গল্প বিয়ের ফাঁদ আফছানা খানম অথৈ

0

বিয়ের ফাঁদ

আফছানা খানম অথৈ

আফজাল শিকদার একজন বড় ব্যবসায়ী। দেশে বিদেশে তার অনেক নাম ডাক।তিনি সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত।কিন্তু তিনি লোক চক্ষুর আড়ালে অনেক অপকর্ম করেন।একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার ছিলেন।যার কারণে অনেক সম্পদের মালীক হয়েছেন।এক সময় তিনি গ্রামে ছিলেন।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গা ঢাকা দেয়ার জন্য শহরে চলে যান।তারপর তিনি আফজাল থেকে আফজাল শিকদার নামে পরিচিতি লাভ করেন।অনেক বছর হয়ে গেল এখন তাকে কেউ চিনবে না।তাই আফজাল শিকদার হয়ে নতুন রুপে গ্রামে ফিরলেন।

গ্রামে এসে মসজিদ মাদরাসায় কিছু টাকা দান করলেন।লোকজনকে খাতির করে চা নাস্তা খাওয়ালেন। নিজেকে সমাজ সেবক হিসেবে দাবি করলেন।শুধু তাই নয় জন সম্মুখ্যে লম্বা বক্তৃতা দিয়ে চলেছে।
সমাজ উন্নয়নমূলক কাছে জনগনকে সাহায্য করবেন।গরীব দু:খীদের সাহায্য করবেন।অবিবাহিতা মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দেবেন। আর ও কত কি?
এই সেরেছে সাহায্যের কথা শুনে লোকজন কি আর থেমে থাকে, ছুটে আসতে শুরু করেছে।
সে দুচার পাঁচশ করে করে দিতে লাগল।এমন সময় ছুটে আসল মুক্তিযোদ্ধা রইস মুন্সি। তিনি বৃদ্ধ হয়ে গেছেন ঠিকই কিন্তু আফজাল শিকদারকে চিনতে ভুল করলেন না।চিৎকার করে বলে উঠলেন।
তোমরা কার বক্তৃতা শুনছ?ওহ্ সমাজ সেবক নয়।ওহ্ হচ্ছে রাজাকার আফজাল।একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার ছিল,এখন সমাজ সেবক সেজেছে।সাবধান তোমরা কেউ ওর কথা বিশ্বাস করো না।সে গ্রামে এসেছে আরেকটা কুমতলব নিয়ে,মানুষের সর্বনাশ করার জন্য।

এবার আফজাল শিকদার বলল,
“আপনারা কিছু মনে করবেন না।উনি বুড়ো হয়ে গেছে তো স্মরণ শক্তি লোপ পেয়েছে।তাই অনেক আজে বাজে কথা বলেছে।আপনারা কেউ উনার কথা বিশ্বাস করবেন না।আমি ভালো মানুষ, রাজাকার না। বিপদ আপদে আপনাদের পাশে আছি।সাহায্যের দরকার হলে বলবেন।বিশেষ করে যেসব বাবা মা টাকার অভাবে মেয়ে বিয়ে দিতে পারছে না,তারা আমার সাথে যোগাযোগ করবেন।আমি নিজ খরচে তাদের বিয়ে দেব।

লোকজন এখন আর ভালো মন্দ যাচাই করে না।টাকা থাকলে আর দুচার টাকা দান করলে তাকে ভালো মানুষ ভাবে।তাই রইস মুন্সির কথা কানে না নিয়ে আফজাল শিকদারের পক্ষে জিন্দাবাদ দিলো।
বলতে না বলতে দুচারজন কন্যাদায় গ্রস্ত পিতা তার সামনে হাজির হলো।আফজাল শিকদার তাদের হাতে কিছু নগদ টাকা গুজে দিলেন।তারপর মেয়েদের ভালো বরের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন।তারা খুশি মনে বিদায় নিলো।আফজাল শিকদার নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিয়ে দিয়ে বিদেশ পাচার করে দিলেন।এমনিভাবে সে গ্রামের সহজ সরল মেয়েদের বিয়ের নাম করে বিদেশ পাচার করছেন।বিষয়টা কিন্তু গোপন নেই।প্রায়ই অনেকে জেনে গেছে।

একদিন তার মেয়ে জারার বন্ধু সার্কেলের অনেকে বলল,
জারা তোর বাবা কিন্তু ভালো না।আস্ত একটা বদমায়েশ।
কী বললি!
হ্যাঁ সত্যি।
কী করেছে বাবা?
কী করেনি বল,একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রাজাকার ছিলো,লুটপাট করেছে।এখন ভালো মানুষের মুখোশ পরে মানুষের সর্বনাশ করছে।নারী পাচার,শিশু পাচার,মদ গাজা হিরোইন আর ও কত কি,পাচার করছে।
কী! আমার বাবার নামে এতো বড় বদনাম।আমি তোদের ছাড়ব না।পুলিশে দেব।
আমাদের পুলিশে দেয়ার আগে নিজের বাবার সম্পর্কে ভালো করে জান, তারপর যা করার করিস।

জারা কিন্তু থেমে নেই।বাড়িতে গিয়ে বলল,
বাবা তোমার নামে এসব কি শুনছি?
কি শুনছিসরে মা?
লোকে বলে,তুমি নাকি খুব খারাপ।মানুষের…।
থামলি কেনো মা বল,মানুষের কী…।
জারা কিন্তু থেমে থাকল না।বন্ধুদের কথাগুলো বাবার সামনে পূনরাবৃত্তি করল।বাবা হেসে উঠে বলল,
লোকের কথায় কান দিস না মা।এসব বানোয়াট গল্প।আমার টাকা হয়েছেতো,তাই লোকে হিংসা করছে,বদনাম রটাচ্ছে।আমি ভালো মানুষ সমাজ সেবক,মানুষের উপকার করি।
সত্যি বলছ বাবা?
হ্যাঁরে মা সত্যি।

মেয়েকে মিথ্যে বলে পার পেল আফজাল শিকদার।কিন্তু এভাবে আর কত দিন।সত্য একদিন প্রকাশ হবে।

এর ফাঁকে কেটে গেল মাস খানেক।তার ফোনে গ্রাম থেকে কল আসল।সন্ধান পেল সুন্দরী রীনার।তিনি ছুটে গেলেন গ্রামে। রীনার বাবার হাতে কিছু টাকা দিয়ে তাকে বাসায় নিয়ে আসলেন।

খবর পেল তার মেয়ে জারা।ছুটে আসল রীনার কাছে।এসে দেখে সে বিয়ের সাজে বসে আছে।কারণ জিজ্ঞেস করতে সকল তথ্য বেরিয়ে আসল।রীনা বলল,
তার বাবা খুব গরীব।টাকার অভাবে বিয়ে দিতে পারছে না।গরীব মেয়েদের যৌতুক ছাড়া বিয়ে হয়না।তার বাবা বিয়ে দিবে বলেছ।তাই এখানে এসেছে।আজ তার বিয়ে।

পাশের ঘরে আফজাল শিকদার বর মানে পাচারকারী লিডারের সঙ্গে কথা বলছে।আর আঁড়ি পেতে তা শুনছে জারা।
এবার কিন্তু আমাকে পুরো তিন লক্ষ টাকা দিতে হবে।সাচ্ছা খাটি মাল।
ঠিক আছে দেব।এই নাও টাকা।
আফজাল শিকদার টাকা বুঝে নিয়ে বলল,
সাবধান অভিনয় কিন্তু ভালোভাবে করবে।সে যেন বুঝতে না পারে যে তাকে পাচার করা হচ্ছে।
আপনি কোন চিন্তা করবে না।সে কিছুই বুঝতে পারবে না।
ঠিক আছে তুমি রেডি হয়ে এসো।

এদিকে জারা সবকথা শুনে বাবাকে উচিৎ শিক্ষা দেয়ার জন্য রেডি হল।রীনার কাপড় পরে ঘোমটা দিয়ে বসে রইল।আফজাল শিকদার রীনার কাছে আসলেন।লোকটা আসামাত্রই বিয়ে পড়ানোর কাজ শেষ করলেন।তারপর বললেন,
বলেছি না একেবারে সাচ্ছা খাটি মাল।দেখে নাও।
ঘোমটা খুলতে একি দেখলেন।তার মেয়ে জারা।চমকে উঠে বললেন,
জারা তুই এখানে?
কেনো বাবা বিশ্বাস হচ্ছে না?
না মানে তুই এখানে কি করছিস?
কী করছি বুঝতে পারছ না।
প্লিজ মা তুই এখান থেকে যা।
না বাবা আমি যাবনা।ছি: বা ছি: তুমি এত জঘন্য,লোকে ঠিকই বলেছিল।তুমি খুব..।
তোমাকে বাবা ডাকতে ও ঘেন্না হচ্ছে।টাকার জন্য মানুষ বিক্রি কর। রীনাকে “বিয়ের ফাঁদ” পেতে যদি তিন লাখ টাকা বিক্রি করতে পার,তাহলে আমাকে পারবে না কেনো?এবার বল আমার দাম কত লক্ষ টাকা?
এই আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?আমাকে নিয়ে চলুন।
আফজাল শিকদার নিজের ভুল বুঝতে পারল।তারপর বলল,
সরি মা আমার ভুল হয়ে গেছে।আজ তুই আমার চোখ খুলে দিলে।আমি ওয়াদা করছি আর কখনো এমন জঘন্য কাজ করব না।ভালো হয়ে যাব।
সত্যি বলছ বাবা?
হ্যাঁরে মা সত্যি সত্যি সত্যি।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply