অণুগল্প : রিধিতা। লেখিকা : সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি

0

“ভাবি মেয়েতো বড় হয়ে গেলো বিয়ে টিয়ে দিবেন না নাকি? জানেন তো মেয়েরা যে কুড়িতেই বুড়ি। আপনার মেয়ের তো ২২ পেরিয়ে গেলো। আপনাকেও ওর বিয়ে নিয়ে কিছু ভাবতে দেখি না। তো মেয়ের কি কোনো সমস্যা আছে না কি?”
পাশের বাসার ভাবির এমন কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া করলেন না রাহেলা খাতুন। কারন উনাকে মাঝে মাঝেই পাড়া-মহল্লার লোকদের কাছে এই কথা শুনতে হয়। তাই তিনি শান্ত ভাবেই উত্তর দিলেন,
“ভাবি মেয়ের বয়স হয়েছে কিন্তু পেরিয়ে তো আর যায় নি। লেখাপড়া করছে করতে থাকুক। আগে নিজে প্রতিষ্ঠিত হোক তার পর না হয় ওরটা ও ই বুঝে নিবে।”
এই উত্তরটা মনে হয় পাশের বাসার সৈয়দা বেগম এর তেমন পছন্দ হলো না। মেয়েকে নিয়ে এতো কিছু বলার পরও কেনো যে রাহেলা খাতুন এতো শান্ত ভাবে কথা বলেন সেটাই খুজে পান না উনি।
রিধিতা : মা আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি। আজকে আসতে একটু দেরি হবে।
সৈয়দা বেগম : আরে রিধিতা যে। কী অবস্থা তোমার?
রিধিতা : আসসালামু আলাইকুম আন্টি। এইতো আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?
সৈয়দা বেগম : আমিও বেশ ভালো আছি। তো তোমার পড়ালেখা কবে শেষ হবে?
রিধিতা : এইতো আন্টি, আর 6 মাস।
সৈয়দা বেগম : ও, ভালোই তবে। তো পছন্দের কেও আছে নাকি?
রাহেলা খাতুন : রিধি! তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে ভার্সিটির জন্য।
রিধিতা : হ্যাঁ মা যাচ্ছি। আসি আন্টি।
সৈয়দা বেগম : আমিও যাই ভাবি। বাসায় একটু কাজ পরে আছে।
রাহেলা খাতুন : আচ্ছা ভাবি। আবার আসবেন।

সৈয়দা বেগম চলে যাওয়ার পর রাহেলা খাতুন মনে মনে ভাবতে লাগলেন “আর কতদিন মেয়েটাকে এভাবে লুকিয়ে রাখতে পারবো জানি না। আল্লাহ তুমি আমার মেয়েকে সব সময় হেফাজত করো”

বিকাল বেলা-

রিধিতা : আরে রাবেয়া আন্টি যে! কেমন আছো?
রাবেয়া : এইতো মা ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?
রিধিতা : এইতো আন্টি আলহামদুলিল্লাহ। অনেক দিন পর দেখলাম যে!
রাবেয়া: কিছুদিন ধরে শরীরটা ভালো যাচ্ছে না রে মা।
রিধিতা: কী হয়েছে আন্টি? আমাকে কেন আগে জানালে না?
রাবেয়া : ও কিছু না মা। আমাকে নিয়ে তুই এতো ভাবিস না। আমি দিব্যি ভালো হয়ে যাবো। তুই এখন বাসায় যা রে মা। অনেক বেলা হয়ে গেছে, তোর মা মনে হয় চিন্তা করছে।
রিধিতা : হ্যাঁ আন্টি। আজ আসি তবে। কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবে কিন্তু।
রাবেয়া : আচ্ছা মা।
সৈয়দা বেগম : একি রিধি! তুই রাস্তায় দাঁড়িয়ে হিজড়াদের সাথে কথা বলছিস!
রিধিতা : কেনো আন্টি, উনারা কি মানুষ না?
সৈয়দা বেগম : মানুষ তো বটেই, তাই বলে এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলবি? লোকে দেখলে কী ভাববে?
রিধিতা : লোকে কী ভাবলো আর কী ভাবলো না তা জানতে আমি বিন্দুমাত্র আগ্রহী নই আন্টি। আর মানুষের জাতটাই কি সব কিছু?
সৈয়দা বেগম : বাব্বাহ রিধি! ভালোই তো খই ফুটেছে মুখে।

