গল্প ঝগড়াটে বউ আফছানা খানম অথৈ

0

ঝগড়াটে বউ

আফছানা খানম অথৈ

জাবেদের ছোট ভাই সিফাত মাকে নিয়ে এসেছে।মায়ের কান্সার ভালো চিকিৎসার দরকার।তাই জাবেদের বাসায় এসেছে।কলিংবেল টিপতেই দরজা খোলে দিলো জাবেদের স্ত্রী সাহারা।
সে কী! শ্বাশুড়িকে দেখে চোখ কপালে উঠে গেল।বিরক্তিস্বরে বলল,
মা আপনি?
হ্যাঁ বউ মা আমি।
কেনো এসেছেন?
জাবেদ কোথায়?
যা বলার আমাকে বলুন।
বউ মা আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছে।ভালো চিকিৎসার দরকার।তাই…।
তাই জাবেদকে খুঁজছেন এই তো?
ঠিক বলেছ বউ মা।
মা কান খুলে শুনে রাখুন।আমরা আপনার কোন চিকিৎসা করাতে পারব না।আপনি চলে যান।
বউ মা এত রাতে কোথায় যাব?
কেনো আপনার মেঝো ছেলের বাসায় যান।সেও তো শহরে থাকে।শুধু শুধু আমরা দেখব কেনো?
দরজার সামনে উচ্চস্বরে কথা কাটাকাটির শব্দ শুনে ভিতর থেকে এগিয়ে আসল জাবেদ।মাকে দেখে বলল,
মা তুমি কখন এলে?
এইতো কিছুক্ষণ।
ভিতরে এসো মা।
ছেলে মাকে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে।তখনি বউ বলল,
মাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?
কেনো ভিতরে।
তোমার মা এ বাড়িতে থাকতে পারবে না।
কেনো সমস্যা কোথায়?

অনেক সমস্যা,উনার ক্যান্সার, চিকিৎসাতে অনেক টাকা লাগবে।এত টাকা কে দেবে?
কে দেবে মানে,আমি দেব।
না তুমি কোন টাকা দিতে পারবে না।তাড়াছা তোমার মা এ বাসায় থাকতে পারবে না।
আমার মা এ বাসায় থাকবে, না কোথায় থাকবে, সেটা আমি দেখব।সিফাত মাকে নিয়ে ভিতরে আয়।
সিফাত মাকে নিয়ে ভিতরে গেল।তখনি শুরু হলো ঝগড়া।তর্কবিতর্ক চরম পর্যায়ে পৌছে গেল।জাবেদের বউয়ের এক কথা,তার মা কিছুতেই এ বাড়িতে থাকতে পারবে না।যদি তার মা এ বাড়িতে থাকে জাবেদকে ছেড়ে সে চলে যাবে।এই সেরেছে বউ চলে যাবে বলাতে জাবেদ স্টপ হয়ে গেল।এমন রুপসী বউ চলে গেলে কোথায় পাবে।তাই আর বাড়াবাড়ি করলো না।মাকে আলাদা বাসা ভাড়া করে সেখানে রাখল।
আজকালকার মেয়েগুলো কেমন জানি হয়ে গেছে।শ্বশুর -শ্বাশুড়িকে দুচোখে দেখতে পারে না।আপদ মনে করে।ছেলেগুলো ও বউয়ের সুরে চলে।মা-বাবার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করে না।
মায়ের চিকিৎসার জন্য আনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এত টাকা কে দেবে?অন্য ছেলেদের তেমন একটা আয় নেই।তারা লেবার মাত্র।শুধু জাবেদ শিক্ষিত বড় চাকরী করে।অনেক টাকা মাইনে পায়।সে মায়ের চিকিৎসার টাকা দিতে পারবে।কিন্তু ভয় একটা বউ শুনলে কেলেংকারী বাঁধাবে।

পরদিন জাবেদ মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল।ডাক্তার একগাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলেন।পরীক্ষা শেষে জানালেন,সত্যি মায়ের মুখের ভিতরে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে।ক্যান্সারের পুরোপুরি চিকিৎসা এখনো আবিস্কার হয়নি।তবে সাময়িক কিছু চিকিৎসা মানে থেরাপি তৈরী হয়েছে।সাময়িক সুস্থতার জন্য এই থেরাপি দেয়া হয়।প্রতি থেরাপি পঞ্চাশ হাজার টাকা,পাঁচটা দিতে হবে।জাবেদ কোনমতে দুতিনটা দিলো।এরপর শুরু হলো তার বউয়ের সাথে ঝগড়া।বউয়ের এক কথা,পাঁচ ভাই মিলে টাকা দিতে হবে তুমি একা দেবে কেনো?মা কি তোমার একার?বউয়ের কানপড়া শুনতে শুনতে এক সময় জাবেদ ও ভাবে,আমার বউ তো ঠিক বলেছে,মায়ের চিকিৎসার টাকা আমি একলা দেব কেনো?মায়ের দায়িত্ব কি আমার একার? সবাই তো একই মায়ের সন্তান। না না আমি আর টাকা দিতে পারব না।এক সময় মায়ের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়।তাছাড়া বাসায় মা একা পড়ে থাকে সেবাযত্ন করার কেউ নেই।জাবেদের বউর এককথা সে এই বুড়ীর সেবাযত্ন করতে পারবে না।এভাবে আর কতদিন।একসময় মায়ের রোগ ভারী হয়ে যায়।জাবেদ মাকে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
এদিকে জাবেদের বউ শ্বাশুড়ি চলে গেছে শুনে খুশিতে গদগদ।খুশিতে লাফালাফি করছে।মাকে ফোন করে বলে,
মা একটা খুশির খবর আছে।
বল মা কী খুশির খবর?
আমার শ্বাশুড়িকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
সত্যি বলছিস?
জ্বি মা সত্যি।যাক এতদিনে আপদ বিদায় হয়েছে।মা তুমি আস বেড়াতে।
হুম আসব।

বলতে না বলতে জাবেদের শ্বাশুড়ি চলে আসল।মা-মেয়ের সে কী খাতির।জমিয়ে আড্ডা মারছে।আর ভালো ভালো খাচ্ছে। জাবেদের স্ত্রী একটু ও বিরক্ত হচ্ছে না।মায়ের জন্য রান্না করতে।বরং খুশি হয়ে রান্না করছে।অথচ শ্বাশুড়িকে রান্না করে খাওয়াতো দূরের কথা,দুচোখেও দেখতে পারতো না।মেয়েদের এই একটা দোষ,শ্বামীর মাকে পর ভাবে,নিজের মাকে আপন ভাবে।শ্বামীর মা আসলে বিভিন্ন তাল বাহানা করে,ভালো খেতে দেয় না,পরতে দেয় না।আর নিজের মা আসলে খাতির করে,ভালো খেতে দেয়, দামিদামি শাড়ি গহনা কিনে দেয়।যদি মেয়েরা স্বামীর মাকে নিজের মায়ের মতো আপন ভাব তো,সমান চোখে দেখত তাহলে আর কোন নারী নির্যাতিত হতো না।আর কোন মাকে অনাদর অবহেলায় থাকতে হতো না।না খেয়ে মরতে হতো না।বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হতো না।
কিছুদিন পর গ্রাম থেকে ফোন করেছে মায়ের অবস্থা ভালো না।কথাবার্তা বন্ধ হয়ে গেছে।কিছু খেতে পারছে না।কোন সাড়াশব্দ নেই।যে কোন সময় মারা যেতে পারে।তাই সকল ছেলে-মেয়েকে খবর দেয়া হয়েছে আসার জন্য।জাবেদ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে।মাকে শেষবারের মতো দেখতে আসবে।কিন্তু বউ বলল,
এখন না গেলে হয় না।
তুমি কী বলতে চায়?
এখন গেলে,পরে আবার যেতে পারবে তো?
মানে…।
মানে মা এখনো মরেনি,বস বারবার ছুটি দিবে নাকি?
সেটা তো ভেবে দেখেনি।
বউয়ের কানপড়া আমলে নিলো জাবেদ।মাকে দেখতে সত্যি আসল না।মাঝে সপ্তাহ খানেক কেটে গেল।মা এবার মারা গেলো।খবর পেয়ে জাবেদ তার বউকে নিয়ে আসল।সবাই মিলে মায়ের কাপন দাফন শেষ করলো।তিনদিন পর মায়ের জন্য ছোট একটা মেজবানির খাওয়ার আয়োজন করলো।তা শেষ করে জাবেদ তার বউকে নিয়ে গন্তব্যস্থানে ফিরে গেল।

জাবেদের স্ত্রী এখন খুশি শ্বাশুড়ি মারা গেছে।আর তার শ্বামীকে মায়ের বোঝা বহন করতে হবে না।মায়ের জন্য যে টাকা খরচ করা হতো তা জমা করতে পারবে। ইচ্ছেমতো খেতে পরতে পারবে।আর কাউকে ভাগ দিতে হবে না।খুশিতে সে গদগদ।কিন্তু আল্লাহ সহ্য করলে তো?
কিছুদিন যাবার পর একদিন জাবেদের স্ত্রী স্ট্রোক করে।তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সে কী! কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করলো।জাবেদের একমাত্র পাঁচ বছরের মেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো।
আল্লাহ ছাড় দেন,কিন্তু ছেড়ে দেন না।সাহারা একা সবকিছু ভোগ করতে চেয়েছিল।কিন্তু পারল তো?
মানুষের বিচার অন্যায় হতে পারে,কিন্তু আল্লাহর বিচার ন্যায়।যারা পিতা-মাতা গুরুজনদের প্রতি জুলুম করে, অন্যায় করে,আল্লাহ তাদেরকে এই দুনিয়াতে সাজা দিয়ে তবে মৃত্যু দেন।দশটা পাপের সাজা আল্লাহপাক এই দুনিয়াতে দিয়ে তবে মৃত্যু দেবেন,এর ব্যতিরেকে নয়..।
তার মধ্যে প্রথম সাজা হলো পিতা-মাতা, গুরুজনদের কষ্ট দেয়া।আজ জাবেদ ও তার স্ত্রী এই পাপের অংশীদার।
আগে ছিল একান্নবর্তী পরিবার। খুব সুন্দর ছিলো।সবাই মিলেমিশে থাকত।আর এখন বিয়ে হতে না হতে সেপারেট। কারো সাথে কারো মিল নেই।হিংসা আর হিংসা। কেউ কাউকে দুচোখে দেখতে পারে না।পান থেকে চুন খসলে ঝগড়া আর ঝগড়া।সুখ শান্তি যেন বিলীন হয়ে গেছে।আজ জাবেদের স্ত্রী একা সবকিছু ভোগ করতে চেয়েছিল।কিন্তু পারলো না।আল্লাহ তাকে নিয়ে গেল।এইজন্য সবার উচিৎ “ঝগড়াটে বউয়ের” মতো ঝগড়া না করে পরিবারের সবার সাথে মিলেমিশে থাকা।তবে পরিবারগুলো সুখ শান্তিতে ভরে উঠবে,এর ব্যতিরেকে নয়।

ঃ সমাপ্তঃ


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

উদঘাটন

উদঘাটন      ❝সেদিনের পর থেকে আজও চিন্তিত থাকে সুকান্ত। সে কোনোদিনও সেই স্মৃতি ভুলতে পারবেনা❞ রহস্য আর রহস্যময় মানুষ

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

Leave a Reply