কোয়ান্টাম মেথড খুব আলোচিত একটি বিষয়। এ সম্পর্কে হয়তো অনেক লেকচার আপনারা শুনেছেন( অন্তত যারা এই মেথডের চর্চা করেন)। বাংলাদেশের এবং সারা পৃথিবীর অনেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকা এবং আরো বিভিন্ন অঙ্গনের তারকাদের দেখা যায় এটাকে প্রমোট করতে।
ইংরেজীতে যেটাকে বলে “Collective Consciousness”(সমন্বিত চেতনা) এবং এটির উপর নির্ভর করে নানা কিছু। এই লেখায় আমি কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে আপনাদেরকে সামান্য ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। আর কোয়ান্টাম মেথড, সমন্বিত চেতনা এগুলোর সাথে এর সম্পর্ক আবিষ্কারের চেষ্টা করবো।
যা যা থাকছে-
কোয়ান্টাম ফিজিক্স সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিচ্ছি
প্রেক্ষাপটঃ পদার্থবিজ্ঞানের খুব মজার এবং গোলমেলে একটা বিষয় হচ্ছে এই কোয়ান্টাম বলবিদ্যা। এর আগে পৃথিবীর মানুষ চিরায়ত বলবিদ্যার সাথে পরিচিত ছিল(মেকানিক্সের বাংলা প্রতিশব্দ বলবিদ্যা)। আর কোয়ান্টাম কি? সেটাও দেখতে পারেন।
চিরায়ত বলবিদ্যায় নিউটন সাহেবের জয় জয়কার। তাঁর লেখা সূত্র, তাঁর দেয়া ব্যাখ্যা এগুলো এখনো চর্চা চলছে। নিউটনীয় বলবিদ্যার সূত্রগুলো সব দৃশ্যমাণ বস্তুর ক্ষেত্রে এখনো প্রয়োগ করা যায়।
মহামতি আইনস্টাইন সাহেব এক সময় নিয়ে আসলেন তাঁর আপেক্ষিকতার তত্ত্ব। প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোন কিছুর বেগ, সময়, দৈর্ঘ্য ইত্যাদি অন্যরকম হয় সেটা দেখিয়ে দিলেন, এই বিষয়ে জটিল আলোচনা এখানে অপ্রাসঙ্গিক।
তিনি নিয়ে এসেছিলেন দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতার মতো আরেকটি মাত্রা সময়। আইনস্টাইন সাহেবের চতুর্মাত্রিক জগতের ভাবনায় ডুব দিয়ে গল্প লেখকেরা সময় ভ্রমণ, হাইপারডাইভ ইত্যাদি নিয়ে অনেক কল্পকাহিনী রচনা করেন। এগুলো বেশ উপভোগ্য তবে, বৈজ্ঞানিক সত্য নয়- সম্ভাবনা আছে সত্য হওয়ার।
আণবিক এবং সাব-আণবিক কণার বলবিদ্যাকে এককথায় কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলা হয়। বড় বস্তুর ক্ষেত্রে ঐ যে আগে বলেছিলাম, নিউটন সাহেবের বলবিদ্যার রাজত্ব চলছে। আইনস্টাইন সাহেবের আপেক্ষিকতা আসবে যখন একটির সাপেক্ষে আরেকটির গতি-প্রকৃতি বিবেচনা করব তখন। ছোট বস্তুকণার ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম ফিজিক্স প্রয়োগ করা যায়, অচেতন জড়বস্তুর ক্ষেত্রে।
ভারতীয় ধর্মে সমন্বিত চেতনা
বিভিন্ন ভারতীয় ধর্মে সমন্বিত চেতনার ধারণা বিভিন্ন রুপে দেখা যায়। চলুন আগে সেগুলো জেনে নেই-
জৈন ধর্মের সর্বেশ্বরবাদ
পৃথিবীর প্রধান এবং প্রাচীন ধর্মগুলোর একটি হচ্ছে জৈন ধর্ম। প্রতিটি ধর্মেরই যেমন আলাদা আলাদা দার্শনিক চিন্তাভাবনা আছে, এই ধর্মেও আছে। মনে করা হয়, পৃথিবীর প্রতিটি জৈব এবং অজৈব উপাদানই আলাদাভাবে সৃষ্ট বস্ত [^1] , এবং সবকিছু একসাথে এগুলোর স্রষ্টা। ধর্মে অবিশ্বসী অনেক ব্যক্তিও এই চিন্তাধারায় আকৃষ্ট হচ্ছেন। মহাবীর জৈন ধর্মের একজন তীর্থঙ্কর এবং ঈশ্বর।
বেদান্তের ধারণা
আমার ব্যর্থতা অনলাইনে পর্যাপ্ত তথ্য খুজে বের করতে পারি নাই। হিন্দু ধর্মের দর্শনের একটি ধারণা হচ্ছে আত্মা এবং পরমাত্মার ধারণা। মানুষের বা, জীবজগতের সবার আত্মা থাকে, এই আত্মা যখন পরমাত্মার সাথে যুক্ত হয় তাকে বলা হয় মোক্ষলাভ। স্বর্গলাভ আত্মার প্রধান উদ্দেশ্য নয়, মোক্ষলাভই চুড়ান্ত উদ্দেশ্য। হয়তো এটাই বেদান্তের ধারণা।
বৌদ্ধ দর্শনে সৃষ্টিজগত
