গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

0

গল্প
মেয়েরা ও মানুষ
আফছানা খানম অথৈ

রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর জন্য লন্ডন চলে যায়।আর এই সুযোগে শ্বাশুড়ি বউকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে।রাহুল আর রানু ভালোবেসে বিয়ে করেছে।ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় দুজনের পরিচয়,তারপর বিয়ে।শ্বাশুড়ি এই বিয়ে মেনে নেয়নি।কারণ রানুর বাবা একজন রিক্সা চালক।এই নিয়ে রীতিমতো বউ শ্বাশুড়ির মাঝে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে।

রাহুল বিদায় নেয়ার মুহূর্ত রানু করুন কন্ঠে বলল,
ওগো আমার খুব ভয় করছে?
কেনো?
তুমি বিদেশ গিয়ে আমাকে ভুলে যাবে নাতো?
না কখনোই না।
সত্যি বলছতো?
হুম সত্যি বলছি।
দেখো আমাকে ভুলে যেওনা।আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।
আমি ও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।লক্ষিটি যাবার বেলায় মন খারাপ করতে নেই।একটু হাসি মুখে বিদায় দাও।
রাহুল দোয়া করি আল্লাহ তোমাকে ভালো রাখুক,সুস্থ রাখুক।
আল্লাহ তোমার প্রার্থনা কবুল করুক আমিন।।
দুজন দুজনকে হাসি মুখে বিদায় নিলো।রাহুল যাবার বেলায়,মাকে বলে গেলো,রানুর যেন ঠিকমতো টেককেয়ার করে।কিন্তু মা কি করলো,উল্টো রিয়েকশন শুরু…।

রানুর সাথে রীতিমতো কাজের মেয়ের মতো ব্যবহার করছে।কথায় কথায় ছোট জাত বলে খোটা দিচ্ছে।শুধু কি তাই, তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছি।রানু কিন্তু এসবের কিছুই তার স্বামীকে বলছে না।কারণ রাহুল শুনলে কস্ট পাবে।চলে আসতে চাইবে।শেষে সবাই তাকে দোষী করবে।সে স্বাভাবিকভাবে রাহুলের সাথে ফোনালাপন করে,খোশগল্প করে।
কিন্তু শ্বাশুড়ি নাছোড়বান্দা,সে রানুকে তাড়াবেই।অনেকবার তাড়ানোর চেষ্টা করে, কিন্তু প্রতিবার ব্যর্থ হয়।একদিন গভীররাতে শ্বাশুড়ি তার ঘরে যাই।অবশ্য সে একা নয়,সঙ্গে আছে তার বোন আর ভাই।রানু ঘুমাচ্ছে, এমন সময়,তাকে চেপে ধরে জোরপূর্বক বিষ খাওয়াতে চাচ্ছে।রানু বহু কস্টে তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়।তারপর ছুটে যায় বাবা-মায়ের কাছে।

এদিকে রাহুল রানুর ফোন বন্ধ দেখে মায়ের কাছে ফোন করে।রানুর কথা জানতেই চাইলে,মা ইনিয়েবিনিয়ে রাহুলকে কানপড়া দেয়।ভুল বুঝায়,রানু অন্যজনের হাত ধরে পালিয়ে যাই।রাহুল প্রথমে বিশ্বাস না করলেও শেষে ঠিকই বিশ্বাস করলো।কারণ রানুর ফোনবন্ধ। কোন রকমে যোগাযোগ করতে পারছে না।সে খুব টেনশনফিল করছে।তাছাড়া সে রানুকে খুব ভালোবাসে।তার ভালোবাসার মানুষ এতটা বদলে যাবে।সে ভাবতে পারছে না।

এদিকে রানু কিন্তু থেমে নেই,পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে।একসময় সে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে।তারপর বিসি এস পরীক্ষার মাধ্যমে সচিব পদে চাকরী পায়।মাস শেষে মোটা এমাউন্টের মাইনে পাচ্ছে।রিক্সাচালক বাবার চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।খুব ভালো কাটছে তাদের দিনকাল।

এদিকে রাহুল উচ্চতর ডিগ্রীলাভ করে দেশে ফিরে আসে।বাবার ব্যবসা দেখাশুনা করছে।কিন্তু মনের মধ্যে কেনো জানি শুন্যতা হাহাকার করছে।রানুর কথা মাঝে মাঝে ভাবছে।তাকে এত ভালোবাসলো তবুও সে কেনো চলে গেলো?একপ্রকার মানসিক ডিপ্রেশনে ভুগছে। রাহুলের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মা আবার তাকে বিয়ে করাতে চাই।রাহুল তাতে সাঁয় দেয়।কিন্তু সে কী,একদিন মাঝরাতে তাদের ফ্যাক্টিরিতে
আগুন ধরে যায়।মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু শেষ হয়ে যায়।কোটিপতি রাহুল হয়ে যায় রাস্তার ফকির।বাড়ি গাড়ি সবশেষ।একটা বস্তিতে মা-বাবাকে নিয়ে উঠল। এই মুহূর্তে রাহুলের একটা চাকরীর খুব প্রয়োজন।সে হন্যে হয়ে চাকরী খোঁজে।ভাগ্যচক্রে তার ইন্টারভিউর ডাক আসে রানুর অফিসে।রাহুল অনুমতি নিয়ে ভিতরে ঢুকল,কিন্তু সে কী,তার বস অন্য কেউ না,তার স্ত্রী রানু।তাকে দেখে চমকে উঠে রাহুল বলল,
রানু তুমি?
হুম আমি।তবে রানু নয় বলুন ম্যাডাম।
না মানে রানু,ম্যাডাম আপনি এখানে?
তার আগে বলুন আপনার মতো উচ্চতর ডিগ্রী নেয়া একজন বড় বিসনেসম্যান চাকরীর জন্য এখানে এসেছেন কেনো?
আসলে সত্য কথা বলতে কি,আমাদের সবশেষ হয়ে গিয়েছে।
কিভাবে শেষ হলো?
আমাদের ফ্যাক্টিরিতে আগুন লেগেছে।
আল্লাহ বিচার করেছেন,আপনার মা আমার সংসারে আগুন দিয়েছে।আপনার মায়ের সংসারে আল্লাহ আগুন দিয়েছেন।
তোমার সংসারে আগুন দিয়েছে মানে,মাতো বলেছে তুমি অন্য একজনের হাত ধরে পালিয়ে…।
আর তুমি তাই বিশ্বাস করলে?
মা এমনভাবে বলেছে না বিশ্বাস করে পারলাম না।
আসলে সত্যটা কি আমাকে একটু বলো?
বলছি শুনু…।
রানু কোনকিছু গোপন না করে সব সত্য প্রকাশ করলো।সবকথা শুনার পর রাহুল নম্রস্বরে বলল,
রানু সরি,এক্সট্রেমলি সরি।আসলে আমি এসবের কিছুই জানতাম না।আমায় ক্ষমা করে দাও।
রানু ক্ষেপে উঠে বলল,
তোমাদের মতো মানুষদেরকে ক্ষমা করা যায় না।কি ভেবেছ মেয়েরা মানুষ না,না?শুধু তোমরাই মানুষ?তোমরাই সবকিছু পার।মেয়েরা পারে না?মনে রেখো “মেয়েরাও মানুষ”।চাকরী,ঘর সংসার সব পারে…।মেয়েদেরকে কখনো ছোট করে দেখা উচিৎ না।কারণ একজন শিক্ষিত মা পারে একটা শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে।মেয়েরা কোন অংশে পিছিয়ে নেই।
ম্যাডাম ঠিক বলেছেন।যদি দয়া করে চাকরীটা দেন।
চাকরী দিতে পারি এক শর্তে?
বলুন ম্যাডাম কী শর্ত?
আমাকে বস মানতে হবে?
ওকে ম্যাডাম।
রানু রাহুলকে চাকরী দিলো।আজ থেকে রানু হলো রাহুলের বস,মানে ম্যাডাম।

ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

গল্প একজন জান্নাতি ক্রীতদাসীর গল্প আফছানা খানম অথৈ

একজন জান্নাতি ক্রীতদাসীর গল্প আফছানা খানম অথৈ একদিন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা:) এর পিতা মক্কার বাজারে যান কিছু কেনাকাটা

Leave a Reply