বেলের উপকারিতা

বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

0

বেল একটি খুবই সাধারণ ফল। শুধু গ্রামেই নয়, শহরেও তেল সমানভাবে জনপ্রিয়। বেল সাধারণত আমরা শরবত বানিয়ে খেয়ে থাকি। গ্রীষ্মকালে বেলের ঠান্ডা শরবত খেলে যে প্রশান্তি পাওয়া যায় তা অন্য কোনো কিছু থেকে পাওয়া যায় না। অগণিত খনিজ উপাদানের সমৃদ্ধ বেলের উপকারিতা সম্পর্কে আজকে আলোচনা করতে চলেছি।

বেল এক প্রকার গোলাকার ফল, যার একটি অতি শক্ত আবরণ রয়েছে। বাইরে শক্ত হলেও ভিতরে খুবই নরম ফলের অংশ বিদ্যমান। বাইরের শক্ত অংশ খাওয়া না গেলেও ভেতরে নরম অংশটি খাওয়া যায়। এই অংশ খুবই মিষ্টি এবং শ্বাস যুক্ত হয়ে থাকে। বেলের ভেতরে নরম অংশকে পানির সাথে মিশিয়ে চিনি সহযোগে খাওয়া যায়।

বেলের উপকারিতা

অন্যান্য ফলের মতো বেলেরও অনেক ভেষজ গুণাবলী রয়েছে। বেলে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, বিভিন্ন এনজাইম, খনিজ উপাদান ইত্যাদি। বিভিন্ন রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে বেলের উপকারিতা অনস্বীকার্য।

পাকা বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঁচা কিংবা পাকা বেলের উপকারিতা সমান সমান। প্রধানত আমরা বেলের শরবত খেয়ে থাকি প্রশান্তির জন্য। গ্রীষ্মকালে যখন প্রচন্ড গরম পড়ে এবং জনজীবন রুষ্ট হয়ে যায়, তখন বেলের ঠান্ডা শরবত যেন এক জাদুকরী পানীয়।

বেলে শরবত খেলে আমাদের শরীরের দ্রুত সজীবতা ফিরে পায় এবং শক্তি লাভ করে। বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমান গ্লুকোজ, যা আমাদের শরীরের দ্রুত মিশে যায় এবং শক্তি যোগায়।

পেট পরিষ্কার রাখতে বেলের কোন জুড়ি নেই। বেল একটি নরম আঁশযুক্ত ফল, এটি খেলে আমাদের পাকস্থলী দ্রুত পরিষ্কার হয়ে যায় এবং আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। যাদের কেষ্ঠকাঠিন্য রোগ রয়েছে তারা বেলের শরবত খেয়ে দেখতে পারেন। দুই কি তিনদিনের মধ্যেই দ্রুত ফলাফল পেয়ে যাবেন।

বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। ভিটামিন সি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া স্কার্ভি রোগ বা মুখে ঘা হওয়ার রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে বেলের শরবত খাওয়া উচিত।

বেলে রয়েছে বিটা কেরোটিন নামক একটি উপাদান, যা আমাদের লিভারকে সুস্থ রাখে। এছাড়া বেলে উপস্থিত বিভিন্ন খনিজ উপাদানগুলো আমাদের রক্তকে পরিশোধিত করে এবং রক্ত ক্যান্সার থেকে আমাদের রক্ষা করে। তাই লিভার ক্যান্সার কিংবা রক্ত ক্যান্সার থেকে বাঁচতে হলে নিয়মিত বেল খাওয়া যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় বেলের উপকারিতা রয়েছে। গর্ভকালীন সময়ে একজন মায়ের প্রয়োজন অধিক পুষ্টি এবং নানা ধরনের খনিজ উপাদান। বেল যেহেতু একটি খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ ফল, তাই গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন এক গ্লাস করে বেলের শরবত খাওয়ানো যেতে পারে।

বেলে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, বিভিন্ন উপকারী এনজাইম ইত্যাদি প্রসূত মায়ের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারবে।

মহা উপকারী একটি ফল হচ্ছে বেল। বেলের শত শত উপকারিতা থাকলেও মজার ব্যাপার হচ্ছে বেলের অপকারিতা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে বেশি পরিমাণ বেল খাওয়া মোটেও উচিত নয়। বেশি করে বেল খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় বেল খাওয়া যাবে কিনা?

এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য অবশ্যই এই বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন এমন কারো সাথে যোগাযোগ করবেন। ইউটিউবের এই ভিডিওটি আপনাকে কিছু তথ্য জানতে সাহায্য করবে, তবে শতভাগ ঠিক তথ্য পাবেন একজন পুষ্টিবিদ বা, খাদ্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এমন কেউ কিংবা, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে।

বেলের শরবতের উপকারিতা

বেল খাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হচ্ছে বেলের শরবত করে খাওয়া। বেলের শরবত বানানো খুবই সহজ একটি প্রক্রিয়া। বেলের ভেতরের নরম অংশটিকে প্রথমে আলাদা করে একটি পাত্রে রাখতে হবে। এরপর পরিমাণ মতো ঠান্ডা পানি ও সামান্য পরিমাণ চিনি মেশাতে হবে। পাশাপাশি টক দইও মেশানো যেতে পারে।

এবার এই সকল উপকরণগুলোকে ভালো করে মেশাতে হবে। বরফের সাথেও বেলের শরবত খাওয়া যেতে পারে। বেলের শরবত সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় গ্রীষ্মকালে।

বেল যেহেতু একটি বসন্তকালীন ফল, তাই বসন্তের পর গ্রীষ্মকালে বেলের প্রাপ্যতা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে বাজারে বেলের শরবত বিক্রি করতে দেখা যায়। বেলের উপকারিতা সম্পর্কে এখন অনেকেই সচেতন।

তো কেন খাবেন বেলের শরবত? বেলের শরবতের উপকারিতা জানলে চমকে যাবেন! বেলের শরবত খেলে আমাদের শরীর খুব সহজেই পানির চাহিদা পূরণ হয় এবং দ্রুতই সতেজতা ফিরে পাওয়া যায়।

এছাড়া শরবতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ, যা আমাদের শরীরের শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া হলে বেলের শরবত খাওয়া যেতে পারে। ডায়রিয়া ফলে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। বেলের শরবত খেলে পানি ও লবনের চাহিদা দ্রুত পূরণ করা সম্ভব।

এছাড়া যাদের কেষ্ঠকাঠিন্য রোগ রয়েছে তারাও বেলের শরবত খেয়ে দেখতে পারেন। এক সপ্তাহের মধ্যে কেষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। বেলের শরবত খেলে আমাদের শরীরের রক্ত পরিশোধিত হয়। কেননা বেলের শরবতে রয়েছে বিভিন্ন উপকারী এনজাইম।

ম্যালেরিয়া, যক্ষা, আর্থ্রারাইটিসের মত জটিল রোগে রোগে আক্রান্ত হলে ডাক্তারেরা বেলের শরবত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই জটিল রোগগুলো থেকে সুস্থতায় বেলের উপকারিতা পাচ্ছেন।

লিভারের জন্য আবার বেলের শরবত খুবই উপকারী। বেলে শরবতে থাকা বিটা কেনটিন আমাদের লিভারকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। তাই যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত বেলের শরবত খেয়ে দেখতে পারেন

পাকা বেল খাওয়ার নিয়ম

পাকা বেল স্বাদে খুব মিষ্টি হয়ে থাকে এবং এটি খুব নরম হয়। তাই পাকা বেল শরবত বানিয়ে খাওয়া সবচেয়ে উপযুক্ত। একটি বেল পাকা কিংবা কাঁচা কিনা সেটা খুব সহজেই বের করে করা যায়। এর জন্য প্রথমে বেলের উপর আস্তে আস্তে টোকা দিয়ে যেতে হবে।

যদি বেলের ভেতর ফাঁপা শব্দ আসে সেক্ষেত্রে বুঝে নিতে হবে যে বেলটি পাকা। পাকা বেল কিছুটা রসালো হওয়ার কারণে এর শরবত বানানো খুবই সহজ। শরবত বানাতে হলে প্রথমে বেলের বাইরের দিকে শক্ত আবরণটিকে ভাঙতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে বাইরের অংশটি ভাঙ্গার সময় যাতে ভেতরের অংশগুলো বাহিরে বের না হয়ে যায়।

ভিতরে অংশটি একটি বড় পাত্রে আলাদা করে নিয়ে তাতে পানি ও চিনি দিয়ে মেশালেই পাকা বেলেত শরবত প্রস্তুত করা যায়। এই শরবত আপনি বরফ সহযোগে যেকোনো সময় খেতে পারেন।

তবে মনে রাখা প্রয়োজন, একবার বেলের শরবত বাড়ানো হলে সেটি ১২ ঘণ্টার মধ্যেই খেয়ে নেওয়া উচিত। নয়তো সেই শরবতে গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। তবে টাটকা খেলে বেলের উপকারিতা পাওয়া যাবে শতকরা একশ ভাগ।

খালি পেটে বেল খাওয়ার উপকারিতা

পেট পরিষ্কার রাখতে হলে খালি পেটে বেল খাওয়া উচিত। খালি পেটে বেল খেলে আমাদের পেট সারাদিন পরিষ্কার থাকে এবং আলসারের মতো ভয়াবহ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এছাড়া সকালে খালি পেটে বেল খেলে সারাদিন ভালো কাটে বলে অনেকেই মনে করেন। বেল যেহেতু আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, তাই খালি পেটে বেল খেলে ক্ষুধামন্দা থেকেও রেহাই পাওয়া। যাদের ওজন কম এবং ওজন বৃদ্ধি করার চিন্তা করছেন তারা সকালে খালি পেটে বেল খেতে পারেন।

বেলের উপকারিতা ও  অপকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন: কচি বেলের উপকারিতা কি?

