নেপালের রাজধানীর নাম কাঠমান্ডু। ‘জননী জন্মভূমি স্বর্গদপী গরীয়ষী’- এটি নেপালের নীতিবাক্য। রাজতন্ত্র থেকে নেপাল এখন যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক নেপাল। রাষ্ট্রভাষা মৈথিলি এবং নেপালি।
একমাত্র এই দেশের পতাকাই ত্রিভূজ আকৃতির। রাষ্ট্রপতি বিদ্যাভান্ডারি এবং প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলি। উপরের ছবিতে কাঠমান্ডুর দরবার স্কয়ার দেখতে পাচ্ছেন।
চারিদিকে হিমালয় বেষ্টিত এই শহরটিই নেপালের সবচেয়ে বড় শহর। এখানকার মানুষেরা কথা বলে নেপালি এবং নেওয়ারি ভাষায়। নেপালের আয়তন বাংলাদেশের চেয়ে বেশী- ১৪৭১৮১ বর্গ কিলোমিটার।
নেপালের ধর্ম
একসময় নেপালের রাষ্ট্রধর্ম ছিল হিন্দু ধর্ম। এখন নেপাল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী নেপালের ৮১.৩% হিন্দু, ৯% বৌদ্ধ, ৪.৪% মুসলিম এবং বাকি সবাই কিরাত, খ্রিস্ট ধর্ম ইত্যাদি ধর্মের অনুসারী।
পশুপতিনাথ মন্দির ইউনেস্কোর বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। একসময় হিন্দু, বৌদ্ধ ও কিরাত ধর্মের অনুসারী বেশী ছিল। মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের আগমনের কারণে এই ধর্মগুলোও কেউ কেউ গ্রহণ করেছে। নেপালিদের অনেকের বিশ্বাস সেখানে ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিব হরিণরূপে এসেছিল।
নেপালের ভাষা
নেপালি ভাষা নেপালের সবচেয়ে বেশী চর্চিত ভাষা হিসেবে পরিচিত। এটি একটি ইন্দো আর্য ভাষা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, ভুটান এবং নেপালে এই ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী।
ধারণা করা হয় এই ভাষার সাথে হিন্দি ভাষার মিল শতকরা ৮০ ভাগ এবং বাংলার সাথে শতকরা ৪০ ভাগ।
সেনাবাহিনী
নেপালের নিজস্ব সেনাবাহিনী রয়েছে। এছাড়া ১৯৪৭ সালের ব্রিটেন-ভারত-নেপাল চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় সেনাবাহিনীতে গোর্খা রেজিমেন্ট রয়েছে।
ভারত-নেপাল সম্পর্কের অবনতির কারণে চুক্তির ব্যাপারে পুনর্বিবেচনার দাবি উঠছে। সম্প্রতি কালাপানি, লিপুলেখ, লিম্পিয়াধুরাকে যুক্ত করে নেপালের মানচিত্র প্রকাশের সাথে সাথে নেপালের সেনাবাহিনীর তৎপরতাও লক্ষ্য করা গিয়েছে। নেপালের সেনাপ্রধানের নাম সম্ভবত পূর্ণ চন্দ্র থাপা।
প্রধানমন্ত্রী
নেপালের ৪১ তম প্রধানমন্ত্রীর নাম কে পি শর্মা অলি, তিনি কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। বর্তমান রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারি। তিনি কুল বাহাদুর গুরুং কে ইলেক্টোরাল ভোটে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।
মন্দিরের শহর কাঠমান্ডু
রাজধানীর নামকরণের পেছনেও মন্দিরের একটা ভূমিকা আছে। কাঠমান্ডু নামটি এসেছে একটি মন্দিরের নাম- কাষ্ঠমন্ডপ থেকে, এই মন্দিরটি অবস্থিত দরবার স্কয়ারে। তারা শহরকে বলে মহানগর যার অর্থ ‘মহৎ শহর’। কাষ্ঠমন্ডপ মহানগরের নাম প্রাচীন বৌদ্ধ স্তোত্রগুলোতেও পাওয়া যায়।
এই শহরটির আরেক নাম কান্তিপুর। কান্তি এবং পুর শব্দ দুটির উৎপত্তি সংস্কৃত থেকে। কান্তি অর্থ “সৌন্দর্য্য” বা, “আলোকিত” এবং পুর অর্থ “স্থান”। কাঠামান্ডুকে কখনো কখনো আলোর শহর নামেও অভিহিত করা হয়।
ঐ অঞ্চলের আদিবাসীদের মুখে আরো কিছু শব্দ প্রচলিত রয়েছে। মূল শহরটিকে তারা বলে “ইয়ে দেশ”। এই শহরের উত্তর অংশকে তারা বলে যম্বি এবং দক্ষিণ অংশকে বলে যঙ্গলা। আমরা ণ-ত্ব বিধানে পড়েছি ন এর সাথে ড যুক্ত হলে সংস্কৃত শব্দে ণ হবে। এক্ষেত্রে কিছু দন্ত ন ব্যবহার করতে হবে। কারণ, শব্দটি তদ্ভব, তৎসম নয়।
কাঠমান্ডুর ইতিহাস

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। স্বয়ম্ভু পুরাণে উল্লেখ আছে, এই অঞ্চলে ছিল বিশাল এবং গভীর হ্রদ যা সাপে পরিপূর্ণ ছিল। হ্রদ কেটে পানি সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন বোধিসত্ত্ব। বনাশূর এসে আবার তা বন্ধ করে ফেলে এবং সব শেষে ভগবান কৃষ্ণ এসে বনশুরকে হত্যা করে সেই হ্রদটি উদ্ধার করেন।
লেচাভি যুগ এবং মল্ল যুগের নানা কীর্তি, দুর্যোগ, ঘাত-প্রতিঘাত এবং সমৃদ্ধির ইতিহাস পেরিয়ে ১৭৬৮ সালে মল্ল যুগের সমাপ্তির মাধ্যমে গোর্খা রাজ্য নেপালের রাজধানী হিসেবে কাঠমান্ডু গৃহীত হয়। পর্যটন শিল্প এবং অর্থনীতিতে নেপালের রাজধানী শহরটি একটি সমৃদ্ধ শহর বলেই বিবেচিত হয়।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে গোর্খা সেনা ছিলো, এখনকার ভারতীয় সেনাবাহিনীতেও নেপালের গোর্খা সেনা রয়েছে। ব্রিটিশদের পক্ষে প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নেপালীরা অংশ নিয়েছিলো। এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে, ব্রিটিশদের দখলে সারা বিশ্বের অনেক দেশ থাকলেও তারা নেপাল দখল করার দুঃসাহস দেখায়নি, চুক্তি করেই শান্ত ছিলো।
আরো পড়ুন-
তথ্যসূত্রঃ