“জানতে হবে জীবন চলায় কোনটা সঠিক পথ
সঠিক পথে থাকলে তবে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।”
কেবল দ্বিতীয় বর্ষে উঠলাম। সেবার বাবা খুবই অসুস্থ ছিলেন মানসিক ও শারিরীক উভয় দিক দিয়ে। বের হওয়ার সময় আমাকে অনুপ্রেরণা দিতে বিন্দুমাত্র অমনোযোগিতা দেখাননি। মনটাও অনেক ভারী। কিছুদুর পথ যেতে না যেতেই বাটনওয়ালা ফোনে রিংটোন বেজে উঠল। একটা মেসেজ। যেখানে লেখা ছিল দুইটা লাইন যা আমি লেখা শুরুর আগেই তুলে ধরিছিলাম।
মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। খুব করে ইচ্ছা জাগত যদি আমি এখনই সফল হতে পারতাম! বাবাকে আর পেরেশানীতে রাখতে চাচ্ছি না। একাকি চলা মুসাফির, চোখ দুটো বন্ধ করে প্রতিপালকের কাছেই মনের সমস্থ ইচ্ছাগুলো বিড়বিড় করে বলে ফেললাম। আপন মনে চলছে গাড়ি উপজেলা পেরিয়ে জেলা তারপর রাজধানীর হাইওয়েতে… … …
রাত ২ টা। বাসে বসে আছি। মনে পড়তে লাগলো বাড়িতে বসে বাবার সাথে গল্প করার দিনগুলো। তার অতীত, বর্তমান যেন কল্পনার মতো! একটা ১০ বছরের অবুঝ কিভাবে একটা পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারে? কিন্তু তিনি পেরেছিলেন। সেই ভোরবেলা মাছের জাল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন, ফিরতেন সন্ধ্যায়। খাবারের টাইম-টেবিল নাই। তিনি মনস্থির করলেন সেকেন্ডারি শিক্ষাগ্রহণ করবেন। উপজেলার একমাত্র বিদ্যাপীঠেও ভর্তি হলেন। ক্লাস সেভেনের কথা-
ইস্কুল শেষে বাড়িতে এসে দাদীর কাছে শুনলেন আমার বড় চাচা নাকি সেই সকালে হালির হাওরে গিয়েছিলেন ধানচারা বপন করতে। খাবার ঘরে না থাকায় খালি পেটেও গিয়েছেন। আব্বা আর দেরি না করে বইগুলো একপাশে রেখে খাবার নিয়ে রওনা দিলেন হাওরের উদ্দেশ্যে। সুরমা পেরিইয়ে, কতক বিল-ডোবা ডিঙিয়ে বড় চাচার কাছে পৌছলেন। এত কষ্ট সহ্য না হওয়ায় প্রাইমারী লেভেলে অংকে ১০০ তে ১০০ পাওয়া মুহিতুর রহমান, আমার বাবা, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি আর পড়বেন না। আমার বাপ-চাচারা ছিলেন ৩ জন। সবচে’ ছোটজন গ্রামের মক্তব থেকে একটু একটু করে পড়াশোনা চালিইয়ে যাচ্ছেন। বাবা ক্যলকুলেশন করলেন যে তিনি ও তার বড় ভাই যদি ডেইলি কাজ করে মিনিমান কুড়ি থেকে পঞ্চাশ টাকা ইনকাম করা যাবে, যাতে সংসার চলে যাবে যদিও এই আয় যথেষ্ট নয়। মেধাবীর একটা অধ্যায় এখানেই শেষ হলো! নাচোড়বান্দা আমার বাবা তার পড়াশোনার স্বপ্ন ভেঙে ফেলেননি। স্বপ্নটাকে জিইয়ে রেখেছিলেন। প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে চাইতেন আমরা দুই ভাই, দুই বোন যেন পড়াশোনা করে বাবার অসমাপ্ত ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারি!
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বাসের ঝাকুনিতে হুশে ফিরে আসি। সত্যি আমার বাবার স্বপ্ন আল্লাহ কবুল করেছেন হয়তো কারণ তার এক ছেলে এখন দেশের অন্যতম পাব্লিক ভার্সিটিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে! ছোট মেয়ে দুইটা কলেজ আর ভার্সিটির প্রস্তুতি নিচ্ছে। যাদের পদস্খলন মানে বাবার পদস্খলন, একটা স্বপ্নের পদস্খলন!
আবু হামিদ আকাশের পানে তাকিয়ে ভাবছে তো ভাবছেই। তার মন মিল্কিওয়ের ওপারে, সাত আসমান ভেদ করে আরশের মালিকের কাছে… … …
আরো পড়ুন-

ভালো লিখেছেন কবি