মালাউন, মালু শব্দের অর্থ কি

মালাউন, মালু, ডান্ডি, যবন, হানাদার শব্দের অর্থ কি?

1

‘মালাউন’ শব্দটি বাঙ্গালি হিন্দুদের ক্ষেত্রে ঘৃণাসূচক শব্দ হিসেবে প্রয়োগ করতে দেখা যায়। এটি ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী একটি অপরাধ কর্ম(কেন সেই ব্যাখ্যাও দেবো)।

অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এই শব্দটি নিয়ে এই উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশী চর্চা হয়, যদিও এটি আরবি শব্দ।  প্রথমে জেনে নেবো এই শব্দটি প্রকৃত অর্থ কি। আভিধানিক এবং প্রায়োগিক দুটি অর্থ আমাদের মনে কি দুই ধরণের অনুভূতি জাগায়? জানি না।

মালাউন কারা ?

এই শব্দের উৎস বিবেচনা করলে দেখা যায় এটি একটি আরবি শব্দ। “ملعون” অর্থ অভিশপ্ত বা, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত।

ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পাদিত বাংলা অভিধানে এই শব্দের দুটি অর্থ দেয়া হয়েছে- একটি হচ্ছে অভিশপ্ত, আরেকটি বিধর্মী।

কাজী রফিকুল হক সম্পাদিত বাংলা অভিধানে এই শব্দটির তিনটি অর্থ দেয়া হয়েছে- অভিশপ্ত, বিতাড়িত, শয়তান।

ডক্টর মুহাম্মদ এনামুল হক এবং শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী সম্পাদিত অভিধানে এর অর্থ তিনটি। একটি হচ্ছে- লানতপ্রাপ্ত, অভিশপ্ত, বিতাড়িত, কাফের। আরেকটি হচ্ছে- শয়তান, এবং তিন নম্বরটি হচ্ছে মুসলমান কর্তৃক ভিন্ন সম্প্রদায়কে দেয়া গালি বিশেষ। (এই গালির প্রতিক্রিয়ায় দেয়া গালি নিয়ে অন্য কোনদিন লেখা যাবে)

Names.org নামের একটি ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ১৮৮০-২০১৮ সাল পর্যন যুক্তরাষ্ট্রে ৩২ জন শিশুর নাম রাখা হয়েছিলো মালাউন। এই ওয়েবসাইটে আরেকটি মজার তথ্য পাওয়া যায়-

“এই নামটি সবচেয়ে বেশী সার্চ করা হয়েছে বাংলাদেশ আর, মালয়েশিয়াতে আর, চীনে। এরপর আছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্য। আরবি ভাষী কোন দেশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

ইসলাম ধর্মে মালাউন জাতির অবস্থান

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী অবিকৃত একমাত্র কিতাব বা, বই হচ্ছে কুরআন যেটি আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে। এই বইয়ে খুঁজলে কোথাও এই আরবি শব্দটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে এমন কোন উদাহরণ পাবেন না। কুরআনের সূরা আল হুজুরাতের ১১ নম্বর আয়াতে আছে-

“হে ঈমানদারগণ, পুরুষরা যেন অন্য পুরুষদের বিদ্রূপ না করে৷ হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম৷ আর মহিলারাও যেন অন্য মহিলাদের বিদ্রূপ না করে৷ হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম৷ তোমরা একে অপরকে বিদ্রূপ করো না৷ এবং পরস্পরকে খারাপ নামে ডেকো না৷ ঈমান গ্রহণের পর গোনাহর কাজে প্রসিদ্ধ লাভ করা অত্যন্ত জঘন্য ব্যাপার৷ যারা এ আচরণ পরিত্যাগ করেনি তারাই জালেম”(Islamerbani.net থেকে নেয়া অনুবাদ)”

কাউকে মালাউন বলে গালি দেয়ার আগে ভেবে দেখুন, এই গালিটি দেয়া ঠিক হবে কি না। কুরআন বা, হাদিস আমাদেরকে সেই অনুমতি দেয় কি না।

মালু

এই শব্দটি মালাউন শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, বাংলাদেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বী উগ্র কিছু মানুষ এই শব্দটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে পৈশাচিক আনন্দ লাভ করেন।

আগেও বলেছি ইসলাম ধর্মের কোন উৎসেই এই শব্দটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় নি বা, উৎসাহিতও করা হয় নি। কালক্রমে শব্দটি এই অঞ্চলে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

পৈশাচিক আনন্দ মানে কি?

পৈশাচিক শব্দের অর্থ হচ্ছে কদর্য, জঘন্য, পিশাচ সম্বন্ধীয়। মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্য কাউকে আঘাত করে আনন্দ পাওয়া। কারো দুঃখের কারণ হয়ে আনন্দ পাওয়া। অর্থাৎ, কারো ক্ষতি করার মাধ্যমে আনন্দ লাভের যে প্রক্রিয়া সেটিই পৈশাচিক আনন্দ।

ডান্ডি

আমরা সবাই জানি নারায়ণগঞ্জকে বলা হয় প্রাচ্যের ডান্ডি(ইউরোপের একটি বিখ্যাত স্থান বুঝাতে)। ইংরেজী ভাষায় এই শব্দটির অর্থ ফ্যাশনসচেতন এবং স্টাইলিশ একজন ব্যক্তি।

প্রচলিত বাংলায় কিভাবে এই শব্দটি গালিতে পরিণত হল তা আমার অজানা, আপনাদের জানা থাকলে মন্তব্য করে জানাবেন। আরো কিছু বিষয় পড়তে পারেন- সাধারণ জ্ঞান বাড়ানোর জন্য।

যবন

আভিধানিক অর্থে- যবন – [বিশেষ্য পদ] প্রাচীন গ্রীক জাতি; ম্লেচ্ছজাতি, অহিন্দু। বেদ বিশ্বাসী ভারতীয়দের কাছে বেদে অবিশ্বাসী সবাই যবন হিসেবে পরিচিত ছিল। রাহুল সাংকৃত্যায়নের বইয়ে পড়েছি গ্রীকদের বুঝাতে যবন শব্দটি ব্যবহৃত হত।

এখন শব্দটি মুসলিমদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয়। এই শব্দটির সাথে সমার্থক আরেকটি শব্দ ব্যবহার করা হয় সেটি হচ্ছে ম্লেচ্ছ। চারটি বৈশিষ্ট্য থাকলে তাকে যবন বলা যায়(ড. মুহাম্মদ আমিনের ব্লগ অনুসারে)-

  • বিদেশাগত
  • বেদে অবিশ্বাসী
  • গোমাংস ভক্ষক
  • অশ্বারোহী

অনেকে অভিযোগ করেন– বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই শব্দের প্রয়োগ মুসলিমদের নামের সাথে কিভাবে প্রয়োগ করা যায় তা হিন্দু ধর্মাবলম্বী কিছু উগ্র ব্যক্তিদের এক প্রকার হাতে- কলমে দেখিয়ে দিয়েছিলেন।

হানাদার

হানাদার শব্দের অর্থ অন্যায়ভাবে আক্রমণকারী(বা, অন্য দেশ থেকে এই দেশে হানা দিয়েছে এমন কেউ)। এই শব্দটি ব্যবহার করা হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যদের বুঝাতে যারা নিরস্ত্র বাঙালির উপর ১৯৭১ সালে অন্যায়ভাবে আক্রমণ করেছিল।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী গভীর রাতে ঘুমন্ত ও নিরস্ত্র মানুষের উপর গণহত্যা চালায়। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং ৯ মাস যুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ হানাদারমুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

 

আরো পড়ুন-

 

তথ্যসূত্রঃ

  1. মালাউন বলার আগে ভেবে নিন- ইসলামের আলো
  2. মালাউন- উইকিপিডিয়া

56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

1

প্রবন্ধ লেখক

Author: প্রবন্ধ লেখক

বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করছি

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

বাংলাদেশে কি ডিভোর্স হয়?

বাংলাদেশে ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ একটি আইনসম্মত এবং স্বীকৃত প্রক্রিয়া। যদিও বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন, অনেক ক্ষেত্রেই দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েন,

আমায় দুঃখ দাও আমায় কষ্ট দাও

তুমি আমার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার খেলা খেলছ। জানি আমি, এতে তুমি আনন্দে আছ, তবু আমি তোমায় কিছুই বলি না। কারণ

যে রহস্যময় জলাশয়ে নামলেই যে কোনো প্রাণী পাথর হয়ে যায়।

পৃথিবীতে এমন একটি রহস্যময় জলাশয় রয়েছে যেখানে নামলেই যে কোনো প্রাণী পাথর হয়ে যায়। এটি কোন সাইন্স ফিকশন মুভির গল্প

Leave a Reply