ভাবনায় ভাস তুমি
আফছানা খানম অথৈ
অর্নব অনার্সে ফাস্ট ক্লাস পেয়ে ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে সবেমাত্র।পড়ালেখা ছাড়া আর কোন কাজে সে সময় ব্যয় করেনা।ক্লাশের ফাঁকে যেটুকু সময় পায় লাইব্রেরীতে গিয়ে মনোযোগ দিয়ে বই পড়ে।প্রেম ভালোবাসা এসবের দিকে তার তেমন একটা খেয়াল নেই।লেখাপড়া করে চলেছে আপন নিয়মে।গ্রামের হতভাগা দরিদ্র কৃষকের ছেলে অর্নব অনেক কষ্টে এতদূর এগিয়েছে।তার মনে একটাই চিন্তা লেখাপড়া শেষ করে,ভালো একটা চাকরী তারপর মা-বাবার দুঃখ কষ্ট দূর হবে।এজন্য সে অন্য ছেলেদের মতো ফালতু পথে সময় ব্যয় না করে সব সময় পড়ার মাঝে ডুবে থাকে।এই নিয়ে তার সহপাঠিদের অনেকে হাসি ঠাট্টা করে।অর্নব এসবে কান না দিয়ে আপন নিয়ে লেখাপড়া করে চলেছে।একদিন ভার্সিটিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অর্নব একটা রবীন্দ্র সংগীত গাইল।
আমার ও পরান যাহা চাই
তুমি তাইগো তুমি তাই।
……………………………।
গান শুনে বন্ধু-বান্ধব শিক্ষক সবাই মুগ্ধ হয়ে হাত তালি দিয়ে তাকে সংবর্ধনা জানাল।তার এক টিচার বলল,
অর্নব অপূর্ব তোমার কণ্ঠ,নিয়মিত চর্চা করলে তুমি অনেক বড় গায়ক হতে পারবে।
দোয়া করবেন স্যার।
অর্নব’র সহপাঠীণি রুহী প্রথম থেকে অর্নবকে পছন্দ করতো।আজ তার মধুর কণ্ঠে গান শুনে আরও পাগল হয়ে উঠে।মনের অজান্তে তাকে ভালোবেসে ফেলে।অনুষ্ঠান শেষ অর্নব গ্যালারী থেকে বের হলো।তার পিছু নিলো রুহী।অর্নব এগিয়ে চলেছে।রুহী পেছন থেকে ডাক দেয়,
প্লিজ অর্নব দাঁড়াও।
অর্নব পাশ ফিরে তাকিয়ে রুহীকে দেখে থমকে দাঁড়ায়।ততক্ষণে রুহী তার কাছাকাছি চলে যায়।অর্নব বলল,
রুহী কিছু বলবে?
হুম বলব।
বলো কী বলবে?
তোমার কণ্ঠ না অনেক সুন্দর।
তো কী হয়েছে?
না তেমন কিছুনা।ভালো গেয়েছ, তাই বললাম আর কী।
এতে আলাদা করে প্রশংসা করার কী আছে।রুহী আর কিছু বলবে?
না মানে যদি তোমার সময় হয়,ক্যান্টিনে গিয়ে আমরা পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারি?
রুহী তুমি ভালো করে জান আমি বাজে কাজে সময় নষ্ট করিনা।
তা জানি।
তাহলে বলছ কেনো?
না মানে জাস্ট পাঁচ মিনিট।
সরি রুহী আজ আমার সময় নেই,অন্যদিন..।
ঠিক আছে।
রুহী বাসায় ফিরে গেল।কিন্তু পড়ায় কিছুতে মন বসাতে পারছে না।বারবার অর্নব’র কথা ভাবছে।তাকে নিয়ে কল্পনার করিডোরে মজার মজার রোমাঞ্চ…।
ভাবতে খুব ভালো লাগছে।কিছুতে ভুলতে পারছে না অর্নব’র গাওয়া গানটির কথা।তখনি ক্যাসেট অন করে দিলো।গানটি বেজে চলেছে,আর রুহী মনের মাধুরীতে অর্নবকে স্মরণ করে চলেছে।মনে হলো গানটি অর্নব গাইছে।এমন সময় তার মা এসে বলল,
রাত কটা বাজে সে খেয়াল আছে?
কেনো মা দশটা হবে হয়তো।
তখনি মা নিলুফা রহমান হাত ঈশারা করে দেয়ালে টাঙানো ঘড়িটার দিকে আঙুল তাক করে বলল,
দশটা না, ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখ কয়টা বাজে?বারোটা ছুঁই ছুঁই করছে।আর কোন কথা নয় খেতে আয়।রুহী আর কথা না বাড়িয়ে মায়ের সঙ্গে খেতে বসলো।খানা শেষ মা বলল,
রুহী রাত জেগে টিভি দেখা,গান শোনা,ফেসবুক দেখা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।এক্ষণই গিয়ে শুয়ে পড়বি।
ঠিক আছে মা আর রাত জাগব না।
রুহী শুয়ে পড়লো।কিছুতে তার ঘুম আসছে না।কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে এ পাশ ওপাশ গড়াগড়ি করলো।তবু যেন ঘুম আসছে না।এবার সে ফেসবুক ওপেন করলো।অর্নবকে নক করলো,
হাই অর্নব কী করছ?
কোন রিপ্লে নেই।রুহী কিন্তু থেমে নেই,আবার লিখে পাঠাল,
অর্নব কী হয়েছে? রিপ্লে দিচ্ছনা কেনো?আমি কি এতই খারাপ, দেখতে অসুন্দর, যে আমার সাথে চ্যাট ওকরতে পারবে না।প্লিজ অর্নব কিছু একটা বলো?আমার ঘুম আসছে না।তোমার মধুর কণ্ঠে গাওয়া গান আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না।বার বার তোমার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।তুমি কি কিচ্ছু বুঝ না?নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছ?
অনেক্ষণ পর অর্নব রিপ্লে দিলো,
রুহী তুমি জান বাজে কাজে আমি সময় নষ্ট করিনা।তবুও কেনো ডিস্টার্ব দিচ্ছ।তাছাড়া রাত জাগা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।আর কোন কথা নয়,ঘুমিয়ে পড়।গুড নাইট।
অর্নব তার ডাকে সাড়া না দিলেও রিপ্লেতো দিয়েছে।এতে রুহী অনেক খুশি।রুহীর ঘুম আসতে আর দেরী হলোনা।আনন্দে দুচোখ ভরে ঘুম এসে গেল।
রুহী রোজ রোজ অর্নব’র সঙ্গে কথা বলতে চাই।কিন্তু পারেনা।সামনে ফাইনাল এক্সাম তাই পড়ালেখা নিয়ে অর্নব খুব ব্যস্ত।রুহী কিন্তু থেমে নেই।রোজ রোজ ভালোবাসার কথা বলার জন্য অর্নব’র জন্য অপেক্ষা করে,কিন্তু পারেনা।শেষে ব্যর্থ হয়ে ফেসবুকে আকার ইঙ্গিতে কিছু বুঝানোর চেষ্টা করে।অর্নব বুঝেও না বুঝার ভান করে দুচারটা কথা বলে ফেসবুক বন্ধ করে দেয়।রুহী কিন্তু অর্নব’র প্রেমে একেবারে পাগল।যে কোন মূল্যে সে অর্নবকে চাই।সর্বক্ষণ অর্নবকে ফলো করে চলেছে।যখনি দেখল অর্নব ক্যান্টিনে একা বসে আছে তখনি সে ছুটে গেল তার কাছে।কোনকিছু তোয়াক্কা না করে রুহী অর্নব’র পাশা পাশি বসে বলল,
হাই অর্নব কী করছ?
তেমন কিছু না।পড়তে পড়তে মাথাটা ধরেছে।তাই রেস্ট নিচ্ছি।
ওকে ফাইন।
রুহী তুমি এখানে কেনো?
দেখলাম একা একা তুমি বসে আছ।তাই ভাবলাম একটু গল্প টল্প করি।
ওকে তা বুঝলাম।তো কি গল্প করতে চাও?
জীবনের গল্প,বাস্তবতার গল্প,ভালোবাসার গল্প।
ওকে রহী সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তুমি তোমার গল্প বলা শেষ করবে।আমি কিন্তু বেশি সময় দিতে পারবো না।
ওকে।
তাহলে আর দেরী না করে শুরু কর।
অর্নব তুমি বুঝেও না বুঝার ভান করছ।তাই আমি সরাসরি কথাটা বলতে বাধ্য হলাম।জন্ম, মৃত্যু,বিয়ে প্রেম ভালোবাসা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন উপরওয়ালা।কখন কিভাবে যে মনের মাঝে ভালোবাসার সৃষ্টি হয় তা কেউ বলতে পারেনা।এটা হলো সম্পূর্ণ মনের ব্যাপার।মন যা চাই তা করতে হয়।তা না হলে হিতে বিপরীত হয়।তাই সত্যটাকে গোপন না করে সরাসরি বলতে বাধ্য হলাম।তোমাকে যেদিন কলেজে প্রথম দেখলাম, সেদিনই ভালোবেসে ফেললাম।এরপর থেকে আস্তে আস্তে ভালোবাসা আর ও বাড়তে শুরু করলো।তারপর সেদিনের গাওয়া গান আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করলো। এখন আমার হৃদয়ের সমস্ত আকাশ জুড়ে শুধু তুমি।আমি তোমাকে অসম্ভব রকম ভালোবাসি।এখন তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা আমার অসম্ভব।যদি না কর আমি সুইসাইড করবো।কারণ তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনাতো তাই।এ ভালোবাসার হবে না কখনো মৃত্যু,চির অম্লান অক্ষয় হয়ে থাকবে আমার হৃদয় মন্দিরে।এরপর ও কি তুমি না করবে?
অর্নব ভেবে দেখল সরাসরি না করাটা ঠিক হবেনা।কারণ রুহী মনের অবস্থা সম্পূর্ণ বেগতিক।কিছু বললে সিরিয়াস কিছু ঘটতে পারে।তাই আস্তে করে বলল,
রুহী আমি এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না।তবে তোমার ব্যাপারটা আমি ভেবে দেখব।
তা কবে নাগাদ উত্তর পাব?
সিউর বলতে পারবো না।
কেনো কেনো?
মনের ব্যাপারতো ভাবতে হবে,মন কী চায়?
তার মানে তোমার মন আমাকে চাইছে না?
ঠিক তাই না।
তাহলে এখন বলো।
সত্যি বলবো?
হুম বলো।
আসলে রুহী সত্য কথা বলতে কী, আমি তোমার অযোগ্য,আমার বাবা খুব গরীব। আমাদের ছোট্ট একটা কুটির।বলতে গেলে নুন আনতে পান্তা ফুরাই।কোনমতে টিউশনি করে পড়ার খরচ চালায়।ঠিকমতো ভালো কাপড় ও পড়তে পারিনা।মা-বাবা খুব কষ্টে আছে।এই অবস্থায় রিলেশন বিয়ে এসব কী ঠিক হবে?মোটেওনা।
তাই বলছি তুমি আমার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিয়ে তোমার সমান কাউকে ভালোবাস,তবে সুখী হবে।এর ব্যতিরেকে নয়।
অর্নব আমি তোমার অর্থ সম্পদকে ভালোবাসিনি,ভালোবেসেছি তোমাকে,এরপরও তুমি না করছ?
রুহী এছাড়া আমার কী বা করার আছে।তাছাড়া এসব ডায়ালগ নাটক মুভিতে শোভা পায়,বাস্তবে নয়।বাস্তব বড় কঠিন।আসলে তোমাকে ভালোবাসার কোন যোগ্যতা আমার নেই।তুমি আমাকে ক্ষমা কর।
অর্নব তুমি যেটাকে নাটক মুভির ডায়ালগ বলেছ আমি সেটাকে বাস্তবে পরিণত করব।আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি।
I love you ornob.I love you.
এরপর ও যদি তুমি না কর তাহলে সত্যি আমি সুইসাইড করব।শুধু তাই নয় ডায়েরীতে তোমার নাম লিখে যাব।আমার মৃত্যুর জন্য কিন্তু তুমি দায়ী থাকবে।এবার ভেবে দেখ কী করবে?
রুহী তুমি কী আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছ?
অর্নব তুমি ভুল বললে,ব্ল্যাকমেইল করবো কেনো?আমিতো তোমাকে ভালোবাসি।তুমি কিছু একটা বলো?
অনেক্ষণ পর অর্নব’র মুখ ফোটল।সে কোমল কণ্ঠে বলল,
রুহী আজ না বললে হয় না?
না হয়না।যা বলার এক্ষণি বলো।
ওকে I love you too Ruhi.
সো হ্যাপি অর্নব।আজ আমি অনেক সুখি।
কেনো বলতো?
আমার জান আমাকে ভালোবাসি বলেছে।
ও তাই।চলো ফেরা যাক।দুজন দুজনের গন্তব্য স্থলে ফিরে গেল।এরপর থেকে দুজনের মাঝে ফোনালাপন চ্যাটিং ডেটিং দেখা সাক্ষাত ও হয় নিয়মিত।একে অপরের প্রেমে একেবারে মগ্ন।কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারেনা।ক্লাশের ফাঁকে ক্যান্টিন পার্ক বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ছুটিয়ে আড্ডা মারছে দুজনে।ভালোবাসায় বিভোর রুহী অর্নব।এর ফাঁকে শেষ হলো দুজনের ফাইনাল এক্সাম।আগের মতো দুজনের মাঝে আর দেখা হয়না।তবে ফোনালাপন চ্যাটিং এ নিয়মিত কথা হয় দুজনার।এদিকে রুহীর অজান্তে তার বাবা সাদেকুর রহমান তার বন্ধুর ছেলের রাফির সঙ্গে রুহীর বিয়ে ঠিক করে।সামনের মাসের পাঁচ তারিখে বিয়ে।কথাটা রুহীর কানে যেতে তার রাগ চরমে উঠে যায়।সে তাৎক্ষণিক ভাবে বাবাকে বলল,
বাবা তোমরা নাকি আমার বিয়ে ঠিক করেছ?
শুধু ঠিক নয়,নিমন্ত্রণ থেকে শুরু করে সব আয়োজন কমপ্লিট।
বাবা বিয়েটা ঠিক করার আগে আমাকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন ছিলো না?
কেনোরে কী হয়েছে?তাছাড়া রাফি ছেলেটা অনেক ভালো।লেখাপড়া শেষ করেছে লন্ডনে সেখানে সেটেল গাড়ি বাড়ি কোনকিছুর অভাব নেই।এমন একটা হ্যান্ডসাম স্টাবলিস্ট ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছি এরপর ও তুই না করছিস ব্যাপার কী?
বাবা তবুও বিয়ের আগে মেয়েদের মতামত নেয়া দরকার।
তা অবশ্যই ঠিক।
তাহলে আমার মতামত না নিয়ে বিয়ে ঠিক করলে কেনো?
মারে বুঝতে চেষ্টা কর,বলতে গেলে তোদের বিয়ে ছোট বেলায় ঠিক হয়ে আছে।এতদিন তুই ছোট ছিলি বিধায় কথাটা গোপন ছিল।এখন বড় হয়েছিস,লেখাপড়া শেষ তাই বিয়র দিন তারিখ ঠিক করলাম।এতে দোষের কী দেখলি?
কথাটা শুনামাত্রই রুহীর মেজাজ চরমে উঠে গেল।সে বাবার মুখের উপর সরাসরি বলে দিলো,
বাবা তোমাদের এসব ছোট বেলার বিয়ে আমি মানিনা।আমি একজনকে ভালোবাসি,বিয়ে যদি করতে হয় তাকে করব।অন্যথায় না।
এবার বাবা বলল,
মারে তোর ছোট বেলার একটা গল্প শুন,তারপর তুই সিদ্ধান্ত নিস কাকে বিয়ে করবি।
ঠিক আছে বাবা বলো।
তোর বয়স যখন পাঁচ বছর তখন আমর দুবন্ধু গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম।আমাদের দুবন্ধুর গ্রামের বাড়ি পাশাপাশি ছিল।তাছাড়া রাফি ছিল তখন তোর খেলার সাথী। রাফিকে এক পলক না দেখে তুই থাকতে পারতি না।অনুরুপ গ্রামে গিয়ে ও তোরা একসঙ্গে খেলাধুলা করতি।একদিন রাফিকে নিয়ে গ্রামের অন্যান্য ছেলেদের মতো তোরা কানামাছি ভোঁ ভোঁ খেলছিলি।হঠাৎ পা পিছলে তুই পুকুরে পড়ে যাস।তারপর এই দশ বছরের রাফি নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে ঝাপড়ে পড়ে তোকে তোলে।শুধু তাই নয় তোর মুখে পানি বের করে।তারপর ও যখন তুই কথা বলছিলি না,তখন তোর মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস দেয়।তারপর তোর জ্ঞান ফিরে আসে।খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই।রাফি আমাকে দেখে হাত জোড় করে বলে,
সরি,আঙ্কেল আমার কোন দোষ নেই।রুহী পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল।
আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
ছি: অর্নব কে তোমাকে দোষ দিচ্ছে।সবকিছু আল্লাহপাকের হুকুম।বরং তোমার উছিলাতে আল্লাহপাক আজ আমার মেয়ের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন।আমি সারা জীবনের জন্য তোমার কাছে ঋনী হয়ে গেলাম।
তারপর কী হলো বাবা?
তারপর রাফির বাবাকে বললাম,
দোস্ত তুমি আজ তোমার ছেলের জন্য যা চাইবে তাই পাবে।বলো তুমি কী চাও?
রাফির বাবা আসিফ খন্দকার হাসি মুখে বলল,
দোস্ত আমি তেমন কিছু চাইনা।শুধু রুহী মা মনিকে রাফির বউ করতে চাই?
আমিও হাসি মুখ উত্তর দিলাম,
শোকর আলহামদুলিল্লাহ দোস্ত আমার কোন আপত্তি নেই।আমি রাজী।
বাবা তারপর কী হলো?
তারপর গ্রামের বাড়িতে ঘরোয়া পরিবেশে ছোট খাটো বিয়ের আয়োজন করলাম,এবং সত্যি তোদের বিয়ে দিলাম।
বাবা ভুলতো তোমরাই করলে এতবড় সত্যকে এতদিন লুকিয়ে রাখলে?
মারে এতদিন তুই নাবালিকা ছিলি তাই বলিনি।এখন তুই বল আমি কী করবো?
বাবা আমার আর কিছুই বলার নেই।তুমি যা করবে তাতে আমি রাজি।
বাবার মুখে গল্প শোনার পর রুহীর ছোট বেলার সবকথা মনে পড়ে গেল।তাই বাবাকে না, না বলে হ্যাঁ বলে দিলো।কারণ রুহীও রাফিকে ভালোবাসত।এখন আবার অর্নব,বিষয়টা খুব জটিল আকার ধারন করলো।রুহী ভেবে পাচ্ছেনা কি করবে।তার মাথায় সপ্ত আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।তার মনে নেই কোন শান্তি, চোখে নেই ঘুম।অসহ্য মানসিক ডিপ্রেশনে ভুগছে।বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ গড়াগড়ি করছে।ঠিক তখনি অর্নব কল করলো,রুহী রিসিভ করতে অর্নব বলল,
হাই জান কি করছ?
শুয়ে আছি,তুমি কী করছ?
আমি আর কী করব,শুয়ে শুয়ে তোমার কথা ভাবছি।কতদিন তোমাকে দেখিনা।কাল একবার পার্কে এসো।
ওকে আসব।এখন রাখি অর্নব।আজ আর কথা বলতে পারবো না।
কেনো জান কী হয়েছে,তোমার কণ্ঠ এমন শুকনো শুকনো লাগছে কেনো?
অর্নব আমার কিচ্ছু হয়নি। আমি ভালো আছি।আমার মাথাটা খুব ধরেছে,ঠিক হয়ে যাবে,এখন রাখি।গুড নাইট।
পরদিন দুজন পার্কে যোগ হলো।প্রতিদিনের মতো রুহী আজ অর্নবকে দেখে হাই হ্যালো না বলে চুপচাপ বসে আছে।অর্নব তার গা ঘেষে বসলো। তারপর বলল,
হাই জান তোমার কী হয়েছে,মন খারাপ কেনো?
অর্নব তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
বলো কী বলবে?
অর্নব আগে প্রমিস কর আমার কথা শুনার পর টেনশন করে সিরিয়াস কিছু করবে না?
প্রমিস করলাম করবো না। এবার বলো কী বলবে?
অর্নব সত্য লুকিয়ে রাখা যায়না।জানি কথাগুলো শুনার পর তুমি আমাকে চিট্ প্রতারক আর ও অনেক কথা বলবে। তবুও সত্যটা না বলে পারলাম না।অর্নব ছোট বেলায় আমার বাবার বন্ধুর ছেলে রাফির সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।
রুহী আর থেমে থাকতে পারলো না।ছোট বেলার বিয়ের ঘটনাটি প্রকাশ করে দিলো।কথাগুলো শুনার পর মিছরির ছুরির মতো অর্নব’র বক্কভেদ করলো।তার মুখ দিয়ে কোন বচনবাণী বের হলোনা।বুক ফেটে চৌচির।বোবা কান্নায় জর্জরিত।অর্নব’র মনের অবস্থা এতটা খারাপ যে বলার মতো কোন ভাষা তার মুখ দিয়ে বের হলোনা।আর তা বুঝতে পেরে রুহী কেঁদে কেঁদে বলল,
অর্নব জানি তুমি আমার উপর রেগে আছ?বলো আমি এখন কী করবো,তুমি যা বলবে আমি তাই করবো?প্লিজ চুপ করে থেকোনা,কিছু একটা বলো?
অর্নব শত দু:খকে বুকে চেপে বলল,
রুহী জন্ম মৃত্যু বিয়ে এসব উপরওয়ালা নিয়ন্ত্রণ করেন।এতে কারো হাত নেই।তুমি তোমার স্বামীর কাছে ফিরে যাও।কারণ সে আমার আগে তোমার জীবনে এসেছিল।
তোমার কী হবে?
আমার কিচ্ছু হবেনা।আমি ভালো থাকবো।
ঠিকতো?
ঠিক ঠিক,চলো ফেরা যাক।
দুজন দুজনের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে স্ব স্ব বাসায় ফিরে গেল।রুহীর বিয়ে হয়ে গেল।সে স্বামীর সঙ্গে লন্ডনে চলে গেল।মাঝে পাঁচ বছর কেটে গেল।রুহী বাংলাদেশে ফিরল।ভাগ্যের কী লীলা খেলা বিমান বন্ধরে দেখা হলো অর্নব’র সঙ্গে।রুহী অর্নবকে চিনতে একটু ভুল করলো না।কাছাকাছি এসে বলল,
হাই অর্নব কেমন আছ?
ভালো,তুমি কেমন আছ?
ভালো।তুমি এখানে কী করছ?
এক বন্ধুকে বিদায় জানাতে আসলাম,লটারীর ভিসায় সে ইউ এস এ যাচ্ছে। কিচ্ছুক্ষণ পরে তার ফ্লাইট।
অর্নব ওসব কথা থাক।এখন তোমার কথা বল,বিয়ে করেছ?
নো ম্যাম।তাছাড়া আমাদের মতো গরীবদের কেবা বিয়ে করবে বলুন?
প্লিজ অর্নব জীবন নিয়ে ইয়ার্কি চলেনা।আমি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে রাফিকে বিয়ে করেছি।আর তুমি কিনা আমার উপর অভিমান কর নিজেকে শেষ করে দিচ্ছ।প্লিজ অর্নব অভিমান ছেড়ে সংসারী হও।তবে জীবনের অর্থ খুঁজে পাবে,সুখী হবে। এর ব্যতিরেকে নয়।
রুহী তবে একটা সত্যি কথা, তুমি আমার জীবনে আসার আগে ভালোবাসা কী বুঝিনি। তারপর যখন বুঝলাম তখন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।সত্যি রুহী আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবেসেছিলাম।কিছুতে ভুলতে পারছি না।
তাই বলে বিয়ে করবি না?
কী করে করবো,আমার দুচোখের ভাবনায় শুধু তুমি,”ভাবনায় ভাস তুমি ” চলিরে ভালো থাকিস।খোদা হাফেজ।
অর্নব চলে গেল।রুহী একবুক বিরহ যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসল।
ঃসমাপ্তঃ