(৭)
ইন্টারনেট ইউজিং সিস্টেম কোর্সে ভর্তি হয়েছি। বাসায় কম্পিউটার আছে। কম্পিউটারের বেসিক জিনিস গুলো ভাইয়ার কাছ থেকে শিখে নিয়েছি। ইন্টারনেট এর ব্যবহার শিখার জন্য ভর্তি হয়েছি। e-mail, web, Internet browsing system শিখা হয়ে গেছে। ইন্টারনেট ইউজ এর আরো বিভিন্ন system আছে সেগুলো শিখবো। এখন good student দের সারির একজন। নিয়মিত ক্লাসে যাই। মাঝে মাঝে অনিকের সাথে দেখা হয়। অনিক বলে- কেমন আছ?
ভালো, আপনি কেমন আছেন?
হ্যাঁ আমি ভালো আছি।
ক্লাস শুরু হবে আসি স্যার?
অনিক নিরব দাঁড়িয়ে থাকে। এই পর্যন্ত কথা হয় আমাদের। তবুও মনে হয় এইটুকুর মাঝে কি যেন একটা গভীর সম্পর্ক লুকিয়ে আছে! কি যেন একটা ভাব! আরো অনেক স্টিউডেন্ট আছে তাদের সাথে কথা হয় অনিকের কিন্তু কই সে রকমতো কিছু বুঝা না। আমি মাঝে মাঝে ইংলিশ ক্লাস করতাম। কখনও ক্লাসে গিয়ে দেখি অনিক স্যার। ক্লাসে অনিক আমাকে ই বেশি কেয়ার করত। আমার সেটা ভালো লাগে না। কারণ কেউ কেউ সেটা লক্ষ্য করে আড়ালে আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করে। শেষে ইংলিশ ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দেই। অনিক স্যার জিজ্ঞেস করেছিলেন,
কি ব্যাপার তুমি ইংলিশ ক্লাসে আস না কেন?
ইংলিশ ক্লাসে যেতে এখন আর ভালো লাগে না তাই যাই না!
স্যার আর কিছু বলেন নি কারণ তিনি জানতেন “যা ভালো লাগে না তা কখনোই করতে ভালো লাগে না যদি না নিজের ইচ্ছা হয়”।
আমার মনে হয় স্যার বুঝতে পারেন কি জন্য ক্লাসে যাই না।
আজ শুক্রবার, ফযরের নামায পড়ে ঘুমাই নি। শীতের সকাল ঠান্ডা পড়েছে খুব বেশি। কুয়াশায় ঢেকে আছে গোটা পরিবেশ। থ্রি কোয়ার্টার একটা উলের সুয়েটার, উলের পায়জামা, পায়ে মোজা, মাথায় গলাবন্ধ টুপি পরে জগিং করতে দক্ষিণের খোলা মাঠের দিকে যাই। মাঠের একপাশে খোলা মাঠ আর অন্যপাশে ধান- ক্ষেত আছে, সবজিক্ষেত করা হয়েছে। দশ পনের মিনিট মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে একা ভালো লাগে না বাসায় চলে আসবো হঠাৎ দূরে মাঠের ঐ পাশে দেখি একজন মানুষ জগিং করছে। একটু এগিয়ে যাই দেখি লোকটাও এদিকে আসছে। কুয়াশা কেটে গেছে কিন্তু ঘাসের উপর এখনও শিশির (due) ঝলমল করছে। ভোরের পরিবেশ বেশ পরিষ্কার হয়ে আসছে। লোকটা কাছে এগিয়ে আসতে চমকে উঠি এত অনিক। ভাবী পিছন ফিরে চলে যাই, পারিনি এতক্ষণে উনি আমাকে চিনতে পেরে দৌড়ে কাছে এসে বলেন
-আরে আপনি? এই খোলামাঠে সাজ সকালে এমন নির্মল পরিবেশে আপনার সাথে দেখা হবে ভাবিনি।
বললাম – জগিং করতে বের হয়েছিলাম।
আপনি একা।
হ্যাঁ। স্যার আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন।
ও হ্যাঁ ঠিক আছে তুমি করেই বলব, তুমিতো আমার ছোটই। আচ্ছা, তুমার সাথে অনেকদিন থেকে পরিচয় কিন্তু তুমার নাম এখনও জানতে পারলাম না।
আমার নাম অধরা জান্নাত!
অধরা! খুব সুন্দর নাম। নামের অর্থ জান?
জানি, যা ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গুড, তা তুমি কোন ক্লাসে পড়?
এস. এস. সি ফাইনাল এক্সেম দিয়েছি!
ও আচ্ছা। রেজাল্টের সময়তো প্রায় চলে এসেছে। কি রকম রেজাল্ট আশা কর?
A+ এর আশা করছি না তবে নিশ্চিত A পাব। স্যার, আপনার রেজাল্ট বের হয়েছে?
হ্যাঁ, আমি ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছি।
অনেক ভালো রেজাল্ট আপনার, এখন কি করবেন? ভাবছি দেখি কি করা যায়।
অধরা তুমাদের পরিবারে কে কে আছে?
বাবা মা আছেন। আমরা তিন বোন এক ভাই। আমি সবার ছোট। স্যার আপনার?
আমরা দুই ভাই দুই বোন। আমি সবার বড়। মা নেই। বাবা আছেন।
মা নেই শুনে কষ্ট লাগছে। কোন কথা বলতে পারলাম না শুধু একবার অনিকের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে প্রায় নদীর ধারে চলে এসেছি।
বললাম- স্যার চলুন এবার ফিরা যাক, দিনের আলো একেবারে ফর্সা হয়ে গেছে।
পিছন ফিরে হাঁটতে শুরু করি অনিক ও নিরবে পাশে হাঁটছে। অনেকক্ষণ পর বললেন-অধরা তুমি কি প্রতিদিন জগিং করতে আস?
না, মাঝে মাঝে আসি।
এভাবে আরেকদিন হয়তো তুমার সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে। আজ তাহলে আসি। বলেই স্যার তার বাসার অভিমুখে রওয়ানা দেন এবং আমি ও বাসায় চলে আসি।
ভালো লিখেছেন কবি