গল্প আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি আফছানা খানম অথৈ

0

আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি

আফছানা খানম অথৈ

মাসুদ বাবা-মায়ের ছোট ছেলে।মাস্টার্স কমপ্লিট করে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করছে।সেই ছোট বেলা থেকে সে খুব লাজুক স্বভাবের।মেয়েদের দিকে কখনো ফিরে ও তাকাতো না।এই নিয়ে বন্ধুরা অনেক হাসি তামাসা করতো।শুধু তাই নয়,তাকে দেখলে সবাই ক্ষ্যাত বলে ডাকতো।এতে সে মনে মনে বিরক্তি হলেও মুখ ফোটে কিছু বলতো না।আজ সেই মাসুদ অনেক বড় হয়ে গেছে।মাস্টার্স কমপ্লিট করে জব করছে,বিরাট ব্যাপার সাপার।মা-বাবা ছেলেকে বিয়ে করানোর জন্য তাড়াহুড়া করছে।একদিন তার বড় ভাবী বলল,
মাসুদ তোমাকে একটা কথা বলতে চাই?
জ্বী ভাবী বলুন।
তোমার কী লাজুক স্বভাবটা এখনো যাবে না?তুমি একটা শিক্ষিত ছেলে,এখনো স্মার্ট হতে পারলে না।আধুনিক যুগে কেউ এমন হয়?
ইয়ে মানে ভাবী….।
ইয়ে ইয়ে করনাতো,তোমার সেকেলে ধ্যান ধারনা রাখ।একটু স্মার্ট হও।তানা হলে মেয়েরা পছন্দ করবে না।
তাহলে তো আরও ভালো।
মানে?
মানে হলো, মেয়েরা যখন পছন্দ করবে না তখন বিয়ে করবো না।চিরকুমার থেকে যাব।পাছে সংসারের ঝামেলা থেকে মুক্তি।
মাসুদ মুখে ব্যাপারটা সহজভাবে বলে ফেললেও এর ব্যাখ্যা কিন্তু অনেক ব্যাপক।আমি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে পারব না।তবে সংক্ষেপে দুচারটা কথা বলি,বিয়ে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য “ফরজ”। বিয়ে মানে জীবনে পরিপূর্ণতা, বিয়ে মানে দুটি মনের মিলন।অনাবিল আনন্দ, হাসি কান্না সুখ দু:খ একে অপরের মাঝে শেয়ার করা।তাছাড়া বিয়ে ছাড়া সমাজে বসবাস করাটা ও কঠিন।তাই বলছি তোমার এখন বিয়ে করা আবশ্যক।আর কোন কথা নয়, কাল আমরা পাত্রী দেখতে যাব।তুমি আমাদের সঙ্গে যাবে।
ইয়ে মানে ভাবী না গেলে হয় না?
এইতো মাসুদ আবার বোকার মতো কথা বললে,তোমার বিয়ে তুমি যাবে না, এটা কেমন কথা?
না মানে তোমাদের পছন্দ হলেতো আমার ও পছন্দ হবে।
না তা হবে না।তোমার জিনিস তোমাকে পছন্দ করতে হবে।তাছাড়া সবার পছন্দ এক রকম নয়।তাছাড়া নিজের জিনিস নিজে পছন্দ করে নেয়া ভালো।তা না হলে পরে আমাদেরকে দোষ দিবে। এটা মায়ের আদেশ,আমার নয়।
এবার মাসুদ মজা করে বলল,
ইয়ে মানে ভাবী কার জন্য পাত্রী?
ন্যাকা কিছু বুঝ না,না? মজা করা হচ্ছে তোমার বিয়ের জন্য পাত্রী।
কী বল ভাবী সরাসরি বিয়ে…।
হুম মি: মাসুদ সরাসরি বিয়ে,কাল বিকেল পাঁচটায় সেজে গুজে স্মার্ট হয়ে রেড়ি থাকবে,বুঝলে।
ওকে তাই হবে।
পরদিন মাসুদ তার মা আর বড় ভাবীর সঙ্গে মেয়ে দেখতে গেল।পাত্রী সবার পছন্দ হলো।এবার তার বড় ভাবী বলল,
মাসুদ কেমন দেখলে, সিনথিয়া দেখতে কেমন,পছন্দ হয়েছে?
হুম ভাবী পাটাপাটি খুব কিউট,আমার খুব পছন্দ হয়েছে।আমিতো আমার চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছি না যে, এমন রুপ কোন নারীর মাঝে আছে?
ওমা তাই?
হুম ভাবী তাই।
তাহলে আর দেরী কেনো? আংটিটা পরিয়ে দাও।
ভাবী তোমার কি আক্কেল জ্ঞান বলতে কিচ্ছু নেই।
মাসুদ কেনো কি হয়েছে?
কি হয়নি বল,মা থাকতে আমি
আংটি পরাবো কেনো?
সরি মাসুদ ভুল হয়ে গেছে। মা আংটিটা পরিয়ে দিন।
বলতে না বলতে মাসুদের মা আংটি পরিয়ে দিলো।তারপর ভালো দেখে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করলো।সময়মতো মাসুদ সিনথিয়ার বিয়ে হলো।সিনথিয়া বউ সেজে মাসুদের বাড়িতে গেল।নতুন বউয়ের আগমনে বাড়িঘর আনন্দ উল্লাসে মুখরিত।রাতের খাবার খেয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়লো।সিনথিয়া বউ সেজে বাসর ঘরে স্বামীর আগমনের প্রহর গুনছে।তখনি দরজায় কড়কড় শব্দ বেজে উঠল।সিনথিয়া দরজা খোলে দিলো।মাসুদ ভিতরে ঢুকল।সিনথিয়া লজ্জাবতী লতার মতো বিছানার এক কোনে বসে পড়লো।মাসুদ আস্তে করে তার পাশে এসে বসল।তারপর বলল,
প্রিয়তমা কেমন আছ?
ভালো।আপনি কেমন আছেন?
প্রিয়তমা আপনি নয় তুমি।
কেনো আমার কী ভুল হয়েছে?
না প্রিয়তমা ভুল হয়নি।
তবে যে রাগ করলেন?
না প্রিয়তমা রাগ করিনি।বলছিলাম…।
থামলেন কেনো বলুন কী বলছিলেন?
স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের পরিপুরক সুখ দু:খের সাথী।স্বামী স্ত্রীর মাঝে মিল মহব্বত ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।এখানে আপনি বলা বাঞ্জনীয় নয়।কারণ এতে আন্তরিকতা বাড়ে না।বরং কমে তাছাড়া কেনো জানি মুরব্বী মুরব্বী মনে হয়।অতএব স্বামী-স্ত্রীর মাঝে তুমি সম্বোধনটা বাঞ্জনীয় এবং সঠিক।এতে দুজনের মাঝে আন্তরিকতা বাড়ে সুখ দু:খ শেয়ার করা যায়।কী বলো?
ঠিক বলেছ।আচ্ছা তুমি কী একটা সত্য কথা বলবে?
হুম বলব।বল কী জানতে চাও?
আচ্ছা তোমার কী কোন রিলেশনশিপ ছিল?
না ছিল না।কেনো কোন সমস্যা?
না কোন সমস্যা নয়। আজ থেকে তুমি আমি ছাড়া আর কোন মেয়ের দিকে ফিরে তাকাতে পারবে না?
আচ্ছা তাকাব না।আর কোনকিছু?
আমি ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে পারবে না?
আচ্ছা বাসব না।আর কিছু?
শুধু আমাকে ভালোবাসবে।
ওকে প্রিয়তমা শুধু তোমাকে ভালোবাসব।বিয়ের পর স্ত্রী ছাড়া অন্য নারীকে ভালোবাস কঠিন পাপ।এইতো আমি আমার প্রিয়তমাকে এক্ষণি ভালোবাসব।এতদূরে কেনো?কাছে এসো জান।
বলতে না বলতে দুজন ভালোবাসার ভুবনে হারিয়ে গেল।সকাল হতে সিনথিয়া জেগে উঠল।হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে সংসারের কাজে লেগে গেল।চা নাস্তা রেডি করে ডাইনিং টেবিল সাজিয়ে স্বশুর-শ্বাশুড়ি ভাসুর-ভাবী ননদ সবাইকে ডাকল।সবাই ডাইনিং টেবিলে খেতে বসল।শ্বাশুড়ি বলল,
বউ মা মাসুদ কোথায়? তাকে ডেকে নিয়ে এসো।
জ্বি আচ্ছা মা আনছি।
সিনথিয়া স্বামীকে ডাকতে গেল।সে এখনো নাক ঢেকে ঘুমাচ্ছে।সিনথিয়া স্বামীর মুখে পানি ছিটা দিয়ে বলল,
এই যে এখনো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন কেনো?সকাল কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে?
পানি ছিটা দেয়া মাত্রই মাসুদের ঘুম ভেঙে গেল।সে জেগে উঠে বউকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে চাইলে সে বলল,
সুইট হার্ট এখন আদর করার সময় না।সবাই বসে আছে নাস্তা করতে চলো।
মাসুদ আর দেরী করলো না।নাস্তা করতে বসল।সে সঙ্গে সিনথিয়াও বসল।নতুন বউকে শ্বাশুড়ি খুব যত্ন করে খাওয়াল।অল্প সময়ের মধ্যে সিনথিয়া শ্বশুর বাড়ির সবাইকে আপন করে নিলো।বউ শ্বাশুড়ি ভাসুর ভাবী সবার মাঝে খুব মিল মহব্বত। শুধু তাই নয় মাসুদ আর সিনথিয়ার মাঝে ভালোবাসা যেন উপছে পড়ছে।একে অপরকে এক পলক না দেখে থাকতে পারে না।অফিস থেকে মাসুদ কখনো খালী হাতে বাসায় ফেরে না।সিনথিয়ার এখনো ছোট বেলার অভ্যাস যাইনি।ছোট্ট বাচ্চাদের মতো আচার চিপস কেক এসব খেতে এখনো অভ্যস্ত।তাই স্বামী প্রতিদিন আসার সময় বউয়ের জন্য এসব খাবার জিনিস নিয়ে আসে।আজ ও অনুরুপ এনেছে।বউ খুশি হয়ে স্বামীর হাত থেকে নিয়ে খেতে শুরু করল।তড়িঘড়ি করে খেতে গিয়ে তার মুখে খাবার আটকে গেল।তার হেঁচকি উঠে গেল।মাসুদ গ্লাসে পানি ঢেলে নিজের হাতে বউকে খাইয়ে দিলো।তাৎক্ষণিকভাবে তার হেঁচকি থেমে গেলে।সে বলে উঠল,
উহু আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।ভাবলাম মরে যাব।
প্রিয়তমা মরার কথা মুখে এনো না।তুমি মরলে আমি বাঁঁচব কী নিয়ে?তাছাড়া খাবার ধীরে সুস্থে চিবিয়ে খেতে হয়।তানা হলে বদ হজম ও গ্যাস বেড়ে যাবে।এটা ডাক্তারের নির্দেশ বুঝলে।
সুইট হার্ট বুঝলাম।একটা সত্য কথা বলবে?
হুম বলব।বলো কী বলবে?
তুমি আমাকে কতটুকু ভালোবাস?
প্রিয়তমা ভালোবাসা পরিমাপ করা যায় না।অন্তর দিয়ে অনুভব করতে হয়।তবুও বলব আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।এবার তুমি বলো তুমি আমাকে কতটুকু ভালোবাস?
আমি ও তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
বলতে না বলতে সিনথিয়া মাথা ঘুরে পড়ে গেল।মাসুদ দ্রুত গতিতে ডাক্তার ডেকে আনল।ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মাসুদের মায়ের দিকে ইশারা করে বলল,
আপনার সুখবর আছে।আপনি দাদী হতে যাচ্ছেন।
দাদী খুশি হয়ে বলল,
শোকর আলহামদুলিল্লাহ।আল্লাহপাক যেন আমার দাদুকে ছহিছালামতে দুনিয়াতে প্রেরণ করেন সেই দোয়ায় করি।
প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে সিনথিয়ার প্রতি স্বামীর দায়িত্ব বেড়ে গেল। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে ডাক্তারী চেকাপ সবকিছু ঠিকমতো পালন করছেন স্বামী মাসুদ রহমান।স্ত্রী একটু আঘাত পেলে মনে হয় যেন স্বামী পেয়েছেন।এমনি আদর ভালোবাসা উপছে পড়ছে দুজনের মাঝে।মাসুদ অফিসে সিনথিয়ার প্রসব ব্যথা উঠেছে।মা ফোন করে বলল,
হ্যালো মাসুদ বউ মার প্রসব ব্যথা উঠেছে।তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্স পাঠিয়ে দেহ্।
মাসুদ আর দেরী করলো না।এম্বুলেন্স পাঠিয়ে বউকে হসপিটালে নিয়ে গেল।ডাক্তার রোগীকে দ্রুত ডেলিভারি কক্ষে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলো।যাবার বেলায় মাসুদের হাত ধরে সিনথিয়া কেঁদে কেঁদে বলল,
ওগো তোমাকে ছাড়া আমি থাকব কী করে?আমার বড্ড ভয় করে যদি আমি মরে যাই।
মাসুদ তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
প্রিয়তমা কেঁদো না।তোমার কিচ্ছু হবে না।ডাক্তার ঠিকমতো তোমার টেককেয়ার করবে।
তবুও আমার ভয় হয়। তুমি চলো আমার সঙ্গে।
না প্রিয়তমা পাগলামি করো না।সেখানে যাওয়া যাবে না।এইতো আমি এখানে আছি।
ওগো তোমার জন্য মায়া লাগে,অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে।ডাক্তার দ্রুত তাকে ডেলিভারি কক্ষে নিয়ে গেল।নরমানে বাচ্চা হবে না বলে মাসুদের কাছে সিজারের অনুমতি চাইল।মাসুদ নিরুপায় হয়ে বউকে বাঁচানোর জন্য অনুমতি পত্রে সাইন করে দিলো।ডাক্তার সিজার করে সিনথিয়ার বাচ্চা বের করলো।কিন্তু সিনথিয়াকে বাঁচাতে পারলো না।ঘন্টা খানেক পরে সিনথিয়ার বেবিকে মাসুদের কোলে দিয়ে ডাক্তার বলল,
সরি মাসুদ সাহেব,জন্ম মৃত্যু সবই আল্লাহপাক নিয়ন্ত্রণ করেন।এতে কারো হাত নেই।আমরা আমাদের চেষ্টার ত্রুটি করিনি।তবুও আপনার স্ত্রীকে বাঁচাতে পারলাম না।আই এম এক্সট্রেমলি সরি।
কথাটা শোনামাত্রই মাসুদ চিৎকার করে বলে উঠল।সিনথিয়া আমি তোমাকে ছাড়া থাকব কী করে, “আমি যে তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি”।কথাগুলো বলতে বলতে সে মুর্ছিত হয়ে পড়লো।
ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply