গল্প তাবুতে সাকিনা আফছানা খানম অথৈ

0

তাবুতে সাকিনা

আফছানা খানম অথৈ

আজ আমি জানাবো ইহুদী জাতির ইতিহাস এবং তাবুতে সাকিনা সম্পর্কে।ইহুদীরা কেনো এখনো তাবুতে সাকিনা খুঁজে বেড়াচ্ছে?
তাবুতে সাকিনার বাংলা অর্থ হচ্ছে শরিয়ত সিন্দুক। এটা খোঁজার পেছনে ইহুদীদের কী ষড়যন্ত্র রয়েছে,এবং এটা পাওয়ার পরে কি করতে চাই?
সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন…।

আজ ও ইহুদীরা বিভিন্ন বাহানায় পুরো পৃথিবীতে খোদাই করে চলেছে।শুধুমাত্র একটি মাত্র সিন্দুকের জন্য।চলুন তাহলে জানা যাক এই রহ্যময় সিন্দুকটি কেনো এত গুরুত্বপূর্ণ?
কোরানে সুরা বাকারায় ২৪৮ নং আয়াতে এই সিন্দুকের কথা উল্লেখ আছে।আল্লাহপাক বলেন,তাদের নবী আর ও বলেন,তালুতের নেতৃত্বের চিহ্ন হলো এই যে,তোমাদের কাছে একটা সিন্দুক আসবে।তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের সন্তুষ্টির নিমিত্তে।আর তাতে থাকবে মুসা, হারুন, এবং তাদের সন্তানবর্গের পরিত্যক্ত কিছু সামগ্রী। সিন্দুকটিকে বয়ে আনবে ফেরেশতারা।তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক তাহলে এতে তোমাদের জন্য নিশ্চিত পরিপূর্ণ উদাহরণ রয়েছে।

এই আয়াতে তাবুতে অর্থ হচ্ছে সিন্দুক,এবং সাকিনা বলতে জিনিসপত্রকে বোঝানো হয়েছে। যা মানুষকে প্রশান্তি দান করে।এই সিন্দুকে হযরত আদম (আ:) নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো রাখতেন।
এই সিন্দুকটি উত্তরাধিকার সুত্রে একজনের পর একজন পেতে থাকেন।এবং শেষ পর্যন্ত ইয়াকুব (আ:) পেয়ে থাকেন। এবং শেষ পর্যন্ত হযরত ইয়াকুব (আ:) এর অন্য লামছি ইসরাইল (আ:) এবং উনার বংশকে বলা হয় বনী ইসরাইল অর্থাৎ ইসরাইলের সন্তান।হযরত ইসরাইল (আ:) এর এক পুত্রের নাম ছিলো ইহুদী। এবং তার বংশ বিশ্বে ইহুদী নামে পরিচিত।এরপর সিন্দুকটি চলে যায় হযরত মুসা (আ:) কাছে।
হযরত মুসা (আ:) ও হারুন (আ:) মারা যাওয়ার পর তাদের পোশাক মোবারক তাদের পাগড়ী এবং আল্লাহকর্তৃক প্রেরিত সকল জিনিসপত্র এই সিন্দুকের মধ্যে সুরক্ষিত করে রাখা হয়।

এরপর থেকে এই সিন্দুক চলে যায় ওই জাতির সরদারের দায়িত্বে। বনি ইসরাইলরা এই সিন্দুকের প্রতি খুবই যত্নবান ছিলেন,এবং খেয়াল রাখতেন।কারণ এই সিন্দুকের রহমতে তারা বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষা পেত।যখন কোন দুর্যোগ আসত তারা এই সিন্দুকের পাশে বসে প্রার্থনা করতো।এবং এই সিন্দুকের উছিলায় তারা বিপদ থেকে মুক্তিলাভ করতে সক্ষম হতো।
এমনকি তারা যখন যুদ্ধে যেত তখন তারা এই সিন্দুক যুদ্ধের একদম সামনে রাখতো।এর ফলে সৈন্যরা সাহস এবং প্রেরণা পেত।
এবং এই সিন্দুকের বরকতে তারা সকল বিপদ এবং বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করতে পারতো।

বিশেষ উৎসব এবং অনুষ্ঠানের সময় তারা এই সিন্দুকটিকে সম্মানের সাথে কাঁধে করে নিয়ে বের করতো।এই সিন্দুকের হেফাজতে বিশেষ সৈন্যদল ও নিয়োগ করা হয়েছিলো।একদিকে তারা সিন্দুকের এত যত্ন এত সম্মান করতো, যা কল্পনা করা যায় না।
আবার অন্যদিকে এক সময় আল্লাহপাকের এত রহমত, অশেষ নেয়ামত সবকিছু দেখার পরেও এরপ্রতি তাদের কোন কদর ছিলো না।দিনের পর দিন তাদের লোভ বেড়েই চলেছিলো।তারা জাতি হিসেবে জেদি একঘেয়ে, কল্পনাতীত, লোভী এবং অত্যাচারীজাতি হয়ে উঠল।
আল্লাহপাক ও তাদের অশেষ নেয়ামতকে ভুলতে শুরু করলো।তখন আল্লাপাক তাদের উপর গজব নাযিল করলেন।

এরফল স্বরুপ এক যুদ্ধে ফিলিস্তিনি মুশরিকরা এটি ছিনিয়ে নিয়ে গেলো।কিন্তু মুশরিকদের যে শহরে, যে জনপদে এটি রাখা হতো সেখানেই মহামারী হতে থাকত ব্যাপকভাবে।শুধু তাই নয় সব জায়গায় প্লেগ ছড়িয়ে পড়লো। এই রোগের ফলে দ্রুতগতিতে অনেক মানুষ মারা যেতে শুরু করলো। এরপর তারা কোন উপায় না দেখে,কিভাবে এই সমস্যা সমাধান করা যায় তার জন্য সকল জ্ঞানী ব্যক্তিদের জমা করলো।
তাদের কাছে এই আচমকা বিপদের কারণ জানতে চাইলে,তারা বলেন,
তাবুতে সাকিনা অসম্মানের কারণে আল্লাহপাক সকলের উপর গযব নাজিল করেছেন।এটা বনি ইসরাইলের কাছে ফেরত দিয়ে দাও।কিন্তু তারা কোনভাবেই এই সিন্দুক বনি ইসরাইলের কাছে ফেরত দিতে রাজী হলেন না।শুধু তাই নয়, তারা সিন্দুকটিকে অন্য একটি শহরে প্রেরণ করে দিলেন।কিন্তু অন্য শহরে প্রেরণ করার পর সেই শহরে একই রোগের ভয়ানক প্রকোপ শুরু হলো।এভাবে পরপর পাঁচটি শহর নি:শেষ হয়ে গেল।

অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত নেয়,এই সিন্দুকটিকে চালকহীন মহিষের গাড়িতে করে তুলে দেয়ার।আল্লাহর রহমতে গাড়ি তখন বনি ইসরাইলের শহরের দিকে রওয়ানা শুরু করলো।এবং গাড়িটা আল্লাহর হুকুমে ফেরেশতারা চালিয়ে নিয়ে আসছিলো।সে সময় হযরত সামাল (আ:) আল্লাহর হুকুমে তালুদ নামের এক ব্যক্তিকে বনি ইসরাইলের বাদশা বানিয়ে দিতে চাইলেন।কারণ এই ব্যক্তি ছিলো খুব নেক এবং সৎ।কিন্তু এতে বনি ইসরাইলের বংশের লোকেরা বিরোধীতা শুরু করলো।শুধু তাই নয়,তারা একদিন নবীকে বলল,
যদি আপনি সত্যি আল্লাহর নবী হয়ে থাকেন,তাহলে আল্লাহর কাছে প্রর্থনা করেন,যেন তিনি আমাদের হারিয়ে যাওয়া তাবুতে সাকিনা আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়।তবে আমরা আপনার সকল কথা মেনে চলব।
সরদারের কথা শোনার পর,নবী সামাল (আ:) বললেন,
ঠিক আছে তোমাদের তাবুতে সাকিনা কাল সকালের মধ্যে তোমাদের কাছে পৌছে যাবে ইনশাআল্লাহ।