উত্তর: কচি বেলে রয়েছে ভিটামিন সি, যা আমাদের খাদ্য শরীরের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে ভিটামিন সি আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ কাজকর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই কচি বেল খেলে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করা সম্ভব। পাকা বেলের চেয়ে কচি বেলে বেশি খনিজ উপাদান রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করেছেন।

প্রশ্ন: বেলের গুড়া কি উপকারি?

উত্তর: বর্তমানে বাজারে বেলের গুড়া নাম নামে একটি কৌঠাজাত পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। বেলকে গুঁড়ো করে এটি বানানো হয়। বেলের গুড়ায় রয়েছে ভিটামিন এ, যা আমাদের লিভারকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া বেলের গুড়া খেলে আমাশয় কিংবা আলসার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। যারা আলসারের ভুগছেন তারা বেলের গুড়া খেয়ে দেখতে পারেন।

প্রশ্ন: বেলের বিচি কি খাওয়া যায়?

উত্তর: হ্যাঁ, বেলের বিচি খাওয়া যায়। বেলের বিচিতে আলাদা কোন পুষ্টিগুণ নেই। কিন্তু ভুলক্রমে বা ইচ্ছাকৃতভাবে বেলের বেশি খেয়ে ফেললে কোনো অসুবিধা হবে না। বেলের বিচি প্রথমে আমাদের পাকস্থলীতে গিয়ে সেখানেই বিভিন্ন এসিডে পুরোপুরি দ্রবীভূত হয়ে যাবে। বেলের বিচিতে কোনো বিষাক্ত পদার্থ না থাকায় এটি আমাদের জন্য শরীরের কোন ক্ষতি করে না।

প্রশ্ন: আমাশয়ে বেল কিভাবে কাজে লাগে?

উত্তর: যাদের আমাশয় রোগ হয়েছে তাদের জন্য বেল একটি খুবই উপকারী ফল। বেলের শরবত খেলে আমাশয় থেকে অতি দ্রুত রেহাই মেলে। বেলের আঁশ অত্যন্ত মসৃণ হওয়ায় এটি খেলে পাকস্থলী পরিষ্কার হয় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। আমাশয় ছাড়াও যাদের কেষ্ঠকাঠিন্যর রোগ রয়েছে তাদের জন্য বেল বেল শরবত শতভাগ কার্যকর। আমাশয় রোগে অন্যান্য যেকোনো চিকিৎসার চেয়ে বেলের উপকারিতা পাবেন সবচেয়ে বেশি।

এখন তো জেনে নিলেন বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা, পাশাপাশি আরো জেনে নিন–


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Farhan Mahin

Author: Farhan Mahin

ফারহান মাহিন পড়াশোনা করছেন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

শর্করা জাতীয় খাবার কি কি

শর্করা জাতীয় খাবার কি কি?

আজকে আমরা জানবো খাদ্যের প্রধান ছয়টি উপাদানের মধ্যে অন্যতম শর্করা জাতীয় খাবার সম্পর্কে। শর্করা, যাকে ইংরেজিতে কার্বোহাইড্রেট বলা হয়, মানবদেহের
প্রোটিন জাতীয় খাবার

খাদ্য তালিকায় রাখুন প্রোটিন জাতীয় খাবার

আমরা জানি, পুষ্টি বিজ্ঞানীরা খাদ্যের উপাদানগুলোকে মোট ছয়টি প্রধান ভাগে ভাগ করেছেন। যার মধ্যে একটি হচ্ছে প্রোটিন, যাকে বাংলায় বলি
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার কেন খাবেন?

জেনে নিন ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার কেন খাওয়া উচিত

ক্যালসিয়াম একটি অতি প্রয়োজনীয় খনিজ পুষ্টি উপাদান, যা বিভিন্ন খাদ্য, যেমন দুগ্ধজাতীয় খাদ্যে পাওয়া যায়। মানবদেহের হাঁড় এবং দাঁতের প্রায়
ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার

ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার কেন খাবেন?

ভিটামিনকে বাংলায় বলা হয় খাদ্যপ্রাণ। খাদ্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ভিটামিনকেই বিবেচনায় আনা হয়। ভিটামিন আবার ছয় প্রকার, যার

2 Replies to “বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা”

Leave a Reply