ইমাম বুখারি রহ. এর জীবনী- লেখক ডট মি

ইমাম বুখারি (রহ.) এর জীবনী

1

পবিত্র কুরআনের পর যে কিতাবটি বিশ্বের সকল মুসলমানদের নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আস্থাভাজন, সেটি হচ্ছে “সহিহ বুখারি শরিফ।” আর পৃথিবীতে জ্ঞানের এক উজ্জ্বল আলোকবার্তিকার  নাম হচ্ছে ইমাম বুখারি (রহ.)। বিশেষকরে হাদিস শাস্ত্রে তাঁর অবদানের কারণে তাঁকে সবাই হাদিসের সম্রাট হিসেবে আখ্যায়িত করে। আজ আমরা এই জ্ঞানী গুণী মানুষটির জীবনী জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। 

সূচিপত্র

ইমাম বুখারির জন্ম 

ইমাম বুখারির জন্ম হিজরি সাল অনুযায়ী ১৯৪ হিজরির ১৩ই শাওয়াল।  এবং ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৯ জুলাই ৮১০ খ্রীস্টাব্দে। তাঁর জন্মের দিনটি ছিলো শুক্রবার। ঐদিন জুমার সালাতের কিছু পরই বুখরা নামক জায়গায় এই কীর্তিমানের জন্ম হয়। 

তাঁর নাম হচ্ছে মুহাম্মদ, আরব দেশের রীতি অনুযায়ী তাঁর উপনাম হচ্ছে আবু আব্দুল্লাহ, তাঁর উপাধি ছিলো আমিরুল মোমেনিন ফীল হাদিস, নাছেরুল আহাদিসিন নাবাবিয়্যাহ্‌ ও নাশেরুল মাওয়ারিছিল মুহাম্মদিয়াহ্‌। তাঁর পুরো নাম হচ্ছে,  আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল ইবনে ইব্রাহিম ইবনে মুগিরা ইবনে বরদিযবাহ জু’ফী আল বুখারি (রা.)।

ইমাম বুখারির বিবাহ

ইমাম বুখারির বিবাহ সম্পর্কে ইতিহাসবিদদের নানান মত লক্ষ্য করা যায়। তাই তাঁর বিবাহ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। অধিকাংশ আলেমের মতে ইলম অর্জন এবং হাদিস সংগ্রহের কারণে তিনি তাঁর জীবনে বিবাহ করতে পারেননি। এটাই মোটামুটি একপ্রকার জনশ্রুতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। 

কিন্তু কিছু কিছু আলেমের কিতাবে তাঁর ব্যাপারে এসেছে যে, তিনি বিবাহ করেছেন এবং সন্তান রয়েছে। তার কারণ এতবড় এলেমদার ব্যক্তি কখনোই বিবাহের মতো সুন্নাহ ছাড়া থাকতে পারে না। 

তাই  বিখ্যাত হাদিস বিশারদ হাফেজ যাহাবি (রহ.) তার বিখ্যাত কিতাব “সিয়ারু আলামিন নুবালা” যা ১৮ খন্ডে প্রকাশিত। সেই কিতাবের ১০ /১১০ নং পৃষ্ঠায়  ইমাম বুখারি (রহ.) এর একটি বড় ঘটনা উল্লেখ করেছেন। যেখানে তিনি মুহাম্মদ ইবনে হাতেম এর সাথে কথোপকথন করতে গিয়ে বলেন, “আমারা  তো (ইমাম বুখারি) প্রতিবেশী (তাঁর) ও স্ত্রী  রয়েছে, কিন্তু তুমিতো (মুহাম্মদ ইবনে হাতেম) অবিবাহিত।” অতএব এই  কথা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইমাম বুখারি (রহ.) বিবাহ করেছিলেন। 

একইভা‌বে “সিয়ারু আলমিন নুবালা” কিতাবের ১০ /১০৮ পৃষ্ঠায় ও “তাবাকাতুস সাবকী” এই কিতাবের ২/২২৭ ও “আল হাদিয়ুস সারী” কিতাবের ৫০৪ নং পৃষ্ঠায় ইমাম বুখারি (রহ.) এর ছেলে আহমদ সম্পর্কে একটি ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, বক্বর ইবনে মুনির বলেন, ইমাম বুখারি (রহ.) এর নিকট তাঁর (ইমাম বুখারি) ছেলে “আহমদ” কিছু ব্যবসায়ী জিনিস নিয়ে আসেন। অতপর তিনি কিছু ব্যবসায়ীকে একসাথে করেন………….. এভাবে শেষ পর্যন্ত। উল্লেখিত ঘটনা থেকে প্রমানিত হয় যে,  ইমাম বুখারি (রহ.) এর ছেলে ছিল, যার নাম ছিল আহমদ।

কিন্তু কিছু কিছু ইমাম বলেন, আমরা জানিনা ইমাম বুখারি (রহ.) বিবাহ করেছেন  কি না। এই তালিকায় আছেন, আল্লামা আজলুনি তার লিখিত কিতাব “এদায়াতুল বাদরীয়ীন” এর ৩ নং পৃষ্ঠায়, ও ইমাম হাকেম তার লিখিত কিতাব “মারেফাতু উলুমিল হাদিস”  এর মধ্যে ও আল্লামা শাওকানী, তাঁর লিখিত কিতাব “নাইলুল আওতার” এর মধ্যে ০১/০১  নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। উপরে উল্লেখিত ইমামদের কিতাব থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ইমাম বুখারির বিবাহ একটি রহস্যময় ব্যাপার। যে সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।

ইমাম বুখারির জীবনী ও অবদান

ইমাম বুখারির জীবন খুবই আশ্চর্যজনক দিকপালে ভরা। আমরা তাঁর জীবনীকে কয়েকটি ধাপে জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

পিতার মৃত্যু

জন্মের পরই ইমাম বুখারির জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, অল্প বয়সেই তাঁর পিতার মৃত্যু। তৎকালীন সমাজে একজন পিতা ছাড়া সন্তানদের বড় এবং প্রতিষ্ঠিত খুবই কঠিন একটি ব্যাপার। যে বয়সে তাঁর পিতার স্নেহ পাওয়ার কথা ছিলো সেই বয়সেই তাঁর পিতার মৃত্যু তাকে খুবই মর্মাহত করে। 

মায়ের লালনপালন

স্বামীর মৃত্যুর পর ইমাম বুখারির মা তাঁর দুই সন্তানকে মানুষ করার চেষ্টা করতে খুবই যুদ্ধ করেন। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, ইমাম বুখারি ছোট থেকেই ছিলেন অন্ধ! যা তাঁর মায়ের জন্য ছিলো খুবই বেদনার। 

অন্ধত্ব ঘোচান

ইমাম বুখারির আরেকটি বড় ভাই ছিলো। তাদের দুই ভাইকে নিয়ে স্বামীর অবর্তমানে তাঁর মা যথেষ্ট কষ্ট করতে থাকেন। দুঃখের এই অবস্থায় আরো বেদনার বিষয় ছিলো ইমাম বুখারির অন্ধত্ব! অর্থাৎ ইমাম বুখারি ছিলেন জন্ম থেকেই অন্ধ। তাই তাঁর মা খুবই পেরেশানিতে ছিলো। আর তাই তিনি প্রতিনিয়তই তার সন্তানের দৃষ্টি ফিরে পেতে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতেন। হঠাৎ এক দিন তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, আল্লাহর নবি ইবরাহীম (আ.) তাঁকে লক্ষ্য করে বলছেন,  “হে বুখারির মা, তোমার ছেলের চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে তোমার কান্নাকাটির জন্য,  তিনি তোমার সন্তানের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন।” তখন তিনি সাথে সাথেই ঘটনা যাচাই করার জন্য তার সন্তানের কাছে গিয়ে দেখতে পান, আসলেই সত্যিই তাঁর সন্তান সম্পূর্ণ দৃষ্টি শক্তি ফেরত পেয়েছে। 

পড়াশোনার শুরু 

অন্ধত্ব ঘোচানের পর তাঁর মা তাঁকে দ্বীনি শিক্ষা অর্জনের জন্য উৎসাহ ও সহযোগিতা করতে লাগলেন। যারফলে ইমাম বুখারির বয়স দশ বছর হওয়ার সাথে সাথেই তিনি জ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। এবং অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্ত করে ফেলেন। ছোটবেলায় মক্তবে পড়াশোনা করার সময়ই আল্লাহ তাঁর অন্তরে হাদিস অন্তস্থ, মুখস্ত ও তা সংরক্ষণ করার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। 

যেকারণে মাত্র ১৬ বৎসর বয়সেই তিনি হযরত ওয়াকি বিন জাররাহ (রহ.) ও ইবনে মোবারক (রহ.) এর হাদিস সংকলন মুখস্ত করেন। একইসাথে তিনি তাঁর মায়ের সাথে  হজ্জ্বে গমন করেন। হিজাজে তিনি জ্ঞানার্জনের চেষ্টা করেন। সেখানে ছয় বছর শিক্ষালাভের পর দেশে ফিরে আসেন। এরপর  তিনি হাদিস শিক্ষার উদ্দেশ্যে কুফা, বসরা, বাগদাদ, মিশর ও সিরিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমন  করেন।

হজ্জ্বে গমন ও কিতাব লিখন

পরবর্তীতে তিনি তাঁর মা ও তাঁর বড় ভাই আহম্মদের সাথে হজ্জ্বে যাত্রা করেন। হজ্জ্ব শেষে বড় ভাই ও মা ফিরে আসলেও তিনি মক্কা মুকাররামা ও মদীনা তাইয়্যেবাহবাতে কয়েক বছর অবস্থান করেন। সেখানে তিনি উভয় স্থানের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগণের কাছ  থেকে হাদিসের জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন। এই সময় তিনি কাযায়াস-সাহাবা ওয়াত-তাবিঈন” নামক তাঁর প্রথম কিতাব রচনা করেন। এরপর মদীনায় অবস্থানকালে চাঁদের আলোতে ‘তারিখে কবির’ রচনা করেন। 

পাঠদান

হাদিসের জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি কিতাব লেখার কারণে মাত্র আঠারো বছর বয়সে পূর্ণাঙ্গ মুহাদ্দিস রূপে সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ লাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তাঁর কাছে  হাদিস সংগ্রহের জন্য মুহাদ্দিসগণ আসতে লাগলেন। তাঁর জীবনের প্রথম দিকে জনসাধারণের সুবিধার্থে মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফের কাচারী ঘরে পাঠদান করতেন। 

এরপর তিনি যেখানেই গিয়েছিলেন সেখানেই পাঠদানের সংবাদ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এভাবেই তিনি নিশাপুর গিয়ে পাঠদানে মশগুল হলে সেখানকার জ্ঞানী গুণী ওলামাগণ তাঁর খিদমতে উপস্থিত হয়ে শিক্ষালাভ করতেন। বিশেষ করে ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ (রহ.) প্রতিদিন উপস্থিত হয়ে জ্ঞান অন্বেষণ করতে থাকেন। 

দান দক্ষিণা

ইমাম বুখারি (রহ.) ছিলেন মহৎ চরিত্রের অধিকারী। দুহাতে দান-খয়রাত করা তাঁর স্বভাবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি বাবার কাছ থেকে বিরাট ধন-সম্পত্তি পেয়েছিলেন তা তিনি সবই তাঁর গরীব দুঃখী ও হাদিস শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। 

শুধু তাইনয় তিনি ছিলেন খুবই স্বল্প ভোজী। এমনকি এমনও দিন গেছে কখনোও কখনও দুই তিনটি বাদাম খেয়ে সারাদিন পার করে দিয়েছেন। এভাবে দীর্ঘদিন কম আহারের ফলে একদিন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। 

কেননা তিনি বহু বছর তরকারী ছাড়াই রুটি খেয়ে দিন পার করছিলেন। এই কথা শুনে ডাক্তার তাকে জানায়, দীর্ঘদিন তিনি তরকারি ছাড়া শুকনাে রুটি খাওয়ার ফলে তাঁর পেটের আতুড়ী শুকিয়ে গেছে। তখন ইমাম বুখারি (রহ.) বললেন, “আমি চল্লিশ বছর ধরে শুকনাে রুটি খেয়ে আসছি আর এই দীর্ঘ সময়ে তরকারিতে হাত দেইনি।”

বাগদাদে তাঁর পরীক্ষা 

তখনকার সময়ে যখন হঠাৎ করেই ইমাম বুখারির কথা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তৎকালীন সময়ের বড় বড় মুহাদ্দিসগণ তাঁকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাই তিনি বাগদাদে আগমণ করলে, তখনকার চারশত মুহাদ্দিস একত্রিত হয়ে ১০০টি সহিহ হাদিস নির্বাচন করে তার সনদ ও মতন উল্টে পাল্টে দিয়ে ১০ ভাগে বিভক্ত করে দশজন মুহাদ্দিসদের হাতে দিলেন। তারপর তাঁর জন্য হাদিসের মজলিস স্থাপন করা হলো। যখন তিনি মজলিসে বসলেন তখন প্রথমে একজন মুহাদ্দিস  ১০টি হাদিস নিয়ে সেগুলো তাঁর কাছে পাঠ করতে লাগলেন। প্রতিটি হাদিস বলা শেষ হলেই ইমাম বুখারি বলতেন, এই ধরণের কোনো হাদিস আমার জানা নেই। এভাবেই সেই ১০ জন বিখ্যাত মুহাদ্দিস  ১০০টি হাদিস তাঁর সামনে পড়লেন। আর সকল হাদিসের ক্ষেত্রেই তিনি বারংবার একই কথা বললেন।

অতঃপর তিনি সকলকে ডেকে পাল্টে দেওয়া হাদিসগুলোর প্রত্যেকটিকে ঠিক করে দিলেন। তিনি এমনভাবে তা করলেন যেখানে হাদিসগুলোর সনদ থেকে একটি রাবির নামও বাদ পড়েনি এবং মতনসমূহ থেকে একটি শব্দও বাদ যায়নি। এমনকি হাদিসগুলোকে সঠিকভাবে সাজাতে মুহাদ্দিসগণ তাঁর কোনো ভুল-ত্রুটি ধরতে পারেননি। আরও জনশ্রুতি আছে যে, সমরকন্দে যাওয়ার পরও তাঁকে এই নিয়মে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এইসব পরীক্ষা তাঁকে সেই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস  হিসেবে পরিচিত লাভ করতে সহায়তা করেছিল।

কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন

ইসলাম নিয়ে এতো আগ্রহের পরও ইমাম বুখারি (রহ.) তাঁর জীবনে অসংখ্য বিপদ ও কঠিন পরীক্ষা বয়ে গেছে। হিংসুক বাতিলদের ষড়যন্ত্রের কারণে তিনি অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেন। যার শুরু হয় বুখরার গভর্নর দিয়ে। তিনি ইমাম বুখারিকে আদেশ দেন তার দুই ছেলেকে রাজপ্রাসাদে গিয়ে বিশেষভাবে হাদিস শিক্ষা দিতে।

গভর্নরের কথায় তিনি অপমানিত হলেন, কেননা এতে হাদিসের অবমাননা হয়। তাই তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এই সুযোগে দরবারের কিছু সংখ্যক হিংসুক ও দ্বীন ইসলাম বিরোধীরা চক্রান্ত করে তাঁকে শেষ বয়সে জন্মভূমি বুখারা ত্যাগ করতে বাধ্য করে।

মৃত্যু

বুখরা গভর্নরের রোষানলে পড়ে তিনি তাঁর দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই সময় সমরকন্দবাসীরা তাঁকে তাদের ওখানে আহবান করলে, তিনি তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। ইতব্যসরে যাত্রা পথে খরতাংগ পল্লীতে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে বিশ্রাম নিতে উঠলেন। কিন্তু তিনি সেখানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ঈদুল ফিতরের রাত্রি পহেলা শাওয়াল শনিবার ২৫৬ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন।  

দাফন পরবর্তী অলৌকিক ঘটনা

মৃত্যুর পর ইমাম বুখারি (রহ) এর বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনা তৎকালীন মানুষেরা লক্ষ্য করে। এইসব অলৌকিক ঘটনার অন্যতম হলো, তাকে কবর দেওয়ার পর তাঁর কবর থেকে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়া। তাঁর এই ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায় গালিব ইবনু জিবরীলের কাছ থেকে। 

তিনি বলেন, ‘যখন আমরা তাঁর দাফন শেষ করলাম, তখন তাঁর কবরের মধ্য থেকে মিশকের চেয়েও আরো বেশী সুগন্ধযুক্ত সুগন্ধি বের হতে লাগলো। আর এই অবস্থা বেশ কয়েকদিন যাবত চলতে লাগলো। শুধু তাইনয় তাঁর কবর বরাবর একটি উজ্জ্বল আলো আসমান পর্যন্ত বিরাজ করছিল। 

সাধারণ মানুষজন এটা নিয়ে আলোচনা করতে লাগল এবং আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেল। যারফলে তারা বরকতের আশায় তাঁর কবর থেকে মাটি উঠিয়ে নিয়ে যেতে লাগল। এমনকি কবর থেকে মাটি নিয়ে যাওয়ার কারণে তাঁর কবর প্রকাশিত হওয়ার অবস্থা হল। 

এবং তা জনসাধারণের কাছে এতবেশী জানাজানি হয়েছিল যে, আমরা পাহারাদারের সাহায্যেও কবর হেফাযত করতে পারছিলাম না। যেকারণে কবরের উপর কাটাযুক্ত কাঠ দিয়ে তা বন্ধ করার চেষ্টা করলাম। যাতে কেউ কবর পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে। এখানে কথিত আছে যে জনৈক ওলিআল্লাহ দোয়া করে তাঁর কবরের সুগন্ধি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কেননা তিনি আশঙ্কা করেছিলেন, এতে করে মানুষের আকিদা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।  তারপরও তাঁর এই  কবরের সুগন্ধি বহুদিন যাবত ছিল। যারা তৎকালীন সময়ে তার বিরোধীতা করত, তারা ইমাম বুখারির সত্যিকার মর্যাদা অনুধাবন করতে পারল এবং তার কবরের নিকটে এসে আফসোস এবং তওবা করতে লাগল।

অবদান

ইসলামের ইতিহাসে ইমাম বুখারির অবদান কখনোই সামান্য নয়। আমরা নিচে তাঁর অবদান সমূহ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। 

সহিহ বুখারি সংকলন

ইমাম বুখারির সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে তাঁর সহিহ বুখারি হাদিস গ্রন্থটি। ইমাম বখারীর এই সংকলনের পূর্বে কেউই  শুধুমাত্র সহিহ হাদিসসমূহ নিয়ে কোনো  গ্রন্থ রচনা করেননি। সহিহ বুখারি রচিত হওয়ার আগে আলেমগণ সহিহ ও যঈফ হাদিসগুলোকে একসাথেই লিপিবদ্ধ করতেন। কিন্তু ইমাম বুখারিই সর্বপ্রথম দুর্বল হাদিস থেকে সহিহ হাদিসগুলোকে আলাদা করে লেখার সাহসিকতা দেখান।

ইমাম বুখারি অন্যান্য কিতাব

  • আল আদাবুল মুফরাদ 
  • তারিখুল কাবীর। এটি এমন একটি কিতাব যেখানে হাদিসের রাবিদের জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। 
  • তারীখুস সাগীর। এই কিতাবে রাসুল (সা.) এবং তাঁর সাহাবীসহ বেশ কিছু রাবির জীবনী উল্লেখ করেছেন।
  • খালকু আফআলিল ইবাদ। এতে তিনি মুতাজেলাদের আকিদা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। এবং তিনি প্রমাণ করেছেন মুতাজেলা একটি ভ্রান্ত মতবাদ।
  • রাফউল ইয়াদাইন ফিস্ সালাত। এই কিতাবে নামাজের মধ্যে রাফউল ইয়াদাইন করা সুন্নাহ তাঁর প্রমাণ তিনি দিয়েছেন। 
  • আত তাওয়ারীখ ওয়াল আনসাব 
  • আসাসুস সাহাবা 
  • কিতাবুল ইলাল।
  • জুযউল কিরাআত খালফাল ইমাম
  • কিতাবুত তাওহীদ
  • আখবারুস সিফাত 
  • কিতাবুল বিজদান 
  • কিতাবুয যুআ-ফাউস সাগীর 
  • কিতাবুল কুনা (মুহাদ্দিস দের উপনাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা) 

হাদিস সংগ্রহে সতর্কতা 

বিশুদ্ধ হাদিস তথা জাল জইফ হাদিসের বিপরীতে সহিহ শুদ্ধ হাদিস বাছাই করার ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনে কিরামের অপরিসীম কষ্ট ও ত্যাগ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় হযরত ইমাম বুখারিও এক একটি হাদিস সংগ্রহের জন্য মাস বছর পর্যন্ত সফরে বের হতেন। যেসব সফর কখনোই সুখের হতো না বরং যাতায়াতের সীমাহীন কষ্ট সহ্য করতে হতো। এমনকি খাওয়াদাওয়া পর্যন্ত ঠিকমতো হতো। যেকারণে মরুভূমির তপ্ত গরমে পেশাবের পরিবর্তে রক্ত পর্যন্ত বের হতাে। 

তখনকার সময় যানবাহনের কোন সুবিধা ছিলনা। যেকারণে পায়ে হেঁটে, উটে, গাধায় বা ঘােড়ায় চড়ে পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা ইত্যাদি পার হয়ে যেতে হয়েছে। শুধু তাইনয় তৎকালীন আরবের  পথিমধ্যে ছিলো ডাকাতদলের ভয়। যাদের হাতে পড়ে বহু কষ্টের মধ্যে হাদিসের সঠিক তথ্য বের করতে হতো। আর হযরত বুখারি ছিলেন এমন একজন মিহাদ্দিস ছিলেন যিনি হাদিস সংগ্রহের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করতেন। তিনি বিভিন্ন শর্তের উপর হাদিস সংগ্রহ করতেন। 

  • তাঁর মতে হাদিসের এক রাবি তার উপরের রাবির সমসাময়িক হতে হবে এবং তাঁদের মাঝে সাক্ষাত হওয়া অবশ্যই প্রমাণিত হতে হবে। 
  • রাবি ব্যক্তিগত ও চারিত্রিকভাবে নির্ভরযোগ্য হতে হবে।
  • ন্যায়পরায়ন ও সত্যতা থাকতে হবে। অর্থাৎ মানুষের সাথে আচার ব্যবহারে ও লেনদেনে সত্যবাদী ও সৎ হতে হবে।
  • রাবির সম্পূর্ণ ম্মরণশক্তি সম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। 
  • হাদিসের সনদ মুত্তাসিল হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ মাঝখান থেকে কোন রাবি বাদ না পড়া।

যেসব হাদিসে উপর্যুক্ত পাওয়া গেছে কেবলমাত্র সেই হাদিসে তিনি গ্রহণ করেছিলেন। আর সকল শর্ত পূরণ হলেই তা তিনি লিখে ফেলেন নি। বরং প্রতিটি হাদিস লিপিবদ্ধ করার আগে তিনি গোসল করে দুই রাকআত নামায পড়েছেন এবং ইস্তেখারা করেছেন। তাঁর অন্তরে কোনো হাদিস সম্পর্কে  সন্দেহ আসলে, তা সকল শর্ত পূরণ করার পরও তিনি তা বাতিল করে দিতেন। এই পদ্ধতিতে মসজিদে নববীতে বসে তিনি হাদিস লেখা শুরু করেন এবং একটানা ১৬ বছর পর্যন্ত তিনি নিজেকে এই  এই কাজে নিয়োজিত রেখেছিলেন। তাই অনেকেই বলে তিনি বিবাহ করতে পারেননি।

অন্যান্যদের অভিমত 

ইমাম বুখারি সম্পর্কে তৎকালীন আলেমগণ অনেক অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু আলেম হচ্ছেন,

  • ইমাম ফাল্লাস (রহ.)। তিনি  বলেন, “যে হাদিস সম্পর্কে ইমাম বুখারি জানেন না, সেটা হাদিস নয়।” 
  • ইমাম আবু নুআইম আহমাদ বিন হাম্মাদ (রহ.) বলেন,  “ইমাম বুখারি হচ্ছেন এই উম্মতের ফকীহ। ইয়াকুব বিন ইবরাহীমও একইকথা বলেছেন। কিছু কিছু বিদ্যান ফিকহও মনে করেন,  হাদিস  শাস্ত্রে ইমাম বুখারি আহমাদ বিন হাম্বাল এবং ইসহাক বিন রাহওয়াইয়ের উপর রয়েছেন। 
  • কুতাইবা (রহ.)  বলেন,  “পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম থেকে আমার নিকট অনেক লোকই এসেছে।  কিন্তু মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল বুখারি যতবার এসেছে আর কেউ এত অধিক পরিমাণ কেউ আগমণ করেনি।” 
  • ইমাম আবু হাতিম রাযি বলেন,  “যে সকল মুহাদ্দিস এই পর্যন্ত  বাগদাদে এসেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক জ্ঞানী ও গুণী হলেন ইমাম বুখারি। “
  • ইমাম তিরমিজী (রহ.) বলেছেন,  “হাদিসের ইল্লত, ইতহিাস এবং সনদ সম্পর্কে বুখারির চেয়ে অধিক জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি ইরাক এবং খোরাসানের বুকে আর কাউকে দেখি নি।” 
  • ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহ.) বলেছেন, “খোরাসানের ভূমিতে ইমাম বুখারির মতোন আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি।” 
  • ইমাম আলী ইবনুল মাদানি (রহ.) বলেন,  “হাদিস শাস্ত্রে ইমাম বুখারির সমকক্ষ আর সময়ে কেউ ছিলো না।” 
  • মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন নুমাইর ও আবু বকর ইবনে আবী শায়বা বলেছেন,  “ইমাম বুখারির মতো আর কাউকে দেখি নি।” 
  • আলী বিন হাজার বলেছেন,  “তাঁর মতো আর কেউ বিদ্যান আছে বলে আমার জানা নেই।”

ইমাম বুখারির ছাত্র

ইমাম বুখারি (রহ.) লক্ষ লক্ষ হাদিসের মুহাদ্দিস ছিলেন। যেকারণে তাঁর কাছ থেকেও থেকে অসংখ্য মুহাদ্দিস সহিহ হাদিস বর্ণনা করেছেন। খতিবে বাগদাদি (রহ.) বুখারির অন্যতম রাবি ফিরাবরির মাধ্যমে বর্ণনা করেন, “তার সাথে প্রায় সত্তর হাজার লোক ইমাম বুখারি থেকে সরাসরি সহিহ বুখারি পড়েছেন। তাদের মধ্যে আমি ছাড়া আর কেউ বর্তমানে জীবিত নেই। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিজী, ইবনে খোযায়মা, ইমাম নাসাঈ, আবু হাতিম, ইমাম যুর’আ ও ফরবরী প্রমুখ। যারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কিতাব ও কর্মের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। 

ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম বুখারি

অনেকেই ইমাম বুখারির সাথে ইমাম আবু হানিফার দ্বন্দ্ব দেখতে পান। অথচ ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই ইমাম বুখারির অসংখ্য হাদিস যে উস্তাদ থেকে গ্রহণ করেছেন, সেই উস্তাদই আবু হানিফা থেকে হাদিস শিক্ষা নিয়েছেন।

ইমাম বুখরি (রহ.) পিতার নাম ইসমাইল ইবনে মুগীরা জু’ফী বুখারি (রহ.)। তিনি দুভাবে ইমাম আবু হানিফা (র) এর ছাত্র। ইমাম বুখরির দুই উস্তাদ তথা ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারাক ও ইমাম হাম্মাদ ইবনে যায়েদ (রহ.) তাঁরা দুজনই ইমাম আবু হানিফা (র) এর ছাত্র। এ দু’পদ্ধতিতে ইমাম বুখরি ইমাম আবু হানিফার প্রপৌত্র ছাত্র। 

নিচে দুটো পদ্ধতি দেওয়া হলো। প্রথম পদ্ধতি হচ্ছে ইমাম বুখরি নিজ পিতা ইসমাঈল বিন ইব্রাহীম থেকে, তিনি ইমাম আবু হানিফার শিষ্য আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারাক (র) থেকে, তিনি ইমাম আবু হানিফা (র) থেকে। একইভাবে দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো,  ইমাম বুখরি (রহ.) নিজ পিতা ইসমাঈল বিন ইবরাহিম থেকে, তিনি ইমাম আবু হানিফার ছাত্র হাম্মাদ বিন যায়দ থেকে, আর তিনি ইমাম আবু হানিফা (রহ.) থেকে। এই দু পদ্ধতিতে ইমাম বুখরি পর্যন্ত ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর হাদিসের সনদ রয়েছে। 

কারন ইমাম বুখরির পিতা ইমাম আবু হানিফা (র) এর শিষ্যের শিষ্য। এই হিসেবে ইমাম বুখরি ইমাম আবু হানিফার প্রপৌত্র শিষ্য। সুতরাং যারা ইমাম আবু হানিফার সাথে ইমাম বুখারির সংঘর্ষ দেখতে পান, তারা বোকার স্বর্গে বাস করে। কেননা যারা ইমাম বুখারি ও  ইমাম আবু হানিফার হাদিসের বৈপরত্য দেখতে পায়, তাদের উচিত এই মহান ব্যক্তিদের সম্পর্কের মূল শেখড় কোথায় সেটা জানার চেষ্টা করা।  

ইমাম বুখারির জীবনী বই

  • ইমাম বুখারির দেশে, মাওলানা জুলফিকার আহমাদ নকশবন্দি
  • ইমাম বুখারি রহ: জীবন ও কর্ম, মুহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন
  • ইমাম বোখারির কাঠগড়ায়, মাওলানা আনোয়ার খুরশিদ
  • ইমাম বুখারি (রহ.), ড. মুহাম্মাদ বেলাল হোসেন
  • ছোটদের ইমাম বুখারি (রহ.), সমর ইসলাম
  • ইমাম বুখারি র. ও বুখারি শরীফ, মাওলানা মুহাম্মদ আবূ মূসা
  • আলে বাইতের ব্যাপারে ইমাম বুখারির অবস্থান …, উসামা মুহাম্মাদ যুহাইর আশ শানত্বী
  • মুহাদ্দিস সম্রাট ইমাম বুখারি (রহঃ), মুহাম্মাদ আব্দুল আলিম
  • ইমাম বুখারি কি লা মাযহাবী ছিলেন? মুফতী তাওহিদুল ইসলাম
  • ইমাম বুখারি (রহ.)-এর জীবনকর্ম ও হাদিস, ড. মুহাম্মদ মানজুরুর রহমান

প্রশ্নোত্তর

ইমাম বুখারির উস্তাদ ও ছাত্রগণ কারা ছিলেন?

উস্তাদ 

ইমাম বুখারি হাদিস সংগ্রহের ক্ষেত্রে খুবই কঠোর এবং হুশিয়ারি ছিলেন। বিন্দু পরিমাণ ছাড় তিনি কাউকে দেননি। যেখানেই তাঁর সন্দেহ হয়েছে তিনি তা বারংবার যাচাই বাছাই করেছেন। প্রয়োজনে সন্দেহজনক রাবি তিনি বাদ দিয়েছেন। যেকারণে তাঁর উস্তাদের তালিকাও কম নয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য উস্তাদ হচ্ছেন, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল, মক্কী বিন ইব্রাহীম, আব্দুল্লাহ বিন মুছা, ঈসা আবু আসেম, ইসহাক বিন রাহওয়াই, আলী ইবনুল মদিনী, ইয়াহিয়া বিন মুঈন, আবু বকর বিন আবি শায়বা, ওসমান বিন আবি শায়বা ও ইমাম হুমায়দী প্রমুখ। হাদিস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি  তিনি আটবার বাগদাদে যাত্রা করেছিলেন। প্রতি সফরেই  তিনি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালের সাথে সাক্ষাৎ করতেন। আর প্রতিবারই ইমাম আহমাদ  তাঁকে খোরাসানের পরিবর্তে বাগদাদে স্থায়ী হতে পরামর্শ দিতেন।

ছাত্র 

ইমাম বুখারি (রহ.) লক্ষ লক্ষ হাদিসের মুহাদ্দিস ছিলেন। যেকারণে তাঁর কাছ থেকেও থেকে অসংখ্য মুহাদ্দিস সহিহ হাদিস বর্ণনা করেছেন। খতিবে বাগদাদি (রহ.) বুখারির অন্যতম রাবি ফিরাবরির মাধ্যমে বর্ণনা করেন, “তার সাথে প্রায় সত্তর হাজার লোক ইমাম বুখারি থেকে সরাসরি সহিহ বুখারি পড়েছেন। তাদের মধ্যে আমি ছাড়া আর কেউ বর্তমানে জীবিত নেই। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিজী, ইবনে খোযায়মা, ইমাম নাসাঈ, আবু হাতিম, ইমাম যুর’আ ও ফরবরী প্রমুখ। যারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কিতাব ও কর্মের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত। 

হাদিস সংগ্রহের জন্য তিনি কোন কোন দেশ ঘুরেছেন?

ইমাম বুখারি তাঁর পুরো জীবনটাই হাদিস সংগ্রহের পেছনে ব্যয় করেছেন। যে কারণে অনেকে বলেন, তিনি হাদিস সংগ্রহ করতে গিয়ে নাকি বিয়ে পর্যন্ত করেননি। যাইহোক এতে থেকেই বুঝা যায় হাদিস সংগ্রহ করতে তিনি কতটুকু সময় দিয়েছেন এবং কতগুলো জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন। তাঁর সময়কার যত মুহাদ্দিস ছিলেন তিনি চেষ্টা করেছেন প্রত্যেকের থেকে হাদিস সংগ্রহ করতে। তাই তিনি তাদের দেশে দেশে পরিভ্রমন করেছেন। 

মূলত তিনি খোরাসানের বিভিন্ন অঞ্চল চষে বেড়িয়েছেন। এছাড়াও তিনি যে সমস্ত দেশে ভ্রমণ করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, বিখ্যাত জ্ঞানকেন্দ্র কূফা, বসরা, বাগদাদ, মক্কা, মদীনা, ইরাক, হিজাজ, সিরিয়া, মিশর এবং আরও অনেক শহর। তিনি প্রতিটি শহরে বার বার সফর করে হাদিসের সঠিক সত্যতা যাচাই বাছাই করেছেন। যেকারণে তিনি লক্ষ লক্ষ হাদিসের মুহাদ্দিস হলেও মাত্র সাড়ে সাত হাজারের মতো হাদিস তিনি তাঁর বুখারিতে সংকলন করেছেন। 

বুখারি শরীফের লেখকের নাম কি

বুখারি শরীফের পূর্ণ নাম হচ্ছে  “আল জামিউল মুসনাদুস সহিহুল মুখতাসারু মিন উমূরি রাসুলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী।” ইসলামের প্রতিটি বিষয়ের উপর বিভিন্ন হাদিসের প্রধান প্রধান বিষয়সমূহ সম্বলিত হয়েছে বলে একে ‘জামি’ বা পূর্ণাঙ্গ বলা হয়। এই বুখারি শরিফের রচয়িতা হচ্ছেন, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল ইবনে ইব্রাহিম ইবনে মুগিরা ইবনে বরদিযবাহ জুফি আল বুখারি (রহ.)।

শেষ কথা 

ইমাম বুখারি (রহ.) হচ্ছেন তাঁর  শতাব্দীসহ বর্তমান শতাব্দীরও  সবচেয়ে বড় হাদিস বিশারদ, হাফিয ও মুহাদ্দিস। হাদিস শাস্ত্রে তাঁর অবদান যুগ যুগ ধরে বহমান। তিনি অত্যন্ত স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন  ও পরহেযগার ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর সংকলিত ‘আল-জামি‘ কিতাবটি কুরআনুল কারীমের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধ গ্রন্থ। এই কিতাব ছাড়াও আরো অসংখ্য কিতাব লিখে মুসলিম বিশ্বে স্বরনীয় হয়ে আছেন।

 

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম। 

 

আপনি আরো যা পড়তে পারেন


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

1

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

Author: সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী জন্ম চট্টগ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলেন। প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলাম লিখেছেন। প্রবাসের সেই চাকচিক্যের মায়া ত্যাগ করে মানুষের ভালোবাসার টানে দেশে এখন স্থায়ী বসবাস। বর্তমানে বেসরকারি চাকুরিজীবী। তাঁর ভালোলাগে বই পড়তে এবং পরিবারকে সময় দিতে।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply