একটা নতুন জামা নিয়ে আসব।
বাবা মেয়ের মান অভিমানের পর্ব আপাতত শেষ।ঝুমা বি.এ পড়ে। এখনো তার বিয়ে হয়নি।তার এক কাজিন তাকে খুব পছন্দ করে।কিন্তু ঝুমা তাকে অপছন্দ করে।এক ব্যতিক্রমধর্মী নিয়ম।ছেলেটি তাকে ভালোবাসে, আর মেয়েটি তাকে এভোয়েড করে।পড়ন্ত বিকেল ঝুমা তাদের পুকুর পাড়ের গাছের চায়ায় বসে হুমায়ন আহমেদের লেখা একটা উপন্যাস পড়ছে।এমন সময় ঝুমার কাজিন রানা এসে তার পিছনে দাঁড়ালো।প্রকৃতির ঝিরঝির হাওয়ায় তার কৃষ্ণ কালো চুলগুলো এলোমেলো ভাবে দোল খাচ্ছে।দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।ফর্সা রং,মায়াবী গঠন,কৃষ্ণ কালো চুল, লাবণ্যময় চেহারা তার উপরে বিকেলের চিকচিকা মিষ্টি সোনালী রোদ সব মিলিয়ে তার সৌন্দর্য খুব করে ফুটে উঠল।যা রানার চোখকে পাগল করে দিয়েছে।তখনি সে বলল,
I love you ঝুমা।
love কথাটা শুনা মাত্রই সে পাশ ফিরে তাকাতে রানাকে দেখে রাগের স্বরে বলল,
রানা ভাই তুমি এখানে কেন এলে?
তোমাকে দেখতে এসেছি।
আমাকে দেখে আপনার লাভ?
লাভ লোকসান বুঝি না।শুধু এটুকু জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি।তাই তোমার কাছে বার বার ছুটে আসি।
রানার কথা শুনে ঝুমা বুঝতে পারলো তার মনের গতি।তাই কড়াভাবে কিছু না বলে সহজ ভাবে বলল,
রানা ভাই একটা কথা বলব?
হ্যাঁ বলো।
রানা ভাই সমাজে এত মেয়ে থাকতে তুমি আমাকে ভালোবাসলে কেন?
তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে তাই।
রানা ভাই শুধু আবেগের বশবর্তী হয়ে কাউকে ভালোবাসা ঠিক নয়।
ঝুমা কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক তা তোমার বুঝার বিষয় না।সেটা আমি বুঝব।
তা অবশ্য ঠিক বলেছ।তবে একটা কথা, তুমি নিজেকে কতটুকু জান যে এর সঙ্গে আরেক জনকে জড়াতে চাইছ?
ঝুমা আমি অতশত বুঝি না।আমার একাকীত্ব জীবনে একজন সঙ্গীনির দরকার।তাই তোমাকে সঙ্গী করতে চাই।
রানা ভাই এখনো তোমার শিক্ষা জীবন শেষ হয়নি।তোমার অনেক কিছু দেখার জানার ও শেখার আছে।শিক্ষা শেষে কর্ম জীবনে পা ফেললে বুঝতে পারবে সঠিক বাস্তবতা,বুঝতে পারবে আসল সৌন্দর্য ।তাই বলছি আপাতত প্রেমের ভুতটা মাথা থেকে ডিলেট করে “ছাত্র নং অধ্যং তপং”এ মন দাও।তবে আসল সত্য প্রকৃত চয়েস উপলব্ধি করতে করতে পারবে,এর ব্যতিরেকে নয়।
ঝুমা তাকে পছন্দ করে না তাই এমন মুল্যবান বক্তব্য দিয়েছে,আর তা বুঝতে পেরে রাগে আগুন হয়ে রানা বলল,
ঝুমা আমাকে পছন্দ করো না, এটা সরাসরি বলে দিলেতো পারতে। এতে লেকচার দেয়ার মানে কি?জেনে রাখ এর ফলাফল কিন্তু ভালো হবে না।
রানার কড়া কথা শুনে ভয়ে ঝুমার লোম কুপগুলো খাড়া হয়ে উঠল।বুকের ভিতর ধুকধুক শুরু হলো।সে নরম স্বরে বলল,
প্লিজ রানা ভাই তুমি বিষয়টা যেভাবে দেখেছ, আমি ঠিক তাই বলিনি।
হয়েছে তোমাকে আর ন্যাকামি করতে হবে না।চলি বাই বাই।
ঝুমার মা আঁড়াল থেকে সবকথা শুনল।উনার ধারণা ঝুমাকে বিয়ে না দিলে রানা একটা অঘটন ঘটাবে।তাই স্বামীর কাছে গিয়ে ঝুমার বিয়ের কথা বললেন।স্বামী হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলল,
রাজিয়া তুমি যতই চাপাচাপি কর,কোন লাভ হবে না।
মানে?
মানে হলো উচ্চশিক্ষিত না করে মেয়ে দুটো বিয়ে দেব না।
শিক্ষিত করে মেয়েদের বিয়ে দেবেন সেটা ভালো কথা।তবে আরেকটা দিক ভেবে দেখা দরকার?
সেটা আবার কোন দিক?
বলছি শুনুন,দুবোন পাশা-পাশি বড় হয়ে উঠলে, লোকে তখন বড়কে বাদ দিয়ে ছোট’র দিকে ঝুকে পড়বে।এবং তার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করবে।আর ঐ দিকে বড় মেয়ের সম্মান হানি হবে।শুধু তাই নয় সবাই তাকে বুড়ো বলে সম্বোধন করবে।
কার এমন বুকের পাটা যে আমার মেয়েদের নিয়ে এমন আজে বাজে কথা বলবে।
বললে কি করবেন?
মাথার খুলি উড়িয়ে দেব,প্রয়োজন হলে থানা পুলিশ করবো।
তাতেও কোন লাভ হবে না।শুন হাসিব ম্যানেজার পাঁচ মেয়েকে নিয়ে কি বিপাকে না পড়লেন,বড় মেয়ের বিয়ে না হতে ছোটদের বিয়ের কানা ঘুষা।শুধু হাসিব ম্যানেজার নয় তার মতো শত শত পিতা মেয়ের বিয়ে নিয়ে খুব টেনশনে আছে।তাই বলছি ঝুমাকে বিয়ে দেয়া এখন আবশ্যক।
স্ত্রীর যুক্তি সঙ্গত কথার অর্থ বুঝতে পেরে স্বামী বলল,
রাজিয়া তুমি ঠিক বলেছ।
তাহলে আর দেরী না করে ঘটককে খবর দেন।
ঠিক আছে এক্ষণি খবর দেব।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

অযত্ন ও অবহেলায় এবং জনচক্ষুর আড়ালে থেকে যাওয়া ঢাকার কিংবদন্তি নবাব স্যার খাজা স‌লিমুল্লাহ বাহাদুর এর অবদান ও ইতিহাস

অযত্ন ও অবহেলায় এবং জনচক্ষুর আড়ালে থেকে যাওয়া ঢাকার কিংবদন্তি নবাব স্যার খাজা স‌লিমুল্লাহ বাহাদুর এর অবদান ও ইতিহাস ----------------------------------------------------

ইসলামিক বা মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি 

ইসলাম‌িক  বা মুসলিম দেশে যত সব ভাস্কর্য / মুর্তি --------------------------------------------------------------- পা‌কিস্তান , সৌ‌দি আর‌ব ও ইন্দো‌নে‌শিয়ার মত মুস‌লিম সংখ্যাগ‌রিষ্ঠ দে‌শে

কায়িক শ্রমিক

কায়িক শ্রমে শ্রম বিকিয়ে ভাতের গন্ধ পাই, দুমুঠো ভাত জোগাড় করতে কত হিমশিম খাই। পেটের দায়ে --ঘাম ঝরিয়ে টাকা কামাই

প্রবাসীরা সোনার ছেলে

প্রবাসীরা সোনার ছেলে মোঃ রুহুল আমিন সোনার ছেলে আপন ছেড়ে প্রবাসে দেয় পাড়ি, জীবন মরণ লড়াই করে টাকা পাঠায় বাড়ি।

Leave a Reply