মাতা-পিতার ওপর সন্তানের হকসমূহ (২য় কিস্তি)

0

[পূর্ব প্রকাশিতের পর থেকে ]

৯. ছয়/সাত বছর বয়সে খতনা করানো

 

জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সপ্তম দিবসে আকীকা এবং খাতনা করিয়েছেন। [আল-মু‘জামুল আওসাত: ৬৭০৮]

 

১০. সাত বছর বয়সে নামাযের আদেশ করা

 مُرُوا أوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وهُمْ أبْناءُ سَبْعِ سِنِينَ، واضْرِبُوهُمْ عَلَيْها وهُمْ أبْناءُ عَشْرِ سِنِينَ، وفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي المَضاجِعِ

অনুবাদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে সালাতের আদেশ দাও। আর দশ বছরে পৌঁছালে তাকে নামাযের জন্য প্রহার করো। এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও। [সুনানে আবী দাঊদ: ১/৩৩৪]

১১. বিছানা আলাদা করে দেওয়া [প্রাগুক্ত]

১২. কুরআন ও দ্বীনী শিক্ষায় শিক্ষিত করা

আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “তোমরা তোমাদের সন্তানদের তিনটি বিষয় শিক্ষা দাও। তন্মধ্যে রয়েছে তাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা ও কুরআনের জ্ঞান দাও।” [জামিউল কাবীর, আরো দ্রষ্টব্য কানযুল উম্মাল: ৪৫৯৩৩, মীযানুল হিকমাহ: ৫৭৪]

১৩. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত তাদের পেছনে খরচ করা

 أُمِّ سَلَمَةَ، قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ لِي مِنْ أَجْرٍ فِي بَنِي أَبِي سَلَمَةَ أَنْ أُنْفِقَ عَلَيْهِمْ، وَلَسْتُ بِتَارِكَتِهِمْ هَكَذَا وَهَكَذَا، إِنَّمَا هُمْ بَنِيَّ‏.‏ قَالَ ‏ “‏ نَعَمْ لَكِ أَجْرُ مَا أَنْفَقْتِ عَلَيْهِمْ

অনুবাদ: উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম আবূ সালামার সন্তানদের জন্য আমি যদি খরচ করি এতে কি আমার জন্য প্রতিদান রয়েছে? নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ যতদিন তুমি খরচ করবে ততদিন তোমার জন্য প্রতিদান থাকবে। [সহীহ বুখারী: ৫৩৬৯]

১৪. কর্ম শেখানো ও সক্ষম করে তোলা

قال رسولُ اللَّهِ صلى اللَّه عليه وآله : حَقُّ الوَلَدِ على‏ والِدِهِ أن يُعَلِّمَهُ الكِتابَةَ ، والسِّباحَةَ ، والرِّمايَةَ ، وأن لا يَرزُقَهُ إلّا طَيِّباً

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পিতার উপর সন্তানের অধিকার হলো তাকে লেখালেখি, সাঁতার কাটা এবং গুলি চালানো শেখানো এবং তার হাতে উত্তম ব্যতীত কিছুই না দেওয়া। [মীযানুল হিকমাহ: ৫৭৫]

সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, তোমাদের সন্তান সন্ততিদেরকে সক্ষম ও সাবলম্বী রেখে যাওয়া, তাদেরকে অভাবী ও মানুষের কাছে হাত পাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। [সহীহ বুখারী:১২৯৫]

قال رسول الله صلى اللَّه عليه وآله : حَقُّ الوَلَدِ علَى الوالِدِ أن يُحَسِّنَ اسمَهُ ، ويُحَسِّنَ أدَبَهُ ويُحَسِّنَ مَوضِعَهُ

অনুবাদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, পিতার উপর সন্তানের হক হচ্ছে, তার সুন্দর একটি নাম রাখবে। তাকে উত্তম আচার-আচরণ শিক্ষা দেবে ও (ধন সম্পদের দিক থেকে) ভালো অবস্থানে পৌঁছে দেবে।

১৫. বিয়ের উপযুক্ত হলে বিয়ে দেওয়া

বর্তমানে অধিকাংশ উঁচু ফ্যামিলির বাবা-মারা তাদের সন্তানদেরকে বিয়ে করায় দেরিতে। তারা হয়তো ভালো নিয়তে বিয়ে দিতে দেরি করে, অথচ এর কারনে আমাদের সন্তানরা গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। জেনা ব্যভিচার ও পর্ন দেখার মতো জঘন্য পাপে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। কাজেই না বাবার উচিত তাদের সন্তানকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া হোক ছেলে কিংবা মেয়ে।

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে: “নিশ্চয়ই পিতার উপর সন্তানের হকের মধ্যে রয়েছে, সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাকে বিবাহ দেবে। [জামিউল কাবীর]

১৬. সন্তানদের সাথে ভালো ব্যবহার করা

এই জিনিসটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কোনো ফ্যামিলিতে দেখা যায়, মা কিংবা বাবা আপন সন্তানের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকে। হোক তা বিয়ের আগে কিংবা পরে। বিয়ের পরে তো বউ কিংবা শ্বশুরবাড়িকে ঘিরে সন্তানকে বিভিন্ন আক্রমণাত্মক কথা বলে যা সন্তানের জন্য সহ্য করা অনেক সময় কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই সন্তান মা-বাবার অবাধ্য হয়ে পড়ে এবং মা-বাবার সাথে দুর্ব্যবহার করে।

আবার অনেক সময় দেখা যায় সন্তান বাবা-মার কথায় চুপ করে থাকলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। আর যদি মুখে মুখে জবাব দেয় তখন তাকে বেয়াদব ঠাওরায়। কোনো কোনো মায়ের অভ্যাস আছে এক কথা বারবার বলে এবং তা নিয়ে পুরো দিন মাথা গরম রাখে; এতে করেও সন্তান মাতা পিতার অবাধ্য হয়ে যায়।

কোনো কোনো মা-বাবা সন্দেহের ভিত্তিতে সন্তানের ভুল ধরে। এতে করেও মা-বাবার প্রতি সন্তানের ভক্তি শ্রদ্ধা কমে যায়।

 

১৭. সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করা

অনেক সময় দেখা যায়, মা বাবা এক সন্তানকে বেশি দেন অন্য সন্তানকে কম দেন। এটি অনুচিত। বরং ইনসাফ ও সমতা বজায় রাখতে হবে।

বুখারীর হাদীসে এসেছে-

وَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم اعْدِلُوْا بَيْنَ أَوْلَادِكُمْ فِي الْعَطِيَّةِ وَهَلْ لِلْوَالِدِ أَنْ يَرْجِعَ فِيْ عَطِيَّتِهِ وَمَا يَأْكُلُ مِنْ مَالِ وَلَدِهِ بِالْمَعْرُوفِ وَلَا يَتَعَدَّى وَاشْتَرَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنْ عُمَرَ بَعِيْرًا ثُمَّ أَعْطَاهُ ابْنَ عُمَرَ وَقَالَ اصْنَعْ بِهِ مَا شِئْتَ

অনুবাদ: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, সন্তানদেরকে কিছু দেয়ার ক্ষেত্রে তোমরা ইনসাফপূর্ণ আচরণ কর। কিছু দান করে পিতার পক্ষে ফেরত নেয়া বৈধ কি? পুত্রের সম্পদ হতে ন্যায়সঙ্গতভাবে পিতা খেতে পারবে, তবে সীমালঙ্ঘন করবে না। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট হতে একটি উট ক্রয় করলেন, পরে ইবনু ‘উমারকে তা দান করে বললেন, এটা যে কোন কাজে লাগাতে পার। [বুখারী: ২৫৮৬]

عَنْ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ أَنَّ أَبَاهُ أَتَى بِهِ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنِّيْ نَحَلْتُ ابْنِيْ هَذَا غُلَامًا فَقَالَ أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَ مِثْلَهُ قَالَ لَا قَالَ فَارْجِعْهُ.

অনুবাদ: নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, তার পিতা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এলেন এবং বললেন, আমি আমার এই পুত্রকে একটি গোলাম দান করেছি। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সব পুত্রকেই কি তুমি এরূপ দান করেছ। তিনি বললেন, না; তিনি বললেন, তবে তুমি তা ফিরিয়ে নাও। [বুখারী: ২৬৫০, মুসলিম: ১৬২৩]

অন্যত্র আরও এসেছে

عَنْ عَامِرٍ قَالَ سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ بَشِيْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا وَهُوَ عَلَى الْمِنْبَرِ يَقُوْلُ أَعْطَانِيْ أَبِيْ عَطِيَّةً فَقَالَتْ عَمْرَةُ بِنْتُ رَوَاحَةَ لَا أَرْضَى حَتَّى تُشْهِدَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَأَتَى رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنِّيْ أَعْطَيْتُ ابْنِيْ مِنْ عَمْرَةَ بِنْتِ رَوَاحَةَ عَطِيَّةً فَأَمَرَتْنِيْ أَنْ أُشْهِدَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ أَعْطَيْتَ سَائِرَ وَلَدِكَ مِثْلَ هَذَا قَالَ لَا قَالَ فَاتَّقُوْا اللهَ وَاعْدِلُوْا بَيْنَ أَوْلَادِكُمْ قَالَ فَرَجَعَ فَرَدَّ عَطِيَّتَهُ.

অনুবাদ: আমির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ)-কে মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি যে, আমার পিতা আমাকে কিছু দান করেছিলেন। তখন (আমার মাতা) আমরা বিনতে রাওয়াহা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সাক্ষী রাখা ব্যতীত সম্মত নই। তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আসলেন এবং বললেন, আমরা বিনতে রাওয়াহার গর্ভজাত আমার পুত্রকে কিছু দান করেছি। হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে সাক্ষী রাখার জন্য সে আমাকে বলেছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সব ছেলেকেই কি এ রকম করেছ? তিনি বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তবে আল্লাহকে ভয় কর এবং আপন সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। [নু‘মান (রাঃ)] বলেন, অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং তার দান ফিরিয়ে নিলেন। [বুখারী: ২৫৮৭, ২৫৮৬]

১৮. অশ্লীলতা, অপসংস্কৃতি ও পাপকাজ থেকে বিরত রাখা

অনেকেই সন্তানের অশ্লীলতা এবং পাপ কাজ করাকে সামান্য মনে করেন এবং বাচ্চা বলে বলে ছেড়ে দেন অথচ এই অবহেলাটাগ আপনাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।

মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ

বাংলা অনুবাদঃ মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে। [সূরা আত-তাহরীম: ৬]

وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا رَبَّنَا أَرِنَا اللَّذَيْنِ أَضَلَّانَا مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ نَجْعَلْهُمَا تَحْتَ أَقْدَامِنَا لِيَكُونَا مِنَ الْأَسْفَلِينَ

অনুবাদ: আর কাফিররা বলবে, ‘হে আমাদের রব, জ্বিন ও মানুষের মধ্যে যারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তাদেরকে আমাদের দেখিয়ে দিন। আমরা তাদের উভয়কে আমাদের পায়ের নীচে রাখব, যাতে তারা নিকৃষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়। [সূরা হা-মীম আসসিজদাহ: ২৯]

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ ۚ وَإِنْ تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ

অনুবাদ: আল্লাহ বলেন: “হে মুমিনগণ, তোমাদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের কেউ কেউ তোমাদের দুশমন। অতএব তোমরা তাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। আর যদি তোমরা মার্জনা কর, এড়িয়ে যাও এবং মাফ করে দাও তবে নিশ্চয় আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু।” [সূরা তাগাবুন-১৪]

১৯. সন্তানের জন্য নেক দো‘আ করা

অনেক মা বাবাই সন্তানদেরকে কথায় কথায় বদদোয়া দিয়ে থাকেন। এটি অত্যন্ত জঘন্য কাজ। হাদীসে এসেছে মাতা পিতার দোয়ার মাঝে আর আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না অর্থাৎ সঙ্গে সঙ্গে তা কবুল হয়ে যায়। অতএব মা-বাবাদের উচিত, সব সময় তাদের সন্তানদের জন্য হেদায়েতের দোয়া করা এবং তাদের কল্যাণ কামনা করা। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন-

 وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

অনুবাদ: (আল্লাহর নেক বান্দা তারাই) যারা বলে: “হে আমাদের রব, আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন।” [সূরা আলফুরকান-৭৪]

তিনি আরো বলেন

هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُ ۖ قَالَ رَبِّ هَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً ۖ إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ

অনুবাদ: সেখানেই যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকট দো‘আ করেছিলেন, “হে আমার রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।” [সূরা আলে ইমরান: ৩৮]

 

পিতার সম্পদে সন্তানের হক

পিতার সম্পদে সন্তানের হক প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত থাকে, আর মেয়ের ক্ষেত্রে বিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত। সন্তান যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায় তখন পিতার সম্পদের সন্তানের কোন হক থাকে না। আর কন্যা যখন পরের ঘরে চলে যায়, এরপরে বাবার সম্পদে তার কোনো হক থাকে না।

তবে সন্তান যদি প্রতিবন্ধী হয় তাহলে এবং বাবার মৃত্যুর পরে ছেলে হোক মেয়ে হোক উভয় সন্তানেরই হক রয়েছে।

পিতার সম্পদে সন্তানের হক সম্পর্কে কুরআনে এসেছে

يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ ۚ فَإِنْ كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ ۖ وَإِنْ كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ ۚ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِنْ كَانَ لَهُ وَلَدٌ ۚ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ ۚ فَإِنْ كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ ۚ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا ۚ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

বাংলা অনুবাদঃ আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু?জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু’ এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে। যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১১)

এর পরের আয়াতে আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন-

وَلَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ أَزْوَاجُكُمْ إِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُنَّ وَلَدٌ ۚ فَإِنْ كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ ۚ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِينَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۚ وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِنْ لَمْ يَكُنْ لَكُمْ وَلَدٌ ۚ فَإِنْ كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُمْ ۚ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ وَإِنْ كَانَ رَجُلٌ يُورَثُ كَلَالَةً أَوِ امْرَأَةٌ وَلَهُ أَخٌ أَوْ أُخْتٌ فَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا السُّدُسُ ۚ فَإِنْ كَانُوا أَكْثَرَ مِنْ ذَٰلِكَ فَهُمْ شُرَكَاءُ فِي الثُّلُثِ ۚ مِنْ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصَىٰ بِهَا أَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَارٍّ ۚ وَصِيَّةً مِنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَلِيمٌ

বাংলা অনুবাদঃ আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের স্ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে তোমাদের হবে এক-চতুর্থাংশ ঐ সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়; ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যে পুরুষের, ত্যাজ্য সম্পত্তি, তার যদি পিতা-পুত্র কিংবা স্ত্রী না থাকে এবং এই মৃতের এক ভাই কিংবা এক বোন থাকে, তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয়-ভাগের এক পাবে। আর যদি ততোধিক থাকে, তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর, যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্থায় যে, অপরের ক্ষতি না করে। এ বিধান আল্লাহর। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১২)

এ ব্যাপারে রাসূলের হাদীসে এসেছে

 أُمِّ سَلَمَةَ، قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ لِي مِنْ أَجْرٍ فِي بَنِي أَبِي سَلَمَةَ أَنْ أُنْفِقَ عَلَيْهِمْ، وَلَسْتُ بِتَارِكَتِهِمْ هَكَذَا وَهَكَذَا، إِنَّمَا هُمْ بَنِيَّ‏.‏ قَالَ ‏ “‏ نَعَمْ لَكِ أَجْرُ مَا أَنْفَقْتِ عَلَيْهِمْ

উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম আবূ সালামার সন্তানদের জন্য আমি যদি খরচ করি এতে কি আমার জন্য প্রতিদান রয়েছে? নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ যতদিন তুমি খরচ করবে ততদিন তোমার জন্য প্রতিদান থাকবে। [সহীহ বুখারী: ৫৩৬৯]

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে আমাদের মাতা-পিতার হক যথাযথ আদায় করার তৌফিক দান করুন এবং যারা মা বাবা আছেন তাদেরকেও আল্লাহ তাআলা তাদের সন্তানদের যথাযথ হক আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

ছাত্র: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস

 

 

 


56
বিজ্ঞাপনঃ মিসির আলি সমগ্র ১: ১০০০ টাকা(১৪% ছাড়ে ৮৬০)

0

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

Author: লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান

লুবাব হাসান সাফ‌ওয়ান। ঠিকানা: নোয়াখালী। কর্ম: ছাত্র। পড়াশোনা: আল-ইফতা ওয়াল হাদীস [চলমান] প্রতিষ্ঠান: মাদরাসাতু ফায়দ্বিল 'উলূম নোয়াখালী।

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply