কোনো একটি বিশেষ ভাব বা তত্ত্বকে ভাষার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলাই হচ্ছে প্রবন্ধ। প্রবন্ধের মাধ্যমে কোনো বিষয়ের উপর বুদ্ধিভিত্তিক আলোচনা করা হয়। এটি সাহিত্যের একটি অন্যতম শাখা।প্রবন্ধ যে বিষয়ের উপর লেখা হয়,সে বিষয়টির বিস্তারিত বর্ণনা থাকে।
রাজা রামমোহন রায় প্রবন্ধ ধারার প্রবর্তক।কথ্যরীতিতে প্রথম প্রবন্ধ রচনা করেন প্যারীচাঁদ মিত্র। আর,প্রথম সমাজ সংস্কারমূলক প্রবন্ধ রচয়িতা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।”প্রবন্ধ” শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে,যার অর্থ হচ্ছে প্রকৃষ্ট বন্ধন।প্রবন্ধের সূচনা হয় উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে।
প্রবন্ধের প্রাণ হচ্ছে উচ্চারণ, ভাব ও ভাষা।প্রবন্ধকে সাধারণত তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়-ভূমিকা,মূল বক্তব্য, উপসংহার। তবে, যেমন তেমনভাবে প্রবন্ধ লিখলে হবে না।প্রবন্ধ লিখার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয় অনুযায়ী যুক্তি,তথ্য,তত্ত্ব উপস্থাপন করতে হবে।
সার্থক প্রবন্ধ লেখার ১০ টি নিয়ম
একটি স্বার্থক প্রবন্ধ লিখতে হলে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। নিম্নে প্রবন্ধ লেখার ১০ টি নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. অন্যদের লেখা পড়াঃ কোনো প্রবন্ধ লিখতে হলে প্রথমে অন্য লেখকদের লেখা প্রবন্ধ পড়তে হবে। তারা কোন নিয়ম অনুসরণ করে প্রবন্ধ লিখেছে তা দেখতে হবে।এর ফলে প্রবন্ধ লেখার জন্য সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে।
২. বারবার অনুশীলনঃ যেকোনো বিষয়ে দক্ষ হতে হলে সে বিষয়ে বারবার অনুশীলন করতে হয়।প্রবন্ধ লেখার ক্ষেত্রেও বারবার লিখে অনুশীলন করতে হবে। তবেই প্রবন্ধ লেখায় দক্ষ হওয়া যাবে।পত্র-পত্রিকায় প্রবন্ধ পড়ার অভ্যাস এক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
৩. হতাশ না হওয়াঃ অনেক সময় নিবন্ধ লিখলে সেই নিবন্ধটি পাঠকের পছন্দ নাও হতে পারে।প্রবন্ধ পড়ে পাঠকের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হলে, হতাশ হওয়া যাবে না। বরং দ্বিগুণ মনোবল নিয়ে প্রবন্ধ লিখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
৪. সম্পাদনায় যত্নশীল হওয়াঃ অনেক সময় প্রবন্ধ লেখার মান ভালো হলেও সঠিকভাবে সম্পাদনার অভাবে তা পাঠকপ্রিয়তা হারায়।বানানে ভুল হলে প্রবন্ধটি পড়তে পাঠক বিরক্ত হবেন।তাই প্রবন্ধ সম্পাদনার ক্ষেত্রে যত্নশীল হতে হবে।
৫. আকর্ষণীয় শিরোনামঃ র্প্রবন্ধের শিরোনাম এমন হতে হবে যেনো প্রবন্ধটি পড়তে পাঠক আকৃষ্ট হয়।
৬. নির্দিষ্ট কাঠামোঃ প্রবন্ধ লিখার ক্ষেত্রে একটি কাঠামোকে অনুসরণ করতে হবে। এজন্য প্রবন্ধ লেখার আগে লেখক একটি কাঠামো নিজেই তৈরি করে নিতে পারে।ভাষারীতির ক্ষেত্রে সাধু বা চলিত যেকোনো একটি রীতি ব্যবহার করতে হবে। সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণে লিখা যাবে না। তবে,উদ্ধৃতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে হুবহু দিতে হবে।
