(১৪)
এখন বসন্ত কাল। ফাল্গুন ও চৈত্র এ দু’মাস বসন্ত কাল। বসন্ত কালকে ঋতুরাজ বলা হয়। এ সময় চারদিকে ফুটে হরেক রকমের ফুল। আমের ডালে নতুন মুকুলে মৌমাছি গুনগুণ করে। বসন্ত নিয়ে লেখা হয়েছে কত কাব্য কত কবিতা। বসন্ত কবির চোখে ঋতুর রানী। প্রকৃতির যৌবনা রূপের প্রতীক। বসন্তে বনে বনে ফুল ফুটে। সবুজ পাতায় পাতায় সজীবতার রং ছড়িয়ে বসন্ত আসে। প্রকৃতি সবুজে ভরে উঠে। মৃদু বাতাসে ফুলের সুবাস আর কোকিলের কুহুতানে প্রভাতের প্রকৃতি যেন নবীন হয়ে উঠে। চারদিকে ফুলের সমারোহ- গোলাপ, জবা, গন্ধরাজ, গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা প্রস্ফুটিত হয়। পলাশ, শিমুল, কৃঞ্চচূড়ার শাখায় অগ্নিশিখার মতো লাল রঙের ছড়াছড়ি। ফুলের মধু খেতে কত বিচিত্র পাখি উড়ে বেড়ায় গাছে গাছে ফুলে ফুলে। প্রজাপতি তার ডানায় রং লাগিয়ে উড়ে উড়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করে। কবি গানের ভাষায় বসন্তের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
“ আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে,
এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়”।
এ সময় নাকি কোকিল মিষ্টি সুরে গান করে কবি লেখকের ভাষায়, আমি বলি বসন্তের কালে কোকিল ডাকে, আর এমনিতেই কোকিলের ডাক সুমধুর।
বিকেলের দিকে রাহিকে নিয়ে পুকুর পাড়ে একটা বড় শিমুল গাছের নিচে বসি। রাহি কে বললাম- রাহি তুমি যখন যা বল আমি শুনি। এখন আমি যা বলব তা তুমাকে শুনতে হবে।
কি আর শুনলে আমার কথা? বললাম একটা বিয়ে করো! দুলাভাই পাব।
ইস আমার সাথে ফাজলামি করিস, রাহির কান মলে ধরি!
উঁফ আপু লাগছে কান ছাড় আর বলব না!
মনে থাকবে কান মলার কথা? হে সারা জীবন মনে থাকবে!
কান ছেড়ে দিয়ে বলি এবার কাজের কথা শুন। আমি একটা কাগজ দেব আর গন্ধরাজ ফুলের একটা তোড়া দেবো ঐ গুলো এখন চুপি চুপি গিয়ে শরণ ভাইয়ার বিছানায় রেখে আসতে হবে। তাদের ঘরের কেউ যেন বুঝতে না পারে।
এটা কি করে সম্ভব? চাচি আম্মা দেখে ফেলবে তো!
তাহলে তুই এক কাজ কর, বাগানের দিকে যে জানালা আছে এই জানালার সামনে ওর টেবিলের উপর রেখে আসতে পারবে?
কিন্তু শরণ ভাইয়া যদি রুমে থাকেন?
আরে না সে অফিস থেকে এখনও আসেনি!
ঠিক আছে তুমি ফুল আর কাগজ নিয়ে আস। আমি একবার ওই ঘর থেকে ঘুরে দেখে আসি ওরা কে কোথায় আছে।
আমি জানতাম রাহি কথা শুনবে তাই আগে ওইগুলো রেডি করে রেখেছিলাম। এখন এগুলো নিয়ে বারান্দায় এসে পায়চারি করছি। ততক্ষণে রাহি চলে আসে।
আপু সব ঠিক আছে বাগানের দিকেও কেউ নেই তাড়াতাড়ি দাও!
রাহির হাতে দিয়ে বলি- খুব সাবধানে যাবি। রাহি চুপি চুপি গিয়ে জানালা দিয়ে টেবিলের উপর রেখে চলে যায় তপুদের বাড়ি।
এদিকে সারা বিকেল ধরে বারান্দায় ঘরে অস্তির ভাবে পায়চারি করছি। সন্ধ্যার সময় রাহি বাসায় ফিরে আসে।
তাড়াতাড়ি গিয়ে জিজ্ঞেস করি-রাহি কোথায় গিয়েছিলে?
তাপুদের বাড়ি।
আমায় কিছু না বলে কেন গেলে? কি যে চিন্তার মধ্যে ছিলাম!
রাহি হেসে বলে-তুমাকে চিন্তায় ফেলার জন্য না বলে গেছি!
ভালো করিসনি। আচ্ছা এখন বল সব ঠিক আছেতো?
হ্যাঁ, আমি ঠিক মত রেখে এসেছি, এখন ভালোয় ভালোয় শরণ ভাইয়া পেয়ে গেলেই হল।
রাত প্রায় ন’টা বাজে জানালা খুলে বই নিয়ে জানালার পাশে বসে আছি। বাগানে গোলাপ আর গন্ধরাজের সমারোহ ঘটেছে। বাগান থেকে আসা ফুলের সুমিষ্ট গন্ধে মন ফুরফুরে হয়ে ওঠে। তার পরেও অস্তিরতা, কবে আসবে শরণ। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর শরণ আসছে দেখে জানালার পাশ থেকে উঠে আসি।
শুক্রবার বিকেলে পুকুর পাড়ে শিমুল গাছের নিচে একা বসে আছি। দশ মিনিটের মত হবে এভাবে বসেছিলা পিছন ফিরে দেখি শরণ দাঁড়িয়ে। জিজ্ঞেস করি- আপনি কখন এলেন?
শরণ ও পাশে বসতে বসতে বলল-এইতো পুকুর ঘাটে বসতে এসেছিলাম আপনাকে দেখে এখানে চলে আসলাম।
ও আচ্ছা।
কেমন আছেন?
ভালো, আপনি?
আমি ভালো আছি। অনেক দিন পর দেখা হল?
হ্যাঁ, আপনিতো ব্যস্ত মানুষ, বাসায় থাকেন না!
শুক্রবার ছাড়া অন্যদিন তেমন সময় পাই না!
আমিতো প্রায়ই পুকুর ঘাটে বসি রাহি কে নিয়ে, পুকুরের চারপাশ ঘুরে বেড়াই।
আমার ও ভালো লাগে কিন্তু সময় পাইনা। একটা কথা বলব দু’তিন দিন থেকে ভাবছি।
জি বলেন?
আপনি কাউকে বলবেন নাতো? এরকম আগে কখন ও ঘটেনি তাই খুব চিন্তার মধ্যে আছি।
আপনি নির্ভয়ে বলতে পারেন?
সেদিন রাতে বাইরে থেকে আসার পর রুমে গিয়ে দেখি টেবিলের উপর রাখা গন্ধরাজ ফুলের একটা তোড়া আর একটা কাগজে লিখা
“মানুষের জীবন ফুলের মত,
প্রভাতের ফুল সন্ধ্যায় ঝরে যায়”।
একটা ছোট্ট মিষ্টি হাসি দিয়ে বলি- বাহ্ এটাতো খুবই মজার ব্যাপার।
হ্যাঁ, আমার কাছে ও ভেরি ইনট্রিস্টিং মনে হচ্ছে।
আচ্ছা একটা কথা বলি কিছু মনে করবেন না তো?
কি কথা বলেন?
চটপট বলে ফেলি আপনি কাউকে ভালোবাসেন।
শরণ অপ্রস্তুত হয়ে আমার দিকে তাকায়!
না মানে বলছিলাম কি আপনি কাউকে পছন্দ করেন অথবা কেউ আপনাকে?
শরণ নিরব মুচকি হাসি দেয় কোনো কথা বলেনি।
তাহলে তো চিন্তার বিষয়, কে এ কাজ করল?
শরণ নিরব হয়ে পানির দিকে চেয়ে কি যেন ভাবছে। ওর মুখের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর আমি ও চুপ হয়ে বসে থাকি, পাছে ধরা পড়ে যাই কিনা এই ভয়ে।
ভালো লিখেছেন কবি