স্বপ্ন যখন দুঃস্বপ্ন
আফছানা খানাম অথৈ
জান্নাত বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে সবেমাত্র অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হলো।এখনো ভালো ভাবে কারো সাথে পরিচিতি ও বন্ধুত্ব গড়ে উঠেনি।ষ্টেশনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে।গাড়ি আসতে লেট হলো তাই অনেক্ষণ দাঁড়াতে হলো।এমন সময় একটা ছেলে এসে বলল,
“এক্সকিউজ মি”।
জান্নাত বেখেয়ালি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।তখন ছেলেটি আবার বলল,
হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন?
এবার জান্নাত পাশ ফিরে তাকিয়ে বলল,
কাকে বলছেন?
এখানে আপনি ছাড়া আর কেউ আছে?
জ্বি বলুন।
আপনাকে চেনা চেনা লাগে।মনে হয় কোথায় দেখেছি।
হবে হয়তো।
তো আর কিছু বলবেন?
না মানে আপনার পরিচয়।
কেনো কেনো?
না মানে এমনি।প্লিজ বলুন।
জান্নাত তার অনুরোধ রাখতে নিজের পরিচয় দিতে বাসার ঠিকানা ও বলে ফেলল।তখনি ছেলেটি বলল,
ওয়াও আমাদের দুজনের মাঝে দারুণ মিল।একই ভার্সিটিতে পড়া ও পাশা-পাশি ফ্ল্যাটে থাকা।
তখনি জান্নাত বলল,
তার মানে আপনি ও মিরপুর ১১ তে থাকেন?
ইয়েস, শুধু মিরপুর ১১ বললে ভুল হবে।আপনারা যে বিল্ডিং এ থাকেন তার পাশের বিল্ডিং’র দ্বিতীয় তলায় আমরা থাকি।এজন্য তো বললাম আপনাকে চেনা চেনা মনে হয়।
সব ঠিক আছে, তো আপনার নামটা তো এখনো জানা হলো না।
ওকে তাইতো।আমি সাইফ রহমান সাইফ।মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ার ঢাকা ইউনিভার্সিটি।
তো ভালোই তো দুজনের একই ইউনিভার্সিটিতে পড়া।
দুজনের পরিচয় পর্ব শেষ এমন সময় ইউনিভার্সিটির গাড়ি আসতেই তারা উঠে পড়লো।
পরিচয় থেকে দুজনের মাঝে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।প্রতিদিন দুজনে এক সাথে ইউনিভার্সিটিতে যাতায়াত করে।ফেসবুকে চ্যাটিং ফোনে ও দুজন আলাপ-সালাপ করে। এমনি ভাবে কেটে গেল কয়েক মাস।এরই মধ্যে সাইফ জান্নাতকে ভালোবেসে ফেলেছে।কিন্তু এখনো তার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতে পারছে না।সাইফ জান্নাতকে ভালোবাসে ঠিকই কিন্তু সে একটু লাজুক টাইপের।তাই জান্নাতকে সরাসরি ভালোবাসার কথা বলতে পারছে না।এদিকে সাইফের মাস্টার্স শেষ।জব ও করছে,কি আর করা, বাধ্য হয়ে এবার সে ফেসবুকে চ্যাটে লিখে পাঠাল,
I love you Jannat.
জান্নাত ফেসবুক ওপেন করে চ্যাটে লেখাটা দেখে উত্তর দিলো,
No love you.
এবার সাইফ জানতে চাইল,
কারণ কি,আমি কি তোমার অযোগ্য?
না ঠিক তা না।
তাহলে সমস্যা কোথায়?
সাইফ ভাবছি “লাভ” করে বিয়ে করবো না।
কেনো কেনো?
সাইফ সত্য কথা বলতে কি বাবা-মা দুজনের লাভ ম্যারেজ।কিন্তু দুজনের মাঝে কোন মিল নেই।প্রায়ই সময় ঝগড়া লেগে থাকে।
দূর ছাই সবার লাভ ম্যারেজ কি এক হবে?এখন তোমাকে যা জিজ্ঞেস করি তার উত্তর দাও।
বল কি বলবে?
আমাকে তোমার পছন্দ না?
হ্যাঁ পছন্দ।
আমি কি এতই অসুন্দর যে তুমি আমাকে ভালোবাসতে পারবে না?
সাইফ তুমি অনেক কিউট।তোমাকে ভালোবাসার সাহস কি আমার আছে?
যাক উত্তর পেয়ে গেলাম।তুমি আমাকে ভালোবাস?
ঠিক তাই না।
জান্নাত কাল বিকেলে পার্কে এসো।অনেক কথা আছে।
ওকে আসব।ভালো থেকো।গুড নাইট।
পরদিন দুজনে পার্কে যোগ হলো।
দুজন পাশা-পাশি বসল।সাইফ জান্নাতের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে রইল।মনে হয় জান্নাতকে সে প্রথম দেখেছে।দৃশ্যটা জান্নাতের চোখে পড়লো।তখনি জান্নাত বলল,
সাইফ হা করে তাকিয়ে কি দেখছ?
কথাগুলো যেন সাইফের কানে গেল না।সে তাকিয়ে আছে।
জান্নাত আর থেমে থাকতে পারলো না।খিলখিল করে হেসে উঠে তার চোখের সামনে হাত নেড়ে নেড়ে বলল,
সাইফ বেহুশ হয়ে গেলে নাকি,এমন করে কি দেখছ?
এতক্ষণে সাইফ সম্বিত ফিরে পেল।সে চমকে উঠে বলল,
জান্নাত আমি ঠিক বুঝতে পারছি না,আমি কি করব?
কি হয়েছে সাইফ?
জান্নাত মানছি আমার দুজন ভালো বন্ধু।তাই বলে কি ভালোবাসা যাবে না?
সাইফ সত্য কথা বলতে কি ভালোবাসা এখন আর ভালো লাগে না।
জান্নাত কেনরে,ভালোবাসা কি পাপ?
সাইফ আমি পাপ পূণ্য এসব ভেবে কথাটা বলেনি।
তাহলে কেনো বললে, ভালোবাসার প্রতি কেন তোমার এত অনীহা?
সাইফ ঐ যে বললাম, মা-বাবার লাভ ম্যারেজ।উনাদের মাঝে অলটাইম ঝগড়া লেগে থাকে।
ব্যস ব্যস জান্নাত আর বলতে হবে না।সবার লাভ ম্যারেজ এক হয় না।
সাইফ এতটা সিউর হলে কি করে?
জান্নাত বন্ধুত্বের মাঝে কখন যে তোমাকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।অর্থ্যাৎ আমি তোমাকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি।
জান্নাত হা হা হো হো করে হেসে উঠে বলল,
সাইফ সেটা আবার কেমন ভালোবাসা?
জান্নাত তুমি বুঝে ও না বুঝার ভান করছ,তবুও বলছি, আমি তোমাকে অসম্ভব রকম ভালোবাসি।
রিয়েলি?
তো আর বলছি কি।এবার তুমি বল আমাকে কতটুকু ভালোবাস?
জান্নাত মজা করে বলল,
সাইফ কতটুকু বললে তুমি খুশি হবে?
জান্নাত ভালোবাসা কখনো পরিমাপ করা যায় না।তুমি আসল সত্যটা বলো?
সাইফ সত্য কথা বলতে কি, আমি ও তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।কিন্তু ভয় হয়, যদি মা-বাবার লাভ ম্যারেজের মতো, আমাদের সংসারে ও কেলেংকারি নেমে আসে।
জান্নাত স্টপ এমন কথা মুখে এনো না।আমাদের লাভ ম্যারেজ হবে সবার সেরা।
সাইফ তাই যেন হয়।চলো ফেরা যাক।
ভালোবাসা পাকা-পাকি করে দুজন বাসায় ফিরে আসল।তারপর থেকে দুজন দুজনের বাসায় যাতায়াত করে। দুজনের ফ্যামিলি স্ট্যাটার্স শিক্ষিত, তাই দুজনের বন্ধুত্বকে সবাই সাপোর্ট করে।সাইফ ও জান্নাত দুজন সেইম, পড়া-লেখা, আচার-আচরণ, চেহারা-চুরুত সব দিকে ফিট এজন্য দুফ্যামিলির কারো কোন অভিযোগ নেই।সাইফকে জান্নাতের পরিবার ভালো চোখে দেখেন।অনুরুপ জান্নাতকে সাইফের পরিবার ভালো চোখে দেখেন।
দুপরিবারের মাঝে আত্নীয়তার হাভ ভাব শুরু হলো।
তখনি একদিন হঠাৎ জান্নাত ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস করার সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে।ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ দ্রুত জান্নাতকে হসপিটালে নিয়ে যাই।ইমারজেন্সি চিকিৎসা শুরু হলো।
মা-বাবার কাছে জরুরী ফোন। মা ফোন রিসিভ করে সালাম দিয়ে বললেন,
হ্যালো কে বলছেন?
অপর প্রান্ত থেকে আওয়াজ আসল,
আমি ভার্সিটির বিভাগীয় হেড বলছি, জান্নাত হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েছে।এখন হসপিটালে, ইমারজেন্সিতে আছে, আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন।
অসুস্থতার খবর বলে বিভাগীয় হেড ফোন কেটে দিলেন।জান্নাতের মা অপর প্রান্ত থেকে হ্যালো হ্যালো বলে ও কোন উত্তর পেল না।তিনি আরলি হসপিটালে ছুটে গেলেন।রিসিপসনে বসা লোকটিকে ইমারজেন্সি কোনদিকে জিজ্ঞেস করে ছুটে গেলেন।ইমারজেন্সির সামনে যেতে জান্নাতের টিচার বলল,
আন্টি জান্নাতের ইমারজেন্সি চিকিৎসা চলছে।একটু অপেক্ষা করুন।
জান্নাতের মা রাশেদা জামান ও বাবা জামান সানি বসে পড়লেন।কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বের হলেন।মা-বাবা দুজন এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
ডাক্তার সাহেব জান্নাতের কি অবস্থা?
ডাক্তার বলল,
আপনারা আমার সঙ্গে আসুন।
মা-বাবা দুজন এক সঙ্গে ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে বসলেন।তারপর ডাক্তার বলল,
পেশন্ট সম্পর্কে এখনো কোন কিছু সিউর না।আমি আপাতত জ্ঞান ফেরার জন্য স্যালাইন পুস করেছি।আর এই পরীক্ষাগুলো করে নিয়ে আসেন, তারপর বুঝব কি সমস্যা?
বাবা পরীক্ষাগুলো করতে ছুটে গেলেন।এদিকে ঘন্টা খানেক পরে জান্নাতের জ্ঞান ফিরে আসল।মা ছুটে এসে মেয়ের কাছে বসলেন।জান্নাত মায়ের মুখ পানে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।মা বলল,
জান্নাত কি হয়েছে, এখন কেমন লাগছে?
মা আমার কেমন জানি লাগছে, ঠিক বুঝতে পারছি না।
মেয়ের কথা শুনে মায়ের চোখের জল গড়িয়ে পড়লো।কেঁদে কেঁদে বলে,
আল্লাহ আমার একমাত্র মেয়ে কলিজার টুকরাকে ভালো করে দাও।আমার মেয়ের কিছু হলে আমি বাঁঁচব না।
মায়ের চোখের জল পড়তে দেখে জান্নাত বলল,
মা তুমি কাঁদছ কেনো?আমার কি হয়েছে, মানে জঠিল কোন সমস্যা?
এমন সময় বাবা ডাক্তার সহ আসলেন।ডাক্তার স্টেথোস্কোপ যন্ত্র বসিয়ে আবার জান্নাতের প্রেসার চেক করলেন।তারপর বললেন,
জামান সাহেব রিপোর্টে সিরিয়াস কোন রোগ ধরা পড়েনি।শুধু প্রেসার প্রয়োজনের তুলনায় কম।আমার মনে হয় শারিরীক দুর্বলতা।তার উপরে পড়া লেখার চাপ, মানসিক চাপ একটু বেশী পড়েছে।এজন্য এ সমস্য, এটা তেমন কিছু না।আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি এগুলো ঠিকমতো খাওয়াবেন, আর পাশা-পাশি দুধ ডিম ফল ফলাদি খাওয়াবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।
জান্নাতকে নিয়ে বাবা-মা বাসায় ফিরে আসল।ডাক্তারের ট্রিটমেন্ট অনুযায়ী ঔষধ পথ্য ঠিকমতো মেয়ের টেক কেয়ার করে চলেছেন উনারা।তার অসুস্থতার কথা শুনে সাইফ ছুটে আসল।কলিংবেল বাজাতে জান্নাতের মা এগিয়ে এসে দরজা খুলে দিলো।সাইফ উনাকে সালাম দিতে তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন,
সাইফ ভিতরে এসো।
আন্টি জান্নাত কোথায়?
তার ঘরে আছে তুমি যাও।আমি চা নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
সাইফ জান্নাতের পাশে বসলো।জান্নাত কোন কিছু না বলে তার দিকে তাকিয়ে রইল।তারপর সাইফ বলল,
জান্নাত কি হয়েছে?
জান্নাত এক কথায় জবাব দিলো,
না তেমন কিছু না, শারিরীক দুর্বলতা, ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করলে ভালো হয়ে যাবে।
ডাক্তার কি বলল?
রিপোর্ট অনুযায়ী কথা,রিপোর্টে সিরিয়াস কিছু ধরা পড়েনি। ডাক্তার আর কি বলবে, শারিরীক দুর্বলতা বলে ঔষধ পথ্য লিখে দিলো।
সাইফ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
হে পরওয়ার দেগার আমার প্রিয়তমাকে সুস্থ করে দাও।
এর ফাঁকে জান্নাতের মা চা নাস্তা পাঠিয়ে দিলো।সাইফ নাস্তা করে জান্নাতের শুভ কামনা করে বিদায় নিলো।জান্নাত মোটামুটি সপ্তাহ খানেক সুস্থ ছিল।তারপর একদিন প্রচণ্ড জ্বর, তারপর অজ্ঞান,
পূণরায় তাকে নিয়ে হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি….।
এবার ডাক্তার অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলেন।তারপর রিপোর্ট দেখে তিনি বিস্মিত হলেন।মুখ দিয়ে তার কোন কথা বের হলো না।নিরব নিস্তব্ধ হয়ে রইলেন।তারপর জান্নাতের বাবা বলল,
ডাক্তার সাহেব জান্নাতের কি হয়েছে?
ডাক্তার কান্না ভেজা কণ্ঠে বলল,
জামান সাহেব সত্য কোন দিন চাপা থাকেনা।তাছাড়া আমরা ডাক্তার আমাদের কাজ, রোগ নির্নয় করে চিকিৎসা করা এবং সত্য কথা বলা।জান্নাতের ক্যান্সার লিউকোমিয়া।
ক্যান্সার শব্দটা শুনার সাথে সাথে মা-বাবা দুজনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।জান্নাতের চিকিৎসা চলছে।এদিকে সাইফ জান্নাতের ক্যান্সারের কথা শুনে প্রথমে ভেঙ্গে পড়লে ও পরে ঠিক স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসে।সাইফ জানতে পারলো জান্নাতের ক্যান্সার, মৃত্যু অনিবার্য সত্য।যে কোন সময় পরপারের ডাক আসতে পারে, শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। শুধু তাই নয় জান্নাতের বেস্ট ফ্রেন্ড মুনা সাইফকে ভালোবাসত।কিন্তু জান্নাত সাইফের গার্লফ্রেন্ড তাই মুখ ফুটে কিছু বলেনি।আজ জান্নাতের ক্যান্সার সে আর বাঁঁচবে না তা জেনে সে সাইফের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে।তারপর থেকে দুজনের মাঝে প্রেমের রিলেশন গড়ে উঠল।
এদিকে জান্নাতের ক্যান্সার নামক মরণ ব্যধি তার শরীরে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে।জান্নাতকে মা-বাবা না জানালে ও সে ঠিক বুঝতে পেরেছে তার রোগের কথা।এদিকে সাইফ এখন তার সাথে আর আগের মতো যোগাযোগ করে না।তারমতে একজন মৃত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আর কি লাভ। মুনাকে নিয়ে সাইফ প্রায় সময় ব্যস্ত থাকে।
একদিন জান্নাতকে দেখতে আসে তার বন্ধুরা মুনা, সাইফ, রিয়াদ, তিশা, ফুয়াদ। তাদেরকে দেখে জান্নাতের মনে আনন্দের বন্যা বয়ে…।
সে তার বন্ধুদের সাথে হাসি মুখে কথা বলে।জান্নাত দেখতে পেল সাইফ মুনা একে অপরকে নিয়ে খুব ব্যস্ত।তারা বিদায় হলো।মনের অজান্তে জান্নাতের চোখের কোনে পানি জমে উঠল।সাইফকে নিয়ে পুরানো স্মৃতিগুলো মনের মধ্যে রোমান্থন হয়ে ধরা দিলো।অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে।
এদিকে রোগের মাত্রা ও বেড়ে চলেছে।
জান্নাত বুঝতে পারলো সে আর বেশীদিন বাঁচবে না।তাই মনের কিছু অপ্রত্যাশিত কথা প্রকাশ করার জন্য কাগজ কলম হাতে নিলো।
মুনা,
আমার দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইল তোদের বন্ধু মহলের সবার জন্য দোয়া রইল।
মুনা জীবনের শেষ সাহাহ্নে দাঁড়িয়ে গুটি কতক কথা প্রকাশ করলাম।মুনা আমি জানি তুই সাইফকে খুব ভালোবাসিস।কামনা করি তোদের ভালোবাসা সুখের হোক।মুনা একটা কথা না বলে পারলাম না।সাইফ জানে আমি বাঁচব না, তাই বলে সে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারলো।ক্যান্সার কোন ছোঁয়াছে রোগ নয়, যে সাইফকে এপেক্ট করবে।সাইফ আমার সাথে দেখা দেখি না করুক অন্তত ফোনে যোগাযোগ করতে তো পারতো।কিন্তু সে তাও করেনি।পুরুষ মানুষ গুলো এত নিষ্ঠুর কেনরে, আমাদের এতদিনের ভালোবাসা, তার জন্য একটু ও মায়া হলো না তার।মুনা সাইফ বলেছিল আমাদের ভালোবাসা সবার সেরা হবে।এবার বুঝতে পারলাম সবার সেরার অর্থ হলো, প্রেমিকার কঠিন ব্যধির কথা শুনে প্রেমিক দূরে সরে অন্য নারীর….।
মুনা আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি মানুষের বিপদের কথা শুনলে কেউ এগিয়ে আসে না, দূরে সরে যায়।আজ আমার “স্বপ্ন যখন দু:স্বপ্ন” হয়ে গেল।তখন কেউ আমার পাশে নেই।আর লিখতে পারছি নারে, সাইফকে নিয়ে ভালো থাকিস, সুখে থাকিস এই কামনায় বিদায় নিচ্ছি।খোদা হাফেজ।
ইতি
তোর সই
জান্নাত।
আল্লাহ পাকের লীলা খেলা বুঝা বড় কঠিন।জান্নাতের সময় শেষ। সে মারা গেল।একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে মা-বাবা খুব ভেঙ্গে পড়লেন।সাইফ মুনা,তিশা ফুয়াদ এরা মা-বাবাকে বুঝাচ্ছে।ঠিক তখনি জান্নাতের মা মুনার হাতে চিঠিটা দিয়ে বলল,
মুনা জান্নাত বলেছে তার মৃত্যুর পর চিঠিটা তোমাকে দিতে।
মুনা চিঠিটা পড়তেই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।তারপর সাইফকে দিলে সেও পড়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।