আল্লাহ্‌র হিদায়াত পাওয়ার শর্তসমূহ কী

1

পৃথিবীতে আল্লাহ জ্বীন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদতের জন্য। অর্থাৎ জ্বীন এবং মানুষ দুনিয়াতে তাদের জীবন অতিবাহিত করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারাটা হচ্ছে “হিদায়াত “। অর্থাৎ যারা আল্লাহর রহমতে হিদায়াত প্রাপ্ত তাঁরাই শুধুমাত্র ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।

প্রতিটি মানুষের হিদায়াত প্রাপ্ত হওয়াটা একমাত্র আল্লাহর হাতে। একমাত্র তিনিই যাকে ইচ্ছা তাকে হিদায়াত দান করেন। 

আল্লাহ বলেন,

” আল্লাহ্‌যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন হেদায়াতকারী নেই।”[সূরা যুমার, ৩৯:২৩] 

তিনি আরও বলেন: “আল্লাহ্‌যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে রাখেন।”[সূরা আনআম, ৬:৩৯] 

সুতরাং এখন তিনি কোন কোন শ্রেণীর মানুষদের হিদায়াত দান করে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করেন সেটাই জানার বিষয়।

হিদায়াত মূলত দুই ধরনের। এক হচ্ছে- কাউকে বিধর্মী থেকে  ইসালামের পথে আসতে হিদায়াত করা। দুই হচ্ছে – ঈমান আনার পর সঠিক পথে অবিচল থাকার ব্যাপারে হিদায়াত দান করা।

এখন আলোচনা করবো আমরা যারা নিজেদের মুসলিম দাবি করছি, তারা কীভাবে সঠিক হিদায়াত পেতে পারি সেইসব শর্তসমূহ নিয়ে।

১) রাসুল সাঃ এর অনুসরণঃ

একজন ঈমানদার তখনই সঠিক হিদায়াত প্রাপ্ত হবেন, যখন তিনি তার জীবনে রাসুলসাঃ এর আদর্শের অনুসরণ করবেন। অর্থাৎ ঈমান আনার পর তিনি যাবতীয় আমল শুধুমাত্র রাসুলসাঃ এর ত্বরিকায় পালন করবেন। যারা শুধুমাত্র রাসুলসাঃ এর অনুসরণে থাকবে একমাত্র তারাই হিদায়াত প্রাপ্ত হয়ে সফলকাম হবে।

আল্লাহ রাসুলসাঃ ছাড়া আর কারো আদর্শের অনুসারীদের হিদায়াত দেন না। আল্লাহ বলেন,

‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)

এখানে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, আল্লাহর ভালোবাসা তথা হিদায়াত পেতে চাইলে অবশ্যই রাসুলসাঃ কে ভালোবেসে অনুসরণ এবং অনুকরণ করতে হবে।

এখন আমরা যদি রাসুলসাঃ এর সহীহ্ আকিদা এবং আমল অনুসরণ না করে নিজের মতো বা পূর্বপুরুষদের অনুসরণে চলি তাহলে আমরা কখনোই আল্লাহর ভালোবাসা এবং  হিদায়াত কিছুই পাবো না।

২) দ্বীনের সঠিক জ্ঞানার্জন করাঃ

যারা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখে না তারা সহজে আল্লাহর হিদায়াত পায় না। অর্থাৎ আল্লাহ এবং আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে জানার চেষ্টা এবং আগ্রহ থাকলে তবেই তিনি আল্লাহর হিদায়াত প্রাপ্ত হবেন।

আল্লাহ বলেন,   

যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান। [ সুরা যুমার ৩৯:৯ ]

যে ব্যক্তি জানে যে, যা কিছু পালনকর্তার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে তা সত্য সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যে অন্ধ? তারাই বোঝে, যারা বোধশক্তি সম্পন্ন। [ সুরা রা’দ ১৩:১৯ ]

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ দ্বীনের জ্ঞানার্জনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। সঠিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে সঠিক আকিদা এবং আমল করা। যারা সঠিক জ্ঞান অর্জনের  দ্বারা আমল করার চেষ্টা করে আল্লাহ তাদের হিদায়াতের রাস্তায় পরিচালিত করেন। 

দ্বীনের ব্যাপারে যাদের জ্ঞান নেই, আর যাদের জ্ঞান আছে তারা কখনোই সমান নয়। সুতরাং জ্ঞানার্জন হিদায়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

সত্য গ্রহণে আগ্রহীঃ

যারা সর্বদা সত্যের অনুসন্ধান করে একমাত্র তারাই সত্যের আলো দেখতে পায়। অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে  যেকোনো সত্য যেকোনো সময় সামনে আসার সাথে সাথে তা মানতে পারলে তবেই আমরা হিদায়াতের অধিকারী হবো।

অর্থাৎ আমাদের সামনে এমন সত্য এসে উপস্থিত হয়েছে, যা আমার অতীতের ঈমান এবং আমলের বিপরীত। এখন সমস্ত দলিলের বিবেচনায় আমার আগের ধারণা ভুল প্রমাণিত হলে, যা সঠিক তা মেনে নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

আল্লাহ বলেন,

তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। [ সুরা বাকারা ২:২৮৫ ]

অর্থাৎ যারা সর্বদা সত্যের অনুসারী কেবলমাত্র তারাই আল্লাহর হিদায়াত পেতে পারে। 

৪) সর্বদা আল্লাহর উপর ভরসাঃ

হিদায়াত পাওয়ার আরেকটি শর্ত হলো আল্লাহর উপর সর্বদা ভরসা রাখা। যারা জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা রাখে আল্লাহ তাদের অবশ্যই হিদায়াতের স্বাদ আস্বাদন করান। জীবনের প্রতিটি উত্থান পতনে সবসময়  আল্লাহর ভরসা রাখা হিদায়াত প্রাপ্তির লক্ষণ। 

আল্লাহ বলেন, 

 ” যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন। [ সুরা তালাক ৬৫:৩ ]”

৫) সৎপথে চলাঃ

অসৎ ব্যক্তি কখনোই হিদায়াতের উপযুক্ত নয়। যারা ব্যক্তি জীবনে প্রতিটি স্তরে সৎপথ অবলম্বন করে তারা হিদায়াত প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ সর্বদা সৎ পথে থেকে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা ব্যক্তিরাই হিদায়াত প্রাপ্ত হন।

আল্লাহ বলেন, 

“যারা সৎপথপ্রাপ্ত হয়েছে, তাদের সৎপথপ্রাপ্তি আরও বেড়ে যায় এবং আল্লাহ তাদেরকে তাকওয়া দান করেন। [ সুরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৭ ]”

অন্য আয়াতে বলেন,

“যাকে আল্লাহ পথ দেখাবেন, সেই পথপ্রাপ্ত হবে। আর যাকে তিনি পথ ভ্রষ্ট করবেন, সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। [ সুরা আরাফ ৭:১৭৮ ]”

“অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন, যে নিজেকে শুদ্ধ করে(সৎ কর্ম দ্বারা) , সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত (অপকর্মে নিমজ্জিত)  করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়। [ সুরা শামস ৯১: ৮, ৯, ১০ ] “

৬) ফাসেকী পরিহার করাঃ

হিদায়াত প্রাপ্তির আরেকটি অন্যতম শর্ত হলো ফাসেকী পরিহার করা। অর্থাৎ পাপ কাজকে ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করা। ব্যক্তি জীবনে ফাসেক বা পাপী ব্যক্তি কখ‌নো হিদায়াত প্রাপ্ত হয় না।   সুতরাং ফাসেকী মুক্ত হওয়া হিদায়াত প্রাপ্তির নিদর্শন।  

পাপী ব্যক্তি পাপে নিমজ্জিত থাকলে সে কখনোই হিদায়াত প্রাপ্ত হবেনা। 

আল্লাহ বলেন,

” আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন অথবা তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা না করুন একই কথা; আপনি সত্তর বার তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না। এটা এ জন্যে যে, তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে কুফরী করেছে। আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।( সূরা তওবা ৮০) 

৭) হিদায়াতে অটল থাকার দোয়া করাঃ

পৃথিবীতে সবচাইতে বেশী হিদায়াত প্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন নবী রাসুল (আঃ) গণ। আল্লাহ প্রতিটি নবী রাসুলদের নিজে হিদায়াত দিয়েছেন। এ সত্ত্বেও নবী রাসুলগণ প্রতিনিয়ত হিদায়াতের পথে অটল থাকার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন।

আমাদের রাসুলসাঃ প্রতিনিয়ত হিদায়াতের দোয়া করতেন এবং সবাইকে এইসব দোয়া পড়তে ও আমল করতে শিক্ষা দিতেন। সুতরাং হিদায়াত প্রাপ্তি এবং এতে অটল থাকার জন্যও দোয়া করা একটি অন্যতম শর্ত। 

৮) চেষ্টা করাঃ

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বারবার উল্লেখ করেছেন যে, ইবলিশ শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। এই শয়তানের কাজই হচ্ছে মানুষকে বিভ্রান্ত করে আল্লাহর হিদায়াত থেকে দূরে রাখা। তাই যখনই মানুষ হতাশ হয় ব্যর্থ হয় অথবা প্রচুর প্রাচুর্যের দেখা পায়, তখনই শয়তান প্ররোচনা দেয়। কাউকে দুঃখ দেখিয়ে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। কাউকে প্রাচুর্যের লোভ ক্ষমতা দেখিয়ে হিদায়াতের পথ থেকে দূরে নিয়ে যায়।

 তাই চেষ্টা করতে হবে হাজারো দুঃখ কষ্টে আল্লাহকে ভুলে না যাওয়া। এবং প্রাচুর্যের সময় বেশী বেশী শুকরিয়া আদায় করা। অর্থাৎ সর্বদা আল্লাহর রাস্তায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির মধ্যে থাকার জন্য চেষ্টা করা।

আল্লাহ বলেন,

যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন। [ সুরা আনকাবুত ২৯:৬৯ ]

আল্লাহ আরো বলেন, 

” মানুষ যা চেষ্টা করে, তাই সে পায়।’ সুরা আন নাজম : ৩৯ “

“আর কারো ঈমান আনা হতে পারে না, যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম হয়। পক্ষান্তরে তিনি অপবিত্রতা আরোপ করেন যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে না তাদের উপর। [ সুরা ইউনুস ১০:১০০ ]”

সুতরাং হিদায়াতের পথে জ্ঞান বুদ্ধি ইত্যাদি দিয়ে  চেষ্টা করতে থাকাটাও হিদায়াত প্রাপ্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। 

৯) নিয়মিত আমলঃ

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিয়মিত আমল করাও একটি হিদায়াতের শর্ত। আমরা সালাতের আমল নিয়মিত করলে, এরমাধ্যমেও আল্লাহ আমাদের হিদায়াত দিবেন।  প্রতি ওয়াক্ত সালাতে প্রতিটি রাকাতে   আমরা সূরা ফাতেহা পড়ি। যা একটি দোয়াময় সূরা। এই দোয়াতে রয়েছে হিদায়াতের পথে রাখার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন।

আল্লাহ আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন, আমরা যেন প্রতিনিয়তই সালাতে বলি,

 (হে আল্লাহ) আমাকে সরল পথে অটল রাখুন।”[সূরা ফাতিহা, ১:৬] 

সুতরাং জেনে বুঝে সালাত নিয়মিত আদায় করাটা একটি আল্লাহর নিয়ামত। যা দ্বারা তিনি আমাদের  হিদায়াতের পথে পরিচালিত করবেন। 

১০) গোমরাহী পরিহার করাঃ

গোমরাহ ব্যক্তি কখনোই হিদায়াতের স্বাদ পায় না। গোমরাহী অর্থ হলো নিজে যা বুঝে সে মতেই অটল থাকা। সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও সত্যকে গ্রহণ না করা। পূর্বপুরুষদের মত বা অধিকাংশের মতকে সত্যের মানদন্ড ধরে সেই মতকেই চিরসত্য মনে করা হচ্ছে গোমরাহী। 

গোমরাহী ব্যক্তির ধ্বংসের মূল কারণ হচ্ছে গোয়ারতুমি। এইসব ব্যক্তি  কখনোই নিজের মতের বাইরে কিছুই চিন্তা করতে পারে না। যারফলে তারা সত্যকে মেনে নিতে পারে না। আর এই কারণেই তারা হিদায়াতের স্বাদ থেকে দূরে সরে যায়। 

আল্লাহ বলেন, 

“তারা সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করে। বস্তুতঃ তারা তাদের এ ব্যবসায় লাভবান হতে পারেনি এবং তারা হেদায়েতও লাভ করতে পারেনি। [ সুরা বাকারা ২:১৬ ]

সুতরাং গোমরাহী করাটা হিদায়াতের সম্পূর্ণ বিপরীত একটি দিক। অতীতে অসংখ্য জাতি গোষ্ঠী শুধুমাত্র গোমরাহীর কারণে আল্লাহর আযাবে পতিত হয়েছে। যারা গোমরাহী মানসিকতা ধারণ করে আল্লাহ তাদের হিদায়াত দেন না। 

১১) পূর্বপুরুষদের অনুসরণ না করাঃ

অতীতের অসংখ্য জাতি গোষ্ঠী শুধুমাত্র পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণের কারণে হিদায়াত প্রাপ্ত হয়নি। আমাদেরও অধিকাংশ মানুষ পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণের কারণে হিদায়াতের আলো পায় না। কিছু মানুষের বদ্ধমূল ধারণা যে, তাদের বাপ দাদারা যুগ যুগ ধরে যা পালন করে আসছে তার সবই সঠিক। তাদের যুক্তি হলো বাপ দাদারা সঠিক না হলে কেন এইসব এতো যুগ ধরে পালন করে আসছে? 

এই যে পূর্বপুরুষদের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস যা সত্যকে গ্রহণে বাঁধাগ্রস্ত করে। তাদের সামনে সমস্ত দলীল নিদর্শনের সত্য উন্মোচিত হলেও তারা তাদের বাপ দাদার আদর্শকেই সত্যের মাপকাঠি ধরে নিয়ে জীবনযাপন করে। যারফলে তারা হিদায়াত বঞ্চিত হয়। 

আল্লাহ বলেন, 

“যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং রসূলের দিকে আসো।  তখন তারা বলে, আমাদের জন্যে তাই যথেষ্ট, যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে পেয়েছি। যদি তাদের বাপ দাদারা কোন জ্ঞান না রাখে এবং হেদায়েত প্রাপ্ত না হয় তবুও কি তারা তাই করবে? [ সুরা মায়েদা ৫:১০৪ ] “

আল্লাহ আরও বলেন, 

“তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তোমরা তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে, বরং আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব। শয়তান যদি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে দাওয়াত দেয়, তবুও কি? [ সুরা লুকমান ৩১:২১ ] “

সুতরাং পূর্বপুরুষের অন্ধ অনুসরণ হিদায়াতের পথে বড় বাঁধা। সত্য উদ্ঘাটিত হওয়ার পরও শুধুমাত্র পূর্বপুরুষদের দোহাই দিয়ে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হিদায়াত বঞ্চিতদের লক্ষণ। 

১২) অন্ধ অনুসরণ না করাঃ

কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অন্ধ অনুসরণ করার কারণেও অনেকে  হিদায়াত পায় না। যেকোনো সত্য সামনে উন্মোচিত হলে সাথে সাথে তা যাচাই বাছাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সত্য দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হওয়ার পরও কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সমর্থন না থাকায় তা মানবো না এমন ধারণা পোষণ করা হচ্ছে সুস্পষ্ট অন্ধ অনুসরণের গোয়ারতুমি। 

অতীতের অনেক জাতিকে আল্লাহ  অন্ধ অনুসরণের কারণেই ধ্বংস করে দিয়েছেন। বিভিন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অন্ধ অনুসরণ এখনো আমাদের সমাজে বিদ্যমান। সুতরাং যিনি হিদায়াতের পথে থাকতে  চেষ্টা করবেন তাকে সবসময়ই সত্যের সামনে অন্ধ অনুসরণকে দূরে ঠেলে দিতে হবে। যা সত্য তা ই মানার মানসিকতা থাকতে হবে। 

এব্যাপারে আল্লাহ বলেন, 

তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষথেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ কর। তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য সাথিদের অনুসরণ করনা।তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আ’রাফঃ৩)

“আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে। [ সুরা আন’য়াম ৬:১১৬ ]

১৩) অহংকার না করাঃ

অহংকারী না হওয়া হিদায়াত প্রাপ্তির আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক। যে বা যারা অহংকারী তা কখনোই আল্লাহর হিদায়াত প্রাপ্ত হন না। বংশমর্যাদা অর্থ বৈভব বিত্তশালীতা ইত্যাদি  মানুষের অন্তরে হিংসা এবং অহংকারের জন্ম দেয়। এই অহংকারের কারণেই অনেক মানুষ সহজে সত্য গ্রহণ করতে পারে না।

অহংকারী লোক দীর্ঘদিন ধরে কোনো মত ও পথে চলতে থাকার ফলে হঠাৎ সত্যের মুখোমুখি হলে তারা সহজে সত্যকে গ্রহণ করতে পারে না। তাদের অহংকার তাদেরকে সত্য গ্রহণ করতে বাঁধাগ্রস্ত করে। সেইসাথে অহংকার মানুষকে অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। যে কারণে আল্লাহ তাআলা অহংকারী ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না। 

আল্লাহ তাআলা বলেন-‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কোনো উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৮)

অতএব অহংকারী লোকেরা সহজে হিদায়াত প্রাপ্ত হন না।

১৪) বিদআতের অনুসরণ না করাঃ

ইসলামী সুস্পষ্ট নীতিমালার বাইরে গিয়ে অনেক লোক বিদআতের অনুসরণে জড়িয়ে পড়ে। যারা জেনেশুনে বিদআতে জড়িয়ে যায় তাদের আল্লাহ সহজে হিদায়াতের রাস্তা দেখান না। সুতরাং বিদআতের অনুসরণ না করাও হেদায়েতের একটি শর্ত। 

বিদআত নিয়ে রাসুলসাঃ বলেন,

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও ছালাতের পর বলেন, ‘নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হ’ল আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়াত হ’ল মুহাম্মাদের হেদায়াত। আর নিকৃষ্টতম কাজ হ’ল দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হ’ল ভ্রষ্টতা’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)। আর নাসাঈতে রয়েছে, ‘প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম’ (নাসাঈ হা/১৫৭৮)।

সুতরাং বিদআত করে কেউ হিদায়াতের আলো পাবে না। বিদআত মুক্ত থাকাটাই হচ্ছে হিদায়াতের পথ প্রাপ্তির শর্ত। 

১৫) প্রবৃত্তির অনুসরণ না করাঃ

মানুষ মাত্রই প্রবৃত্তির অনুসারী। আল্লাহ মানুষকে এমন ভাবেই সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে নিজের খেয়ালখুশি মতো চলতে পারে। নিজের ইচ্ছামতো চলার বিরুদ্ধে এই দুনিয়ায় কারো জন্যই আল্লাহ ফেরেশতা নিয়োগ করেননি।