৭. পুরো বিষয়ে ফোকাসঃ প্রবন্ধ লেখার ক্ষেত্রে যে কোনো প্রবন্ধের কী-ওয়ার্ডের দিকে বেশি ফোকাস না করে প্রবন্ধের পুরো বিষয়ের উপর ফোকাস করে লিখতে হবে।
৮. পাঠকের কথা মাথায় রাখাঃ প্রবন্ধ লিখার ক্ষেত্রে পাঠকের কথা মাথায় রাখতে হবে। পাঠক প্রবন্ধটি পড়ে যেনো সন্তুষ্ট হয়,সেদিকে খেয়াল রেখে লিখতে হবে।
৯. নিজস্ব ধারায় লেখাঃ প্রবন্ধ লিখার ক্ষেত্রে সব লেখক যেভাবে প্রবন্ধ লিখে থাকে,তা অনুসরণ না করে নিজস্ব স্টাইল অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ লেখনশৈলী গতানুগতিক ধারা থেকে কিছুটা ভিন্ন করা যেতে পারে।
১০. লেখার ধররণঃ প্রবন্ধ লেখার ধরণ এবং পদ্ধতি পরিবর্তন করা যেতে পারে।যেমন,কোনো বিষয়কে মজার ছলে উপস্থাপন করা যেতে পারে
পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখার নিয়ম
অনেকেই পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে থাকে।এক্ষেত্রে যা করতে হবে-
অন্যের লেখা চুরি করা যাবে না। কারো লেখা থেকে কোনো অংশ নিলে, তার রেফারেন্স দিতে হবে।
গবেষণা প্রবন্ধ লেখার নিয়ম
সাধারণ প্রবন্ধ থেকে গবেষণা প্রবন্ধের লেখার কৌশল ও পদ্ধতি ভিন্ন হয়ে থাকে।গবেষণা প্রবন্ধ লেখার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে এটি যেনো মৌলিক হয়।প্রবন্ধটি অপ্রকাশিত হতে হবে। গবেষণা প্রবন্ধে বেশ কিছু বিষয় থাকতে হবে।যেমন-সারসংক্ষেপ,কী-ওয়ার্ড,ভূমিকা, মূল বক্তব্য, আলোচনার পর সিদ্ধান্ত উপনীত বিষয়সমূহ, উপসংহার, রেফারেন্স,উদ্ধৃতি এবং প্রমাণসমূহ।
ইসলামিক প্রবন্ধ লেখার নিয়ম
ইসলাম সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে যে প্রবন্ধ লিখা হয়, তাই ইসলামিক প্রবন্ধ। এ প্রবন্ধ ইসলাম ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত, তাই যেকোনো বিষয় লিখার আগে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে লিখতে হবে।কোনো কিছু অনুমান করে লিখা যাবে না। এমন কিছু লিখা যাবে না, যা নিয়ে সমাজে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।ধর্মকে অবমাননা করে কোনো কিছু লিখা যাবে না। লেখার ব্যাপারে অবশ্যই যত্নশীল হতে হবে।
প্রশ্নোত্তরঃ
প্রবন্ধ ও রচনার মধ্যে পার্থক্য কি?
প্রবন্ধ হচ্ছে প্রকৃষ্ট বন্ধন।প্রবন্ধ ও রচনাকে বর্তমানে একই অর্থে ব্যবহৃত করা হয়।ইংরেজিতে এর অর্থ Essay.প্রবন্ধে কোনো বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয় সুশৃঙ্খলভাবে।
প্রবন্ধ রচনা কি?
কোনো বিষয়কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করে উপস্থাপন করাই হচ্ছে প্রবন্ধ রচনা।
রচনায় ভূমিকা কীভাবে লিখতে হয়?
ভূমিকায় রচনার সংশ্লিষ্ট বিষয়টির একটি পরিচিতি তুলে ধরা হয়।এর মাধ্যমে ঐ বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ভূমিকার এই অংশটুকুকে সূচনা,প্রারম্ভিকা বা প্রাক-কথনও বলা হয়ে থাকে।ভূমিকা সাধারণত সংক্ষিপ্ত হয়ে থাকে।
রচনায় উপসংহার কীভাবে লিখতে হয়?
উপসংহারে লেখক সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে আলোচনার পর কোনো নিজস্ব মন্তব্য বা সিদ্ধান্তে উপনীত হন।উপসংহার মূলত,পুরো রচনাটির সংক্ষিপ্তসার।
আরো পড়ুনঃ
সুন্দর
তথ্যবহুল লেখা
Good article