হিন্দি ভাষার উৎপত্তি

হিন্দি ভাষার উৎপত্তি কিভাবে হয়?

0

হিন্দি ভাষার উৎপত্তি হয় মোঘল শাসনামলে। যখন মোঘলরা সিন্ধু নদীর অববাহিকায় রাজত্ব করতে শুরু করে তখন স্থানীয় লোকদের ভাষাকে তারা বলতো হিন্দুস্তানি ভাষা। এটি সংস্কৃত ভাষা থেকে ভিন্ন ছিল, এবং কালক্রমে আরবি-ফার্সি শব্দ প্রবেশের মাধ্যমে নতুন যে রূপলাভ করে সেটিকে আবার এক সময় দুই ধরণের লিপি ব্যবহার করে লেখা হতো। পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা হিন্দি।

আপনাদের জন্য একটি ইউটিউব ভিডিও যুক্ত করছি। এখান থেকে আপনি নিজে শিখে নিতে পারবেন বা, আপনার বাসার বাচ্চা-কাচ্চাদের হিন্দি বর্ণমালা শিক্ষা দিতে পারবেন-

হিন্দি ভাষার উৎপত্তির ইতিহাস

বহুকাল আগে থেকেই এই উপমহাদেশে সংস্কৃত ভাষার প্রভাব ছিলো। এটি ধর্মগ্রন্থের ভাষা বা, মূলত লিখিত ভাষা হলেওএই অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন রূপে সংস্কৃত শব্দ খুজে পাওয়া যায়। মোঘলদের আগমনের সাথে সাথে তাদের ভাষার সাথে এই অঞ্চলের আঞ্চলিক মৌখিক ভাষার একটি সমন্বয় ঘটে। কালক্রমে তারা এই ভাষায় সরকারী কাজকর্ম করতে থাকে ও এটি লেখা হয় তাদের লিপিতে।

যেহেতু ভারতে উদ্ভুত ভাষাটির সাথে ফারসি, তুর্কি, আরবি মিশে নতুন রূপ তৈরি হয়েছে তাই এই ভাষাটিকে স্থানীয় নাগরি লিপিতে লেখাটাই যৌক্তিক বলে অনেকে মনে করতেন। সেভাবেই কালক্রমে এই ভাষাটিকে নাগরি লিপিতে লেখা হয়।

রাজ্য পরিচালনা যারা করতেন তারা তাদের বর্ণমালা অর্থাৎ, আরবি বর্ণমালার সাথে আরো কিছু বর্ণমালা যোগ করে এই ভাষাটিকে লিখতে থাকেন যেটিকে আমরা উর্দু নামে চিনি। সংস্কৃতের মত সমৃদ্ধ ভাষা অনেক আগে থেকেই রয়েছে, তাই স্থানীয় পণ্ডিতেরা অনেকেই এবং হিন্দির পৃষ্ঠপোষকেরা উনবিংশ শতাব্দিতে দেবনাগরী লিপিতে এই ভাষাটিকে লেখার দাবি জানান। ১৯০০ সালে ব্রিটিশ সরকার হিন্দি ও উর্দুর সমান মর্জাদা ঘোষণা করে ফরমান জারি করে।

  • আরবি-ফার্সি শব্দবহুল হিন্দুস্তানি ভাষাকে আমরা উর্দু নামে চিনি
  • সংস্কৃতবহুল হিন্দুস্তানি ভাষাকে আমরা হিন্দি নামে চিনি

এটিকে আবার খাড়িবলি ভাষার একটি রূপও মনে করা হয়। খাড়িবলি শব্দটি ব্যবহৃত হয় হিন্দি ভাষার একটি লিখিত রূপকে নির্দেশ করতে। খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দিতে হিন্দি ভাষার লিখিত নিদর্শন পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দিতে খাড়িবলি(উচু শ্রেণীর ভাষা) মোঘলদের দাপ্তরিক ভাষায় পরিণত হয়। ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে উর্দু নামে এই ভাষাটি ছিল ব্রিটিশ ভারতের দাপ্তরিক ভাষা। ১৮৮১ সালে বিহারে উর্দুর পরিবর্তে হিন্দিকে দাপ্তরিক ভাষা ঘোষণা করা হলে তা নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়। সৈয়দ আহমদ খান(উর্দুর পক্ষের ব্যক্তি) বলেছিলেন,

“হিন্দু ও মুসলিম উভয়কেই আমি একই দৃষ্টিতে দেখি ও তাদের দুটি চোখ মনে করি। জাতি বলতে আমি হিন্দু ও মুসলিমদের বুঝি এর বাইরে কিছু না। আমরা হিন্দু ও মুসলিমরা একই মাটিতে একই সরকারের অধীনে বসবাস করি। আমাদের স্বার্থ ও সমস্যা একই এবং তাই আমি দুই সম্প্রদায়কে এক জাতি হিসেবে বিবেচনা করি।”

মহাত্মা গান্ধী হিন্দি-উর্দুকে এক করে হিন্দুস্তানি ভাষার প্রচলন করতে চেয়েছিলেন যেটি হবে নাগরি এবং ফারসি লিপির সমন্বয়ে। তাঁর এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

হিন্দি বর্ণমালা

এটি আসলে দেবনাগরি বর্ণমালা যা ব্যবহার করে হিন্দি ভাষা লেখা হয়। হিন্দি বর্ণগুলোর পাশে বাংলা প্রতিবর্ণ লিখে দিয়েছি, আপনাদের তুলনা করতে ও বুঝতে সহজ হবে। দেবনাগরি এবং বাংলা বর্ণমালা, এই দুটিই একই অঞ্চলের হওয়ায় এর মাঝে মিল রয়েছে। এমন মিল পৃথিবীর অন্যন্য অঞ্চলের বর্ণমালাগুলোতেও দেখা যায়।

হিন্দী বর্ণমালা
বাংলা প্রতিবর্ণ
क्ष त्र ज्ञ श्र अः
ড় ঢ় য় ক্ষ জ্ঞ

এখান থেকে হিন্দি স্বরবর্ণ এবং ব্যাঞ্জনবর্ণ শিখে নিতে পারেন। অ, আ, ক, খ সবই দেয়া আছে। আরো বেশী শিখতে চাইলে ইউটিউবে কোন ভিডিও দেখতে পারেন। অথবা, কোন অনলাইন কোর্সেও ভর্তি হতে পারেন

আপনি যদি মনে করেন, হিন্দি শেখার চেয়ে বরং ইংরেজী শেখাটাই আরো ভালো হবে। তাহলে বাংলাদেশী টাকায় ১০০০ টাকা(ভারতীয় টাকায় আরো কম) দিয়ে অনলাইনে একটি IELTS কোর্স করে ফেলতে পারেন- বহুব্রীহিতে কোর্সটি পাওয়া যাচ্ছে । সুবিধা হচ্ছে-

  • ভালো না লাগলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে টাকা ফেরত চাইতে পারবেন
  • একবার Enroll করলে ১ বছর আপনি সব রিসোর্স পাবেন
  • মেন্টর সাপোর্ট তো থাকছেই

হিন্দি ও উর্দুর মধ্যে পার্থক্য

উর্দু ভাষা
উর্দু

হিন্দি ভাষা ইন্দো -ইউরোপীয় ভাষাশ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত একটি ভাষা। যারা হিন্দু ধর্মগ্রন্থের শ্লোকগুলো দেখেছেন তারা একটা বিষয় লক্ষ্য করে থাকবেন যে, এটি দেখতে হুবহু হিন্দির মত। এর কারণ, সংস্কৃত এবং হিন্দি দুটি ভাষাই লেখা হয় দেবনাগরি লিপিতে। এই ভাষাটি পৃথিবীর প্রায় ৩২ কোটিরও বেশী মানুষের মাতৃভাষা। এছাড়া ভারতের বেশীরভাগ মানুষেরা এটিকে কমন ভাষা হিসেবে ব্যবহার করেন। সিনেমা, সিরিয়ালগুলোর কারণে বাংলাদেশের মত ভারতের আশেপাশের অন্যান্য দেশেও এর প্রভাব রয়েছে। হিন্দি-উর্দুকে একাকার করে দেখলে এটি পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা।

হিন্দি ও উর্দু দুটি ভাষাই হিন্দুস্তানি ভাষার দুটি রুপ হিসেবে বিবেচিত হয়। ভারত এবং পাকিস্তানের মানুষের কথ্য ভাষার পার্থক্য তাই খুবই সামান্য। কিন্তু লিখিত ভাষায় পার্থক্য রয়েছে। হিন্দি ভাষায় সংস্কৃত শব্দ বেশী, আর উর্দুতে আরবি- ফার্সি বেশী। এটা নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। হিন্দির পক্ষে যারা তারা বলেন উর্দু কৃত্রিমভাবে তৈরি করা, আর  উর্দুর পক্ষে যারা তারা বলেন- উর্দু ত্যাগ করে হিন্দি নামে নতুন ভাষা তৈরি করা হয়েছে। মূলত মোঘলদের শাসনের সময় ভারতে হিন্দুস্তানী ভাষা তৈরি হয়। তার দুটি রূপও ভারতে তৈরি।

শেষ কথাঃ আমরা বাঙালীরা এই ভাষাটি খুব সহজে বুঝতে পারি তার কারণ, এই ভাষায় যেসব সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজী শব্দ রয়েছে সেগুলোর সাথে আমরা পরিচিত। হিন্দি সিনেমায় যে ভাষা ব্যবহার করা হয় সেটাতে ইংরেজী প্রচুর পরিমাণে থাকে। আর আমাদের ভাষায় একটু বিকৃত রূপে প্রচুর সংস্কৃত শব্দ রয়েছে(যেমনঃ চান্দ কে আমরা বলি চাঁদ, মৃতইয়ু কে আমরা বলি মৃত্যু)।

আরো পড়ুন-

 

তথ্যসূত্রঃ

  1. The History of Hindi Language in India
  2. Hindi-Urdu Controversy- WIkipedia

Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

প্রবন্ধ লেখক

Author: প্রবন্ধ লেখক

বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করছি

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

যে রহস্যময় জলাশয়ে নামলেই যে কোনো প্রাণী পাথর হয়ে যায়।

পৃথিবীতে এমন একটি রহস্যময় জলাশয় রয়েছে যেখানে নামলেই যে কোনো প্রাণী পাথর হয়ে যায়। এটি কোন সাইন্স ফিকশন মুভির গল্প

২০২৪ একুশে বইমেলায় আমার নতুন বই ( কনকচাঁপা দোদুল দোল) প্রকাশ ( আপডেট, ১৬ ফেব্রুয়ারী) )

অমর  একুশে বইমেলা ২০২৪ ( সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এ আমার  কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে । আমার লেখক আইডি - মোঃ আরিফ

নিন্দুক। সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি

আমাদের সমাজে বিচিত্র কিছু মানুষ রয়েছে। যারা অন্যের ভালো কিছুতেই দেখতে পারে না। কেউ যদি খারাপ পথ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে
কনফেডারেশনঃ বিভক্ত মার্কিনীরা

কনফেডারেশনঃ বিভক্ত মার্কিনীরা

কনফেডারেশন শব্দটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারও কাছে স্বর্গের মত আবার কারও কাছে নরকের চেয়েও খারাপ। এখন কথা হচ্ছে, কেন আমি কনফেডারেশন

One Reply to “হিন্দি ভাষার উৎপত্তি কিভাবে হয়?”

Leave a Reply