লেবুর উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা

0

লেবু (সাইট্রাস লিমন) নামটা শুনলেই আমাদের চোঁখের সামনে ভেসে উঠে উপবৃত্তাকার সবুজ বা হলুদ একটি ফল । যা আমাদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।এই জনপ্রিয় ফল যা ব্যবহারে খাবারের স্বাদে ভিন্নতা অনুভূত হয়, লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। চর্মরোগ থেকে রক্তস্বল্পতা সবকিছুতেই লেবু দরকারি। লেবু- পানি বা, লেবুর শরবর পান করলে ক্লান্তি দূর হয়। এর লেবুর উপকারিতা এবং অপকারিতা নিয়েই এই লেখাটি।

একটি 58 গ্রামের লেবু 30 মিলিগ্রাম এর বেশি ভিটামিন সি সরবরাহ করতে পারে ।ভিটামিন-সি সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। এর অভাবে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই নিবন্ধটিতে লেবুর পুষ্টিগুণ, সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা, খাবারের লেবুর ব্যবহারের উপায় এবং অতিরিক্ত লেবু ব্যবহারের সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

লেবুর উপকারিতাঃ

লেবুর উপকারিতা অগণিত। ফলটি ভিটামিন সি এর সমৃদ্ধ , যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। লেবুর রসে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা জীবাণুনাশক হিসেবে বা পরিষ্কারের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।

লেবুতে পাওয়া উচ্চ মাত্রার ফোলেট স্বাস্থ্যকর কোষের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে, এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলির মাধ্যমে ক্ষতির বিরুদ্ধে কোষগুলিকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। এমনকি, বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া যাচ্ছে যে লেবুর ক্যান্সারের চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে!

চুলের জন্য লেবুর উপকারিতাঃ

লেবুর রস প্রাকৃতিক চুলের লাইটার হিসাবে কাজ করতে পারে এবং আপনার চুলকে প্রাকৃতিকভাবে চকচকে করে দিতে পারে। লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড মাথার ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। লেবুতে পাওয়া প্রাকৃতিক তেল তাপ ড্রায়ার এবং কার্লিং আইরনের মতো স্টাইলিং টুলগুলোর মাধ্যমে হওয়া ক্ষতির হাত থেকে আপনার চুলকে সুরক্ষায় সহায়তা করে।

চুলের জন্য লেবুর কিছু উপকারিতা :

১) লেবু প্রাকৃতিক চুলের লাইটার হিসাবে কাজ করতে পারে
২) সাইট্রিক অ্যাসিড আপনার মাথার ত্বককে সুস্থ রাখে
৩) লেবুর তেল তাপের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে
৪)লেবুর ফাঙ্গাস-রোধী উপাদান মাথার ত্বকের সংক্রমণ দূর করে
৫)মাথার ত্বকে লেবু ঘষা হলে তা লোমকূপ উন্মুক্ত করে গোড়া থেকে খুশকি দূর করে

ত্বকে লেবুর উপকারিতাঃ

লেবু ভিটামিন সি এর দুর্দান্ত উৎস এবং এটি ত্বককে সতেজ রাখতে সহায়তা করে। লেবুতে থাকা অ্যাসিডিক বৈশিষ্ট্যগুলি আপনার ত্বকের ছিদ্রগুলি পরিষ্কার করতে সহায়তা করতে পারে, যা আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলি সরিয়ে আনা সহজ করে।

আপনি ত্বকে লেবু রাখলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তা ত্বকের ছিদ্রগুলি আরও শক্ত করতে এবং তাদের আরও ছোট করে তুলতে সহায়তা করে। লেবুও ত্বকে দাগ বা বয়সের দাগ হালকা করার একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক উপায়!

পাতি লেবুর উপকারিতাঃ

পাতি লেবু বা কাগজি লেবুর গাছ প্রায় আমাদের সবার বাড়িতে দেখা যায়। এটি একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। আয়ুর্বেদ অনুসারে, এটি অনেক রোগ নিরাময়ে সক্ষম। কানের রোগ সারাতে পাতিলেবুর রস খুব উপকারী। রুচিহীন ব্যক্তির রুচি ফেরাতে এবং গলা ব্যথা সারাতে এই লেবুর রস গরম জলে দিয়ে গারগেল করলে খুব তাড়াতাড়ি ফল মেলে। সকালবেলা এই লেবুর রস জলে গুলে খেলে লিভার ভালো থাকে

এছাড়া মাথার যন্ত্রণা ও বাতের ব্যথা সারাবার ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকরী। মজার বিষয় চোখের জ্যোতি বাড়াতে এই পাতিলেবুর রসের ফোটা অমূল্য। উপরন্ত বহুমূত্র ব্যধি এবং প্রস্রাবের সমস্যা নির্মূল ক‍রতে এটি এক কথায় অনবদ্য।

গরম জলে লেবুর রসের উপকারিতাঃ

লেবুর রস এমন একটি ফল যা এর অনেক উপকারী। সর্বাধিক জনপ্রিয় সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হ’ল গরম পানিতে লেবুর রস পান করা যা আপনার রক্তচাপ হ্রাস করে এবং আপনাকে সারা দিনে আরো শক্তির জোগান দেয়।

আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সর্দি কাটানোর জন্য এটি সাহায্য করে! এই পোস্টে, আমরা আলোচনা করব কীভাবে লেবুর রস আমাদেরকে আরো স্বাস্থ্যকর করে তুলতে পারে। চলুন জেনে নেই-

১)ওজন কমাতে সাহায্য করে:

আপনি যদি ডায়েট করার চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন, তাহলে লেবু পানিকে আপনার সেরা বন্ধু হিসেবে বেছে নিতে পারেন। লেবুতে আছে পলিফেনলস যা ক্ষুধা নিবারণে সাহায্য করে। এছাড়া খাওয়ার আগে পানি পান করলেও ক্ষুধা কিছুটা কম লাগে।

সকালে উঠে যদি আপনার কমলার জুস পানের অভ্যাস থাকে, তাহলে অভ্যাসটি বদলে লেবু পানি পানের চেষ্টা করুন। কারণ কমলার জুসে ক্যালরি থাকে যাতে আপনার ওজন বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৮-১২ আউন্স নরমাল বা ঠান্ডা পানিতে পুরো একটি লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তবে ওজন কমানোর জন্য ঠান্ডা লেবুর পানিই বেশি কার্যকরী।

২) বয়স ধরে রাখে:

ভিটামিন সি বলিরেখার সম্ভাবনা অনেকটা কমিয়ে আনে। ভিটামিন সি-তে আছে কোলাজেন যা ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে।

৩)হজম শক্তি বাড়ায়:

লেবু পানিতে যে এসিড রয়েছে তা খাবার হজম করতে সাহায্য করে। এতে আছে সাইট্রাস ফ্লাভোনইডস যা পাকস্থলীতে খাবারকে ভেঙে সহজেই হজম করে। বয়সের সাথে সাথে হজম ক্ষমতা কমে যায়।

৪)ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী:

লেবুতে যে ফাইবার আছে তা আপনার শরীর ভাঙতে পারে না বলেই ব্লাড সুগার লেভেলে এর জন্য কোনো প্রভাব পড়ে না।

৫)ক্লান্তি দূর করে:

গরমের দিনে আমাদের শরীর প্রচণ্ড ঘেমে যায়। ফলে শরীরে ব্লাড সুগার লেভেল কমে যায় এবং আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই। লেবু পানিতে চিনি মিশিয়ে পান করে নিলে ব্লাড সুগার লেভেল বেড়ে যায় এবং ক্লান্তিটা আর থাকে না।

৬) লিভারের কার্যক্রম সচল রাখে:

লিভার আপনার শরীরে ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। লেবুর সাইট্রাস ফ্লাভোনইডস‌ লিভার থেকে বর্জ্য ফেলে দিতে ও লিভারের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। তাই লিভারকে সুস্থ রাখার জন্য লেবু পানি খুব উপকারী।

৭)মুখের দুর্গন্ধ হতে দেয় না:

লেবুতে যে সাইট্রাস আছে তা সহজেই মুখের ভেতর ব্যাকটেরিয়া হওয়ার আশঙ্কা রোধ করে। আর তাই মুখে দুর্গন্ধ হয় না। তবে লেবুর এসিড দাঁতে অতিরিক্ত পরিমাণ পড়লে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই মাঝে মাঝে স্ট্র দিয়ে লেবু পানি পান করতে পারেন।

জ্বরে লেবুর উপকারিতাঃ

আমরা অসুস্থ থাকাকালীন জ্বর হ’ল অন্যতম সাধারণ লক্ষণ যা আমরা অনুভব করি। এটি কোনও সংক্রমণ বা অন্যান্য অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে এবং এটি কাঁপুনি, কাঁপুনি, ঘাম এবং গরম অনুভূতি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। আপনার যদি জ্বর হয়, তবে এমন কিছু প্রাকৃতিক প্রতিকার রয়েছে যা আপনাকে আপনার দেহের তাপমাত্রা হ্রাস করতে এবং আরও ভাল বোধ করতে সহায়তা করতে পারে

লেবু একটি দুর্দান্ত ফল যার অনেকগুলি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। আসলে, এটি সেখানে সবচেয়ে উপকারী ফল! জ্বরে লেবুর উপকারিতা রয়েছে, গলা ব্যথা নিরাময় থেকে শুরু করে অস্থির পেট থেকে মুক্তি দিতে পারে লেবু।

বিভিন্ন রোগে লেবু কীভাবে ব্যবহার করা যায় তার কয়েকটি উদাহরণ নীচে দেওয়া হল:

  • মধু ও আদা মিশ্রিত লেবুর রস যেসব ব্যক্তির কাশি এবং সর্দি আছে তাদের জন্য দুর্দান্ত পানীয় তৈরি করে
  • লেবুতে পটাশিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
  • কাঁচা লেবুর রস সহ এক গ্লাস হালকা গরম জল অম্বল বা বদহজম থেকে মুক্তি দেয়

 

তাই বলা যায় যে জ্বরের এক প্রতিকার হ’ল লেবু জল পান করা – জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পক্ষে এটির অনেক উপকার রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে!

লেবুর উপকারিতা

লেবুর অপকারিতা বা, ক্ষতিকর দিকঃ

অতিরিক্ত ওজন যেমন খারাপ তেমন এটা নিয়ে চিন্তাও থাকে অনেকেই। অর্থাৎ ওজন কমানো নিয়ে মাথা নষ্ট হয় না, এমন মানুষ পাওয়া হয়ত যাবেই না। অনেকে ডায়েট এবং কসরত করেই ওজন কমানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। অনেকে আবার বিরক্ত হয়ে ছেড়েও দেন। তবে যদি একটু সঠিক তথ্য জানা যায়, তবে ওজন কমানো যায় সহজেই প্রাকৃতিকভাবে

প্রাকৃতিকভাবে কমাতে গিয়ে আমরা সঠিক পরামর্শের অভাবে শরীরের ক্ষতিও করে ফেলি।সহজে ওজন কমানোতে এই ট্রিকস সবাই ব্যবহার করি। তবে এতে যে ক্ষতি আছে সেটা হয়ত কম মানুষই জানে। চলুন, অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ক্ষতিগুলো দিকগুলো জেনে নেই-

১. অত্যধিক লেবু খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়।
২. মুখের মধ্যে থাকা নরম কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে মুখের মধ্যে ফোড়া বা ফুসকুড়ি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
৩. খালি পেটে লেবু খেলে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক পেপসিন ভেঙে যায়, যে পেপসিন আমাদের হজমে সাহায্য করে।
৪. অতিরিক্ত লেবু খেলে অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়, বারবার বাথরুম পাওয়া, শরীর শুকনো হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়।
৫. অতিরিক্ত সাইট্রিক অ্যাসিড শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই মাত্রা প্রয়োজনাতিরিক্ত হলে কিন্তু মুশকিল।
৬. সাইট্রাস মাইগ্রেন বাড়ায়। তাই যাঁদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তাঁদের এমনিই লেবু জাতীয় ফল না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

লেবু খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য খুব ভালো কিন্তু অতিরিক্ত খেলে কী অসুবিধে হতে পারে, খেয়াল করুন সেগুলোও। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

 

প্রশ্নোত্তরঃ

মুসম্বি লেবুর উপকারিতা গুলো কি কি?

এই লেবুতে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি খনিজ পদার্থ পাওয়া যায়। ত্বক উজ্জল করে, চুলের যত্নেও মুসম্বি লেবু ব্যবহার করা হয়। অন্য সব লেবুর মতো এই লেবুতেও ভিটামিন সি রয়েছে।

পাকা লেবু কি কাচা লেবুর চেয়ে উত্তম?

হ্যাঁ, পাকা লেবু কাচা লেবুর চেয়ে উত্তম। ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি আর্টিকেল অনুসারে কাচা লেবুর চেয়ে পাকা লেবুই উত্তম। কাচা হোক বা, পাকা, সব ধরণের লেবুতেই উপকার আছে। কারো শারিরিক সমস্যা থাকলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে লেবু খাবেন।

লেবুর খোসায় কি ভিটামিন?

লেবুর খোসায় রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং ফাইবার। এটি হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে এবং শরীরে বিভিন্নরকম পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে যা আমাদের শরীরের জন্য দরকারি। ভিটামিন সি এর সাথে বাকি উপাদানগুলো পেতে লেবুর খোসাও খেতে পারেন।


কি মনে হয়, লেবু খেয়ে কি আপনি উপকার পেয়েছেন, নাকি ক্ষতি হয়েছে? কমেন্টে জানান

 

আরো পড়ুন-  


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

খালি পেটে রসুন ও মধু খেলে কি হয়?

আপনার যদি নিয়মিত কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তবে নিশ্চিত থাকুন যে আপনি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যবান। কারণ খাবারের

ওজন বাড়ানোর উপায়

ওজন কিভাবে বাড়ানো যায়? আজকে একদম ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলবো ওজন বাড়াতে সকাল দুপুর রাতে কি খাবেন? কোন ধরনের ব্যায়াম করবেন?
Untitled design

কোন বয়সে কতটুকু ভাত খাবেন

আসসালামু আলাইকুম এশিয়া মহাদেশের ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। আর এজন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় ভাত খাওয়ার অভ্যেসকেই। প্রিয়

সাদা ভাত খাওয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

সাদা চাল আর লাল চালের মধ্যে পার্থক্য অনেক কোনটা আমাদের স্বাস্থ্যের কি উপকার আর অপকার করে তা আজকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলব।

Leave a Reply