গল্প এক অসহায় বালকের গল্প আফছানা খানম অথৈ

0

এক অসহায় বালকের গল্প

আফছানা খানম অথৈ

রমাজন মাস সিয়াম সাধনার মাস, ফজিলতের মাস।এই মাসে যে যত বেশি ইবাদত করবে,দান খয়রাত করবে সে তত বেশি ফজিলত পাবে।আর এই মাসের একটা ঘটনা নিয়ে লেখা এই গল্পটি।
বাদল বারো তেরো বছরের একজন বালক। বাবা গাড়ি একসিডেন্টে পা হারিয়ে ঘরে বসে আছেন।ছোট বোন রাজনা বয়স আট বছর ।দুদিন ধরে তাদের ঘরে কোন দানা পানি নেই।শুধু সাদা পানি খেয়ে সবাই রোজা রেখেছেন।বাদল ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ছোট বোন রাজনা বলল,
ভাইয়া আমার জন্য জিলাপি আনিছ।
জিলাপি খাওয়াটা প্রতিটি পরিবারে রমজান মাসের ইফতারির একটা আদর্শ খাবার হিসেবে দাঁড়িয়েছে।গরীব বড় লোক সবাই জিলাপিকে ইফতারির একটা গুরুত্বপূর্ণ আইটেম হিসেবে রেখেছেন।আজ তাই রাজনা ও তার বড় ভাইকে বলেছে জিলাপি আনার জন্য।বাদল সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি সবার দ্বারে দ্বারে ভিক্ষুকের মতো দুহাত পেতে বড় বড় হোটেল ফুটপাতের স্টলে গিয়ে জিলাপি চাইলেন।কারো দয়া হলো না।কেউ জিলাপি দেয়াতো দূরের কথা তার দিকে ফিরে ও তাকালো না।ইফতারের সময় হয়ে আসছে ঠিক তার কিছুক্ষণ পূর্বে বাদল শহরে দুতলা বিশিষ্ট মসজিদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।হরেক রকম ইফতারি দিয়ে ভরপুর মসজিদ প্রাঙ্গণ।ফল ফলাদি,বুট মুরি খেজুর,জিলাপি,চমোচা, পেয়াজু,ডালের ভরা আর ও কত কি।
বাদল তাকিয়ে তাকিয়ে তা দেখছে আর ভাবছে ছোট্ট বোনটির কথা।আসার সময় বোনটি বলেছিল জিলাপির কথা,এখন খালী হাতে ফিরলে বোনকে কি জবাব দেবে।যেমন করে হোক এক ফোটলা জিলাপি তাকে নিতে হবে।এখানে তো অনেক জিলাপি পড়ে আছে একটা নিলে এমন কি হবে, তাও মসজিদের বলে কথা।ছোট বোনের আবদার মেটাতে বালকটি এক ফোটলা জিলাপি নিয়ে দিলো দৌড়। অমনি মসজিদে থাকা লোকজন বাদলকে ধরে চোর চোর বলে ধপাধপ মারতে শুরু করলো।
বাদল কেঁদে কেঁদে বলে,
আমাকে মেরো না, আমি চুরি করিনি।
কিন্তু কে শুনে কার কথা।কিল ঘুষি,লাথি উন্ডা যে যা পারছে তা দিচ্ছে।একেতো ক্ষুধার্ত তার উপরে কড়া মাইর এত আঘাতের পর কি এতটুকুন বয়সের বালকটি সুস্থ থাকার কথা।সে কাত হয়ে পড়ে যায়।ততক্ষণে ঈমাম সাহেব উপর তলা থেকে নামছেন।বালকটি কাত হয়ে পড়ে যাওয়ার পর ও মারা বন্ধ হয়নি।কারণ চোর বলে কথা তাকে কি এমনি এমনি ছেড়ে দেয়া যায়।ঈমাম সাহেব এগিয়ে এসে বলে,
এই তোমরা কাকে মারছ,থাম থাম।
সবাই এক বাক্যে বলল,
না হুজুর থামব না।এত্ত বড় সাহস ও মসজিদের জিনিস চুরি করলো।
বাদল কেঁদে কেঁদে হুজুরের পা ধরে বলে,
হুজুর আমি চুরি করিনি।ওগো হাত থেকে আমারে বাঁচান।ওরা আমারে মেরে ফেলল।
ঈমাম সাহেব সবাইকে ধমক দিয়ে বললেন,
থাম সবাই কি শুরু করে দিলে।বাচ্চাটা মরে যাবে তো।
হুজুরের ধমকে সবাই থেমে গেল।এবার ঈমাম সাহেব বাচ্চাটিকে উনার পাশে বসিয়ে জিলাপি সহ আর ও কিছু খাবার খেতে দিলেন।বাদল বলল,
হুজুর আমি রোজা রেখেছি খাব না।
হুজুরের বিশ্বাস হলো না,এতটুকুন বাচ্চা রোজা রাখতে পারে।তাই পূণরায় বলল,
সত্যি বলছ তো?তুমি রোজা রেখেছ?
জ্বী হুজুর আমি রোজা রেখেছি।
হুজুর আর কিছুই বললেন না।বালকটিকে নিজের পাশে বসে ইফতার করালেন।তারপর বালকটিকে নিয়ে তার বাড়ি গেলেন।বাদলকে দেখা মাত্রই তার ছোট বোন এগিয়ে এসে বলল,
ভাইয়া আমার জন্য জিলাপি এনেছিস?
এনেছি বোন নে ধর।
বাদল জামার ভিতরে লুকিয়ে রাখা জিলাপির ফোটলাটা বের করে বোনের হাতে দিয়ে বলল,
হুজুর আমি চুরি করিনি।আপনারা আমাকে যে জিলাপি খেতে দিয়েছেন,তা আমি না খেয়ে আমার বোনের জন্য নিয়ে এসেছি।
ততক্ষণে তার বাবা উচু বাক্য শুনে লাটি ভর দিয়ে এগিয়ে এসে বলল,
আপনার কারা? বাদল কি চুরি করেছে?
হুজুর উত্তর দিলো,
জ্বী না।বরং আমরা ভুল করেছি।
এবার বাদলের বাবা বলল,
কি হয়েছে খুলে বলেন তো?আমি গরীব হলে ও আমার ছেলে-মেয়েকে চুরি করতে শিখায়নি।
এবার ঈমাম সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন,
আপনার পা হারালেন কি করে?
বাদলের বাবা লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিলো,
হুজুর সে এক করুণ কাহিনী।আমি গরীব মানুষ কোন রকমে ফুটপাতের পাশে চা বিস্কুট বিক্রি করতাম।প্রতিদিন যা আয় হতো তা দিয়ে কোন রকমে সংসার চালাতাম।বাদল প্রাইমারী স্কুলে পড়ত।ভালো চলছিল আমাদের গরীবের সংসার।একদিন বেচা-কেনা শেষ করে বাড়ী ফেরার পথে রাস্তা পার হওয়ার সময় হঠাৎ একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।আরেকটা গাড়ি আমার পায়ের উপর দিয়ে যায়।আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।পথচারীরা আমাকে সরকারী মেডিকেলে পৌছে দেন।জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমার পা নেই কেটে ফেলা হয়েছে।আজ ছয় মাস ধরে ঘরে পড়ে আছি।আয় রোজগার করতে পারছি না।অর্ধাহারে অনাহারে জীবন কাটছে কোন মতে।এখন বাদল আমাদের পরিবারের একমাত্র ভরসা।সে এখন পড়া লেখা ছেড়ে সংসারের হাল ধরেছে।ছোট বাচ্চা বলে কেউ তাকে কাজ দেয় না।যদি ও কেউ দেয় ঠিক মতো পারিশ্রমিক দেয় না।বাচ্চা ছেলে কাজ কম করে বলে অযুহাত দেখিয়ে টাকা কেটে কুটে যা দেয় তা দিয়ে কোন মতে সংসার চলে।আজ দুদিন ধরে আমাদের ঘরে কোন খাবার নেই।শুধু সাদা পানি খেয়ে সবাই রোজা রেখেছি।বাদল যাওয়ার সময় তার ছোট বোন জিলাপি আনতে বলেছিল।তাই বোধ হয় সে জিলাপি….।
আমার ছেলেটাকে মাফ করে দিন।আমার ছেলে চোর না।ছোট্ট বোনের আবদার পূরণ করতে সে এ অন্যায় করেছে।
চোখের জলে বুক ভেসে গেল বাদলের বাবার।সেই সঙ্গে হুজুরের ও চোখের পানি পড়লো।ঈমাম সাহেব বললেন,
আমরা না যেনে বালকটার উপর কি অন্যায় না করেছি।হে পরওয়ার দেগার আমাদেরকে ক্ষমা করুণ।
তারপর ঈমাম সাহেব পকেট থেকে দুশ টাকা বের করে বাদলের বাবার হাতে দিয়ে বললেন,
এই টাকাগুলো রাখুন।সবাইকে নিয়ে খাবার কিনে খাবেন।
এত বড় মসজিদের ঈমামের হাতে উঠল মাত্র দুশ টাকা।মসজিদের ফাউন্ডে লক্ষ লক্ষ টাকা পড়ে থাকে ঈমাম সাহেব ইচ্ছে করলে পারতেন এই ফ্যামিলির খরচ বহন করতে।কিন্তু তিনি মাত্র দুশ টাকা দিয়ে চলে আসলেন ওখান থেকে।আমি “এক অসহায় বালকের গল্প” লিখলাম এ রকম আর ও অনেক অসহায় বালক পড়ে আছে সমাজের আনাচে কানাচে কে তার খবর রাখে,কে ফিরে তাকায় তার দিকে।আমাদের প্রত্যকের উচিৎ চোর সাব্যস্থ করার আগে ভালো করে যাচাই বাচাই করা।তানা হলে আসল চোর পার পেয়ে যাবে নকল চোর বাদলের মতো মার খেয়ে ধুকে ধুকে মরবে।


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

One Reply to “গল্প এক অসহায় বালকের গল্প আফছানা খানম অথৈ”

Leave a Reply