গল্প ইভটিজিং আফছানা খানম অথৈ

0

ইভটিজিং

আফছানা খানম অথৈ

সোহেল লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিল।ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে গ্রামের কলেজ থেকে।তারপর শহরে গিয়ে ভার্সিটিতে অনার্স’এ ভর্তি হয়।প্রথম প্রথম সে পড়ালেখা নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিল।একদিন বখাটে সামছু তাকে ডাক দেয়।সে এগিয়ে গেলে বলে,
এই সোহেল তুই আমাদের দলে যোগদে।
প্লিজ ভাই আমাকে ক্ষমা কর।আমি এসব পারব না।
পারব না বলাতে বখাটে সামছু তার গালে ঠাসঠাস চড় বসিয়ে দেয়।তারপর বলে,
এই সোহেল ভালই ভালই আমাদের দলে যোগদে।তানা হলে গণপিটানি খাবি।
সামছু ভাই বাবা-মা আমাকে খুব কষ্ট করে পড়াচ্ছে।উনাদের ইচ্ছা আমি পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হই।
এই শালা পড়ালেখা করে কি করবি।দেখছিস না আজকাল উচ্চ শিক্ষিত ছেলেরা রাস্তায় বেকার হাটছে,চাকরী পাচ্ছে না।আজকাল চাকরী করতে ঘুষ লাগে হ্যালো হ্যালো লাগে।তোর এসব আছে?শোন শালা পড়ালেখা শিখে চাকরী পাবি না।বেকার হাটবি।তাই বলছি সময় থাকতে আমাদের দলে যোগদে।তানা হলে পরে আফসোস করবি।বল আমাদের দলে যোগ দিবি?
সোহেল বুঝতে পারল বেশি কিছু বলতে গেলে মার খাবে।তাই কোনকথা না বলে সরল রেখারমতো দাঁড়িয়ে রইল।
তার নিরবতা দেখে সামছু বলল,
কি শালা কথা কস না ক্যান?দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস?
সামছু ভাই ক্লাসের দেরী হয়ে যাচ্ছে।আমি এখন আসি।
কোনকিছু শুনার অপেক্ষা না করে তড়িঘড়ি করে সোহেল ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেল।
তাকে চলে যেতে দেখে বখাটে সামছু বলে,
শালা কথার উত্তর না দিয়ে চলে গেলি।আমি কিন্তু হারবার নয়।যেমন করে হোক তোকে আমাদের দলে আনবই।
বখাটে সামছুর কাজ মেয়েদের ইভটিজিং করা,সুযোগ বুঝে ধর্ষণ করা,পকেটমারা,ছিনতাই,ইত্যাদি।
এরফাঁকে কেটে গেল ক’দিন। সোহেল তাদের এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করছে।কিন্তু সামছু নাছোড় বান্দা ঠিক সোহেলকে ফলো করে।সে কোথায় যায় কি করে, না করে।
ক’দিন পর ঠিক সে সোহেলের পথ আটকে দাঁড়াল।তারপর তাকে গাড়ি করে তার আস্তানায় নিয়ে গেল।খুব করে বুঝাল।কিছু টাকা দিয়ে তার হাতে ধরিয়ে দিলো,অনেক লোভ দেখাল,তাকে লিড়ার বানানোর ওয়াদা করলো।
সোহেল ফিরে আসল।কিন্তু তার ভিতরে কেমন জানি পরিবর্তন দেখা দিলো।সে বখাটে সামছুর কথাগুলো ভাবতে লাগল।অনেক ভাবনার পর সে তাদের দলে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।এবং সঙ্গে সঙ্গে দলে যোগ দিলো।তারপর থেকে সে সামছুর কথামতো,ইভটিজিং,ধর্ষণ,পকেটমারা,ছিনতাই এসব করে চলেছে।একদিন তার গ্রামের এক বন্ধু বিশেষ কাজে তার কাছে শহরে এসেছে।আর সে পড়লো ছিনতাইকারীর খপ্পরে।সামছুর দলবল তাকে এট্যাক করলো।তার সামনে বন্ধুক তাক করে বলল,
এই শালা তোর কাছে কি কি আছে দিয়েদে?তানা হলে গুলি ফায়ার করব?
ছোটন ভয়ে সবকিছু দিয়ে দিলো।তার কিছুক্ষণ পরে সোহেল এসে বলল আজ কত টাকা ইনকাম হলো?
সোহেল ভাই বেশি না,একটা মোবাইল সেট আর হাজার পাঁচেক টাকা।শালা মনে হয় নতুন এসেছে শহরে।চাওয়ামাত্রই সব দিয়ে দিলো।
তাই নাকি?
হুম তাই।
তখনি ছোটন তার সামনে এসে বলল,
সোহেল ভাই তুমি এখানে,পড়ালেখা কেমন চলছে?
ভালো।
তা তুই কোত্থেকে?
বাড়ি থেকে। একটা বিশেষ কাজে তোমার কাছে এসেছি।
তাই নাকি?
হুম তাই।কিন্তু এই লোকগুলো ছিনতাই করে আমার কাছ থেকে সব নিয়ে গেল।
সোহেল ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
এই ওর কাছ থেকে যা যা নিয়েছিস সব দিয়েদে।
অর্ডার করা মাত্রই তারা সবকিছু ছোটনের হাতে দিয়ে দিলো।তখনি ছোটন বলল,
দোস্ত তুই ওদেরকে ছিনিস?
না মানে পরিচয় আছে আর কি।চল চল বাসায় চল।
ছোটনকে সোহেল বাসায় নিয়ে গেল।ছোটন বন্ধুর জাকজমক বাসা দেখে বলল,
দোস্ত ,টিভি সোফাসেট, ফ্রিজ,এতত্তব কোথায় পেলি?
দোস্ত আর বলিস না,একে বলে ভাগ্য।একটা চাকরী পেয়েছি।অনেক টাকা মাইনে।
ও তাই বল।
বলতে না বলতে কয়েক আইটেমের খাবার এসে গেল ছোটনের সামনে।খাবার দেখে ছোটন বলল,
দোস্ত এত খাবার?
দোস্ত কথা বলিস না,খেয়েনে।
ছোটন খেতে বসল।এমন সময় বসের ফোন আসল।তখনি সোহেল বলল,
দোস্ত খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়।আমি এক্ষণি বের হব।আমার বাইরে জরুরী কাজ আছে।
কি কাজ?
তুই এসব বুঝবি না।দরজায় খিলদে।আমি বেরুলাম।
দরজায় খিল দিয়ে ছোটন শুয়ে পড়লো।শুয়ে শুয়ে সে ভাবে।এতরাতে কিসের কাজ সোহেল যে বেরিয়ে গেল।ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়লো।রাত প্রায় শেষ এমন সময় সোহেল এসে দরজা নক করলো।ছোটন ঘুমঘুম চোখে দরজা খুলে দিলো।সোহেল ভিতরে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়লো।পরদিন সকালে ছোটন তার কাজ সেরে গ্রামে ফিরে আসল।তারপর সোহেলের বাবাকে বলল,
চাচাজান সুখবর আছে।
বল কী সুখবর?
সোহেল চাকরী পেয়েছে।অনেক টাকা মাইনে।আমাককে যা খাতির করে খাওয়ালো না,পেট ভরে গেল।
সত্যি বলছিস তো ছোটন?
জ্বি হ্যাঁ চাচা সত্যি।বিশ্বাস না হলে গিয়ে দেখে আসেন।
ছোটনের কথা শুনে বাবা অবাক হয়ে বলেন,
সোহেল চাকরী পেল।কিন্তু আমাকে জানাল না ব্যাপার কি?একবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করি।
বলতে না বলতে তিনি মুঠোফোন থেকে কল দিলেন।সোহেল রিসিভ করে বাবাকে সালাম দিয়ে বলল,
হ্যালো বাবা কেমন আছ?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুই কেমন আছিস?
আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
বাবা সোহেল ছোটন বলল,তুই নাকি চাকরী পেয়েছিস?
জ্বি হ্যাঁ বাবা পেয়েছি।
এতদিন আমাকে বলিসনি কেনো?
সরি বাবা ভুল হয়ে গেছে।তাছাড়া অফিসের কাজ আর লেখাপড়া খুব ব্যস্ত সময় পায়নি।মাস শেষ হলে টাকা পাঠাব।ভালো থেকো বাবা।এখন রাখি।খোদা হাফেজ।
ফোন রেখে সোহেল মিশনে বের হলো।তাকে দলের লিড়ার বানানো হলো।সে সিলেক্ট করে দিলো কে কোন দিকে যাবে।সবাই যার যার কাজে লেগে গেল।দিন শেষে যা ছিনতাই হলো সব সোহেল’র হাতে বুঝিয়ে দিলো।এভাবে চাকরীর নামে সোহেল ধোকা দিচ্ছে মানুষকে।মাসে মাসে টাকা পাঠিয়ে দেয় অবিভাবক’র জন্য।তাই অবিভাবক তেমন একটা সন্দেহ করে না।বরং পাড়া প্রতিবেশীর কাছে ছেলের প্রশংসা করে। এমনিভাবে কেটে চলেছে সোহেলের জীবন।মাঝে অনেক সময় পার হলো।তার ছোট বোন মুনিয়া ও ইন্টারমিডিয়েট পাস করে শহরে এসে ভার্সিটিতে অনার্স এ ভর্তি হলো।সোহেল কিন্তু এখন দলের লিড়ার। তার অর্ডারে সকল মিশন হয়।আজ তাদের মিশন হলো ভার্সিটির সুন্দরী মেয়েদের তুলে আনতে হবে।সবাই ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের পথ এট্যাক করে দাঁড়িয়ে আছে।ভার্সিটি ছুটি হলো।মেয়েরা বেরিয়ে পড়লো।একেকজন একেক দিকে যাচ্ছে।ঠিক তখনি তারা মুনিয়াকে ধরে মুখ বেঁধে নিয়ে গেল সোহেল’র আস্তানায়।সোহেল মুখ খুলতেই একি দেখল তার বোন মুনিয়া।তার মাথায় বজ্রপাত ঘটল।সে সবাইকে কিল ঘুষি,লাত্থি মেরে সরিয়ে দিলো।তখনি মুনিয়া বলল,
ভাইয়া তুই!
হ্যাঁঁ বোন আমি।আমাকে ক্ষমা কর।
তোর কোন ক্ষমা নেই।তোকে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে।তুই ইভটিজিংকারী ধর্ষক।তুই আমার ভাই না।
সোহেল বোনের সামনে হাত জোড় করে বলে,
বোন আজ আমি লজ্জিতও অপমানিত।আমার চরম শিক্ষা হয়ে গেছে।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।প্রত্যেক মেয়ে মায়ের জাতি।সে কারো বোন,কারো স্ত্রী,কারো মা।তাদেরকে সম্মান করা উচিৎ। আর আমরা কিনা তাদেরকে…।
ছিঃছিঃ এ আমি কি করলাম।আমি বিরাট ভুল করেছি।আমি আর কখনো এ কাজ করব না।
ভাইয়া আজ যদি তোর জায়গায় অন্য কেউ হতো,তাহলে তোর বোন হতো ধর্ষিতা।আর তা এতক্ষণে খবরের কাগজে টিভি চ্যানেলে নিউজ হয়ে যেত।
ঠিক বলেছিস বোন।এতদিন আমাদের ভিতরে একটা জিনিস কাজ করেছিল সেটা হচ্ছে নিজের বোনকে বোনের চোখের দেখা,অন্যের বোনকে নোংরা চোখে দেখা।তাই নারী জাতি প্রতি পদেপদে লাঞ্ছিতা, অপমানিতা,ও ধর্ষিতা হচ্ছে।আজ পরিষ্কার বুঝতে পারলাম প্রত্যেক নারীকে বোনের চোখে, স্ত্রীর চোখে,মায়ের চোখে দেখতে হবে।তবে আমার বোন, কারো বোন ধর্ষিতা,অপমানিতা লাঞ্ছিতা হবেনা।
ভাইয়া এতক্ষণে আসল সত্যটা বুঝতে পেরেছিস।
শুধু বুঝা নয়।আমি প্রতিজ্ঞা করছি আর কোন মেয়েকে “ইভটিজিং” করব না।ভালো হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
সত্যিই বলছিস ভাইয়া?
হুম সত্যি সত্যি তিন সত্যি।
আজকের পর থেকে সোহেল আর খারাপ পথে পা বাড়াল না।ভালো হয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগ দিলো।

ঃসমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply