গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

0

চেয়ারম্যানের মেয়ে

আফছানা খানম অথৈ

মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়না।কোন কারণে বের হলে বোরকা হিজাব পরে তবে বের হোন।বিয়েতে কোন গান বাজনা হয়না।পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদের আযান ছাড়া কোন মাইকিং হয় না।বিয়ের আগে প্রেম ভালোবাসার কোন নিয়ম নেই।যদি কেউ করে তাকে কঠিন সাজা ভোগ করতে হবে।কিন্তু মন মানলেতো?
গরীব ফারাজ ও রেবেকা একে অপরকে ভালোবাসে।তিন বছর ধরে তাদের রিলেশন।খবরটা জানাজানি হওয়ার পর তা চেয়ারম্যানের নলেজে যায়।চেয়ারম্যান প্রকাশ্য দিবালোকে জন সম্মুখে তাদের বিচার করেন।উপস্থিত জনসম্মুখে রায় ঘোষণা করা হয়।বিয়ের আগে ভালোবাসাবাসি পাপ, গুনাহের কাজ।কেনো তারা এমন পাপ করলো তার জন্য একশত দোররা ও স্বপরিবারে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।পরিবারের লোকজন চেয়ারম্যানের হাতে পায়ে ধরে অনুনয় বিনয় করে মাফ চাই।চেয়ারম্যান কিছুতেই মাফ করে না।সাজা ঠিকমতো দেয়া হয় এবং তাদেরকে এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়।নিরুপায় হয়ে তারা চলে ও যায়।

এমনিভাবে চলছে এই গ্রামে নিয়ম কানুন।এই নিয়মের বাইরে কেউ চলাফেরা করছে না।কিন্তু চেয়ারম্যানের মেয়ে মানলেতো?সে কলেজে পড়ছে,বোরকা হিজাব সবই ঠিক আছে।কিন্তু পাগল মন যে প্রবোধ মানছে না।সে গরীব কৃষকের ছেলে হিমেলের সঙ্গে প্রেম ভালোবাসা করছে।হিমেল তার সঙ্গে একই কলেজে অনার্সে পড়ছে।পায়েল নিয়মিত তার সাথে যোগাযোগ করে চলেছে।।একে অপরকে নিয়ে বিভিন্ন জাগায় ঘুরাঘুরি করে।তারা একে অপরকে খুব ভালোবাসে।কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারেনা।সময় সুযোগ বুঝে অবিভাবকের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দুজন গোপন অভিসারে মিলিত হয়।তাদের ভালোবাসার দূরত্ব অনেক দূর গড়িয়েছে।চেয়ারম্যান এই ব্যাপারে কিছুই জানে না।কিন্তু এভাবে আর কতদিন?
সত্য একদিন প্রকাশ হবে।একদিন ভর দুপুরে কলেজ ফাঁকি দিয়ে তারা দুজন নদীর ধারে বেড়াতে যায়।কিছু সময় ঘুরাঘুরির পর তারা একটা ডিঙি নৌকায় উঠে বসে।হিমেল বৈঠা হাতে নিয়ে দাঁড় বাইছে।আর পায়েল নৌকায় বসে আছে।মৃদু মলয় হিল্লোলে পায়েলের কৃষ্ণকালো চুলগুলো উড়ছে।খুব সুন্দর লাগছে।আর তার প্রশংসা করছে হিমেল। একটু দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের এই রোমান্টিক দৃশ্য দেখছে হারিছ মেম্বারসহ আর ও কয়েকজন লোক।তারা মেম্বারকে বলছে,
নাইজুবিল্লাহ মেম্বার সাহেব দেখেন দেখেন চেয়ারম্যানের মেয়ে কুদ্দুছের ছেলে হিমেলের সাথে কি ঢলাঢলি করছে?
হুম দেখতে পাচ্ছিতো।
এবার দেখব নিজের মেয়ের কি বিচার করে?
হুম মেম্বার সাহেব চলেন এক্ষণি চেয়ারম্যানকে জানাইয়া আসি।
ঠিক বলেছেন চলেন।

বলতে না বলতে তারা চেয়ারম্যানের দরবারে উপস্থিত হলো। চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদে বসে একজন চোরের বিচার করছেন।চেয়ারম্যান ব্যস্ত কিভাবে কথাগুলো বলবেন,চিন্তা করছেন।তাও আবার নিজের মেয়ের ব্যাপারে।যাক অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর তিনি অবসর হলেন।তারপর মেম্বার কথাগুলো চেয়ারম্যানের কাছে প্রকাশ করলেন।কথাগুলো তার কাছে কেমন জানি অবিশ্বাশ্যকর মনে হলো।তিনি হাঁ না কিছু না বলে দ্রুতগতিতে বাড়ি ফিরে আসলেন।
মেয়েকে কাছে ডাকলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন,
পায়েল তুমি নাকি কাল বিকেলে হিমেলের সঙ্গে… ।
কথাগুলো কি ঠিক?
চেয়ারম্যান কড়া স্বভাবের মানুষ।সত্য ঘটনা জানতে পারলে কি না কি অঘটন ঘটায়?তাই পায়েল সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলল,
বাবা মিথ্যে কথা। কে বলেছে এমন বাজে কথা?
কে আর বলবে? মেম্বার বলেছে,সে নাকি নিজ চোখে তোমাদের দুজনকে একসঙ্গে দেখেছে।
বাবা উনি সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলেছে।আমি বিকেলে করিম চাচার বাসায় গিয়েছিলাম সাদিয়ার কাছে নোট আনতে?
শোন পায়েল?
জ্বি বাবা বলুন।
আমি চেয়ারম্যান। তুমি আমার একমাত্র মেয়ে। সাবধান কখনো প্রেম ভালোবাসা করবে না।যদি কর তাহলে জনসম্মুখ্যে ওদের মতো দোররা দিয়ে এলাকা ছাড়া করব।কথাটা মাথায় রেখো।
জ্বি আচ্ছা বাবা।
বাবাকে কোন রকম মিথ্যে বলে স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলল পায়েল।কিন্তু সত্য একদিন প্রকাশ হবে তখন কী হবে?

এর ফাঁকে কেটে গেল অনেক সময়।দুজনের ফাইনাল এক্সাম শেষ হলো।পায়েলকে বিয়ে দেয়ার জন্য তোড়জোড় চলছে।আজ পাত্রপক্ষ তাকে দেখতে এসেছে। শুধু দেখা না এংগেজমেন্ট আংটি পরিয়ে দিয়ে গেল।সপ্তাহ খানেক পর বিয়ে।কিন্তু এখন উপায়…।
দুজন শলাপরামর্শ করে পালিয়ে গেল।কিন্তু এ খবরটা চাপা রইল না।চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো।লজ্জায় চেয়ারম্যানের মাথা হেট হয়ে গেল।চারদিকে লোকজন লাগিয়ে দেয়া হলো তাদের ধরে আনার জন্য।লোকজন হন্যে হয়ে তাদেরকে খুজছে।অনেক খোঁজা খুঁজির পর মেম্বারের লোকের হাতে তারা ধরা পড়ে।চেয়ারম্যানের নির্দেশে হিমেলকে মেরে রক্তাত্ব করে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসে।আর পায়েলকে ধরে বাবার কাছে নিয়ে আসে।বাবার সামনেও হিমেল থেমে নেই।চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলে,
আমি হিমেলকে ভালোবাসি।আমাকে ছেড়ে দাও আমি তার কাছে যাব।বাবা তোমার পায়ে পড়ি হিমেলকে বাঁচাও।ওরা হিমেলকে মেরে রক্তাত্ব করেছে।তাকে ডাক্তার দেখাতে হবে,তানা হলে সে বাঁচবে না।আর সে না বাঁচলে আমিও বাঁচব না, বাঁচব না।
এই কথাগুলো বলতে বলতে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।বাবা তাকে একঘরে বন্দি করে রেখে বিয়ের বন্দোবস্ত করে।
জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারে তার বিয়ে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর বর আসবে।সে সইতে পারলো না। সাজুগুজু অবস্থায় ছুটে গেল জঙ্গলে হিমেলকে খুঁজতে গিয়ে দেখে হিমেল রক্ত্বাত্ব অবস্থায় এখনো পড়ে আছে।সে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে এবং নাম ধরে ডাকে।অনেক ডাকাডাকির পর হিমেলের জ্ঞান ফিরে আসে।তারপর দুজন পালিয়ে যেতে প্রস্তত হয়।ঠিক তখনি চেয়ারম্যান সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়।হিমেলের বুকে গুলি তাক করে।পায়েল সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করে কেঁদে কেঁদে বলছে,

বাবা ওকে মেরো না।আমি ওকে ভালোবাসি।
বিয়ের আগে ভালোবাসা পাপ।আমি এ পাপ মানতে পারব না।আজ আমি ওকে মেরে প্রমাণ করব।বিচার সবার জন্য সমান।তাছাড়া এটা এই গ্রামে নিষিদ্ধ। আমি কখনো প্রেম ভালোবাসা সাপোর্ট করিনি আজ ও করব না। “চেয়ারম্যানের মেয়ে” বলে যদি তোমাকে চেড়ে দেয়া হয়, লোকে আমার বদনাম করবে।
প্লিজ বাবা আমরা অনেক দূর চলে যাব। এ গ্রামে থাকব না।আমাদের ভালোবাসা মেনে নাও।
না মানব না।
সাঙ্গ পাঙ্গরা পায়েলকে ধরে রাখল।আর চেয়ারম্যান গুলি ফায়ার করলো।প্রথম বুলেটে হিমেলের বক্কভেদ করলো।সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।পায়েল সহ্য করতে পারলো না। ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো।বুলেট তার ও বক্কভেদ করলো।পাশাপাশি পড়ে রইল দুটো লাশ।চেয়ারম্যান একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।

ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

গল্প একজন জান্নাতি ক্রীতদাসীর গল্প আফছানা খানম অথৈ

একজন জান্নাতি ক্রীতদাসীর গল্প আফছানা খানম অথৈ একদিন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা:) এর পিতা মক্কার বাজারে যান কিছু কেনাকাটা

Leave a Reply