জৈন দর্শনের মতো বৌদ্ধ দর্শনও অজ্ঞেয়বাদী দর্শন। এখানে মনে করা হয়, সব কিছু নিয়মের অধীন। অতীতের উপর নির্ভর করে বর্তমান ঘটে, বর্তমানের উপর নির্ভর করে ভবিষ্যত। বিশ্বজগতের কোন শুরু বা, শেষ নাই। প্রতি মুহুর্তে হাজারবার নতুন কিছু সৃষ্টি হচ্ছে এবং ধ্বংস হচ্ছে। বিভিন্ন নিয়মে[^2]: সব কিছু ঘটে- চিত্ত নিয়ম, ঋতু নিয়ম, ধর্ম নিয়ম, বীজ নিয়ম, কর্ম নিয়ম ইত্যাদি।
সমন্বিত চেতনার ধারণার সাথে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সম্পর্ক
যাই বলেন, কোয়ান্টাম মেথড, কোয়ান্টাম মেডিটেশন ইত্যাদি। কোয়ান্টাম শব্দে কারো আপত্তি থাকার কথা না, মেডিটেশনেও না। কিন্তু যারা এটার প্রচার এবং প্রসারের কাজ করেন, তারা প্রায়শই বলেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের[^3]: সাথে এর সম্পর্ক আছে। উপরে যে থিওরি গুলোর কথা বললাম এগুলোর উপর ভিত্তি করেই নাকি সমন্বিত চেতনার ধারণা এসেছে এবং সেটি বেদান্ত ও জৈন দর্শনে আগে থেকেই ছিলো।
একটি বিষয় খেয়াল করুন, কোয়ান্টাম মেকানিক্স কাজ করে অজৈব বস্তু নিয়ে, চেতন জগত নিয়ে না। চেতন জগত নিয়ে কাজ করার জন্য জীব বিজ্ঞান নামে বিজ্ঞানের একটি বড় শাখা আছে, এটির অন্তর্ভুক্ত শত শত শাখা আছে।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স যারা পড়েন বা, চর্চা করেন তাদেরকে হাজার হাজার সমীকরণ নিয়ে চর্চা করতে হয় যার কোনটাই বেদান্ত, জৈন দর্শন বা, ত্রিপিটকে নাই- স্রোডিঞ্জার সাহেবের সময় সাপেক্ষ সমীকরণ নাই, সময় নিরপেক্ষ সমীকরণ নাই, ψ(এটা সাই, গ্রীক বর্ণমালার ২৩ নম্বর অক্ষর) এর ভৌত তাৎপর্য নাই।
কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বস্তুকণার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, চেতন জগতের ধার পদার্থবিজ্ঞান ধারে না- অচেতন জগত নিয়ে কাজ করে।
কোন বিষয়ে তথ্যগত বা, ব্যাখ্যায় ভুল থাকলে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, মন্তব্য করে আমাকে শুধরে দিন।
আপনি চাইলে এই দর্শনগুলোর যেকোনটাতে আগ্রহী, অনুরক্ত কিংবা, বিশ্বাসী হতে পারেন। সেটা নিয়ে কোন সমস্যা নাই, সমস্যাটা হচ্ছে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে এগুলো মেলানোতে। মেডিটেশন বা, ধ্যানও খুব ভালো অনুশীলন- এটা যদি মনকে শান্ত করে, ঘৃণামুক্ত করে, আত্মবিশ্বাসী করে তাহলে করতেই পারেন। ভাইরে ভাই, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে এগুলো মিলিয়ে স্রোডিঞ্জার সাহেবকে অপমান কইরেন না।
স্পষ্ট করে বলি, আমি কোন ধর্মের বিরোধী নই, ধর্মপালনেরও বিরোধী নই, কারো দার্শনিক চিন্তারও বিরোধী নই। এখানে শুধু বিভিন্ন দার্শনিক চিন্তাধারার সমন্বয়ে গড়া দর্শন যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসরণ করে না, এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সও যে সমন্বিত চেতনা এবং ক্ষুদ্র চেতনার সাথে সম্প্রর্কিত নয় সেটা ধরি মাছ না ছুই পানি না করে বলতে চেয়েছি।
সোজা কথা– কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান কোনভাবে এই দর্শনগুলোর উপর নির্ভর করে বা, এগুলোকে ধীরে ধীরে সত্য প্রমাণ করছে এটা আমি বিশ্বাসও করি না। কেউ যদি সেটা বিশ্বাস করতে চান করতে পারেন, ভালো যুক্তি থাকলে কমেন্ট করে জানাতেও পারেন।
আরো পড়তে পারেন-
তথ্যসূত্রঃ
[^1]: Jainism and non-creationism [^2]: বৌদ্ধ ধর্মে সৃষ্টিকর্তা কে? [^3]: Quantum mechanics- Wikipediaআরো লেখা খুঁজুন