গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

0

মেয়ে সাক্ষী

আফছানা খানম অথৈ

আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ’র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল ও রিয়াদ।তিন বন্ধু বিকেলে বেলা হাওয়া খেতে বেরিয়েছে।গ্রামের রাস্তা আঁকা বাঁকা,তাদের পরিচিত না।তবু তারা মনের সুখে হেটে চলেছে।আর বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে ছবি তুলছে।হাটতে হাটতে একসময় তারা দিক ভুলে যায়।কোন দিকে যাবে,কি করবে,কোনকিছু তারা বুঝে উঠতে পারছে না।হঠাৎ চোখে পড়লো একটা বিশাল বাড়ি,গাছগাছালিতে ভরা।খুব সুন্দর,সদর দরজার দুপাশে সারিসারি সুপারি গাছ লাগানো।বেশ সাজানো গোছানো বাড়িটা।তারা আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকল।
সে কী! বৈঠকখানায় বসে আছে,একটা মেয়ে খুব সুন্দরী।দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।আবিদ হায়দারের ও তাই হলো।সে মেয়েটিকে দেখে থবনে হারিয়ে গেল।গ্রামের বাড়িতে এত সুন্দরী মেয়ে ভাবাই যায় না।তাকে আনমনা থাকতে দেখে রিয়াদ বলল,

আবিদ কি হয়েছে,কথা বলছিস না কেনো?হা করে কী দেখছিস?
না মানে কিছু না।
তাহলে চল,মেয়েটির সঙ্গে কথা বলি।
তিনবন্ধু এগিয়ে গেলো,মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে।মেয়েটির নাম রুপা।তাদেরকে এগিয়ে আসতে দেখে রুপা বলল,
আপনারা কারা?
আমি আবিদ হায়দার,আর এরা দুজন আমার বন্ধু সজল আর রিয়াদ।
তা বুঝলাম।তো আপনারা এখানে কি চান?
আমরা কিছু চাইতে আসেনি।তবে আপনার একটু হেল্প দরকার।
বলুন কী হেল্প করতে হবে?
আমরা দিক হারিয়ে ফেলেছি।বাসায় ফিরতে পারছি না।
ওহ সেই কথা।তো আপনাদের বাসা কোথায়?
আমরা শহর থেকে মহব্বতপুর গ্রামে বেড়াতে এসেছি।
কার বাড়িতে?
আব্দুল মন্নান মাস্টারের বাড়িতে।
ঠিক আছে,আসুন আমার সঙ্গে।

রুপা তাদের দিক ছিনিয়ে দিলো।শুধু তাই নয় সঠিক পথ দেখিয়ে দিলো কিভাবে বাড়ি পৌছতে হবে।আবিদ রুপার নাম পরিচয় জেনে নিলো।কারণ সে রুপাকে ভালোবেসে ফেলেছে।বাড়ি গিয়ে সে ফুয়াদকে বলল,
দোস্ত একটা সমস্যা হয়ে গেছে?
বল কী সমস্যা?
আমি রুপাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
কোন রুপা?
খালেদ বেপারির মেয়ে রুপা।
বলিস কী!
হুম সত্যি দোস্ত।তুই এক ব্যবস্থা কর।
বল কী করতে হবে?
আমি তাকে বিয়ে করতে চাই।তুই বিয়ের ব্যবস্থা কর।
সত্যি বলছিস?
হুম সত্যি।

ফুয়াদ তার বাবার সঙ্গে কথা বলল।তারপর উনার পরামর্শে ওদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো।খালেদ বেপারি খুশিমনে বিয়েতে সাঁই দিলেন।যাক রুপার সঙ্গে আবিদ হায়দারের বিয়ে হলো।রুপার বাবা কিন্তু ভালো মানুষ না।তিনি ভালো মানুষের মুখোশ পরে আছেন।ভিতরে ভিতরে কিন্তু খারাপ মানুষ,মানে ডাকাতের সর্দার।এই বিষয়টা অনেকে জানে না।দিনে করে সমাজ সেবা।রাতে করে অসামাজিকতা।উনি নিজে অবশ্য কিছু করেন না।যা করার সাঙ্গ-পাঙ্গরা করে।উনি শুধু ইশারা ইঙ্গিত করেন।

আবিদ হায়দার রুপাকে নিয়ে শহরে ফিরে গেল।বাবা শরীফুল হায়দার ও মাতা রেবেকা হায়দার খুব ভালো মানুষ।তাদেরকে না জানিয়ে বিয়ে করা সত্ত্বেও একমাত্র ছেলের বউকে মেনে নিলেন।রুপা ডাকাতের মেয়ে হলে কি হবে।সে খুব ভালো একটা মেয়ে,ভদ্র নম্র,নামাজী পর্দানশীন। অল্প সময়ের মধ্যে শ্বশুর-শ্বশুড়ি দুজনের মন জয় করে ফেলল।তারা ও রুপাকে মেয়ের মতো ভালোবাসে।বউ শ্বাশুড়ির মাঝে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।খুব ভালো কাটছে তাদের দিনকাল।

এদিকে রুপার মা তাহমিনা বেগম মেয়েকে এক পলক দেখার জন্য ছটফট করছেন।তাই স্বামীকে বললেন,

ওগো রুপা গিয়েছে,অনেক দিন হলো।মেয়েটার জন্য মনটা আনচান করতাছে।চলুন মেয়েটাকে দেখে আসি।
ঠিক আছে,রুপার মা চলো।

রুপার মা একমাত্র মেয়ের বাসায় যাবে।খালী হাতে কি যাওয়া যাই।তিনি কয়েকপদের নাস্তা বানিয়ে মেয়ের বাসায় নিয়ে গেলেন।
আবিদ হায়দারের বাবা-মা বেয়াই বেয়াইনকে দেখে খুব খুশি হলেন।তাদেরকে সাদরে বরন করে নিলেন।রুপা তার বাবাকে সালাম করতে তিনি তাকে আশির্বাদ করলেন।রুপার হাতে, গলায়, কানে, অলংকার দুলছে।বাবার চোখ পড়লো সেই দিকে। তিনি কড়া চোখে তাকিয়ে রইলেন।তারপর কিভাবে তা হাত করা যায় চিন্তাভাবনা শুরু…।

তিনি মেয়ের ভাষায় সাতদিন অবস্থান করলেন।এরই মধ্যে অন্ধর মহলের সব খবর হাতের মুটোয় আনলেন।তাদের টাকা পয়সা অলংকার কোথায় আছে,সব জেনে নিলেন।তারপর গভীর রাতে সাঙ্গ-পাঙ্গদের দিয়ে তাদের বাসায় ডাকাতি করালেন।ডাকাত কিন্তু টাকা পয়সা অলংকার নিয়ে শান্ত হলো না।খালেদ বেপারির পরামর্শে আবিদ হায়দারের বাবা-মাকে আহত করলো।এখানে খালেদ বেপারি কিছু অভিনয় করলো।যাতে ধরা না পড়ে।বেয়াই বেয়াইনকে বাঁচাতে ডাকাতের সাথে হাতাহাতি করলো।সবকিছু আত্মসাৎ করে
ডাকাত চলে গেল।

আবিদ হায়দার তার বাবা-মাকে হাসপাতালে ভর্তি করালো।জরুরী ভিত্তিতে তাদের চিকিৎসা সেবা চলছে।রুপা উনাদের খুব সেবা যত্ন করছে।তাদের একমাত্র মেয়ে ফাহমিদা হায়দার বাবা-মাকে দেখতে এসে খুব আফসেট হয়ে পড়লো।সঙ্গে তার স্বামী জুলফিকার ও আছে।তারা দুজনে থানায় জিডি করতে পরামর্শ দেন।কথা মোতাবেক কাজ হলো।থানায় জিডি করার পর পুলিশ তদন্ত করতে বাসায় আসল।তারপর ডাকাতি হওয়া টাকা পয়সা অলংকার এসবের লিস্ট নিয়ে গেল।

খালেদ বেপারি কিন্তু থেমে নেই।গ্রামের বাড়িতে ফিরে এলেন।অলংকার টাকা পয়সা সবকিছু সিন্ধুকে ভরে রাখলেন।কেউ যাতে জানতে না পারে।
খালেদ বেপারি কুকীর্তির কথা কিন্তু থেমে নেই।এক কান দুকান করে অনেকে তা জেনে গেছে।এই নিয়ে রীতিমতো কানাঘুষা চলছে।অনেক বলাবলি করছে এবার খালেদ বেপারি শহর থেকে বড় দান মেরে এসেছে।মেয়ের বাসায় যে দান মেরেছে এটা কেউ জানত না।
রুপার মা তাহমিনা বেগম এসবের কিছুই জানে না।কিন্তু এক সঙ্গে এত ভরি অলংকার দেখে উনার সন্দেহ হলো।তিনি জানতে চাইলেন,
এসব কোথায় পেয়েছেন?
তিনি এক কথায় জবাব দেন,কিনে এনেছি।
উনার বিশ্বাস হলো না।তিনি ভাবেন,আমরা যাওয়ার পর রুপার শ্বশুরের বাসায় ডাকাতি হলো।কাজটা আমার স্বামী করলো নাতো?
না না এসব কী ভাবছি,মেয়ের বাসায় কেনো সে ডাকাতি করতে যাবে?
এসব ভাবনা তাকে খুব ভাবিয়ে তুলেছে।কোনকিছু বলতে ও পারছে না।হজম ও করতে পারছে না।মানসিক ডিপ্রেশনে ভুগছেন।

এদিকে আবিদ হায়দারের মা-বাবা কয়েকদিন চিকিৎসার পর আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়ে উঠল।তারপর উনারা বাসায় ফিরে আসলেন।রুপার অর্নামেন্টগুলোর কথা মনে পড়তেই খুব খারাপ লাগল।তাই মন খারাপ করে বসে আছে।এমন সময় আবিদ বলল,
রুপা কী হয়েছে?
না কিছু না।
তাহনে মন খারাপ করে বসে আছ কেনো?
এমনি।
এমনি কেউ মন খারাপ করে?সত্যি করে বল কী হয়েছে?
না তেমন কিছুনা।অর্নামেন্টগুলোর কথা মনে পড়ছে।
ওহ সেই কথা।টেনশন করো না।আমি আবার বানিয়ে দেব।একটু অপেক্ষা কর।আমার অফিসের দেরী হয়ে যাচ্ছে।হাসিমুখে বিদায় দাও।কারণ স্ত্রীর ঘোমড়া মুখ দেখলে স্বামীর অমঙ্গল হয়।
সত্যি?
হুম সত্যি।
রুপা তার স্বামীকে হাসিমুখে বিদায় দিলো।এমনি হাসি আনন্দের মাঝে কেটে চলেছে তাদের দিনকাল।রুপার মতো ভালো বউ পেয়ে আবিদ খুশি।অনুরুপ রুপা ও আবিদের মতো ভালো স্বামী পেয়ে খুব খুশি।একে অপরের খুব টেককেয়ার করে।দুজনের মাঝে ভালোবাসা যেন উপছে পড়ছে।

অনেকদিন হলো রুপা এসেছে।বাবা-মাকে দেখতে মনটা ছটফট করছে।আবিদকে বিষয়টা জানালো।সে অমত করলো না।স্বশুর শ্বাশুড়ি ও তাতে সাঁই দিলো।রুপা আবিদকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসল।
বাবা-মা মেয়ে জামাইকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠল।খুব আদর যত্নে সমাদর করতে লাগল।আবির একটু হাওয়া খেতে বের হলো।গ্রামের দোকানে বসতে কয়েকজন বলল,
ডাকাতের জামাই এসেছে।
আবিদ কোনকিছু না বলে এদিক সেদিক তাকালো।তারপর বলল,
ভাই কাকে ডাকাতের জামাই বললেন?
কাকে আবার আপনাকে।
মানে কী?
মানে হলো আপনার শ্বশুর একজন ডাকাত।
সত্যি বলছেন?
হুম সত্যি।
আমি বিশ্বাস করি না।আপনি মিথ্যে বলছেন।
মিথ্যে না,সব সত্যি একদিন সব বুঝতে পারবেন।
এখনো সময় আছে,কেটে পড়েন।তানা হলে আপনাকেও ছাড়বে না।
কী করবে?
মেরে ফেলবে।

কথাটা শুনামাত্রই আবিদের মনটা খারাপ হয়ে গেল।তার মনে পড়ে গেল,তাদের বাসায় ডাকাতির কথা,মনে মনে বলে,তাহলে কী আমার শ্বশুর আমার বাসায় ডাকাতি করেছে?লোকটার কথা শুনেতো তাই মনে হলো।আমাকে আসল সত্য জানতে হবে।
সে দ্রুত বাসায় ফিরে আসল।তাকে দেখে রুপা বলল,
আবিদ এত সময় কোথায় ছিলে?
কেনো, দোকানে ছিলাম।
বড় চাচা দাওয়াত করেছেন।চলো উনাদের বাসায় যাব।ঠিক আছে চলো।
রুপার হাতে, গলায়, কানে অর্নামেন্ট। আবিদ ভালো করে দেখে নিলো।দেখতে হুবাহুব রুমার অর্নামেন্ট এর মতো।সে জিজ্ঞেস করলো,
রুপা এই অর্নামেন্টগুলো কোথায় পেলে?
কোথায় পাব মানে?এগুলো আমার মায়ের।
সত্যি তোমার মায়ের?
হ্যাঁ সত্যি আমার মায়ের।
রুপা অর্নামেন্টগুলো ভালো করে দেখ।এগুলো তোমার।
আমার মানে?
তোমার মানে তোমার।ভালো করে দেখ।

রুপা ভালো করে দেখে নিলো।তারপর ঠিক বুঝতে পারলো এগুলো তার অর্নামেন্ট।তার মানে তার বাবা তার শ্বশুর বাড়ি ডাকাতি করেছে।শেষ পর্যন্ত মেয়ে জামাইকে ও ছাড়লো না।সে দ্রুত বাবার কাছে ছুটে গেল।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।তারপর বলল,
বাবা তোমাকে বাবা বলতে ও ঘেন্না হচ্ছে।
কেনোরে মা,আমি কী করেছি?
কী করনি বলো?শেষ পর্যন্ত মেয়ের বাসা ডাকাতি করলে।
ছিঃ বাবা ছিঃ। তুমি বাবা না, বাবা নামের কলঙ্ক।
মা আমি তোর বাসা ডাকাতি করছি তা কে বলেছে?
কেউ বলতে হবে না।এই অর্নামেন্টগুলো প্রমাণ দিচ্ছে তুমি কী করেছ?কারণ এইগুলো আমার অর্নামেন্ট।আমি এক্ষণি চলে যাচ্ছি।
তুই কোত্থাও যেতে পারবি না।

খালেদ বেপারি খুব ভয়ঙ্কর লোক।সে রুপাকে এক ঘরে আর আবিদকে আরেক ঘরে বন্দি করে রাখল।কড়া পাহারায় রাখল রুপা যেন আবিদের সাথে দেখা না করতে পারে।আবিদ বিষয়টা জেনে গেছে।তাকে বাঁচিয়ে রাখলে খালেদ বেপারির বিপদ হবে।সে প্রতিশোধ নিতে চাইবে।তাই তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।রুপা বিষয়টা জানতে পারে।স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।তারপর একটা চিরকুট লিখে পাঠায়,
প্রাণের স্বামী,
আমার বাবা ডাকাত।তোমাকে মেরে ফেলবে।তুমি পালিয়ে যাও।
চিরকুট পড়ার পর আবিদের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।মরন বুঝি এসে গেল।আর বাঁচার উপায় নেই।
পাহারাদার কঠিনভাবে পাহারা দিচ্ছে। পালিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ পাচ্ছে না আবিদ।সব চেষ্টা ব্যর্থ হতে চলেছে।চোখের জলে বুক ভেসে যাচ্ছে।

এদিকে রুপা কেঁদে কেঁদে তার বাবাকে বলে,
বাবা তোমার দুটি পায়ে পড়ি।আমার স্বামীকে মেরো না।আমার স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা দাও।আমাকে বিধবা করো না।
বিধবা কেনো হবি।আমি তোকে আবার বিয়ে দেব।
না বাবা আমি আবার বিয়ে করতে পারব না।কারণ নারীর জীবনে বিয়ে একবারই হয়।আমি আবিদকে নিয়ে সারা জীবন থাকতে চাই।
না তা হবে না।আবিদ বেঁচে তাকলে আমার বিরুদ্ধে একশন নিবে।ওকে আর বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।

রুপা তার বাবার পাদুখানা চেঁপে ধরে অজরধারায় কাঁদছে আর বলছে,
প্লিজ বাবা আবিরকে মেরো না।আমরা বেঁচে থাকা অবদি,তোমার বিরুদ্ধে কোন একশন নেবো না।কসম কেটে বলছি।ওকে ছেড়ে দাও।
রুপার কান্নায় আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠছে।কিন্তু বাবার দিল নরম হচ্ছে না।সে তার সিদ্ধান্তে অটল।তার এক কথা সে আবিদকে মেরে ফেলবে।কথা মোতাবেক কাজ।সে আবিদকে নিজের হাতে খুন করলো। মেয়ের শত অনুরোধ বাবাকে দমিয়ে রাখতে পারলো না।

তারপর আবিদের লাশ হারিছ মেম্বারের বাড়ির দরজায় রেখে আসল।হারিছ মেম্বারের সাথে খালেদ বেপারির পুরানো শত্রুতা।
সকাল হলে লোকজন আবিদের লাশ দেখে হতভম্ব।খবরটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো।লোকজন জড়ো হলো।খালেদ বেপারি কিন্তু থেমে নেই।হারিছ মেম্বারকে প্রধান আসামি করে আবিদকে খুনের দায়ে থানায় মামলা দায়ের করলো।

হারিছ মেম্বারসহ কয়েকজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল।লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য মর্গে পাঠানো হলো।রুপা অজ্ঞান হয়ে পড়লো।তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো।আবিদের বাবা -মা ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে মুর্ছিত হয়ে পড়লো।পোস্টমর্টেম শেষে আবিদের লাশ বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হলো।আত্মীয় স্বজন সবাই মিলে আবিদের দাফনের কাজ শেষ করলো।বাবা মায়ের একবার জ্ঞান ফিরে আবার অজ্ঞান হয়ে যায়।
খালেদ বেপারি তাদের সামনে ভালো মানুষ সাজেন।এবং আবিদের খুনির মৃত্যুদণ্ড কামনা করেন।

মামলা চলছে তার গতিতে।রুপার স্বশুর শ্বাশুড়ি তাকে দেখতে হাসপাতালে যায়।
কিন্তু সে কী!রুপা শ্বশুর -শ্বাশুড়ি কাউকে চিনতে পারছে না।সে অতীত স্মৃতি ভুলে গেছে।স্বামী সংসার কিছুই তার মনে পড়ছে না।আবিদের কথা জিজ্ঞেস করতেই,সে বলল,

আবিদ কে?আমি আবিদ নামের কাউকে চিনিনা।

শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বুঝতে পেরেছে রুপা স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।তাকে এখন ডিস্টার্ব দেয়া ঠিক হবে না।তারা ফিরে গেল।জানা হলো না ছেলের খুনের রহস্য।

এদিকে হারিছ মেম্বারকে রিমান্ডে দেয়ার পর ও কোন তথ্য পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না।তাদের এক কথা।
আবিদকে তারা খুন করেনি।এই খুনের ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না।তাহলে খুন করলো কে?
খুব ঝামেলায় পড়লো পুলিশ সুপার।আবার তদন্তে বের হলো।
খালেদ বেপারির এক কথা,তার জামাইকে হারিছ মেম্বার খুন করেছে।
দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চলছিল।আজ হারিছ মেম্বারের ফাঁসির রায় কার্যকর হবে।জজ রায় ঘোষণা করবেন এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে রুপা।
মহামান্য আদালত আমি আবিদ হত্যার ব্যাপারে কিছু সত্য বলতে চাই।আদালতের কাছে আমি অনুমতি চাইছি।
আদালত অনুমতি মঞ্জুর করলো।
রুপাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো।সে শফথ নামা পাঠ করলো।তারপর বলতে শুরু…।

মহামান্য আদালত আমি আবিদের স্ত্রী রুপা।আবিদকে হারিছ মেম্বার খুন করেনি।
তাহলে কে খুন করেছে?
খুন করেছে,আমার বাবা খালেদ বেপারি।
কেনো খুন করেছে?
আমার বাবা একজন ডাকাত। আমার শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে লোভ সামলাতে পারেননি।চোখ পড়ে আমার এবং আমার শ্বাশুড়ির অর্নামেন্ট,টাকা পয়সার দিকে।তারপর সুযোগ বুঝে ডাকাতি করেন।টাকা পয়সা অর্নামেন্ট সব ছিনিয়ে আনেন।আমি বেড়াতে আসার পর আমার স্বামী সবকিছু জেনে যায়।এরপর বাবা আবিদকে খুন করে।আমি আমার স্বামীর খুনের বিচার চায়।আমার বাবার মৃত্যুদণ্ড চায়।

জজ রায় দিতে আর দেরী করলেন না।হারিছ মেম্বারকে মামলা থেকে খালাস দিয়ে,খালেদ বেপারিকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলেন।এই প্রথম “মেয়ের সাক্ষীতে” বাবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো।

ঃ সমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

গল্প একজন জান্নাতি ক্রীতদাসীর গল্প আফছানা খানম অথৈ

একজন জান্নাতি ক্রীতদাসীর গল্প আফছানা খানম অথৈ একদিন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা:) এর পিতা মক্কার বাজারে যান কিছু কেনাকাটা

Leave a Reply