যারফলে মানুষ চাইলেই যা ইচ্ছা তা করতে পারে। যখন যেমন ইচ্ছা তেমন গ্রহণ বা ছাড়তে পারে। মনের নাম বলা হয় মহাশয় যাহা  দিবেন তাহা শয়। অর্থাৎ নিজের স্বাধীন মতো যা মনে চায় তাই করতে পারাটা হচ্ছে খেয়ালখুশির অনুসরণ।

এই প্রবৃত্তির অনুসারী ব্যক্তিরা সহজে হিদায়াতের আলো পায় না। কেননা তাদের যা বলা হয় তারা তা করতে ইচ্ছুক নয়। তারা তাদের মন মতো ইবাদত আমল করতে আগ্রহী। যারা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো চলে তাদের আল্লাহ হিদায়াত দেন না।

আল্লাহ বলেন,

“অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না। [ সুরা কাসাস ২৮:৫০ ] “

১৬) মূর্খতা পরিহার করাঃ

জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান। এমন একটি কথা সমাজে চালু আছে। অর্থাৎ যার ভালো মন্দ বুঝার ক্ষমতা থাকলেও তা কাজে না লাগিয়ে মূর্খতার পরিচয় দেয়। সে হচ্ছে সবচেয়ে বড় মূর্খ।  কেননা যেকোনো সত্য যখন সামনে আসে তখন তা নিজের জ্ঞান দ্বারা সত্যতা যাচাই বছাই করতে হবে। যদি জ্ঞান দ্বারা সত্যতা যাচাই না করে নিজের আগের ধারণার উপর অটল থাকাটা হচ্ছে মূর্খতা। 

যারা নিজেদের থেকে মূর্খতা পরিহার করতে পারে না  তা কখনোই হিদায়াত পায় না। হিদায়াতের আলো পেতে হলে অবশ্যই মূর্খতা পরিহার করে জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করতে হবে। 

আল্লাহ বলেন, 

” (হে মুসা)  আমি আপনাকে উপপদেশ দিচ্ছি যে, আপনি অজ্ঞদের (মূর্খদের) দলভুক্ত হবেন না। [ সুরা হুদ ১১:৪৬ ]

১৭) সামাজিক অনুসরণ না করাঃ

অন্ধ অনুসরণের মতো সামাজিক অনুসরণও মানুষকে আল্লাহর  হিদায়াত থেকে দূরে রাখে। অর্থাৎ কিছু কিছু সামাজিক বিষয় আছে যার আচার অনুষ্ঠান পালন  না করলে সমাজের মানুষ খারাপ বলবে। এইসব বিষয়ে সঠিক সত্য জানার পরও পরিহার না করে সামাজিক চাপে তা পালন করা এবং চালিয়ে যাওয়াও হিদায়াতের পথে অন্তরায়।

সঠিক ঈমান আমল জানার পরও শুধুমাত্র সামাজিক সম্মান মান মর্যাদা ইত্যাদির কারণে সত্যকে প্রকাশ না করা এবং সত্যকে গ্রহণ না করাও হিদায়াত প্রাপ্তির বাঁধা । আমাদের সমাজে মানুষের জন্ম মৃত্যু নিয়ে  এমন এমন আচার অনুষ্ঠান আছে যা ইসলাম সম্মত নয়। তবুও আমরা অধিকাংশ এইসব আচার অনুষ্ঠান মেনে নিচ্ছি শুধুমাত্র সামাজিক কারণে।

সামাজিক কারণটা হচ্ছে অনেকটা  সমাজের নেতাদের অনুসরণ। আমরা সমাজে আজ ইসলামের অনুসরণের চাইতে দুনিয়াবী নেতা নেতৃত্বের অনুসরণ করছি বেশী। এইসব অনুসরণ আমাদের হিদায়াতের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেতৃত্বের অনুসরণে আজ  আমরা নিজেদের  ধর্মহীনতায় নামিয়ে এনেছি। 

আল্লাহ এই বিষয়ে বলেন, 

“তারা (পাপী জাহান্নামীরা) আরও বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। [ সুরা আহযাব ৩৩:৬৭ ]

সুতরাং সামাজিক অনুসরণ এবং দুনিয়াবী নেতৃত্বের অনুসরণ হিদায়াতের অন্তরায়। 

১৮) অন্তরের বক্রতা পরিহার করাঃ

অন্তরের বক্রতা হলো এমন একটি গর্হিত কাজ যা মানুষের মনে যেকোনো সত্য বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা। যেকোনো কাজে খুঁত ধরা, সত্য প্রমাণিত হওয়ার পরও বারংবার প্রশ্নবিদ্ধ করা। 

অর্থাৎ সহজ সরল বিষয়কে জেনে বুঝে ইচ্ছাকৃত ভাবে জটিল করে তোলা। এবং সত্য স্বীকারে অস্বীকার করা। 

আল্লাহ বলেন, 

“স্মরণ কর, যখন মূসা (আঃ) তাঁর সম্প্রদায়কে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা কেন আমাকে কষ্ট দাও, অথচ তোমরা জান যে, আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রসূল। অতঃপর তারা যখন বক্রতা অবলম্বন করল, তখন আল্লাহ তাদের অন্তরকে বক্র করে দিলেন। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। [ সুরা সফ ৬১:৫ ] “

অন্তরের বক্রতার আরেকটি দিক হলো, সহজ সরল বিষয় অন্বেষণ না করে জটিল ও কুটিল বিষয় অন্বেষণ এবং অনুসরণ করা।

যেমন আল্লাহ বলেন,

” তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। [ সুরা ইমরান ৩:৭ ]

সুতরাং অন্তরের বক্রতা হিদায়াতের পথে বড় প্রতিবন্ধক। যারা এই রোগে আক্রান্ত হয় আল্লাহ তাদের রোগ আরো বাড়িয়ে দেন। 

আল্লাহ্‌তাআলা বলেন: “কিন্তু তারা যখন বাঁকা পথ ধরল, তখন আল্লাহ্ও তাদের অন্তরকে বাঁকা করে দিলেন।”[সূরা আছ-ছফ, ৬১:৫] 

১৮) কুরআন জানাঃ

আল্লাহর হিদায়াতের সর্বোচ্চ এবং সর্বোত্তম উৎস হলো পবিত্র কুরআন। যারা সঠিকভাবে কুরআন বুঝে এবং জানার চেষ্টা করে তাঁরাই হিদায়াতের পথে থাকে। দ্বীনের যেকোনো বিষয়ে জানতে হলে সর্বপ্রথম কুরআনের কাছে যেতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহর কুরআন যিনি যতবেশী জানবেন তিনি ততবেশী হিদায়াতের পথে থাকবেন।

আল্লাহ বলেন, 

” (হে রাসুলসাঃ) আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ (কুরআন)  নাযিল করেছি যেটি এমন যে তা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্যে সুসংবাদ। [ সুরা নাহল ১৬:৮৯ ]

সুতরাং কুরআন হচ্ছে হিদায়াতের মাধ্যম।

আল্লাহ আরো বলেন, 

“এই কোরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৯ ] “

১৯) আল্লাহর স্বরণে থাকাঃ

সর্বাবস্থায় আল্লাহর স্বরণে থাকাটা হিদায়াতের লক্ষণ। অর্থাৎ জীবনযাপনের প্রতিটি সময় আল্লাহর স্বরণ থেকে গাফেল না হওয়া হচ্ছে হিদায়াতে থাকা। 

যে যারা আল্লাহর স্বরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় আল্লাহ তাদের হিদায়াত করেন না।

আল্লাহ বলেন,

“যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী। [ সুরা যূখরুফ ৪৩:৩৬ ]

অর্থাৎ কেউ আল্লাহ থেকে দূরে সরে গেলে তার জন্য আল্লাহ নিজেই একজন শয়তান নিয়োগ করেন। যাতে সেই শয়তান  তাকে পথভ্রষ্ট করে হিদায়াত থেকে দূরে রাখতে পারে। শুধু তাইনয় এই শয়তান সেই আল্লাহ বিমুখ বান্দাকে দিয়ে এমন সব কাজ করিয়ে নেয় যা আল্লাহর বিধানের বিপরীত। অথচ সে মনে করে সে ভালো কাজই করছে।

এব্যাপারে আল্লাহ বলেন,

” শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধা দান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে। [ সুরা যূখরুফ ৪৩:৩৭ ] “

২০) অধিকাংশের অনুসরণ না করাঃ

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে অধিকাংশ মানুষের অনুসরণ করতে নিষেধ এবং নিরুৎসাহিত করেছেন। কেননা অধিকাংশ মানুষ যা করে তা সবসময়ই সঠিক হবে এমন নয়। অধিকাংশ মানুষ যা করছে তা নিজের জ্ঞান বিচার বিবেচনা না করে অনুসরণ করা যাবে না। দল ভারী হলেই যে সেই দল সত্য তা কিন্তু নয়।

এব্যাপারে আল্লাহ বিভিন্ন আয়াত নাযিল করেছেন।

তাদের অধিকাংশেরই বিবেক বুদ্ধি নেই। (৫/১০৩) অধিকাংশই জানে না। (৬/৩৭) অধিকাংশই মূর্খ। (৬/১১১) আর তাদের অধিকাংশ লোককেই আমি প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নকারীরূপে পাইনি; বরং তাদের অধিকাংশকে পেয়েছি হুকুম অমান্যকারী। (৭/১০২)  অধিকাংশ সত্যকে অপছন্দ করে। (২৩/৭০)  অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়। (২৬/ ৮) অধিকাংশই মিথ্যাবাদী। (২৬/ ২২৩)

উপরোক্ত আয়াত ছাড়াও আরো অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ অধিকাংশ মানুষের বিরোধীতা করেছেন। অর্থাৎ অধিকাংশের মতো সবসময় ঠিক নয়। অধিকাংশের মতের উপর জীবনযাপন করাটা হচ্ছে হিদায়াত বঞ্চিত হওয়ার লক্ষণ। যারা নিজের বিবেক বুদ্ধি কাজে না লাগিয়ে অধিকাংশ মানুষের মতের সাথে নিজেকে একাত্ম ঘোষণা করে তারা কখনো হিদায়াতের রাস্তা পায় না। অতএব হিদায়াতের পাওয়ার আরেকটি শর্ত হলো অধিকাংশ মানুষের অনুসরণ না করা। 

২১) অত্যাচারী না হওয়াঃ

অত্যাচারী অসৎ ব্যক্তি কখনোই হিদায়াতের স্বাদ পায় না। নিজের জ্ঞান গরিমা, আত্ম অহংকার বিত্ত বৈভব ক্ষমতার ও প্রাচুর্যের কারণে অনেক ব্যক্তি অত্যাচারী হয়ে উঠে। যখন মানুষ অত্যাচারী হয়ে উঠে তখন তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। ফলে সে সত্য উপলব্ধি করতে পারে না। আর এই কারণেই আল্লাহ বলেন, 

“নিশ্চয় আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে পথপ্রদর্শন করেন না। [ সুরা আন’য়াম ৬:১৪৪ ]”

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম ইসলাম সহজ সরল একটি জীবনবিধান। যারা নিজেদের সৎ সরল এবং সত্য পথে পরিচালিত করবে কেবলমাত্র তাঁরাই আল্লাহর হিদায়াত প্রাপ্ত হবে। 

 

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

 

আরো পড়ুন-


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

1

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

Author: সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী জন্ম চট্টগ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলেন। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখেছেন। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস। বর্তমানে বেসরকারি চাকুরিজীবী। তাঁর ভালোলাগে বই পড়তে এবং পরিবারকে সময় দিতে।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

2 Replies to “আল্লাহ্‌র হিদায়াত পাওয়ার শর্তসমূহ কী”

Leave a Reply