গণতন্ত্রের ইতিহাস

গণতন্ত্রের ইতিহাস ও প্রকৃতি

0

সংজ্ঞাঃ গণতন্ত্র এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে দেশের জনগণ প্রত্যক্ষ বা, পরোক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নেয়। রাষ্ট্রের জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস  হিসেবে বিবেচিত হয় এবং নির্দিষ্ট নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সার্বভৌম রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।

গ্রীক ও রোমানদের দেশে পৃথিবীর প্রথম গণতন্ত্রের সূচনা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তারা প্রথমে রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলে এবং পরে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। পরবর্তী ৩০০ বছরে এইসব প্রতিষ্ঠান সফলভাবে ইউরোপে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়।

পৃথিবীর দেশে দেশে নানারকম গণতন্ত্র প্রচলিত রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র এর সহাবস্থান রয়েছে। বিশ শতকের মধ্যভাগে সমাজতন্ত্রকে বলা হত গণতন্ত্রের উচ্চতর রূপ। 

গণতন্ত্রের ইতিহাস

গণতন্ত্রের-ইতিহাস

আধুনিক গণতন্ত্রে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি বা, প্রতিষ্ঠানগুলো এক প্রকার সামাজিক চুক্তিতে আবদ্ধ। এই রাষ্ট্রব্যবস্থায়, ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন,

Democracy is a government of the people, by the people and for the people

কেউ কটাক্ষ করে বলেন, এখনকার সংজ্ঞা হচ্ছে,

Democracy is a government off the people, buy the people and far form the people

 

ণৃতাত্ত্বিকদের মতে, প্রাচীকালে ছোট ছোট শিকারী দলগুলোর মাঝে স্বাভাবিকভাবেই গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হয়েছিল। এটিকে তারা আদিম গণতন্ত্র বলে অভিহিত করেন। এখনও বিভিন্ন ক্ষুদ্র ণৃ-গোষ্ঠীর মাঝে দলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সবার মত প্রকাশের প্রচলন দেখা যায়। 

গ্রামীণ জনগোষ্ঠীগুলোতে সিদ্দান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রবীণদের সমর্থন যাচাই করা হয়। গোষ্ঠীবদ্ধভাবে তারা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নেন। রাজতন্ত্র, স্বৈরাচারতন্ত্র ও গোষ্ঠীশাসনতন্ত্রের বিকাশ ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল ও শহুরে কেন্দ্রগুলিতে দেখা যায়। 

গ্রীসের রাজধানী এথেন্সে, খ্রিস্টপূর্ব ৪০৮ অব্দে সংবিধান ও গণতন্ত্রের ধারণা বিকশিত হয়েছিল।  গ্রীসের প্রাচীন নগর রাজ্যগুলোতে বিভিন্ন রকম সরকারব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। সেখানে গণতন্ত্র, অভজাততন্ত্র এবং রাজতন্ত্র সবই ছিল। 

এথেন্সকে মনে করা হয় গণতন্ত্রের জন্মস্থান। এরিস্টটল, প্লেটো, ম্যাকিয়াভেলি এর মত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা গ্রিক গণতন্ত্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। গ্রীসের প্রাচীন শহর স্পার্টার অধিবাসীরা তাদের রাজাদের কাজের সমালোচনা করতে এমনকি ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতেন। 

ভারতীয় উপমহাদেশে, বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে ভারতীয় উপমহাদেশে তৃতীয় থেকে চতুর্থ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে গণতন্ত্র ছিল। প্রাচীন পুস্তক অর্থশাস্ত্রে রাজাদের নিয়ন্ত্রনে প্রজাতন্ত্রের ভূমিকা নিয়ে লেখা আছে যা  আসলে আধুনিক গণতন্ত্রেরই নামান্তর। 

মেসোপটেমিয়ায়, ইতিহাসবিদ জ্যাকবসন গিলগামেশের মহাকাব্য ও অন্যান্য প্রাচীন মহাকাব্য ও পুরাকথা পড়ে আদিম গণতন্ত্রের সন্ধান পেয়েছেন। সেখানে মুক্ত পুরুষদের(কৃতদাস নয় এমন) রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নেয়ার সুযোগ ছিল। এটিকে অনেকেই গণতন্ত্র বলতে নারাজ কারণ সেখানে শুধু অস্ত্রধারী অভিজাতদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ ছিল।

গণতন্ত্রের প্রকারভেদ

পৃথিবীর সব দেশের গণতন্ত্র এক রকম নয়। বাংলাদেশের যেমন সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করে, সব দেশে তেমনটা নয়। আমেরিকার নির্বাচন পদ্ধতি আমাদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। সেখানে সরাসরি জনগণ ভোট দিলেই প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় না, রয়েছে জটিল পদ্ধতি। গণতন্ত্রে সরকার প্রধানমন্ত্রী শাসিত হতে পারেন, আবার রাষ্ট্রপতি শাসিতও হতে পারে। চলুন ১০ রকম গণতন্ত্র সম্পর্কে জানি-

  • সংসদীয় গণতন্ত্র
  • প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র
  • প্রতিনিধিত্বমূলক
  • আংশিক গণতন্ত্র
  • অংশগ্রহণমূলক
  • সামাজিক গণতন্ত্র
  • ধর্মীয় গণতন্ত্র
  • কতৃত্ববাদি
  • রাষ্ট্রপতিকেন্দ্রীক
  • সাংবিধানিক গণতন্ত্র

এটিকে অনেকে আবার অন্যভাবেই ভাগ করতে পারে। তবে, যেভাবেই ভাগ করা হোক না কেন, বর্তমান সময়ে এটিই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা। যদিও এরিস্টটল বলেছেন-

In a democracy the poor will have more power than the rich, because there are more of them, and the will of the majority is supreme. &
It is also in the interests of a tyrant to keep his people poor, so that they may not be able to afford the cost of protecting themselves by arms and be so occupied with their daily tasks that they have no time for rebellion.

অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের প্রবক্তা কে?

মার্কিন ছাত্র আন্দোলন স্টুডেন্টস ফর আ ডেমোক্র্যাটিক সোসাইটি সাধারণ জনগণের কাছে অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের ধারণাটি প্রথমবারের মত উপস্থাপন করে ১৯৬২ সালে।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র

বাংলাদেশের গণতন্ত্র

বাংলাদেশ নামের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রটির জন্ম হয় ১৯৭১ সালে। এরপর নানা রকম ক্ষমতার পট পরিবর্তন এবং গণতন্ত্রের নানারকম রূপ আমরা দেখেছি। বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে খুন হয়েছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান খুন হয়েছেন, হোসেইন মোহাম্মর এরশাদ ক্ষমতায় এসেছেন, খালেদা জিয়া আর, শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্ব বাংলাদেশের মানুষেরা দেখেছে। 

এইসব পট পরিবর্তন নিয়ে আছে অনেক রকম মত, এবং অনেক রকম বিশ্লেষণ। আমরা সেইসব বিতর্কিত আলোচনায় গিয়ে মানুষের তালি বা, গালি খেতে চাই না। প্রথম থেকে একাদশ নির্বাচনের সার সংক্ষেপ তুলে ধরছি। যাদের ইতিহাস জানার ইচ্ছা আছে তাদের উচিত হবে-

  • ঘটনার সাথে জড়িতদের সাক্ষাৎকার ইউটিউবে, টেলিভিশনে দেখা
  • তাদের লেখা বই পড়া
  • সর্বজনসম্মত সত্যকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করা

এই তিনটি কাজ করলেই আপনারা সত্যের সন্ধান পাবেন।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন

চলুন এক নজরে গণতান্ত্রিক(ভিন্নমত থাকবে এটা মেনে নিয়েই) বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলো দেখে নেই-

প্রথম নির্বাচন, ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ ৩০০ টি আসনের মধ্যে ২৯৩ টি আসনে জয় লাভ করে। ৫৪.৯% ভোট গৃহীত হয়েছিল। 

দ্বিতীয় নির্বাচন, ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি জয়লাভ করে। তারা ৩০০ টি আসনের মাঝে ২০৭ টি আসন লাভ করেছিল। ৫১.৩% ভোট গৃহীত হয়েছিল যেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিল আওয়ামী লীগ(মালেক)।

তৃতীয় নির্বাচন, তৃতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে জাতীয় পার্টি। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ৩০০ টি আসনের মাঝে ১৫৩ টি আসন(বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে)। ৬১.১% ভোট গৃহীত হয়েছিল। 

চতুর্থ নির্বাচন, ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই বর্জন করে। জাতীয় পার্টি অনেকটাই ফাকা মাঠে গোল দেয়। ৩০০ টি আসনের মাঝে ২৫২টি আসন জাতীয় পার্টি পায়। ৫২.৫% ভোট গৃহীত হয়েছিল। 

পঞ্চম নির্বাচন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দী ছিল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার প্রতিদ্বন্দিতার শুরু তখন থেকেই। ৩০০ টি আসনের মাঝে ১৪২ টি আসন লাভ করে বিজয়ী হয় বিএনপি। ৫৪.৪% ভোট গৃহীত হয়েছিল।

ষষ্ঠ নির্বাচন, এই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এই নির্বাচন বিএনপি ছাড়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই বর্জন করেছিল। তারা ৩০০ তে ৩০০ আসনেই জয়লাভ করে। ২১% ভোট গৃহীত হয়েছিল। এই সরকারের মেয়াদই ছিল সবচেয়ে কম সময়ের। 

সপ্তম নির্বাচন, ১৯৯৬ সালের জুন মাসে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মাঝে ১৪৬ টি আসন লাভ করে(বিএনপি ১১৬, জাতীয় পার্টি ৩২)। ৮১ টি দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীও অংশ নিয়েছিল। 

অষ্টম নির্বাচন, ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত হয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বিতীয় নির্বাচন। ৩০০ টি আসনের মাঝে ১৯৩ টি আসন লাভ করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি। ৭৪.৯% ভোট গৃহীৎ হয়। 

নবম নির্বাচন, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন ফখরুদ্দিন আহমদ। এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিল অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থা। ৩০০ টি আসনের মাঝে ১৬৭ টি আসন লাভ করে জয়ী হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। 

দশম নির্বাচন, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন অনেকগুলো রাজনৈতিক দল বর্জন করে। ১৭ টি দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী হয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে যা অনাকাঙ্খিত ছিল। 

একাদশ নির্বাচন, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ৩৯টি দল অংশগ্রহণ করে। মহাজোট এবং ঐক্যফ্রন্টের প্রতিদ্বন্দিতায় ২৫৭টি আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। কয়েকটি দেশ এবং সংগঠনের পর্যবেক্ষকেরা এই নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে মত প্রকাশ করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এটি সুষ্ঠু হয় নি এমন মন্তব্য করে। এর প্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেছিলেন, এই রিপোর্ট একপেশে ও অগ্রহণযোগ্য। 

বাংলাদেশের সংবিধানের চারটি মূলনীতির একটি হচ্ছে গণতন্ত্র, বাকি তিনটি হচ্ছে- সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। এগুলো অপরিবর্তনীয়। 

উপন্যাস ও গীতিকবিতার সাথে সম্পর্ক

গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সরাসরি উপন্যাস, গীতিকবিতা বা, অন্য কোন সাহিত্যের সাথে এর যোগসূত্র খুজে না পাওয়া গেলেও পরোক্ষ যোগাযোগ একেবারে স্পষ্ট। রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক উপন্যাসের নাম ঘরে-বাইরে, সেখানে তিনি স্বদেশী আন্দোলনের খারাপ দিকের সমালোচনাও করেছেন। 

বর্তমান সময়ের গাল্লি বয় গানেও পাবেন– 

মারিও বার্গাস য়োসা, পেরুর একজন সাহিত্যিক হয়েও লড়েছিলেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। প্রচুর বাংলা কবিতা পাই যেখানে রাজনৈতিক আদর্শের কথা ফুটে ওঠে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কেন্দ্রীক লেখাগুলোতে, স্বৈরাচার বিরোধী কবিতায় কোথায় নেই রাজনীতি। নির্মলেন্দু গুণের ‘হুলিয়া’ বা, আসাদ চৌধুরীর ‘বারবারা বিডলারকে’ কি রাজনৈতিক কবিতা নয়। 

কিংবা, রফিক আজাদের সেই কবিতা- ভাত দে হারামজাদা। বাংলা গানেও গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকারের মতো বিষয়গুলো উঠে আসে। গণতন্ত্র শুধু লোক দেখানো ভোটাধিকার নয়, ভোটাধিকারের পেছনের কারণ হিসেবে মানুষের আরো অনেক অধিকারের নিশ্চয়তাও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অচ্ছেদ্য অংশ। সবটাই একসাথে চলে, আলাদাভাবে নয়।

গণতন্ত্র ও ইসলাম

ইসলাম ধর্ম

এটা নিয়ে অনেক রকম বিতর্ক আছে। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী গণতন্ত্র মেনে নেয়া উচিত নাকি, একনায়কতন্ত্র। ধর্ম রাষ্ট্র থেকে আলাদাভাবে পালিত হবে কি না? তাহলে ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা কিভাবে হলো। 

মূলকথা হচ্ছে, কুরআন এবং হাদিস(মত পার্থক্য তো আছেই সেটি সহ) অনুযায়ী নিজের জীবন এবং মুসলিম কমিউনিটির জীবন পরিচালনার জন্য কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা ভালো। 

যদি মুসলিমদের একজন নেতা থাকে(যিনি ইসলাম সম্পর্কে খুব ভালো জানেন) এবং তার কথা অনুযায়ী (মুসলিমরা যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং ইসলামিক রাষ্ট্র চায় সেখানে) রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, তাহলে কি সেটি সেরা ব্যবস্থা হবে? ঐ ব্যক্তিটি জ্ঞানী কিন্তু অসৎ হতে পারেন। আমরা তার মনের খবর জানি না, ইসলাম জানা ব্যক্তি যে ইসলামিক পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন এমন কোন কথা নেই। ড. শাবির আলির বক্তব্য শুনুন-

গণতন্ত্রে, মত প্রকাশের সুযোগ থাকে। সাধারণ মুসলিমরাও তাদের কাছে ঠিক মনে হয় এমন ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারে। সেই রাষ্ট্রটিও ইসলামিক আদর্শে চালিত হতে পারে। একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চেয়ে হয়তো সেটিই ভালো। আবার, যেখানে মুসলিমরা সংখ্যালঘু সেখানেও তাদের মত প্রকাশের অধিকার আছে। বাজে একনায়কের উদাহরণ আছে যারা ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। 

ইসলামবিরোধী কোন আইন তৈরি করে মুসলিমদের ইসলামের দৃষ্টিতে অন্যায় কিছু করানোটা সেসব দেশেও সাধারণত সম্ভব হয় না যদি গণতন্ত্রের চর্চা থাকে। গণতন্ত্রের অর্থ এই না যে, যার যা ইচ্ছা নিয়ম তৈরি করে ফেলবে। সুন্নী এবং শিয়া মুসলিমদের ভিন্ন ভিন্ন গণতন্ত্রের ধারণা রয়েছে। 

মৌলিক গণতন্ত্র

মৌলিক গণতন্ত্র

১৯৫৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান মৌলিক গণতন্ত্রের অধ্যাদেশ জারি করেন। তার ভাষায় এটি ছিল- গণতন্ত্রকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দেয়ার একটি পদ্ধতি। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো এটিকে স্বার্থ রক্ষার গণতন্ত্র হিসেবে দেখতো। 

ইউনিয়ন পরিষদ, থানা পরিষদ, জেলা পরিষদ এবং বিভাগীয় পরিষদ গঠিত হতো নির্বাচিত এবং অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। আইয়ুব খানকে সকল কাজের বৈধতা দেয়ার উদ্দেশ্যেই এর সৃষ্টি হয়েছিল বলে বেশীরভাগ মানুষ মনে করতো। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান এবং এই কাঠামোর পতন ঘটে। আইয়ুব খান এবং মৌলিক গণতন্ত্র নিয়ে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন-

 

পাঠকদের প্রশ্নের উত্তর:

ভারতে কি ধরনের গণতন্ত্র প্রচলিত আছে?

ভারত একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি, তখন একটি নতুন সংবিধান প্রবর্তিত হয়। এই সংবিধান অনুসারে ভারতে একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। বর্তমান সময়ে ভারতীয় অনেক রাজনীতিবিদেরা ভারতের গণতন্ত্রকে স্বৈরতন্ত্রের সাথেও তুলনা করেন। কেউ কেউ এই রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ভারতে প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লোকসভা এবং রাজ্যসভা নামে এই রাষ্ট্রে  দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ রয়েছে। 

গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র কি?

গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র হচ্ছে- সাম্য, স্বাধীনতা ও ভ্রাতৃত্ব

গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভ কি কি?

গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ তিনটি- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ। সংবাদমাধ্যমকে চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া এবং ব্লগকে বর্তমান সময়ে পঞ্চম স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

গণতন্ত্রের সুফল ও কুফল কি কি?

এই ব্যাপারে নানা মুনি নানা মত দিয়েছেন। আমাদের সাদা চোখে যেটা মনে হয়- গণতন্ত্রে জনপ্রিয় মতের কেউ সবসময় রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসে। কিন্তু, সর্বমহলে তুলনামূলক জনপ্রিয় কেউ অযোগ্য হতেই পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প, নরেন্দ্র মোদি এদের মতো রাষ্ট্রপ্রধানদের অনেকে পপুলিজম বা, জনপ্রিয়তাবাদের ফসল হিসেবে অনেকে দেখেন(হতে পারে তারা যোগ্য, সেক্ষেত্রে আপনার পছন্দের মন্দ উদাহরণ ভেবে নিন)। এটা গণতন্ত্রের কুফল। যদি কোন রাষ্ট্রে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকে, তাহলে জনগণের প্রতি জনগণের নেতা নেতৃদের দায়বদ্ধতা থাকে, সেটা গণতন্ত্রের সুফল।  

 

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, ডেইলি স্টার পত্রিকা, নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি। 

 

আরো পড়ুন-


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

প্রবন্ধ লেখক

Author: প্রবন্ধ লেখক

বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করছি

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কনফেডারেশনঃ বিভক্ত মার্কিনীরা

কনফেডারেশনঃ বিভক্ত মার্কিনীরা

কনফেডারেশন শব্দটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারও কাছে স্বর্গের মত আবার কারও কাছে নরকের চেয়েও খারাপ। এখন কথা হচ্ছে, কেন আমি কনফেডারেশন

জাতীয় চার নেতা

সৈয়দ  নজরুল ইসলাম জাতীয় চার নেতার মধ্যে সর্বপ্রথম রয়েছে সৈয়দ  নজরুল ইসলাম  ছিলেন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা

বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন (১৯১১-১৯৩০)সালের ঘটনা

স্বদেশী আন্দোলনের ব্যর্থতা বাংলার স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমী যুব সমাজকে সশস্ত্র বিপ্লবের পথে ঠেলে দেয়।সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করার যে গোপন

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি

মানুষের ব্যক্তিত্বের, নেতৃত্বের এবং নাগরিককে আকৃষ্ট করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার বিশুদ্ধ ভাষা ও সুপষ্ট উচ্চারণ। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের (১৯৭১)

One Reply to “গণতন্ত্রের ইতিহাস ও প্রকৃতি”

Leave a Reply