FB IMG 1669463263349

কবরের প্রশ্ন এবং আমাদের অজ্ঞতা

0

কবরের  প্রশ্ন এবং আমাদের অজ্ঞতা 

কবর, প্রতিটি মানু‌ষেরই নির্ধারিত একটি গন্তব্য। জন্ম যেমন সত্য, মৃত্যুর পর কবরের বিভীষিকাও তেমন সত্য। আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য। এই পরীক্ষার প্রথম ধাপ হচ্ছে কবর। কবরে পরীক্ষিত বিষয় কী কী  হবে তাও তিনি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মাধ্যমে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। 

আমাদের উপমহাদেশের সকল আলেম উলামারা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে কবরের তিনটি প্রশ্নের কথা বেশী বেশী উল্লেখ করেন। সেইসাথে সকল মুসলিমকে এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর শেখানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। আলেমদের কল্যাণে আমরা জানতে পারি যে,  কবরের প্রশ্ন হলো তিনটি আর তা হলো,

(১) তোমার রব কে?

(২) তোমার দ্বীন কি?

(৩) এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে? 

এই প্রশ্ন তিনটি সকল ধর্মের সকল মানুষের জন্যই নির্ধারিত। কিন্তু আমরা অধিকাংশ মুসলিমই জানি না কবরে ঈমানদার মুসলিমের জন্য প্রশ্ন হবে চারটি! উপমহাদেশের আলেম উলামারা কখনোই আমাদের চার নাম্বার প্রশ্নটি জানায়নি। যদি এই চার নাম্বার প্রশ্নটি সকলকে জানাতো তাহলে সাধারণ মুসলমানগণ কখনোই তাদেরকে অন্ধবিশ্বাস করতো না। এইসব আলেম উলামারা যত সহজে নিজেদের মনমতো করে ইসলাম পালন করছে, সেটা আর সম্ভব হতো না। তাই শতশত বছর ধরেই তিনটি প্রশ্নের গানই তারা গেয়ে যাচ্ছেন। 

অথচ সহিহ হাদিসে চারটি প্রশ্ন করার কথা অসংখ্য বার এসেছে। আমরা হাদিস থেকে জানতে পারি যে, আল-বারাআ ইবনু ‘আবিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ  (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মৃত ব্যক্তি (যখন তার দাফন শেষ হয়) তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায় যখন তারা ফিরে যেতে থাকে, অতঃপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে উভয়ে প্রশ্ন করে, (১) তোমার রব কে? তখন সে বলে, আমার রব আল্লাহ। তাঁরা উভয়ে তাকে প্রশ্ন করে, (২) তোমার দ্বীন কি? সে বলে, আমার দ্বীন হলো ইসলাম। তারা প্রশ্ন করে, (৩) এ লোকটি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে? তিনি বলেন, সে বলে, তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তারপর তারা উভয়ে আবার (প্রশ্ন করে) বলে,(৪) তুমি কী করে জানতে পারলে? সে বলে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি এবং তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং সত্য বলে স্বীকার করেছি।(সংক্ষেপিত, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৭৫৩,  হাদিসের মান: সহিহ হাদিস) 

উপরোক্ত হাদিসসহ অসংখ্য হাদিসেই এসেছে, যারা তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে নিজেদের ঈমানদার পরিচয় দিতে পারবে; তাদের জন্য  চার নাম্বার প্রশ্ন –  তথা তুমি কী করে জানতে পারলে? এই প্রশ্নটি করা হবে। যার উত্তর হবে পবিত্র কুরআন পড়েছি, জেনেছি এবং সত্য বলে স্বীকার করে ঈমান এনেছি।

সুতরাং তারাই সঠিক উত্তর দিতে পারবেন,  যারাই  কুরআন পড়ে জেনে বুঝে ঈমান আনে এবং আমল করে। কবরের প্রশ্ন সংক্রান্ত সকল হাদিস বিশ্লেষণ করলে এটাই জানা যায় যে, আল্লাহ্‌র কিতাব কুরআন না জানা ছাড়া কখনোই কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারবে না।

অথচ উপমহাদেশের আলেম উলামারা কখনোই চার নাম্বার প্রশ্নটি আমাদের জানায়নি। কেননা উপমহাদেশের ইসলাম কখনোই কুরআন এবং হাদিস নির্ভর নয়। আমাদের ইসলাম এসেছে সুফিদের দ্বারা। সেইসাথে আমরা পূর্বপুরুষদের অনুসরণেই ইসলাম পালন করে থাকি।

শুধু তাইনয়, উপমহাদেশের আলেম উলামারা সাধারণ মুসলমানদের কুরআন পড়ে জানতে নিরুৎসাহিত করেন। তাদের দাবি সাধারণ মুসলমানরা কুরআন জেনেবুঝে পড়লে তারা গোমরাহ হয়ে যাবে। অথচ আল্লাহ্‌র রাসুল সাঃ বলছেন, সেই ব্যক্তিই কবরে সঠিক উত্তর দিতে পারবেন যিনি কুরআন জেনেবুঝে পড়েছে এবং ঈমান এনেছে। 

শুধু তাইনয়, আল্লাহ্ নিজেই অসংখ্যবার কুরআন পড়ার বুঝার এবং জানার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেন, “তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?” [সুরা মুহাম্মাদ ৪৭:২৪] একইসাথে আল্লাহ্ আরো বলেন,”আমি কোরআনকে বোঝার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?” [সুরা ক্বামার ৫৪:৩২]

যেখানে  আল্লাহ্ বলছেন, কেন তোমরা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করছো না! অথচ তিনি কুরআনকে বুঝার জন্য সহজ করে দিয়েছেন। সেখানে সুফিবাদী সুন্নীবাদী হুজুরেরা দাবি করছেন মানুষ কুরআন পড়লে তারা গোমরাহ হয়ে যাবে! কতবড় জোচ্চুরি! 

এথেকে বুঝা গেলো যে, আমাদের উপমহাদেশে প্রচলিত ইসলাম তথা পীর-মুরিদের সুফিবাদ কখনোই প্রকৃত ইসলাম নয়। প্রকৃত ইসলাম হচ্ছে সেটাই যেটা কুরআন এবং হাদিস দ্বারা স্বীকৃত। আজ আমাদের অজ্ঞতার কারণে ইসলাম সম্পর্কে আমরা ভুল পথে পরিচালিত হয়েছি শতশত বছর।

যেকারণে সুফিবাদ সুন্নীবাদের হুজুরেরা যুগযুগ ধরে আমাদের শুধু তিনটি প্রশ্নের উত্তরই বলে গেছেন। যা হবে কাফির, মুনাফিক, মুরতাদদের জন্য প্রযোজ্য। অথচ আমরা ঈমানদার হয়েই মরতে চাই। আর ঈমানদার হতে হলে অবশ্যই একমাত্র শর্ত হচ্ছে আল্লাহ্‌র কিতাব কুরআন পড়া,  জানা এবং বিশ্বাস করে আমল করা।

আসুন আমরা সঠিক ইসলাম জানার চেষ্টা করি। পূর্বপুরুষদের অনুসরণে ইসলাম নয়। ইসলামকে জানি কুরআন এবং সুন্নাহ দ্বারা। তাহলেই আল্লাহ্ আমাদের ক্ষমা এবং নাজাত দিবেন ইনশা-আল্লাহ্।

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম। 

আরো পড়ুন-


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

Author: সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী জন্ম চট্টগ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলেন। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখেছেন। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস। বর্তমানে বেসরকারি চাকুরিজীবী। তাঁর ভালোলাগে বই পড়তে এবং পরিবারকে সময় দিতে।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply