হজরত দাউদ (আ) ও বাদশাহ জুলিয়েট

0

হজরত দাউদ (আ) তখনও বেশ ছোট। শিশুকাল পেরিয়ে মাত্র কৈশোরে পা দিয়েছেন। তখন জুলিয়েট নামে এক প্রতাপশালী রাজা ছিল। জুলিয়েটের ছিল অনেক শক্তি ও সাহস। সে অত্যাচারী রাজা হিসেবে পরিচিত ছিল। তার লোভ – লালসার শেষ ছিল না। ধন-সম্পদ ও শান-শওকতের প্রতি তার ছিল প্রবল নেশা। তাই সুযোগ পেলেই সে অন্য রাজ্য আক্রমণ করে তা দখল করে নিত। তারপর ঐ রাজ্যের ধন-সম্পদ লুটপাট করে নিয়ে সে শান্তি পেত। জুলিয়েট কারও সুখ পছন্দ করত না।সে কেবল নিজের সুখ ভোগের কথাই ভাবত,অন্যের দুঃখ কষ্ট দেখলে তার হাসি পেত।

হজরত দাউদ (আ) জেরুসালেমে বাস করতেন। এ রাজ্যের বাদশাহ ছিলেন তালুত। একবার জুলিয়েট তালুতের রাজ্য দখল করতে চাইল। ফলে তার সাথে জুলিয়েটের যুদ্ধ বাধল। তালুতের তেমন সৈন্য সামন্ত ছিল না। তাই তিনি রাজ্যের সাধারণ মানুষকে যুদ্ধে অংশ নিতে আহ্বান জানালেন। জুলিয়েটের আক্রমণ প্রতিহত করতে দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে তালুত আহবান জানালেন। ছোট – বড় সবাই তালুতের আহ্বান সাড়া দিল। যার যা আছে তা নিয়েই দেশবাসী জুলিয়েটকে প্রতিহত করতে প্রস্তুত হলো। দেখতে দেখতে তালুতের সৈন্য সংখ্যা ৮০ হাজারে গিয়ে দাঁড়াল।

এ বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে তালুত যুদ্ধের জন্য অগ্রসর হলেন। হজরত দাউদ (আ) ও তাদের সাথে ছিলেন। তখনকার দিনে যুদ্ধ করাটা বেশ কষ্টকর ছিল। তখন পিচঢালা কোন রাস্তাঘাত ছিল না। পথঘাট ছিল কণ্টকাকীর্ণ ও বিপদ সক্কুল। পথের এ সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করে তালুতের সেনারা অগ্রসর হতে ভয় পাচ্ছিল। তাই তাদের অনেকেই পেছনে পড়ে রইল। বেশির ভাগ সেনা নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরে গেল। সবশেষে তালুত মাত্র ৩১৩ জন সৈন্য নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে হাজির হলেন। দাউদ (আ)ও তাদের সাথে ছিলেন।

তালুতের এই ছোট্ট সেনাদল দেখে জুলিয়েটের হাসি পেল। রাজা জুলিয়েট এসেছে এক লাখ সৈন্য নিয়ে। আর তালুতের সৈন্য সংখ্যা মাত্র ৩১৩ জন! তাই জুলিয়েট তালুতের সাহস দেখে কিছুটা অবাকও হলো। রাজা ভাবল, তালুতের মতলব টা তা হলে কি? চিন্তায় পড়ে গেল জুলিয়েট। সে কি যুদ্ধ করতে এসেছে, না জুলিয়েটের সাথে তামাশা করতে চাইছে!

জুলিয়েট ছিল বেশ অহংকারী ও লোভী। তাই সে তালুতের এই নগন্য সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করাকে অপমানকর বলে মনে করল। শেষমেশ জুলিয়েট তালুতের সঙ্গে যুদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত নিল। তাই সে তালুতের কাছে দূত পাঠিয়ে বলল,: পাগলামি কর না তালুত। মিছেমিছি যুদ্ধ কর না। তোমার লোকবল নেই, সৈন্য – সামন্ত নেই। খামোখা যুদ্ধ করে তোমার রাজ্য তো হারাবেই, শেষে জানটাও যাবে নির্ঘাত। তার চেয়ে বরং হার মেনে নাও।

তালুত এ কথা শুনে অবাক হলেন।তাই তিনি রাজি হলেন না। বরং তিনি জুলিয়েটকে দূত জানিয়ে দিলেন,
:জুলিয়েট শুনে রাখ, আমি তোমার বিরাট সেনা বাহিনীকে মোটেই পরোয়া করি না। আমার সেনা সদস্য কম থাকতে পারে, তবে আমি দূর্বল নই। আত্মসমর্পণ করা আমার কাজ নয়,এসে লড়াই করি। যুদ্ধের মাঠে হার – জিত নির্বাচিত হোক, এটাই ভালো।
এ কথা শুনে দূত হতাশ হয়ে গেলেন এবং প্রচন্ড রেগে গেলেন। তালুতের দুঃসাহস দেখে জুলিয়েট ভীষণ ক্ষুব্ধ হলো এবং শুরু হলো যুদ্ধ। পরে তালুত বলে, আমি তাকে রাজত্বের অর্ধেক দান করলাম। এই ঘোষণা সবার কানে গেল। কিন্তু কেউ কিছু বলল না। পিনপতন নীরবতা লক্ষ্য করা গেল তালুতের সেনাদের মধ্যে। এরই মধ্যে অল্প বয়সী একজনকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। তিনি ছিলেন হজরত দাউদ (আ)।
তিনি জুলিয়েটের সামনে গিয়ে হাজির হলেন। বালক দাউদ কে দেখে জুলিয়েট হেসে উঠল। সে দাউদ কে পাত্তা দিতে চাইল না। তখন দাউদ (আ) জুলিয়েটের দিকে পাথর ছুড়ে মারলেন। আল্লাহর কি শান! পাথর গিয়ে ঠিক কপালে আঘাত হানল। আর অমনি রক্ত যাওয়া শুরু করল এবং সে মারা গেল। সবাই অবাক হয়ে গেল এ ঘটনা দেখে।
কেউ ভাবতে পারে নি এ কান্ড হবে। এটাই মহান আল্লাহপাকের কুদরত। এভাবেই আল্লাহপাক ছোট্ট একটি বাহিনীর সাহায্যে অহঙ্কারী লোকের পরাজয় ঘটিয়ে তার অপার মহিমার প্রকাশ করেন।
এ গল্প শিক্ষা দেয় যে: বেশি অহংকার করা ভালো নয়।

 


আরো পড়ুন-


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

কবিতা আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ

আল কোরআনের প্রতীক আফছানা খানম অথৈ মা আমেনার গর্ভেতে জন্ম নিলো এক মহামানবের, নাম হলো তার মুহাম্মদ রাসুল আসলো ভবের

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ

ফোরাত নদীতে স্বর্নের পাহাড় আফছানা খানম অথৈ ইমাম মাহাদী (আ:) আগমনের পূর্বে ফোরাত নদীর তীরে স্বর্নের পাহাড় ভেসে উঠা কেয়ামতের

কবিতা দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ

দাজ্জাল আফছানা খানম অথৈ কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল আসবে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে, কাফের মুনাফিক যাবে তার দলে ঈমানদার মুমিন

গল্প হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের গল্প আফছানা খানম অথৈ

জন্ম:হযরত মুহাম্মদ (সা:) বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত মক্কা নগরীর কুরাইশ গোত্রে বনি হাশিম বংশে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।তার পিতার

Leave a Reply