গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

0

গল্প
বন্ধ্যা
আফছানা খানম অথৈ

আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা শুনতে হচ্ছে।শ্বাশুড়ি প্রায় তাকে দোষী করে কথা বলেন।শ্বশুর এখনো তার পক্ষে আছেন।তাই এখনো আলেয়া টিকে আছে।শুধু তাই নয় শ্বশুর তাকে খুব পছন্দ ও করেন।কারণ আলেয়া নামাজী, পর্দানশীন, রুপবতী,গুণবতী। এমন একটা মেয়েকে ছেলের বউ করার স্বপ্ন দেখেছিলেন রাজীব চৌধুরী।আল্লাহপাক তার আশা পূরণ করেছেন।তাই আলেয়ার মতো ভালো একটা মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে পেয়েছেন।আর এজন্য সবসময় বউয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

আর এই নিয়ে প্রায় সময় স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হয়।আজ ও অনুরুপ তাই হলো।আলেয়ার চা আনতে দেরী হলো।আর এই সুত্রধরে, শ্বাশুড়ি বউয়ের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়ল,

এই হতছাড়ি,অলক্ষণে, অপয়া,বন্ধ্যা,চা আনতে এত দেরী হলো কেনো?
সরি মা আমার ভুল হয়ে গেছে।
ভুল হয়ে গেছে মানে,আমি সেই কখন থেকে বসে আছি।এখনো চা দিতে পারলি না।বের হয়ে যাও,আমার বাড়ি থেকে।
আলেয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।কোন কথা বলছে না।শ্বাশুড়ি এগিয়ে এসে তার গালে কষে একটা চড় দিয়ে বলল,

এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?বের হয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।এই বাড়িতে তোর জায়গা নেই।
তাকে টেনে হেঁছড়ে বের করে দিতে চাইছে।তখনি রাজীব চৌধুরী বলল,
সায়লা থাম।কেনো মেয়েটার উপর এমন নির্যাতন করছ?সে এমন কি দোষ করেছে?
দোষ করেনি মানে।সে এখন পর্যন্ত একটা বাচ্চা দিতে পারেনি।
এর জন্য তুমি ওকে দায়ী করছ কেনো?সন্তান দানের মালীক একমাত্র আল্লাহ।আল্লাহ যখন ইচ্ছা তখন দিবেন।এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক না।

তুমি যেটা বুঝ না।সেটা নিয়ে কথা বলো না।ওর আঁতে সন্তান থাকলে তো হবে?ওতো বন্ধ্যা।ওর সন্তান হবে কোত্থেকে?
আজাইরা কথা বলো না তো?সময় হলে ঠিকই সন্তান হবে।বউ মা তুমি ঘরে যাও তো।

এমনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে কেটে চলেছে আলেয়ার দিনগুলো।আলেয়ার বুক পাটে তবুও মুখ ফোটেনা।শ্বাশুড়ির সকল নির্যাতন সহ্য করে দিনগুজার করছে।স্বামী রাজ এখনো ও তাকে ভালোবাসে।কিন্তু কখন যে, সে মত পরিবর্তন করে মায়ের পক্ষ হয়ে যান কে জানে।এসব চিন্তা তাকে খুব ভাবিয়ে তুলেছে।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছে।আল্লাহ যেন তাকে বিপদমুক্ত করেন,সুখী করেন।

শ্বাশুড়ি উচ্চস্বরে ডাক দিলো।আলেয়া নামাজ পড়ছে তাই যেতে পারছে না।শ্বাশুড়ির আর তর সইল না।এগিয়ে আসছে।ততক্ষণে আলেয়া নামাজ শেষ করে,জায়নামাজ তুলছে।শ্বাশুড়ি কড়া ভাষায় বলে,

শোন বউ?
জ্বি মা বলুন।
আজ বাসায় মেহমান আসবে।ভালো ভালো রান্না কর।
কে আসবে মা?
আমার বড় আপা। তার একমাত্র মেয়ে প্রিয়াকে নিয়ে আজ বিকেলে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ল্যান্ড করবে।আমি এক্ষণি যাচ্ছি রিসিভ করতে।তুমি সবকিছু রেডি করে রেখো।
ঠিক আছে মা রাখব।

আলেয়াকে একগাদা কাজ দিয়ে তিনি চলে গেলেন বিমানবন্দরে।বোনকে রিসিভ করতে।সময়মতো তারা এসে গেল।অনেকদিন পর দুবোনের দেখা।কি যে কোলাকুলি দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়।প্রিয়াকে বুকে জড়িয়ে খালামনি খুব আদর করলো।তারপর বাসায় ফিরল।

এদিকে আলেয়া সবরান্না শেষ করে সবেমাত্র দাঁড়ালো।এমন সময় শ্বাশুড়ির আগমন।হন্তদন্ত হয়ে বাসায় ঢুকে চোখ রাঙিয়ে বলল,
বউ দাঁড়িয়ে আছ কেনো?তাড়াতাড়ি খাবার রেডি কর।
এইতো মা দিচ্ছি।একটু অপেক্ষা করুন।।

রাজ অফিস থেকে ফিরল।তাকে দেখা মাত্রই প্রিয়া বলে,
রাজ ভাইয়া তুমি খুব সুন্দর,হ্যান্ডসাম।দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যাই।মায়ের মুখে তোমার অনেক প্রশংসা শুনেছি। আজ সরাসরি দেখলাম।সত্যি তুমি অনেক সুন্দর।তোমাকে আমার খুব পছন্দ।
এসব বলতে বলতে সে তাকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করল।বর্তমানে এসব নাকি হাই সোসাইটির কালচার।খালাতো,মামাতো,চাচাতো,ফুফাতো ভাই,বন্ধু বান্ধব একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করাটা নাকি ফ্যাশনে?
আর তা না করলে ক্ষ্যাত বলা হয়।আজ তাই রাজ প্রিয়া কুলাকুলি করলো।মুরব্বীরা বাঁধা দিলো না।বরং সাপোর্ট করলো।কারণ এরাতো মুরব্বী নামের বেহায়া। কোরআন হাদিসের বিধান এদের মাঝে নেই।তাই অসভ্যতাকে ভদ্রতা বলে সাপোর্ট করছে।

আলেয়া কিন্তু এসব পছন্দ করে না।সে পাশে দাঁড়িয়ে সব দেখল।অন্যায় জেনে ও কোন প্রতিবাদ করলো না।কারণ সে পরিস্থিতির স্বীকার।একেতো তাড়াতে চাইছে।এখন যদি কিছু বলে এই সুত্রধরে ধরে তাড়িয়ে দিবে।তাই বুক ফাটে তবুও মুখ ফোটে কিছু বলছে না।

ইতিমধ্যে ডাইনিং টেবিলে সবাই খেতে বসল।খানা শেষে দুবোন চলে গেলে নিরালা রুমে।তারপর গুনধর বোন বলল,
সায়লা আমি একটা জিনিস বুঝলাম না।রাজ’র বিয়ে হলো সেই কখন।এখনো বাচ্চা কাচ্চা নেই?
আর বলীস না বোন।আমার পোড়া কপাল।আমি কখনো নাতি নাতনির মুখ দেখব না।
কেনোরে বোন?
এই বউ বন্ধ্যা।এর কোনদিন বাচ্ছা হবে না।
সত্যি?
জ্বি আপা সত্যি?
রাজ এই ব্যাপারে কিছু বলে না।
না বলে না।
বলিস কী?বাচ্চা কাচ্চা না হলে বংশের বাতি দেবে কে?
আমিও তো সেকথা বলছি।কিন্তু কে শুনে কার কথা।
সায়লা এসব কিন্তু ভালো কথা না।বংশের উত্তরাধিকারী হওয়া চাই।এই বন্ধ্যা বউকে দিয়ে কি করবে?
বোনের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
সায়লা বোন আমি বলি কি,এই বউকে তাড়িয়ে দাও।প্রিয়ার রাজকে খুব পছন্দ।আমরা রাজের সঙ্গে প্রিয়ার বিয়ে দেব।তুমি নাতি নাতনির মুখ দেখবে।হাসি খুশিতে ঘর বাড়ি মুখরিত হয়ে উঠবে।
আপা আমিও তাই চাই।তবে একটা কথা..।
বল কি কথা?
প্রিয়াকে রাজের মন যুগিয়ে চলতে হবে।
ঠিক আছে তাই হবে।
প্রিয়াকে বুঝিয়ে দেয়া হলো রাজের মন যোগানোর কিছু কৌশল।

এরপর থেকে শুরু হলো প্রিয়ার মিশন।রাজ যেখানে প্রিয়া ও সেখানে।সেজেগুজে আজ এখানে কাল ওখানে রাজ প্রিয়াকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।আর মা মেয়ে দুজনে কানপড়া দিয়ে রাজকে ভুল বাল বুঝাচ্ছে।পুরুষদেরকে না বিশ্বাস করা যায় না।এই যেমন রাজ,আলেয়ার মতো একজন সুন্দরী ভালো বউ থাকতে সে প্রিয়ার মতো একজন আনকালচার্ড মর্ডান মেয়েকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।আলেয়া কি তাকে সুখী করতে অপারগ?না,একজন পুরুষকে সুখী করার জন্য, একজন নারীর যতগুলো বৈশিষ্ঠ্য থাকার কথা,আলেয়ার মাঝে সব আছে।তবুও কেনো সে অসন্তোষ্ট?পরনারী নিয়ে ঘুরছে?সে আস্তে আস্তে প্রিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে।আলেয়ার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।আগের মতো তাকে সময় দেয় না।,ভালোবাসে না।কিছু বললে চটে উঠে। কথায় কথায় গায়ে হাত তোলে।আলেয়া নীরবে সবকিছু হজম করে।তার ধারণা রাজ তার কাছে ফিরে আসবে।তাই সব নির্যাতন সহ্য করে পড়ে আছে।

আলেয়া এসেছে অনেকদিন হলো।মেয়ের জন্য বাবা মায়ের মন পুরছে।তাই মেয়েকে দেখতে আসল হায়দার মাস্টার।আসার পথে একি দেখল রাজ একটা মেয়েকে নিয়ে ঘুরছে।তিনি ভালো করে দেখে নিলেন।
আসলে কি রাজ না অন্য কেউ।না না ঠিকইতো রাজ।মেয়েটা আবার কে?বিয়ে করেনি তো?না না আমি এসব কি ভাবছি।রাজ খুব ভালো ছেলে।সে এমন বাজে কাজ করতে পারে না।ভাবনার অবসান হতে না হতে তিনি বাসায় পৌছলেন।
কলিংবেল টিপতেই আলেয়া দরজা খুলে দিলো।বাবাকে দেখেই বলল,
বাবা তুমি?
হ্যাঁ মা আমি।তোকে দেখতে ইচ্ছে করলো। তাই চলে এলাম।
ভিতরে এসো বাবা।

মেয়ে বাবাকে ভিতরে নিয়ে গেল।ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই বেহাইর সঙ্গে দেখা হলো।দুবেয়াই সালামের মাধ্যমে কুশল বিনিময়ের পর্ব শেষ করলো।
আজ আলেয়ার শ্বাশুড়ি বাসায় নেই।তাই বাসায় শান্তির পরিবেশ বিরাজ করছে।দুবোন মার্কেটে গেছে শফিং করতে।যে কোন মূহূর্তে এসে যেতে পারে।পরিবেশ আবার অশান্ত হয়ে উঠতে পারে।আলেয়ার বাবাকে একগাদা বকা দিতে পারে।আলেয়া বিষয়টা বুঝতে পেরে তাড়াহুড়া করে বাবার জন্য চা নাস্তা রেডি করলো।

দুবেয়াই খেতে বসলেন।হায়দার মাস্টার এখনো চায়ে চুমু দেননি।এমন সময় বেয়াইনের আগমন।বেয়াইকে ডাইনিং টেবিলে দেখে রাগ হাইতে উঠে গেল।এই সেরেছে তিনি কি আর থেমে থাকেন।
বন্ধ্যা মেয়েকে কেনো তার ছেলের ঘাড়ে ছাপিয়ে দিলেন।এইসব বলে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করলেন।শুধু তাই নয় মেয়েকে নিয়ে যেতে বললেন।ছাপছাপ জানিয়ে দিলেন ছেলেকে অন্যত্র বিয়ে করাবেন।তার সঙ্গে ঠোট মিলালেন প্রিয়ার মা।
রাজীব চৌধুরী শত চেষ্টা করে ও স্ত্রীকে থামাতে পারলেন না।

হায়দার মাস্টার কিছু বলতে চাইল।কিন্তু মেয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল,
বাবা তুমি এইসব নিয়ে ভেবো না।
কিন্তু ওরা যা করছে,তাতো অন্যায়।আমি এর প্রতিবাদ করবো না।
না বাবা করবে না।কারণ তুমি মেয়ের বাবা।তোমার কি এইসব বলা সাজে?
তাই বলে সন্তান না হওয়ার জন্য ওরা তোকে দায়ী করবে?
ওদের সাজে তাই করছে।কিন্তু উপরওয়ালা সবকিছু দেখছেন।উনি সঠিক বিচার করবেন।বাবা তুমি বাসায় ফিরে যাও।
মেয়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বাবা বলল,
মারে আমি বোধহয় তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম।
হায়দার মাস্টারের চোখের জলের ও বাঁধ মানল না।গড়িয়ে পড়লো।

বাবাকে বিদায় দিয়ে মেয়ে ভিতরে গেল।অনেক রাত করে রাজ প্রিয়াকে নিয়ে বাসায় ফিরল।রুমে গিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়লো।আলেয়া আস্তে করে বলল,
টেবিলে খাবার দিয়েছি।খেতে আস।
আমি খাব না?
কেনো খাবে না?
সে কৈফিয়ৎ কি তোমাকে দিতে হবে?
অবশ্যই হবে।কারণ আমি তোমার স্ত্রী।স্বামীর ভালো মন্দ জানার অধিকার আমার আছে।
আমি স্ত্রী হিসেবে তোমাকে চাই না।
কেনো,আমার দোষ কোথায়?
তুমি বন্ধ্যা।তোমার মতো বন্ধ্যা স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
কি করে বুঝলে আমি বন্ধ্যা?
চার বছর হয়ে গেল।এখনো বাচ্চা দিতে পারলে না।তুমি বন্ধ্যা নয়তো কি?
প্লিজ ভুল বুঝো না।চলো আমরা ডাক্তারের কাছে যাই।তারপর প্রমাণ হবে কে দোষী?
না যাব না।আমি তোকে…।
ডিভোর্স দিবে এইতো।
ঠিক তাই।

আলেয়া বুঝতে পারলো কানপড়া রাজের মাথা খারাপ করে দিয়েছে।সংসারে যদি তৃতীয় পক্ষের আগমন ঘটে সেখানে অশান্তি বিরাজ করে।আজ রাজের পরিবারে ও তাই ঘটতে চলেছে।রাজের খালা আসতে না আসতে একটা সাজানো গোছানো সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে যাচ্ছে।কোথাও একটা ভালো বুদ্ধি দিবে তানা।একটা ভালো বউকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে নিজের মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইছে।

আর রাজ ও ভালোমন্দ যাছাই,না করে হাতের লক্ষি পায়ে ঠেলছে।শুধুমাত্র কানপড়া আর ভুল বুঝাবুঝির কারণে।কানপড়া সমাজের একটা ব্যধিতে পরিনত হয়েছে।মানুষ ওনা সত্যমিথ্যা যাছাই না করে কানপড়া বিশ্বাস করে।যার ধরুন সংসার ভাঙার প্রবনতা বেড়ে গেছে বহুগুন।
রাজ আলেয়ার কাছে থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।আলেয়া এখন তার চক্ষের শুল।প্রিয়াকে নিয়ে তার সময় কাটে।আজ একটু সময় পেয়েছে।তাই রাজের ঘা ঘেষে বসেছে।অমনি রাজ রাগাম্বিত হয়ে বলল,
তুমি আমার ঘা ঘেষে বসলে যে?

স্ত্রী স্বামীর পাশে বসবে এতে দোষের কি দেখলে?
শোন তুমি আর কখনো আমার পাশে বসবে না।আমি তোমাকে সহ্য করতে পারি না।
পরনারীকে সহ্য করতে পার এইতো।শোন,স্ত্রী স্বামীর পাশে বসলে পূণ্য হয়।আর পরনারী পাশে বসলে পাপ হয়।তুমি যা করছ তা পাপ।এখনো সময় আছে।তুমি সঠিক পথে ফিরে আস।আমি হাতজোড় করে বলছি,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।ভুল বুঝে আমায় ছেড়ে দিওনা।আমার আগের ভালোবাসা আমাকে ফিরিয়ে দাও।ফিরিয়ে দাও।সন্তান দেয়ার মালীক একমাত্র আল্লাহ।তিনি সময়মতো আমাদের সন্তান দিবেন।

কে শোনে কার কথা।কানপড়া রাজের মাথা নষ্ট করে দিয়েছে।এইজন্য আলেয়ার শত অনুরোধ তার দিল নরম করতে পারলো না।সে তার সিদ্ধান্তে অটল।সে আলেয়াকে বলল,
তুমি আর কখনো আমাকে চুবে না।তুমি চলে যাও।তুমি গেলে আমি বাঁচি
আলেয়া কেঁদে কেঁদে তার পা চেপে ধরে বলে,
ওগো আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না।তুমি আমার স্বামী।আমি সারাজীবন তোমার সঙ্গে থাকব।আমায় তাড়িয়ে দিওনা।
আমি তোকে রাখব না।পা ছাড় বলছি।
আলেয়া তার পা আর ও শক্ত করে চেপে ধরেছে।অমনি রাজ তাকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে মারতে মারতে বের করে দিচ্ছে।সেখানে যোগ হয়েছে,মা খালা ও প্রিয়া।তারা থেমে থাকেনি।দুচারটা দিয়েছে।

তাদের এই দৃশ্য দেখে ছুটে আসছে রাজীব চৌধুরী।ততক্ষণে আলেয়া অজ্ঞান হয়ে পড়লো।তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।ইমারজেন্সি চিকিৎসা শুরু।ডাক্তার স্যালাইন ইনজেকশন পুস করলেন।ঘন্টা খানেক পরে তার জ্ঞান ফিরে আসল।আল্লাহর রহমতে সে সুস্থ হয়ে উঠল।সুস্থ হওয়ার পর সে তার মা বাবার সঙ্গে চলে গেল।তার ধারণা রাজ তার ভুল বুঝতে পারবে।তাকে নিয়ে আসবে।সেই অপেক্ষায় সে বসে আছে।

কিন্তু না আলেয়ার ধারণা ঠিক না।রাজ ঠিক তাকে ডিভোর্স দিল।পাঠিয়ে দিলো দেন মোহরসহ তালাক নামার কাগজপত্র। আলেয়ার বাবা এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে চাইলেও আলেয়া দিলো না।কারণ তার স্বামী যখন তার বিপক্ষে চলে গেছে।সেখানে সংগ্রাম করে কোন লাভ হবে না।তাই আলেয়া তালাক নামায় সাইন করে রাজকে মুক্তি দিলো।

এদিকে বিয়ের বাজনা বেজে চলেছে।ভালোভাবে সম্পাদন করলেন,দুবোন মিলে,রাজ আর প্রিয়ার বিয়ে।দুবোনের সেকি আনন্দ,গলায় গলায় পিরিতি।রাজ ও প্রিয়াকে পেয়ে খুব খুশি।প্রিয়াকে নিয়ে ঘুরছে ফিরছে,মজা করছে।মনের আনন্দে অফিস করছে।কিন্তু সে কী! তার টেবিলের উপর একটা চিঠি।খামের উপর তার নাম লেখা।কিছুক্ষণ আগে অবশ্য ডাকপিয়ন চিঠিটা দিয়ে গেছে।
সে চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো।তাতে লেখা

রাজ,
আমার সালাম ও ভালোবাসা রইল।আশা করি প্রিয়াকে নিয়ে সুখে আছ।কামনা ও তাই করছি।

যাক আজ কিছু জরুরী কথা বলার জন্য কাগজ কলম হাতে নিলাম।রাজ তুমি একজন শিক্ষিত পুরুষ।তোমার কাছ থেকে আমি এমন বাজে কিছু আশা করিনি।
সন্তান না হওয়ার জন্য শুধু আমাকে দায়ী করলে?
নিজের কথা একবার ও ভাবলে না।বর্তমানে যুগ পাল্টেছে।বিজ্ঞান অনেক কিছু আবিষ্কার করেছে।সন্তান ধারণের অক্ষমতা নির্নয় করার সঠিক পদ্ধতি পরীক্ষা নিরীক্ষা।আর তুমি তা না করে আমাকে বন্ধ্যা বলে তাড়িয়ে দিলে?আমাদের চার বছরের সংসার।একটু ও মায়া হলো না তোমার?পারলে আমায় ত্যাগ করতে?
একদিন সব বুঝবে, কে দোষী,আর কে নির্দোষ। হয়তো প্রমাণ হবে তুমি বন্ধ্যা।সেদিন তোমার পাশে কেউ থাকবে না।অনুতাপের বিশ্রী আগুন দাউ দাউ করে জ্বলবে।প্রায়শ্চিত্ত করার ও সময় পাবে না।সেদিন চোখের জল হবে তোমার একমাত্র সঙ্গী।
রাজ সন্তান ছাড়া ও এ সমাজে অনেক দম্পত্তি সুখে আছে।শুধু কি সন্তানই সব, স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কিছু না?
মনে রেখো একসময় সন্তান মা বাবাকে ছেড়ে চলে যাই।কিন্তু স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে যায় না।অনুরুপ স্বামী ও স্ত্রীকে ছেড়ে যায় না।।তাদের এ বন্ধন অটুট থাকে মৃত্যু পর্যন্ত।রাজ আমি ও তাই চেয়েছিলাম।তোমার ভালোবাসা নিয়ে সারাজীবন থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তা দিলে না।আমি তোমাকে যতটুকু ভালোবাসা দিয়েছি।আমার মনে হয় না,আর কেউ তোমাকে এমন ভালোবাসবে।যেখানে আমার ভালোবাসার কোন মুল্য নেই।সেখানে না থাকা ভালো।তাই বাড়াবাড়ি না করে তালাক নামা সাইন করে দিলাম।
প্রিয়াকে নিয়ে সুখে থাক,এই কামনা করে বিদায় নিচ্ছি।খোদা হাফেজ।
ইতি
তোমার প্রাক্তন স্ত্রী
আলেয়া।

চিঠিটা পড়ার পর তার মনে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়নি।একবারের জন্যও পুরানো স্মৃতিগুলো মনে পড়লো না।চিঠিটা রেখে দিলো।অফিস শেষ করে বাসায় ফিরে আসল।হাসি আনন্দে রাজ প্রিয়ার দিনগুলো কেটে চলেছে।

এর ফাঁকে কেটে গেল চার বছর।রাজ এখনো বাবা হতে পারলো না।প্রিয়ার মনে সন্দেহ হলো।সে রাজকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল।সমস্ত বিবরনী শুনার পর ডাক্তার স্বামী স্ত্রী দুজনের একগাদা পরীক্ষা দিলেন।পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে আসতেই ডাক্তার বলল,
মি:রাজ সমস্যাটা আপনার, প্রিয়ার না।
ডাক্তার সাহেব বলুন কি সমস্যা?
আপনি আর কখনো বাবা হতে পারবেন না।
কেনো ডাক্তার সাহেব?
আপনি সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।
চিকিৎসা করলে ভালো হবে না?
না হবে না।কারণ আপনি অনেক দেরী করে ফেলেছেন।রোগ চিকিৎসার আওতায় নেই।তবুও আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি।খেয়ে দেখতে পারেন।বাকীটা আল্লাহপাকের মর্জি।কারণ সন্তান দানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহপাকেরই আছে।আমরা তো উছিলামাত্র।

রাজকে নিয়ে প্রিয়া ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হলো।তখনি দেখা হলো,তার বন্ধু ইমনের সঙ্গে।ইমন রাজের ছোট বেলার বন্ধু।তার প্রথম স্ত্রী গাড়ি এক্সিডেন্ট মারা যায়।তারপর সে আলেয়াকে বিয়ে করে।আলেয়ার একটা ছেলে হয়েছে।তার বয়স চার বছর।দুদিন ধরে তার জ্বর কাশি।সেই জন্য ডাক্তারের কাছে আসা,এবং রাজের সঙ্গে দেখা।দুবন্ধু কুশল বিনিময়ের পর্ব শেষ করল।তারপর আলেয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো।নামটা শুনা মাত্রই সে চমকে উঠল।আলেয়া হিজাব পরাতে সে চিনতে পারলো না।আলেয়া কিন্তু ঠিক চিনে ফেলল।

তারপর হিজাব সরিয়ে বলল,
রাজ সাহেব কেমন আছেন?আপনার বাচ্চা কই?প্রিয়ার কোল এখনো খালী কেনো?
না মানে ইয়ে…।
আমতা আমতা করছেন কেনো?
ডাক্তার নিশ্চয় বলেছে,আপনার দোষ, বাচ্চা হবে না।তাইতো মুখটা শুকিয়ে শুটকি মাছের মতো হয়ে গেছে।কি ঠিক বলিনি?
কথাগুলো সত্যি তাই রাজ মাথা নিচু করে রইল।কোন কথার জবাব দিলো না।আলেয়া ও আর কিছু না বলে স্বামীকে নিয়ে বাসায় ফিরে গেল।
এদিকে প্রিয়া ও রাজকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসল।তারপর কাপড় ছোপড় গুছিয়ে নিলো।এমন সময় রাজ বলল,
প্রিয়া কোথাও যাচ্ছ নাকি?
হ্যাঁ যাচ্ছি।
কোথায়?
আমি লন্ডন বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাচ্ছি।
কেনো?
তোমার মতো বন্ধ্যা পুরুষের সঙ্গে থাকা সম্ভব নয়।
প্লিজ প্রিয়া,আমাকে ছেড়ে যেওনা।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
রাখ তোমার ভালোবাসা।যার সন্তান দেয়ার ক্ষমতা নেই।তার কিসের ভালোবাসা?আমি তোমাকে চাই না।

প্রিয়া ডাক্তার কি বলল,না বলল এটা মিথ্যে ওতো হতে পারে।আমি প্রয়োজনে বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা করাব।তুমি যেওনা।
কে শুনে কার কথা।প্রিয়া ঠিক চলে যাচ্ছে।তার পথ আটকে দাঁড়ালো রাজ।প্রিয়া তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে বলল,
“ডোন্ট টাচ মি”
সময় মতো ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেব।সাইন করে দিও।
রাজ সরে দাঁড়ালো। প্রিয়া হনহন করে সবার সামনে দিয়ে চলে গেল।
মূহূর্ত রাজের মনে পড়ে গেল।আলেয়ার লেখা চিঠিটার কথা।আলেয়া যা লিখেছে সব সত্যি হয়ে গেল।প্রিয়া সত্যি তাকে ছেড়ে চলে গেল।
রাজ,আলেয়াকে তাড়িয়ে দিলো বন্ধ্যা বলে।অথচ সেই বন্ধ্যাত্ব আজ তার ঘাড়ে চেপে বসল।আর সেই সত্যটা জানার পর প্রিয়া তাকে ছেড়ে চলে গেল।আর এতদিন পর আলেয়ার সত্যিকার ভালোবাসা বুঝতে পেরে রাজ কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প একজন জান্নাতি ক্রীতদাসীর গল্প আফছানা খানম অথৈ

একজন জান্নাতি ক্রীতদাসীর গল্প আফছানা খানম অথৈ একদিন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা:) এর পিতা মক্কার বাজারে যান কিছু কেনাকাটা

Leave a Reply