ভূমিকা
বিজ্ঞানের রসায়ন শাখার উৎপত্তি কিভাবে? জি, আপনি ঠিকই পড়েছেন, আজকের এই আলোচনায় আমরা রসায়নের ইতিহাস নিয়ে কথা বলবো। আর আমরা মনে করি, আপনি যদি মনোযোগ দিয়ে আমাদের আজকের আলোচনাটি পড়েন তাহলে আপনি রসায়ন শাখার উৎপত্তি কিভাবে হলে সেটা জানতে পারবেন।
রসায়ন, বিজ্ঞানের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এককভাবে একথাও বলা যায় যে, বিজ্ঞানের অনেক শাখাই আছে যা রসায়ন ছাড়া চিন্তা করা সম্ভব না। মানুষ যখন থেকে আগুন জ্বালানো শিখেছে তখন থেকেই রসায়নের ব্যাপারে তাদের প্রাথমিক জ্ঞান থাকার একটি নিরেট সম্ভাবনা পাওয়া গিয়েছে।
যেমন, কয়েক লক্ষ বছর আগে পাহাড়ের গুহাতে যেসব ছবি আঁকা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে, সেগুলো আসলে কয়েকটি তরলকে একত্রিত করে বানানো। আর এই ঘটনা থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে, আসলে কয়েক লক্ষ বছর আগেও রসায়ন শাস্ত্রে মানুষ ভালভাবেই পরিচিত ছিল। তবে সেটা সম্পূর্ণ ব্যবহারিক বলেই ধরে নেয়া যায়।
কথা না বাড়িয়ে চলুন আমরা আমাদের মূল আলোচনা শুরু করি।
বিজ্ঞানের রসায়ন শাখার উৎপত্তি কিভাবে?
রসায়ন পাঠ্য বিষয় হিসাবে যেমন অতীব গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি, বিজ্ঞানের অনেক আবিষ্কারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা আমাদের আজকের আলোচনায়, বিজ্ঞানের রসায়ন শাখার উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আমাদের আলোচনার শুরুতে আমরা রসায়ন শব্দের উৎপত্তি এবং ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা জানার চেষ্টা করবো কিভাবে রসায়ন বিষয়টির আবিষ্কার হল এবং বাস্তব জীবনে কিভাবে রসায়ন প্রভাব বিস্তার করেছে।
এছাড়াও আমরা বিভিন্ন সময়ে রসায়নের উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ইতিহাস জানার চেষ্টা করবো। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষের বাস্তবিক প্রয়োজনীয়তা কিভাবে রসায়নের মত বৈজ্ঞানিক বিষয়কে আবিষ্কার করতে উৎসাহিত করেছে সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা।
(আপনারা চাইলে ঘুড়ি লার্নিং এ এইচ এস সি বিজ্ঞানের কোর্স করে নিতে পারেন)।
চলুন আর সময়ক্ষেপণ না করে আমরা আমাদের মূল আলোচনার দিকে মনোনিবেশ করি
রসায়ন শব্দের উৎপত্তি
রসায়ন শব্দটির একটি আকর্ষণীয় ইতিহাস আছে। এখন আমরা সে সম্পর্কে আলোচনা করবো। চলুন শুরু করা যাক। মধ্যযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীরা পরশপাথর নামক একটি পদার্থের সন্ধান করছিলেন, এবং এই পরীক্ষারত অবস্থায় তারা একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। আর এই নতুন পদ্ধতিকে তারা আলকামিস্তা বা আলকেমি নামে ডাকা শুরু করেন।
বলে রাখা ভাল যে, এই আলকেমি শব্দটি একটি আরবি শব্দ আলকিমিয়া থেকে এসেছে। মজার বিষয় হচ্ছে, এই আলকিমিয়া শব্দটি আবার অন্য আরেকটি আরবি শব্দ কিমি থেকে এসেছে। পরবর্তীতে এই কিমি শব্দ থেকে সময়ের সাথে সাথে কেমিস্ট্রি (Chemistry) বা রসায়ন শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। মজার না ব্যাপারটা?
আলকিমি বা আলকেমি শব্দের উৎপত্তি
আসুন আমরা আরও একটু গভীরভাবে এই শব্দটির ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করি। আলকেমি বা আলকিমি শব্দটি দুটি আলাদা শব্দের সংযুক্ত রূপ। প্রথম শব্দ “আল” যেটির অর্থ দাঁড়ায় ইংরেজিতে “দি (The),” আর কিমি বা কেমি শব্দের অর্থ হচ্ছে কালো মাটি যা মিশরের নীল নদের তীরে পাওয়া যায়।
বিজ্ঞানে রসায়নের শাখার ইতিহাস
প্রকৃতপক্ষে, মিশরকে রসায়নের জন্মভূমি বলা হয়। কারণ তৎকালীন মিশর বিজ্ঞানের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। তারা তাদের মৃত দেহকে মমি তৈরি করে রাখার জন্যে অনেক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করতো।
যদিও শোনা যায় যে, প্রাচীন গ্রীসেও তৎকালীন সময়ে রসায়নের চর্চা শুরু হয়েছিল এবং তারা ভালভাবেই বুঝেছিল যে ভবিষ্যত বিজ্ঞানে রসায়ন ব্যপক ভুমিকা রাখতে চলেছে।
তৎকালীন সময়ে তারা এলিক্সির কিংবা জীবন সঞ্জীবনী আবিষ্কারের উপরে বিশেষভাবে গুরুত্তারোপ করেছিল কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যে, মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকতে চায় কিংবা অন্য কথায় বলতে গেলে মানুষ অমর হতে চায়। যদিও তৎকালীন ভারতীয় ঋষি–মহাঋষিরাও এমন কিছু তৈরি করতে চাইতেন। আর তারা একে পরশ পাথর বলে অভিহিত করতেন।
প্রাচীনকালে রসায়ন একটি গোপন বা গুপ্ত বিদ্যা বলে পরিচিত ছিল। তখন রসায়নবিদ কিংবা এই সম্পর্কে আগ্রহী মানুষেরা গোপনে লোকচক্ষুর আড়ালে তাদের পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতে পছন্দ করত। কারণ, সাধারণ মানুষেরা অতি উৎসাহী প্রকৃতির হয়ে থাকে।
তারা সবধরণের নতুনত্বে আগ্রহ প্রকাশ করে, কিন্তু কিছদিন যেতে না যেতেই তারা আবার অন্য জিনিসের প্রতি আগ্রহী হয়ে যেত। প্রাচীন রসায়নবিদেরা মনে করতেন যে, তাদের পরীক্ষা–নিরীক্ষার মধ্যে সাধারণ মানুষেরা বাধা–বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। তাই গোপনে এইসব পরীক্ষা–নিরীক্ষা হত।
একজন প্রাচীন মুসলিম রসায়নবিদের গল্প
অবাক হচ্ছেন? গল্প বলতে যাচ্ছি বলে? আসলে এই গল্পটি রসায়নের ইতিহাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। আর আপনি এই গল্প এবং গল্পের মানুষদের সম্পর্কে যদি না জানতে পারেন তাহলে আপনার রসায়নের ইতিহাস জানাটা অপূর্ণ থেকে যাবে। চলুন কথা না বাড়িয়ে আমরা গল্পটি পড়ে ফেলি।
গ্রীসের রসায়নবিদেরা যেই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন কিংবা রসায়ন সম্পর্কে তারা যে চর্চা করতেন, তারসাথে একজন মুসলমান খুব ভালভাবে পরিচিত ছিলেন। তার নাম হচ্ছে, জাবির ইবনে হাইয়ান। তার পিতা একজন গুপ্তবিদ্যা চর্চাকারী ছিলেন।
তিনি গ্রীসে রসায়নের এই চর্চা হতে দেখেন আর জ্ঞ্যানার্জনের পর আরবীয় অঞ্চল তথা নিজ জন্মভূমিতে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে একটি মাইলফলক তৈরি করেন রসায়ন সম্পর্কে তার অগাধ জ্ঞ্যানের সাহায্যে।
তিনি রসায়ন শাস্ত্রের উপর প্রায় ১০৮ টি গ্রন্থ রচনা করেছেন যেগুলো পরবর্তীতে আধুনিক বিজ্ঞানীদের তাদের গবেষণা কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।আর তার এই অবদানের জন্যে তাকে প্রাচীন রসায়নের জনক বলে অভিহিত করা হয়।
উপসংহার
আমরা আমাদের আজকের আলোচনার একেবারে শেষ পর্যায়ে পৌছে গিয়েছি। আপনি যদি এখনও আমাদের পুরো লেখাটি মনোযোগ দিয়ে না পড়ে থাকেন তাহলে অনুরোধ করবো আরও একবার পুরো আর্টিকেলটি পড়ে আসুন। তাহলেই আপনি খুবই ভালভাবে জানতে এবং বুঝতে পারবেন যে, বিজ্ঞানের রসায়ন শাখার উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে।
আরো পড়তে পারেন-