গল্প বোঝে না সে মন বোঝে না আফছানা খানম অথৈ

0

বোঝে না সে মন বোঝে না

আফছানা খানম অথৈ

রুমকি বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে।অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে।দেখতে শুনতে মন্দ না,খুবই সুন্দরী স্মার্ট।কত ছেলে ক্রাশ খেয়েছে তার হিসেব নেই।রুমকি এখনো কাউকে মনের জগতে ঠাঁই দেয়নি।একদিন লাইব্রেরিতে দেখা হলো রুমেলের সঙ্গে, খুব রোমান্টিক সিনারিতে।রুমেল বের হচ্ছে রুমকি ঢুকছে ঠিক তখনি ঘটনাটা ঘটল।দু’জন দু’জনের গায়ের সঙ্গে ধাক্কা খেল।তখনি রুমকি রাগের ভাষায় বলল,
অন্ধ নাকি,চোখে দেখেন না।যত্তসব, রাবিশ।
রোমেল খুব ভদ্র ভাষায় বলল,
সরি আমি দেখতে পাইনি।আমার ভুল হয়ে গেছে।আমায় ক্ষমা করুণ।
রুমকি আবার ও কড়া ভাষায় বলল,
হয়েছে আর ঢং করতে হবে না।এটা হচ্ছে আপনাদের স্টাইল। অপরাধ করে মাফ চাওয়া।
না মানে বললাম তো সরি।আমার ভুল হয়ে গেছে।আমায় ক্ষমা করুণ।
রুমকি আর কিছু না বলে লাইব্রেরিতে ঢুকল।তারপর কিছু বই কিনে বাসায় ফিরে গেল।কিন্তু কিছুই ভালো লাগছে না।বারবার ধাক্কা খাওয়া ছেলেটার কথা মনে পড়ছে।তার প্রতিচ্ছবি তার সামনে ভেসে উঠছে।কিছুতে পড়ালেখায় মন বসাতে পারছে না।পরদিন ভার্সিটিতে গেল।ক্লাসের ফাঁকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল।ঠিক তখনি দেখল রুমেল ক্লাস থেকে বের হচ্ছে।এমন সময় রুমকি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।রুমেল সরে যেতে চাইল।কিন্তু রুমকি পথরোধ করে বলল,
“এক্সকিউজ মি”।আপনার সাথে আমার কথা আছে।
রোমেলের শরীরে এতক্ষণে হৃদকম্প শুরু হয়ে গেছে।কারণ সেদিনকার মতো আবার জানি কি নাকানি ছোবানি খেতে হয়।তাই নম্র ভাষায় বলল,
জ্বি বলুন।
না এখানে নয়।
তাহলে কোথায়?
চলুন আমরা ঐ নির্জন স্থানে গিয়ে বসি।তারপর মনের সুখে কথা বলব।
না মানে,ইয়ে….।
এত মানে মানে করবেন নাতো চলুন।
রুমকি এক প্রকার জোর করে রুমেলের হাত ধরে নিয়ে গেল।তারপর রুমেলের পাশে বসে পড়লো।রুমেলের মুখ বন্ধ সে চুপচাপ বসে আছে।তখনি রুমকি বলল,
আসলে সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমি দু:খিত।আমি রাগের বশে আপনাকে অনেক কড়া কথা বলেছি।আমায় ক্ষমা করুণ।
রোমেল হতবাক হলো ইমদাদ চৌধুরীর একমাত্র মেয়ের মুখে এমন নরম ভাষা শুনে।সেও নরম ভাষায় বলল,
না ঠিক আছে।আপনি টেনশন করবেন না।আমি মন ধরিনি।
না মানে আমায় ক্ষমা করেছেন?
হুম করেছি।
আপনার পরিচয় কিন্তু এখনো জানা হয়নি।
আমি শাহরিয়ার রোমেল।বি বি এ ফাইনাল ইয়ার।আর আপনি?
আমি রুমকি চৌধুরী।অনার্স ফাইনাল ইয়ার।আমার একটা কথা রাখবেন?
বলুন কি কথা?
আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন?
কেনো বলুন তো?
না মানে এমনি।
ঠিক আছে তাই হবে।
তাহলে আর আপনি নয় তুমি।
ইটস ওকে।
বন্ধুত্বের বন্ধনে দু’জন বন্দি হলো।ইতিমধ্যে একে অপরের মোবাইল নাম্বার সেভ করে নিলো।তারপর থেকে শুরু হলো রাজ জেগে ফোনালাপন চ্যাটিং….।
মাঝে কিছু সময় পার হলো।বন্ধুত্ব থেকে দু’জন ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হলো।ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে দুজন ছুটিয়ে প্রেম করছে।বন্ধু মহলের অনেকে তাদের রিলেশনের কথা জানে।তাই রুমকিকে নিয়ে আর কেউ প্রেমের স্বপ্ন দেখে না।একদিন রুমেল ক্লাস থেকে বের হলো। এমন সময় দেখল তার এক সহপাঠিনী চোখ চেপে ধরে কাঁদছে। তখনি সে এগিয়ে গিয়ে বলল,
কী হয়েছে সুমি?
আমার চোখে মনে হয় কী পড়েছে।উহু উহু…।
তখনি রুমেল বলল,
দেখি দেখি?
রুমেল হাত দিয়ে তার চোখের ময়লা ফেলে দিয়ে ফু দিলো।আর এই দৃশ্যটা রুমকি দেখল।আর তখনি শুরু হলো দ্বন্ধ।রুমকি রাগ করে আছে। রুমেলের সঙ্গে কথা বলছে না।তখনি রোমেল বলল,
রুমকি এমনভাবে মুখ ঘোমড়া করে আছ কেনো?কী হয়েছে?
রুমকি কোন কথার উত্তর দিচ্ছে না।সামনে এগিয়ে চলল।তখনি রুমেল তার হাত চেপে ধরে বলল,
রুমকি চলে যাচ্ছ যে, কী হয়েছে?
রুমকি মারমুখী হয়ে বলল,
“ডোন্ট টাচ্ মি”।
কেনো কী হয়েছে?
তুমি আমায় ফেলে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করছ?
কে বলেছে তোমায়?
কেউ বলেনি।আমি নিজের চোখে দেখেছি।
প্লিজ রুমকি বুঝতে চেষ্টা কর। তোমার দেখার মাঝে ভুল ছিল।সুমি আমার গার্লফ্রেন্ড নয়,শুধু ফ্রেন্ড।
আমি বিশ্বাস করি না।আজ থেকে তোমার সাথে আমার সকল সম্পর্ক শেষ।ভবিষ্যতে আমাকে আর ডিস্টার্ব দিবে না।
কোনকিছু শুনার অপেক্ষা না করে হনহন করে চলে গেল রুমকি।শতচেষ্টা করে ও রুমেল তাকে ফেরাতে পারলো না।রুমকি কিন্ত থেমে নেই।রুমেলকে ছেড়ে অন্য ছেলের সাথে রিলেশন গড়ে তুলেছে।আর রুমেল তার ভালোবাসা বুকে নিয়ে বিরহ যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছে।না পারে সইতে,না পারে কইতে,পড়ালেখা খাওয়া-দাওয়া কোনকিছুতে মন বসাতে পারছে না।দিন দিন শরীর স্বাস্থ্য শুকিয়ে কাট হয়ে যাচ্ছে।একদিন ম্যচে সে অজ্ঞান হয়ে পড়লো।রুমমেট সাব্বির তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলল,
এই যে শুনুন?
জ্বি বলুন।
উনি আপনার কি হয়?
আমার ফ্রেন্ড।ওর কি হয়েছে ডাক্তার সাহেব?
আমাদের ডাক্তারি বিদ্যায় যতটুকু মনে হয়,উনার সিরিয়াস কিছু হয়নি।তবে….।
তবে কী ডাক্তার সাহেব?
আমার যতদূর মনে হয়,উনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।মনে হয় হৃদয় ঘটির ব্যাপার।রিলেশনের ব্যঘাত ঘটেছে।
তখনি সাব্বির উত্তর দিলো,
ডাক্তার সাহেব ঠিক বলেছেন।একটা মেয়ের সাথে তার রিলেশন ছিল।সামান্য ভুল বুঝাবুঝির কারণে তা ভেঙ্গে যায়।এরপর থেকে তার এই অবস্থা।
আমি যা ভেবেছিলাম,ঠিক তাই।এককাজ করুণ মেয়েটিকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন।আবার সম্পর্ক গড়ে তোলেন।তানা হলে উনার মেন্টাল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঠিক বলেছেন ডাক্তার সাহেব।কিন্তু…।
কিন্তু কী বলুন?
মেয়েটি অন্য একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
তাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলুন।রুমেল সত্যি তাকে ভালোবাসে।সে যা দেখেছ তা ছিল ভুল।
ডাক্তার সাহেব তা না হয় বললাম।যদি সে ফিরে না আসে?
তাহলে রুমেলের চিকিৎসা ও আর হবে না।কারণ আমাদের কাছে সকল রোগের চিকিৎসা আছে।কিন্তু মনোরোগের কোন চিকিৎসা নেই।এই রোগের চিকিৎসা মনের মানুষ ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না।আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি এগুলো নিয়মিত খাওয়ান।বাকীটা আল্লাহপাকের মর্জি।
সাব্বির ডাক্তারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুমেলকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসল।তারপর ছুটে গেল রুমকির কাছে।তাকে সাধ্যমতো বুঝাল।কিন্তু সে কিছুতেই বুঝ মানল না।তার এক কথা,
আমি নিজের চোখে যা দেখেছি তা কখনো ভুল হতে পারে না।ইহা সম্পূর্ণ সত্য এবং সঠিক।প্লিজ আপনি ওর ব্যাপার নিয়ে আর কখনো আমার সাথে কথা বলতে আসবেন না।
সাব্বির’র শতচেষ্টা ব্যর্থ হলো।সে একবুক দু:খ নিয়ে রোমেলের কাছে ফিরে এলো।তাকে একা দেখে রোমেল জানতে চাইল,
সাব্বির তুই একা যে রুমকি এলো না?
সরাসরি কথাটা বললে রোমেল দু:খ পাবে।তাই সে একটু ঘুরিয়ে বলল,
রোমেল ওর নাকি কাজ আছে।কাল আসবে বলেছে।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে রোমেল বলল,
সাব্বির আর লুকাস না।আমি জানি ও আসবে না।কারণ সে এখনো ভুল বুঝে আছে।কী করে তার ভুল ভাঙাব ভেবে পাচ্ছি না।উফ ওকে ভুলবো কিভাবে?ওকে ছাড়া যে আমি বাঁঁচব না।
বিরহ যন্ত্রণায় কাতর রোমেল।এদিকে রুমকি তার নতুন বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে হেসে খেলে আনন্দ ফুর্তি করছে।তার হাতে হাত রেখে বাঁচা মরার শফথ করছে।ক্লাবে রেস্টুরেন্টে কফি শফে বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরাফেরা করছে।একটি বারের জন্য সত্য মিথ্যা যাচাই করার জন্য রোমেলের সঙ্গে দেখা করার প্রয়োজন অনুভব করছে না।তার কথা মনে করে কোন রুপ টেনশন ফিল করছে না।রোমেল কিন্তু তাকে কিছুতে ভুলতে পারছে না।তার কথা ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে যায়।ম্যাচ ছেড়ে ফুটপাতে ঠাঁই নেয়।ব্রিলিয়ান্ট মেধাবী রোমেল আজ প্রেমের জন্য পাগল। আজ এখানে কাল ওখানে ঘুরাফেরা করছে।পরনে নেই কাপড় পেটে নেই ভাত,চোখে নেই মুখ।মুখ ভর্তি দাঁড়ি গোঁফ একাকার,জীবনটা বিভিষিকাময়।আজ তিনদিন ধরে রোমেলের পেটে দানাপানি পড়েনি।তাই একটা চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।লোকটির দয়া হলো। সে তাকে বন কেক খেতে দিলো।এমন সময় এক দল ছেলে তার পিছু নিলো।পাগল পাগল বলে তাকে কিল ঘুষি….।
এদিকে তার সহপাঠিনী রুমেলের ভয়ানক অবস্থার কথা শুনে ছুটে যায় তার গার্লফ্রেন্ড রুমকির কাছে।পুরো ঘটনাটা রুমকিকে খুলে বলে।সবকথা শুনার পর রুমকি অনুশোচনায় কাতর হয়ে পড়লো।তাৎক্ষণিক ভাবে রোমেলের কাছে কল দেয়।কিন্তু কল কানেকশন হয় না।রুমকি দুমড়ে মুচড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তার সঙ্গে কাটানো ভালাবাসার দিনগুলো স্মরণ করে অজর ধারায় কাঁদে।শুধু তাই নয় তাকে খুঁজতে শুরু করলো।কিন্তু কোত্থাও পেলো না।একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে দেখল কয়েকজন ছেলে তাকে মারছে।রুমকি এগিয়ে গিয়ে তাদেরকে সরিয়ে দেয়।তারপর সে হাত ধরে কাছে যেতে চাইলে সে দৌড়ে পালায়।রুমকি ও তার পিছু পিছু যায়।কিন্তু দু:খের বিষয় সে তাকে সেফ করতে পারলো না।একটা জিফ গাড়ি এসে তাকে পিষে দিলো।রুমেল ঘটনা স্থলে মারা গেল।রুমকি তার লাশকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।চারদিক থেকে লোকজন ছুটে আসল।তার লাশ মা-বাবার কাছে পৌছে দিলো।রুমেলকে দাফন করার পর রুমকি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।সাব্বির একটা চিরকুট এনে রুমকি হাতে দিয়ে বলল,
একবার ও আসল সত্যটা জানতে চাইলে না।আজ তোমার জন্য রোমেল দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল।এই চিরকুট পড় তবে সব বুঝতে পারবে।সে তোমাকে কতটা ভালোবেসেছিল।
রুমকি চিরকুট হাতে নিয়ে দেখে তাতে লেখা,

ওরে প্রাণের প্রিয়া
কাঁদে যে হিয়া।
দূরে কেন ছাড়িয়া
বুকে জ্বালা দিয়া।
সহে না প্রাণে সহে না
“বোঝে না সে মন বোঝে না”।
রেখেছি বুকেতেে
কতনা অদরে
চলে গেলি দূরে
সবই শূন্য করে।
জীবনে আঁধারে
একাকী প্রহরে
কষ্ট চোখের জলে
আজ ও ঝরে অঝোরে।
বোঝেনা সে মন বোঝে না।
কেনো গেলি চলে
অচেনা আঁধারে।
প্রতিক্ষণে খুঁজি আমি
শুধুই তোরে।
প্রেমেরী বাঁধনে
সুখেরী প্রহরে।
আয় না ফিরে আবার
এই মনের ঘরে।
“বোঝে না সে মন বোঝে না”
রুমকি এবার বুঝতে পারলো সত্যিকার ভালোবাসা।আর তা বুঝতে পেরে বলল, সে ঠিক বলেছে,সত্যি আমি মন বোঝেনি।
ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

জানোয়ার ( ৭)

মানুষ যদি মানুষ না হত? সে জানোয়ার হত।কারন? জানোয়ারের চা'র ঠ্যাং।একদিন এক জানোয়ার গেল মাঠে, গিয়ে দেখল  এক জানোয়ার শুয়ে

ভিক্টোরিয়া পার্ক

ভিক্টোরিয়া পার্কে কি হয়? সবাই প্রেম করে, একজন আরেকজনের গলা জড়িয়ে ধরে। জড়িয়ে ধরে কি কয়? তুমি আমার হও, তুমি

কাবার ইমাম ক্ষুব্ধ

[ez-toc]কাবার ইমাম ক্ষুব্ধ মোঃ রুহুল আমিন কাবার ইমাম ক্ষুব্ধ আজি কেনো জানেন ভাই? কাবায় এসে হাজিরা সব ছবি তোলছে তাই।

স্বাধীনতার ঘ্রাণ

স্বাধীনতার ঘ্রাণ মোঃ রুহুল আমিন স্বাধীনতা এলো বাংলায় দীর্ঘ নয় মাস পর॥ নয়টি মাসে কতো মায়ের শূন্য হইলো ঘর! পাক

Leave a Reply