এটা শুনে তারা নবীকে নিয়ে হাসি তামাসা করলো।কারণ তারা খুব ভালো করে জানতো জালুদদের হাত থেকে তাবুতে সাকিনা ফিরিয়ে আনা একেবারে অসম্ভব।
কিন্তু পরের দিন সকালে মহিষের গাড়িতে তারা তাদের তাবুতে সাকিনা ফিরে পেলো।তারপর নিজেদের কথামতো তালুদকে নিজেদের বাদশা হিসেবে মেনে নিলো।তাবুতে সাকিনা ফিরে পাওয়ার ফলে,বনি ইসরাইলের অবস্থার আর ও উন্নতি হতে লাগল।কিন্তু তাদের আমলের কোন পরিবর্তন হলো না।এরপর হযরত দাউদ (আ:) এর সময় চলে আসলো।তিনি সকলের জন্য ইবাদত করার একটা স্থান নির্ধারণ করলেন।পরবর্তীতে তার পুত্র হযরত সুলাইমান (আ:) পিতার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন।এবং সেই ইবাদতখানায় তাবুতে সাকিনা স্থাপন করেন।ইবাদত করার যে ঘরে তাবুতে সাকিনা রাখা হয়েছিল,সে স্থানে আল্লাহর নবী এবং বড়বড় আলেম ব্যতীত সাধারণ জনগনের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছিল।

হযরত সুলাইমান (আ:) মৃত্যু বরন করার পর তার আংটি মোবারক ওই সিন্দুকের ভিতরে সুরক্ষিতভাবে রেখে দেয়া হয়েছিল।যখন হযরত জাকারিয়া (আ:) এর সময় এলো তখন অজ্ঞানতার অন্ধকারে বনি ইসরাইলরা এতটাই ডুবে গিয়েছিল যে,আল্লাহর পয়গম্বরদের কথা অমান্য করাটা এই গোষ্ঠীর জন্য খুবই সামান্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যখন জাকারিয়া ( আ:) ও তার পুত্র হযরত ইয়াহিয়া( আ:) কে তারা মেরে ফেলে , আল্লাহতায়ালা তাদের উপর খুব নারাজ হন।হযরত ইয়াহিয়া (আ:) এর মৃত্যুর কিছুদিন পর ইরাকের বাদশা বাক্ত নাছের ইসরাইলের উপর হামলা চালায়।লক্ষ লক্ষ ইহুদীদের হত্যা করে ও গোলাম বানিয়ে দেয়।শুধু তাই নয়,পুরো ইসরাইল ধ্বংস করে দেয়।

এমনকি বায়তুল মোকাদ্দাস সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়।এবং তাতে রাখা তাবুতে সাকিনা কব্জা করে নেয়।তারপর নিজের সাথে ইরাক নিয়ে যায়।এসময় ছিলো বনি ইসরাইলের জন্য সর্বকালের সব থেকে কঠিন সময়।কিন্তু বাক্ত নাছের পরবর্তীতে তাবুতে সাকিনা কি করেছিলেন,তা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি।তাবুতে সাকিনা সারা জীবনের জন্য ইহুদীদের কাছে থেকে হারিয়ে গেল।এবং ইহুদীরা যাদের বলা হত আল্লাহর সব থেকে প্রিয় গোষ্ঠী তারা সারা জীবনের জন্য আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হলো।আজকে ২০০০ বছর পরে আবার ও ইসরাইলের ইহুদীরা নিজেদের অবস্থান শক্ত করে দাঁড়িয়েছে।আল্লাহর সকল নেয়ামত ও রহমত হারিয়ে ফেলার পরে ও এখনো তারা আগেরমতো একঘেয়ে, লোভী,অত্যাচারী ও অহংকারী হয়ে গিয়েছে।এমনকি এখনো তারা আল্লাহর সবথেকে প্রিয় গোষ্ঠী হওয়ার ভুল ধারনা নিয়ে বসে আছে।তারা এখনো পর্যন্ত মসজিদুল আকসার পশ্চিম দিকে দেয়ালকে ধরে কান্নাকাটি করে, এবং অতীতের সবকিছু চিন্তা করে কান্নাকাটি করাটাই যেন হয়ে গেছে তাদের বর্তমানের ইবাদত।

এই মসজিদুল আকসার পশ্চিম দেয়ালকে হযরত সোলাইমান (আ:) এর শেষ চিহ্ন হিসেবে তারা ধরে থাকে।ইহুদীদের পুরো গোষ্ঠী এখনো অবুঝ।এতকিছু হওয়ার পর ও তারা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল না হয়ে,এখনো তারা তাবুতে সাকিনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।এবং তারা অপেক্ষা করছে তাদের শেষ অধিনায়কের জন্য।যার নেতৃত্বে ইহুদীরা আর ও একবার পুরো বিশ্বের উপর শাসন করতে পারবে।সেই এক অন্ধ দাজ্জালের প্রতি তাদের ভালোবাসা এতটাই বেশী যে, পুরো পৃথিবীতে তারা এই এক চোখের প্রচার করে বেড়ায়।এবং সুত্রমতে দাজ্জালের সুবিধার জন্য তারা এমন এমন পদ্ধতির আবিষ্কার করছে,যার ফলে সাধারণ মানুষ খুব সহজেই দাজ্জালকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মেনে নেয়।ইংরেজি ইহুদীসহ অনেক গবেষকরা গবেষণা করে ধারণা করেন যে,তাবুতে সাকিনা সুলাইমান (আ:) এর মহলের কোন একটি অংশে দাফন করা আছে।কিন্তু সুলাইমান (আ:) এর সেই মহলটি এখনো ফিলিস্তিনের কোথাও অনাবিষ্কৃত অবস্থায় রয়েছে।তারা তাবুতে সাকিনা কব্জা করার জন্য সুলাইমান (আ:) মহল খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।আর এই জন্য কিছুদিন পরপরই বায়তুল মোকাদ্দাসে খোদাই করতে থাকে।

ঃ সমাপ্তঃ


Screenshot 3
বিজ্ঞাপনঃ বই কিনুন, বই পড়ুন

0

Afsana Khanam

Author: Afsana Khanam

লেখক

নিচের লেখাগুলো আপনার পছন্দ হতে পারে

গল্প চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ

চেয়ারম্যানের মেয়ে আফছানা খানম অথৈ মেহেরপুর একটি সুন্দর গ্রাম।এই গ্রামে কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন চালু আছে,যা অন্যকোন গ্রামে নেই।এই গ্রামে নারীরা

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ

গল্প মেয়েরা ও মানুষ আফছানা খানম অথৈ রানু বউ হয়ে এসেছে চার পাঁচ মাস হলো।এরই মধ্যে তার স্বামী স্কলারশিপ এর

গল্প মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ

মেয়ে সাক্ষী আফছানা খানম অথৈ আবিদ হায়দার বেড়াতে এসেছে গ্রামে তার বন্ধু ফুয়াদ'র বাসায়।অবশ্য সে একা না,তার সঙ্গে আছে,বন্ধু সজল

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ

গল্প বন্ধ্যা আফছানা খানম অথৈ আলেয়া বউ হয়ে এসেছে চার বছর হলো।এখনো মা হতে পারেনি। এজন্য রীতিমতো তাকে কটু কথা

Leave a Reply