এতোক্ষণ রাবেয়া নীরব দর্শকের মতো সব শুনে যাচ্ছিলো কিন্তু যখন দেখলো পরিস্থিতি সামালের বাহিরে চলে যাচ্ছে তখন রিধিতাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে উনি নিজেই বললেন,”আহা রিধি, আর কিছু বলিস না তুই। বাড়ি যা মা, গিয়ে কিছু খেয়ে নে দেখে তো মনে হচ্ছে সারাদিন কিচ্ছুটি খাসনি।”
সৈয়দা বেগম : মার থেকে মাসির দরদ বেশি।
রিধিতা : আন্টি, ( রিধিতা নিজের কথা সম্পুর্ন করতে পারলো না। তার আগেই রাবেয়া বলে উঠলো-)
রাবেয়া : রিধি মা! তুই যা মা। আর কিছু বলিস না তুই। বড়দের মুখের উপর কথা বলতে নেই মা। যা, বাসায় যা।
রিধিতা : ভালো থেকো, আজ তবে আসি। আর কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে জানিয়ো।
রাবেয়া : আচ্ছা মা, যা।

রিধিতা চলে যায়। অতঃপর সৈয়দা বেগম ও একবার রাবেয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ কালো করে চলে যান। সৈয়দা বেগম চলে যাওয়ার পর রাবেয়া দীর্ঘ-শ্বাস ফেলেন আর ভাবেন “আজ এরা আমাকে তোর সাথে কথা বলতে দেখেই এমন করলো, যেদিন এরা তোর আসল পরিচয়টা জানবে সেদিন যে এরা তোকে আর এই সমাজে থাকতে দিবে না রে মা।” ভাবতে ভাবতেই রাবেয়া ২২ বছর আগের অতীতে ডুব দেন।

২২ বছর আগে-

রাহেলা খাতুন : দয়া করে আপনারা আমার মেয়েটাকে নিবেন না। আমার যে এই মেয়েটা ছাড়া আর কেউ নেই।
(কান্নারত অবস্থায় কথা গুলো বলেন রাহেলা খাতুন)
সেলি : এই মেয়েকে কয়দিন নিজের কাছে রাখবেন? সমাজ যেদিন ওর আসল পরিচয় জানবো তখন তো আরো বেশি ঝামেলা হইবো। ওরে থাকতে দিবো না এই সমাজে। আমগোর কাছেই পাঠাইয়া দিবো।

অতঃপর রাহেলা খাতুন দলনেত্রীর সামনে গিয়ে বলেন-

রাহেলা খাতুন : আমি আমার মেয়েকে সবার থেকে লুকিয়ে রাখবো,,,তার সত্যিটা কেও জানবে না। আপানার কাছে আমি হাত জোর করে আমার মেয়েটাকে ভিক্ষা চাচ্ছি বোন। আমার মেয়েটা ছাড়া যে আমার এই পৃীথিবীতে আর কেউ নেই। একটু দয়া করো বোন।
রাবেয়া : তোমার মতো অনেকই এই একই কথা বলে কিন্তু দিন শেষে তারাই তাদের সন্তানদের আমাদের কাছে দিয়ে যায় মান সম্মানের ভয়ে।
রাহেলা খাতুন : আমি আমার মেয়েকে আমার থেকে কখনো দূর করবো না। তুমি দেখে নিয়ো, তুমি একটু দয়া করো আমার উপর। আমার মেয়েকে আমার থেকে নিও না বোন।
রাবেয়া : বেশ, তবে তোমার কথাই রাখলাম। তবে মনে রেখো এই সত্যি কিন্তু বেশি দিন গোপন রাখতে পারবে না।
রাহেলা : আল্লাহ সহায় হলে আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও আমার মেয়েকে সমস্ত প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষা করবো।

বর্তমানে-

রিতা : মা সব বাসা থেকে চাল তুলা শেষ।
রাবেয়া : চল তবে ফিরা যাক।

পরের দিন দুপুরে-

অনেকক্ষন ধরে কলিং বেলটা বেজে যাচ্ছে রিধিতাদের বাসায়। কাজের মেয়ে শিউলি এসে দরজা খুলে দিলো। দেখলো পাশার বাসার মিসেস শেফালি এসেছেন। উনাকে ভিতরে বসতে দেওয়া মাত্রই মিসেস শেফালি শিউলিকে জিজ্ঞাসা করলেন,”কিরে শিউলি, বাসায় কি কেও নেই নাকি?”
শিউলি : আছে তো। খালাম্মা আছেন, উনি এখন নামাজ পরতাছেন আর রিধিতা আপামনি ভার্সিটিতে গেছেন।
মিসেস শেফালি : ও, তো তোর হাতে ওটা কি?
শিউলি : কি জানি! সব ইনজেরি তে লেহা, আমি এতো কিছু বুঝি নাকি! খালাম্মা কইলো এগুলা উনার আলমারিতে রাখতে। তোয় এগুলাই রাখতে যাইতাছিলাম আর আপনে চইলা আয়ছেন।
মিসেস শেফালি : দে তো, দেখি।

মিসেস শেফালি ফাইলগুলো দেখার সাথে আর এক মিনিট ও দেরি করলেন না। সেখান থেকে একটা ফাইল নিয়েই বেরিয়ে চলে গেলেন।

শিউলি : খালাম্মা এটা নিয়া কই যান? খালাম্মা!
রাহেলা খাতুন : কিরে শেউলি কে এসেছিলো আর এভাবে কাকে ডাকছিস?
শিউলি : দেখেন না খালাম্মা, পাশার বাসার ওই যে মিসেস শেফালি উনি আয়ছিলেন। পরে আপনি যে কাগজ গুলা আমাকে আলমারিতে রাখতে দিছিলেন ওই গুলা দেইকখা এর মইধ্যেরতে একটা কাগজ নিয়া চইলা গেছে। কত ডাকলাম শুনলোই না।
রাহেলা খাতুন : কি বলছিস তুই! আর তোকে কখন বলছি এগুলা রাখতে তুই রাখলি না কেন? কোনো কাজ কি তোকে দিয়ে ঠিক সময় মতো করানো যাবে না?

অজানা এক ভয় রাহেলা খাতুনের মনে নাড়া দিয়ে উঠে। তবে কি এতোদিন ধরে লুকানো সত্যিটা আজ সবার সামনে চলে আসবে! এসব ই ভাবতে থাকেন রাহেলা খাতুন। ঠিক তখনই রিধিতা বাসায় আসে।

রিধিতা : কি ব্যাপার! দরজাটা খোলা কেন?
শিফালি : হইছে কি আফামনি, পাশের বাসার,,,,

শিফালি তার কথা শেষ করতে পারলো না। এর মাঝেই রাহেলা খাতুন বলে উঠেন,”ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। যা ফ্রেস হয়ে নে, আমি খাবার দিচ্ছি।
রিধিতা : আচ্ছা মা তারাতারি দাও। অনেক খিদে পেয়েছে।

রিধিতা ফ্রেস হয়ে আসার পর রাহেলা খাতুন রিধিতাকে খেতে দেন আর মনে মনে বলতে থাকেন, “এর পর কবে শান্তিতে খেতে পারবি জানি না রে মা।আজকের পর তোর জন্য কি অপেক্ষা করছে সেটাও আমার অজানা। আমি যে আমার কথা রাখতে পারিনি। এই সমাজের কাছে তোর পরিচয়টা গোপন করতে পারি নি। তবে খুব তারাতারি তোকে নিয়ে এখান থেকে অনেক দূরে চলে যাবো রে মা। তোকে কষ্ট পেতে দিবো না আমি।” রাহেলা খাতুন ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসেন রিধিতার ডাক শুনে।
রিধিতা : মা, ও মা!
রাহেলা খাতুন : হ্যাঁ বল।
রিধিতা : কি এতো ভাবছো বলো তো?
রাহেলা খাতুন : না, তেমন কিছু না মা। তুই খেয়ে নে।
রিধিতা : তুমি খাবে না?
রাহেলা খাতুন : হ্যাঁ খাচ্ছি।

সন্ধা বেলা-

রিধিতা নিজ রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো আর রাহেলা খাতুন কোনো কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায়। ঠিক তখনি কলিংবেলটা বেজে উঠলো। রাহেলা খাতুন ভাবনা থেকে বেরিয়ে দরজার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলেন। উনার হৃদস্পন্দন স্বভাবিকের থেকে বেশি জোরে উথানামা শুরু করলো। উঠে দরজা খুলার শক্তি টুকু যেনো পাচ্ছেন না। রিধিতা রুম থেকে এসে যেই দরজা খুলতে যাবেন তখনই রাহেলা বেগম বলে উঠলেন,”তুই দাঁড়া, আমি দরজা খুলছি।”

দরজা খুলতেই রাহেলা খাতুন দেখতে পেলেন চেয়ারম্যান আবদুল মতিন দাঁড়িয়ে আছেন। সাথে মিসেস শেফালি ও সৈয়দা বেগম। আরো অনেকই আছেন যাদেরকে রাহেলা খাতুন ঠিক চিনে উঠতে পারেন নি।

আবদুল মতিন : বাহিরেই দাঁড় করিয়ে রাখবা নাকি ভিতরেও যেতে দিবা?
রাহেলা খাতুন : জ্বি ভিতরে আসুন।
আবদুল মতিন : এতোক্ষণে তো হয়তো বুঝেই গেছো কেন আসছি!

রাহেলা খাতুন কিছু বললেন না নীরবে নিচের দিকে চেয়ে রইলেন আর মিসেস শেফালির হাতে রিধিতার বার্থ সার্টিফিকেট দেখেই রিধিতা সব কিছু বুঝে গেলো।

সৈয়দা বেগম : তাই তো বলি রিধিতার কিসের এতো দরদ হিজড়াদের প্রতি।
রিধিতা : হিজড়া বলে কি তারা মানুষ নন? কেনো তাদের অন্য চোখে দেখেন আপনারা?
সৈয়দা বেগম : একি কথা! তারা তাদের বলছো কেনো মেয়ে? বলো আমরা, এতোই যখন দরদ তখন নিজ পরিচয় লুকিয়ে রাখলে কেনো?
রাহেলা খাতুন : রিধিতা, তুই তোর রুমে যা।
রিধিতা : না মা, আমাকে ক্ষমা করো। আমি যেতে পারবো না।
মিসেস শেফালি : থাকুক না ও। সমস্যাটা যখন ওকে ঘিরেই সেহেতু ওর থাকাটা ভালো।
আবদুল মতিন : তো যা হওয়ার হইছে। তুমি অনেক বছর ধইরা এই এলাকায় আছো,তাই তুমারে কিছু কইলাম না। মাইয়াডার যেখানে থাকার কথা সেখানে রাইখা আসো।
রাহেলা খাতুন : না। আমি আমার মেয়েকে আমার নিজের কাছেই রাখবো। ওকে আমার থেকে দূরে যেতে দিবো না।
আবদুল মতিন : তাইলে তুমিও এই এলাকা ছাইড়া চইলা যাও। এই মাইয়ারে আমাদের এই ভদ্র সমাজে রাখতে পারমু না। এটা শিক্ষিত মানুষের সমাজ। কোনো হিজড়াদের সমাজ না।
রিধিতা : কেন? আমরা কেনো এই এলাকা ছারবো? এই ফ্লাট আমার বাবার কিনা। এখানে ছোটথেকে বড় হয়েছি। আমরা কেনো আমাদের বাসা ছেরে যাবো? আর শিক্ষিত মানুষের সমাজ মানে? আমরা কি মানুষ না?
আবদুল মতিন : মাইয়ারতো বড় দেমাগ দেখা যায়! না যাইতে চাইলে একঘরে কইরা দিমু। পরে দেখমু মা মেয়ে কেমনে বাসা থেকে বের হও। বাপের কিনা এই বাসাতেই না খাইয়া মরবা। শুনো রাহেলা, তুমারে শেষ বারের মতো কইতাছি ৭ দিনের মধ্যে তুমি এলাকা ছারবা নইলে ভালো হইবো না কইয়া দিলাম।
রাহেলা : ৭ দিনের মাঝে কিভাবে কি করবো চাচা! আমার যে আর কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই। আমাকে আর ৭টা দিন বেশি সময় দেন চাচা।
আবদুল মতিন : আর ১ দিনও বেশি না। যা বললাম মাথায় থাকে যেনো।

আবদুল মতিন আর কিছু বললেন না চলে গেলেন। সাথে বাকি সবাইও। রাহেলা খাতুন এতোক্ষন নিজেকে শান্ত রেখেছিলেন। কাউকে নিজের দুর্বলতা বুঝতে দেন নি। কিন্তু সবাই চলে যাওয়ার পর নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। রিধিতাকে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলেন। রিধিতাও নিজের মায়ের কান্না দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না। মা মেয়ে উভয়ই কেঁদে যাচ্ছে। একটা সময় রিধিতা শান্ত হয়ে বল্লো,”মা, মা আর কেঁদো না মা। আজকে এরা আমাকে এই সমাজে থাকতে দিচ্ছে না, কিন্তু মা তুমি দেখো একদিন এই সমাজ আমাকে আপন করে নিবে। আমি এই সমাজকে বদলে ছারবো। এদের মনোভাব বদলে দিবো আমি”
রাহেলা খাতুন : মা’রে, তোর পরিচয়টা আমি গোপন রাখতে পারলাম না। আমাকে মাফ করে দিস তুই। আজ তোর বাবা বেঁচে থাকলে এখনই এই বাসা ছেড়ে চলে যেতাম।
রিধিতা : প্লিজ মা তুমি কেঁদো না। নিজের রুমে যাও। গিয়ে একটু বিশ্রাম করো।
অতঃপর রাহেলা খাতুন নিজ রুমে চলে গেলেন আর রিধিতা নিজ রুমে। সেই রাতে আর কারো খাওয়া হলো না

পরের দিন সকালে-

রাহেলা খাতুন রিধিতার রুমে গিয়ে দেখলেন রিধিতা নিজ রুমে নেই। আর বিছানার উপর একটা কাগজ পরে আছে। উনি কাগজটা খুলে দেখতে পেলেন সেখানে লিখা আছে,”মা ক্ষমা করে দিও। আমি জানি এই বাসা ছেড়ে যেতে কত কষ্ট হবে তোমার। বাবার একমাত্র স্মৃতি যে এই বাসাটাই। আর আমাদের তো আর কোথাও যাওয়ার জায়গাও নেই মা। আমার এখান থেকে চলে যাওয়াটাই আমাদের জন্য ভালো হবে মা। তাই তো চলে এলাম। তুমি আমাকে নিয়ে এতো ভেবে না। আমি মাঝে মাঝে তোমাকে লুকিয়ে দেখতে আসবো। ভালো থেকো মা।”
চিঠিটা পরা মাত্র রাহেলা খাতুন কাঁদতে শুরু করলেন আর বলতে লাগলেন,”রিধি তুই কোথায় চলে গেলি মা। ফিরে আয়, আমি তোকে ছাড়া কিভাবে থাকবো? ফিরে আয় মা।”
আর অপরদিকে রিধিতা রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। কোথায় যাবে সেটা রিধিতার জানা নেই। কিন্তু এই সমাজ থেকে অনেক দূরে চলে যাবে শুধু এটাই জানে রিধিতা। এই সমাজে শিক্ষিত মানুষ তো অনেক আছে কিন্তু শিক্ষিত বিবেকের যে বড্ড অভাব। এসব ভেবেই হাঁটতে থাকে রিধিতা। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রাস্তায় নেমে পরে রিধিতা সেটা খেয়ালই করে নি। যখন খেয়াল করলো তখন যে বড্ড দেরি হয়ে যায়। একটা ট্রাক রিধিতার উপর দিয়ে চলে যায়। রিধিতার চোখের সামনে ভাসতে থাকে ছোট থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত সকল ঘটনা। রিধিতা বুঝে যায় তার সময় যে ঘনিয়ে এলো। শেষ বারের মতো করে রিধিতার তার মাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিলো আর রিধিতার খুব করে বলতে ইচ্ছা করছিলো,”আজ থেকে আমি মুক্ত মা। তোমার মেয়ে মুক্তি পেতে যাচ্ছে এই ভদ্র সমাজ থেকে। এইতো আর কিছুক্ষন, তারপর তোমাকে আর কেও কিছু বলবে না মা। আমাকে নিয়েও তোমার আর ভাবতে হবে না। ভালো থেকো মা। ভালো থেকো।”

সমাপ্ত


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Sumaiya Akter Bristy

Author: Sumaiya Akter Bristy

❝শুভ্রচিন্তার উদ্ভব ঘটে যার কথা ভেবে সে যদি মোহ হয় দোষ বা কি তাতে?❞ ~Sumaiya Akter Bristy

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to “অণুগল্প : রিধিতা। লেখিকা : সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি”

Leave a Reply